Wednesday, June 25, 2025
HomeScrollFourth Pillar | আমেরিকার কথায় যুদ্ধ হবে, থামবে, আমেরিকা কি নতুন ভগবান?
Fourth Pillar

Fourth Pillar | আমেরিকার কথায় যুদ্ধ হবে, থামবে, আমেরিকা কি নতুন ভগবান?

আমেরিকা আজ পর্যন্ত কোনও যুদ্ধের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে যায়নি

Follow Us :

আমেরিকার দাদাগিরি: ইরান থেকে ইউক্রেন, ভারত থেকে তাইওয়ান– এক নতুন সাম্রাজ্যের গল্প, আজকের দুনিয়া যেন একটা পুরনো গল্পের নতুন সংস্করণ। সে এক সময় ছিল, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, ফরাসি উপনিবেশ, পরবর্তীতে সোভিয়েত-আমেরিকা দ্বন্দ্ব, আর এখন? শুধু আমেরিকা, গতকাল আমাদের দেশের ভোর রাতে ট্রাম্প সাহেব জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি। ঠিক যেমন উনিই আগেভাগে জানিয়েছিলেন ভারত-পাক যুদ্ধের মাঝখানে। তো সেবার সত্যিই যুদ্ধবিরতি হয়েছিল, এবারে হবে কি না জানা নেই। কারণ ইরান সাফ জানিয়েছে, ইজরায়েল হানাদারি চালালে আমরা মিসাইল দাগব। ইজরায়েল তো কোনও কথাই বলেনি। বেলা গড়ালে আরও সাফ বোঝা যাবে। কিন্তু যুদ্ধ হোক, কূটনীতি হোক, অর্থনীতি হোক বা প্রযুক্তি, সব জায়গাতেই যেন আমেরিকার শেষ কথা। আর কেউ যদি কথা না শোনে, তবে? বি২ জাহাজ উড়ে যাবে, বোমা, নিষেধাজ্ঞা, সরকার ফেলে দেওয়া— সবই চলছে। ধরুন কতগুলো প্রশ্ন যদি আপনার সামনে রাখা যায়, তাহলেই বিষয়টা খানিক পরিষ্কার হবে, আমেরিকা অনেক দূরের আর একটা দেশ ইরান আক্রমণ করেছে এই অভিযোগে যে, ইরান হয়তো পরমাণু অস্ত্র বানাতে চলেছে, যা আশেপাশের দেশ আর গোটা বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক। তাহলে চারটে প্রশ্ন তোলাই যায় যে ১) ইরান কি সত্যিই পরমাণু অস্ত্র বানাচ্ছিল? ২) এই দুনিয়ায় কি আরও দেশ নেই যাদের এমন অস্ত্র আছে? ৩) তাহলে শুধু একটা দেশই কেন বিপদ? ৪) এই আমেরিকা অন্যদের হয়ে আক্রমণ করার অধিকার পেল কোথা থেকে?

এই প্রশ্নগুলোর সোজাসাপ্টা উত্তর কী? ১) না, ইরান পরমাণু বোমা বানাচ্ছিল এমন প্রমাণ নেই। IAEA (আন্তর্জাতিক পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা) বলেছে, ইরান এখনও সেই পর্যায়ে পৌঁছয়নি। এই কথা আমেরিকার নিজের গোয়েন্দা বিভাগও বলেছে মার্চ মাসে। ২) হ্যাঁ, অনেক দেশই পারমাণবিক বোমা রাখে। এই অঞ্চলে তো ইজরায়েল নিজেরাই পারমাণবিক শক্তিধর। ৩) না, ইরানের নেতারা বা সাধারণ মানুষ অন্য পারমাণবিক দেশের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক, এরকম বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই। ৪) আর না, আমেরিকাকে কেউ এই কাজের অনুমতি দেয়নি (শুধু হয়তো ইজরায়েল ছাড়া)। বরং রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়ম ও আন্তর্জাতিক আইন এ ধরনের হামলাকে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করে। তাহলে এটা কেন হচ্ছে? আসুন সেটা একটু বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে আমেরিকা গোটা পৃথিবীর উপর দাদাগিরি চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু ইরান নয়, ইউক্রেন যুদ্ধ, তাইওয়ান প্রশ্ন, এমনকী ভারত-পাকিস্তানের মতো দক্ষিণ এশীয় সম্পর্কেও তারা নাক গলাচ্ছে, অযাচিত পরামর্শ দিচ্ছে এবং নিজেদের সুবিধামতো হস্তক্ষেপ করে যাচ্ছে। ধরুন এই ইরান: বোমার ছুতোয় আগুন জ্বালানো, ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার গত ১১ দিনের হামলা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে। কারণ কী?

আমেরিকার ভাষায়, ইরান নাকি পরমাণু বোমা বানাতে চলেছে— কিন্তু তার কি কোনও প্রমাণ আছে? নেই, তাহলে যার কোনও প্রমাণ নেই সেটা জোর গলায় বলা হচ্ছে কেন? আর বলা হচ্ছে বলুক, সে তো পাগলে কী না বলে ছাগলে কী না খায়, কিন্তু মজার ব্যাপার হল কোনও প্রতিবাদ নেই, ইউরোপের কোনও দেশ প্রতিবাদ করেছে, যারা নিজেদেরকে সভ্য বলে? এদিকে আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা (IAEA) ইরানে বারবার গেছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে, বলছে, এখনও ইরান সে পর্যায়ে যায়নি। অথচ হামলা হয়ে গেল। কেউ কিছু বলল না। যারা বলল, তারা ইরানকেই বলছে “সংযম দেখাতে”! মানে আমাদের মোদিজির কথা বলছি, তিনি ফোন করে বললেন সংযম জরুরি। একটা বিষয় খেয়াল করলেই বোঝা যায়— আমেরিকা মনে করে, সে যা খুশি করতে পারে, আর অন্যরা চুপ করে থাকবে। কারণ, সে ‘বিশ্বপুলিশ’। ধরুন ইউক্রেন যুদ্ধ: গণতন্ত্রের মুখোশে আদতে এক খুল্লমখুল্লা অস্ত্রব্যবসা?

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও আমেরিকার ভূমিকা খুবই স্পষ্ট, খোলাখুলি অস্ত্র পাঠানো, বিপুল টাকার সাহায্য, ন্যাটো জোটকে আগুনে ঘি দেওয়ার মতো ব্যবহার। কিন্তু আসল প্রশ্ন হল, এই যুদ্ধ আমেরিকার কাকে কাজে লাগাচ্ছে? প্রথমত, ইউরোপের দেশগুলোকে আবারও আমেরিকার সামরিক ভরসার উপর নির্ভরশীল করা হলো। দ্বিতীয়ত, রাশিয়াকে চাপে রাখার সুযোগ। তৃতীয়ত, নিজের অস্ত্র কোম্পানিগুলোর লাভ— Lockheed Martin, Raytheon, Boeing– এইসব কোম্পানি বিপুল মুনাফা করছে। যুদ্ধ কারা করছে? ইউক্রেন।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | আমেরিকার দাদাগিরি ইরানকে থামাতে পারবে?

কিন্তু তার ফসল ঘরে তুলছে কে? আমেরিকা। ধরুন ভারত-পাকিস্তান: আগুনে বাতাস, শান্তিতে নীরবতা। ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আমেরিকার ভূমিকা সবসময়ই কৌশলগত। যখন যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কিন্তু সেটা কখনও ভারত বা পাকিস্তানের পক্ষে পরিষ্কার অবস্থান হয় না। উল্টে অনেক সময় তারা এমন ভাষা ব্যবহার করে যাতে দুই দেশেই সন্দেহ আর উত্তেজনা বাড়ে। উদাহরণ: ১৯৯৯-এ কারগিল যুদ্ধের সময়, আমেরিকা স্পষ্ট করে পাকিস্তানকে চাপে ফেললেও, ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার সময় তারা বলেছিল, “দুই দেশকেই সংযম দেখাতে হবে।” তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোটাই নিজেদের সামরিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থের উপর নির্ভর করে— যার ফলে কাশ্মীর, সন্ত্রাসবাদ, সীমান্ত ইস্যুতে তারা কখনওই দীর্ঘস্থায়ী সমাধান চায়নি, চায় না, কাশ্মীর সমস্যা বেঁচে থাকলে তবে তো অস্ত্র বেচাকেনা হবে। এরপরে সম্ভবত তাইওয়ান: আবার সেই আগুন জ্বালিয়ে পাশে দাঁড়ানোর অভিনয় করবে আমেরিকা। চীন আর তাইওয়ান ইস্যুতে আমেরিকা আবার সেই পুরনো নাটক খেলছে— একদিকে বলছে এক চীন নীতি মানে, অন্যদিকে যুদ্ধজাহাজ পাঠাচ্ছে তাইওয়ানের পাশে, অস্ত্র দিচ্ছে, উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক সফর করাচ্ছে। এর ফলে কী হচ্ছে?

উত্তেজনা বাড়ছে, চীন আরও রেগে যাচ্ছে, তাইওয়ান যুদ্ধের মুখে পড়ছে এবং শেষমেশ আমেরিকার অস্ত্রব্যবসা আবার ফুলে-ফেঁপে উঠছে। এই একই ছক তারা কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, সর্বত্র চালিয়েছে। কূটনীতির নামে বিশুদ্ধ বেনিয়াগিরি, ‘ডিপ্লোম্যাসি’ নয়, আসলে ব্যবসা। আমেরিকা এখন যুদ্ধ চালায় ব্যবসার কৌশল হিসেবে। একটা দেশকে বলবে: তুমি গণতন্ত্র নয়, তুমি পরমাণু বোমা বানাচ্ছ, তোমার কাছে রাসায়নিক অস্ত্র আছে, তুমি উগ্রপন্থীদের সাহায্য করছ, তারপর সেখানকার সরকার ফেলে দেবে, যেমন ফেলেছে ইরাক, লিবিয়াতে। আবার নতুন এক পুতুল সরকার বসিয়ে তাদের অস্ত্র, গ্যাস, তেল কিনতে বাধ্য করবে, আর যারা কথা শুনবে না, তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা দেবে। ইরান, ভেনেজুয়েলা, কিউবা— এসব দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েই আমেরিকা বছরের পর বছর তাদের জনজীবন দুর্বিষহ করে রেখেছে। আমেরিকার সেই মহান ‘ন্যায়বিচার’ কেবল নিজের জন্য, আমেরিকা আজ পর্যন্ত কোনও যুদ্ধের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে যায়নি। কারণ তারা সবসময় ‘বিশেষ’, তারা দেবশিশু। মনে করে দেখুন ইরাক যুদ্ধের সময় রাষ্ট্রপুঞ্জের সম্মতি ছাড়াই হামলা চালিয়েছিল এই আমেরিকা। আফগানিস্তানে ২০ বছরের দখলদারি চালিয়েছে এই আমেরিকা। গুয়ান্তানামো বে-তে বন্দিদের উপর পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছে এই আমেরিকা।

আবার ফিলিস্তিনে ইজরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি, নেওয়ার কথাও বলেনি। কোনও আন্তর্জাতিক আইন তাদের থামাতে পারেনি, কারণ তারাই আইন তৈরি করে, তারাই ভাঙে। এবং তারসঙ্গে আছে ভারতের দায়িত্বহীন নীরবতা। আমরা অনেকদিন ধরেই শুনে আসছি— “ভারত এখন বিশ্বমঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়”, “ভারতের স্বাধীন কূটনীতি”—কিন্তু বাস্তবে? ইরানে বোমা পড়ল, গাজায় শিশুরা মরল, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধ্বংস… ভারত চুপ। শুধু একটাই কথা— আমরা সংযম দেখাতে বলছি, আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছি। না কোনও নিন্দা, না কোনও প্রতিবাদ, না কোনও অবস্থান। তাহলে প্রশ্ন তো উঠবেই যে আমরা কি শুধু এই নিরপেক্ষ থেকে যাব, নাকি আমাদের একটুখানি সাহস দেখানোর সময় এসেছে? ইতিহাস কী বলে? ইতিহাসে দেখা গেছে— যারা অতিরিক্ত চতুরতা করে, তারা শেষমেশ কোথাও থাকে না। যারা দু’ নৌকোতে পা দিয়ে চলার চেষ্টা করে তারা বিপদে পড়ে। যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়, সেই সময় চীনের মতো দেশ নিজের অবস্থান শক্ত করেছিল, আবার আমেরিকার দাদাগিরির সময় দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, এমনকী ইরান নিজেদের কণ্ঠস্বর বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। আর ভারত? একসময় ছিল গ্লোবাল সাউথ-এর মুখপাত্র। এখন শুধু ‘নীরব দর্শক’। নৈতিকতা শুধু দুর্বলদের জন্য?

এই যুগে মনে করা হচ্ছে, নৈতিকতা দুর্বলদের জন্য, শক্তির দুনিয়ায় নীতি চলে না— এটাই নতুন বাস্তববাদ। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। চীন, রাশিয়া, আমেরিকা, সবাই চায় বিশ্ব তাদের মতো চলুক। কিন্তু কোনও দেশই দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে না যদি তার কিছু বন্ধুও না থাকে, কিছু নীতি না থাকে। আজ আমেরিকা যদি ভারতকে বলে, তোমার কাশ্মীর সমস্যা আমি দেখব, তখন কি আমরা মানতে পারব? না, পারব না। তাহলে আজ কেন আমরা ইরান, গাজা, তাইওয়ানের মতো প্রশ্নে সত্যের পাশে দাঁড়াব না? আমেরিকার দাদাগিরি একটা নতুন উপনিবেশবাদের নাম। এখন আর কারও জমি দখল করতে হয় না, অর্থনীতি, প্রযুক্তি, মিডিয়া আর অস্ত্র দিয়েই সব নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এই পরিস্থিতিতে যদি আমরা চুপ থাকি, তাহলে পরের টার্গেট আমরা নিজেরাই হতে পারি। তাই আজ দরকার, একটা ন্যায্য, নির্ভীক, সৎ কণ্ঠস্বর— যেটা শুধু নিজের লাভ দেখে না, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষেও দাঁড়াতে জানে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Donald Trump | কত হাজার ম/রলে পরে বলবে তুমি হেসে, বড্ড বেশি মানুষ গেছে নোবেল পাওয়ার শেষে
00:00
Video thumbnail
Donald Trump | ট্রাম্পের হুঁ/শিয়ারিকে কাঁচকলা দেখিয়ে যু/দ্ধরত দুই দেশ
00:00
Video thumbnail
Iran | লজ্জা, এত তামঝাম করে B2 বিমান এনে বিশাল বো/মা মে/রে ইরানের নিউ/ক্লিয়ার বেসে মাত্র ৬টা ফুটো
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | চুলোয় যাক যু/দ্ধবিরতি, ইরানে আরও ভ/য়ঙ্কর হা/মলার ছক ইজরায়েলের, ট্রাম্পের মুখ চুন
00:00
Video thumbnail
Iran-America | ব্রিকসে থাকা ইরানকে কেন ভয় আমেরিকার?
00:00
Video thumbnail
Bangla Bolche | Subhashish Banerjee | ট্রাম্পের টুইটার আইডি কেড়ে নেওয়া উচিত!
00:56
Video thumbnail
Stadium Bulletin | পাঁচটি শতরানের পরও লিডসে লজ্জার হার ভারতের
13:07
Video thumbnail
Donald Trump | কত হাজার ম/রলে পরে বলবে তুমি হেসে, বড্ড বেশি মানুষ গেছে নোবেল পাওয়ার শেষে
02:38
Video thumbnail
Donald Trump | ট্রাম্পের হুঁ/শিয়ারিকে কাঁচকলা দেখিয়ে যু/দ্ধরত দুই দেশ
03:12
Video thumbnail
Iran | লজ্জা, এত তামঝাম করে B2 বিমান এনে বিশাল বো/মা মে/রে ইরানের নিউ/ক্লিয়ার বেসে মাত্র ৬টা ফুটো
02:43