Wednesday, October 22, 2025
HomeScrollFourth Pillar | তেজস্বী-রাহুল, দোস্তি শেষ? টলমল করছে জোট? না কি বিজেপিকে...
Fourth Pillar

Fourth Pillar | তেজস্বী-রাহুল, দোস্তি শেষ? টলমল করছে জোট? না কি বিজেপিকে আটকাতে নতুন কৌশল?

মুখ্যমন্ত্রী কে? রাহুল-তেজস্বীর মহাগঠবন্ধন কি এই প্রশ্নেরই শিকার হতে চলেছে?

বিহার, পুরাণ আর ইতিহাসের মগধ, মহাভারতের রাজা জরাসন্ধের রাজধানী। শ্রীকৃষ্ণের কূটনীতিতে, মল্লযুদ্ধে ভীম নিহত করেন জরাসন্ধকে। বিহারে সেই পৌরাণিক কুস্তির আখড়া নাকি আজও আছে। পুরাণের পর ইতিহাসের পালা। পারস্য জয় করে বন্যার জলের মতো আলেকজান্ডারের গ্রীকসৈন্য ঢুকছে ভারতে। পুরুর মতো সীমান্তের রাজারা হয় যুদ্ধে পরাজিত হচ্ছে, নয় তো আত্মসমর্পণ করছে। কিন্তু তারপর? দিগ্বিজয়ী গ্রীক সেনা থমকে দাঁড়াচ্ছে মগধের কথা শুনে। হাজার হাজার যুদ্ধরথ, হাতি, ঘোড়া, আর লাখ লাখ সৈন্য নিয়ে মগধ অপেক্ষা করছে আলেকজান্ডারের জন্য। হ্যাঁ, মগধের কথা শুনেই কিন্তু ফিরে গিয়েছিলেন আলেকজান্ডার। এবার আসুন, আধুনিক সময়ে একটু উঁকি মারা যাক। মনে করুন সেই দিন, যখন লালকৃষ্ণ আদবানির রামরথ ভারত চিরে এগিয়ে যেতে যেতে থমকে দাঁড়াল। তারপর? কোথায় থমকাল? বিহারের মাটিতে। কে রুখে দিলেন? লালুপ্রসাদ যাদব। শ্লোগান উঠল আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে – “যব তক সামোসা মে হ্যায় আলু, বিহার মে হ্যায় লালু।”

ভোট এসে গেল সেই বিহারে। নীতীশ কুমারের এনডিএ বনাম লালুপুত্র তেজস্বী যাদবের আরজেডি, সেই সঙ্গে রয়েছে কংগ্রেস। এরাই মূল খিলাড়ি। কিন্তু খেলা শুরুর আগেই ভোটের বিহারে যে পরিমাণ গোলমাল শুরু হয়েছে, তার শেষ কোথায় হবে, কে জানে! গোলমালের গোড়ায় কিন্তু ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর। অভিযোগ উঠল, সংখ্যালঘু ও পিছড়েবর্গের মানুষদের বেছে বেছে বাদ দিচ্ছে বিজেপি সরকার। আর এ তো সত্যিই যে, সেই গোড়ার দিকে বিহারে আধার কার্ডকেও গ্রাহ্য করতে চায়নি নির্বাচন কমিশন। ফল এই, মামলা, পালটা মামলা, আর তারপর সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে আধার কার্ডকে শেষ পর্যন্ত এড্রেস প্রুফ হিসেবে মানতে বাধ্য হল কমিশন। যদিও তার ভিতরেই ভোটাধিকার চলে গিয়েছে, খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। সেই তেতে ওঠা বিহারের মাটিতেই ভোটার অধিকার যাত্রা শুরু করলেন রাহুল গান্ধী।

কী ছিল, কেমন ছিল সেই ভোটার অধিকার যাত্রা? রাহুল গান্ধী এবং অন্যান্য ‘ইন্ডিয়া’ দলগুলি ১৭ অগাস্ট, ২০২৫ তারিখে বিহারের সাসারামে এই যাত্রা শুরু করেন। এর লক্ষ্য ছিল, ভারতীয় সংবিধান, গণতন্ত্র এবং প্রত্যেক নাগরিকের ভোট দেওয়ার অধিকার রক্ষা করা। ১৭ অগাস্ট, ২০২৫ তারিখে বিহারের সাসারামে শুরু হয়ে ১ সেপ্টেম্বর পাটনার গান্ধী ময়দানে শেষ হয়েছিল এই পদযাত্রা। এই পদযাত্রা বিহারের ২০টিরও বেশি জেলা অতিক্রম করে এবং প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়। বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করাই ছিল এই পদযাত্রার উদ্দেশ্য।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | যুদ্ধবিরতি বা তেল কেনা, ট্রাম্পই ঠিক করবেন ভারত কী করবে?

এই পদযাত্রায় রাহুল গান্ধীকে ঘিরে ভিড় উপচে পড়েছিল। জাতীয় মিডিয়াতেও এই বলে চর্চা শুরু হয়, কংগ্রেস কামব্যাক করার জন্য আবার একটা প্ল্যাটফর্ম পেয়েছে। কিন্তু শুধুই তো কংগ্রেস আর রাহুল গান্ধী নয়। এই ভোটার অধিকার যাত্রায় কংগ্রেসের পাশাপাশি তেজস্বী যাদবের আরজেডি ছিল, সিপিআইএমএল ছিল, বিকাশশীল ইনসান পার্টিও ছিল। কিন্তু মিডিয়া ঢলে পড়ল রাহুলের দিকেই। একটা নতুন গোলমালের শুরু কি এখানেই? একথা বলছি, কারণ, বিহার ভোটে এনডিএ কিন্তু নীতীশ কুমারকে সামলাতেই এতদিন ব্যস্ত ছিল। হরেক রকম আবদার করছিলেন নীতীশ। যার একটা হল, ভোটের আগেই মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করতে হবে। এর সঙ্গে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো ছিল রামবিলাস পুত্র চিরাগ পাসোয়ান। এসব যাও বা সামলানো গেল, কিন্তু এনডিএ-র প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর ঝামেলা লেগে গেল। নানা অভিযোগ। তার একটা হল, মহিলাদের গুরুত্বই দেওয়া হচ্ছে না এনডিএ-তে। নীতীশ কুমারের বাড়ির সামনেই বিক্ষোভ হয়ে গেল একজোট। কিন্তু ইন্ডিয়া জোট কি এর ফায়দা তুলতে পারবে? নাকি ভোটের আগেই বিহারে টলমল করছে মহাগঠবন্ধন?

মহাগঠবন্ধন কি সত্যিই নড়বড় করছে বিহারে? একথা বলতে হচ্ছে, কেন না, আসন ভাগাভাগির পর দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু আসলে জোটের মিত্র দলগুলো সরাসরি লড়াই করছে। বৈশালী, কাহালগাঁও, নরকাটিয়াগঞ্জ, লালগঞ্জ, সুলতানগঞ্জ, ওয়াসালিগঞ্জ, এসব আসনে কংগ্রেস আর আরজেডি মুখোমুখি লড়াই করছে। জোটের পক্ষে একে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ বলা হলেও, বিরোধীদের তরফে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও এলজেপি প্রধান চিরাগ পাসোয়ান বলেছেন, রাজনীতিতে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই বলে কিছু হয় না। এর পাশাপাশি ঝাড়খণ্ড মুক্তিমোর্চা আরজেডি-র বিরুদ্ধে চতুরতার অভিযোগ তুলে, ঝাড়খন্ডে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছে। এইসব ঘটনায় যে এনডিএ শিবির মিটিমিটি হাসছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কেন না জোটসঙ্গীরা একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়লে ভোট ভাগ হবেই, আর তাতে এনডিএ-রই সুবিধে।

কিন্তু কেন? এরকমই কি হওয়ার কথা ছিল? সেই প্রশ্নই কি জোটকে ছাড়িয়ে তবে বড় হয়ে উঠল? মাত্র দু’টো শব্দের প্রশ্ন। কিন্তু তার ক্ষমতা অসীম। প্রশ্নটা হল, মুখ্যমন্ত্রী কে? রাহুল-তেজস্বীর গঠবন্ধন কি এই প্রশ্নেরই শিকার হতে চলেছে? সময়ই তার উত্তর দেবে।

Read More

Latest News