প্রশান্ত কিশোর একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, রাজনৈতিক পন্ডিতরা বিহারের সবকটা জেলার নাম জানে না, তাঁরা বিহারের নির্বাচন নিয়ে কী বলবেন? আজ বোঝা গেল, জেলার নাম জানলেই যে বিহারকে বোঝা যায়, তাও নয়। এক ‘মিটিওরিক রাইজ’, উল্কার মতো উড়তে দেখেছিলাম প্রশান্ত কিশোরকে, জন সুরাজকে। কিন্তু যত দিন যাচ্ছিল, আমরা এই অনুষ্ঠানেই বলেছিলাম, উনি গতি হারাচ্ছেন। কিন্তু আশা করেছিলাম, উনি অন্তত ঐ ৫ শতাংশ ভোট পাবেন। আজ দিনের শেষে বোঝা যাচ্ছে, তা দেড় শতাংশের উপরে ওঠেনি। আর যে আসন দুটোতে তিনি বা তাঁর দল একটু লড়াই দিয়েছে, সেগুলোতেও তাঁর প্রতিদন্দ্বী কিন্তু মহাগঠবন্ধন, মানে সেটুকু ভোটও তিনি তাদের থেকেই পেয়েছেন। তিনি যে ইস্যু তুলেছিলেন, তা নিয়ে কারোর দ্বিমত ছিল না, ইন ফ্যাক্ট তিনি ঐ পলায়ন, ইত্যাদি কথা বলার পরে বাকি দলগুলোও সেই কথাগুলো বলতে শুরু করেছিল। কিন্তু এই অবস্থা হল কেন? কেন ২০১৯ বা ২০২১-এ এই বাংলার সিপিএম-এর মতো শূন্যতেই জায়গা পেলেন তিনি?
আসলে উন্নয়নের এক গোলকধাঁধা আছে, সেটাতেই আটকে গিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর, পিকে। ধরুন একটা সমাজ, যেখানে রাষ্ট্র, রাষ্ট্র কাঠামো বা সরকারের সমস্ত ব্যবস্থার সুবিধে পাচ্ছেন সেই রাষ্ট্রের ১৫ শতাংশ মানুষ। এবার সেই রাষ্ট্রে আরও উন্নয়ন হবে, আরও বিকাশ হবে। তার মানে কী? ঐ ৮৫ শতাংশ মানুষজন কিছু বেশি তো পাবেন, কিন্তু ঐ ১৫ জন? ১৫ শতাংশ মানুষ আরও বেশি সুবিধে পাবে। সুবিধে পাবার যে হার, সেই হারে তো কোনও পরিবর্তন হবে না। কাজেই অর্থনীতিগতভাবে, সামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা লোকজন যতক্ষণ না রাজনৈতিক ক্ষমতাটা হাতে পাচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা কোনওভাবেই কেবল এক বিকাশ বা উন্নয়নের শরিক হতে পারবেন না, পারাটা সম্ভব নয়। পিকে ওই জাতিগতভাবে ঐতিহাসিকভাবেই পিছিয়ে থাকার বিরুদ্ধে না লড়ে কেবল বিকাশ আর উন্নয়নের কথাটা বলছেন, যেটা শুনতে খুব ভালো লাগছে, কিন্তু সেটা কাজের কথা নয়। কাজেই ভোট যত সামনে আসছে, তত বেশি করে ওই দলিত, পিছিয়ে পড়া মানুষ বা অতি পিছড়ে বর্গের মানুষজনের রাজনৈতিক লড়াইটাই প্রাধান্য পাচ্ছে, পিকে তাঁর দুর্দান্ত এজেন্ডাগুলোকে নিয়ে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছেন। রাজনৈতিক কৌশলী থেকে রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) উত্থান বিহারের রাজনীতিতে এক নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছিল। বিশেষ করে, যখন তিনি ‘জন সুরাজ অভিযান’ শুরু করেন এবং পরবর্তীতে এটাকে একটা রাজনৈতিক দল—জন সুরাজ পার্টি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন ২ অক্টোবর ২০২৪-এ, তখন মনে হয়েছিল যে, বিহারের ৩০ বছরের পুরানো রাজনৈতিক দ্বৈরথ এবার হয়তো ভাঙতে চলেছে। পিকে-র মোদ্দা মেসেজটা ছিল একদম সোজা আর শক্তিশালী: প্রচলিত জাতপাতের রাজনীতির, দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ‘সঠিক লোক’, ‘সঠিক চিন্তা’ এবং ‘সামূহিক প্রয়াস’-এর মাধ্যমে বিহারে এক আমূল পরিবর্তন (Badlao) আনা। কাজেই শুরুর দিকে পিকে-র প্রচারে এক ধরণের আশাবাদ তৈরি হয়েছিল। তাঁর বক্তব্য ছিল, বিহারের মানুষ এবার হয়তো জাতপাত, ধর্মীয় মেরুকরণ, এবং অতীতের ‘জঙ্গলরাজ’ বনাম ‘সুশাসন’-এর বিতর্কের বাইরে এসে নিছক উন্নয়ন ও বিকাশের মাপকাঠিতে ভোট দেবে। তিনি জোর দিয়েছিলেন যে, নীতীশ কুমার এবং লালু প্রসাদ যাদবের দীর্ঘ শাসনের ফলেই বিহারের যুব সমাজকে অন্য রাজ্যে গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। পিকে পরিযায়ী শ্রমিকদের এবং যুব সম্প্রদায়কে এই নির্বাচনের ‘এক্স-ফ্যাক্টর’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন, যারা পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম। তাঁর এই আহ্বান, বিশেষত ডিজিটাল দুনিয়ায়, বিপুল সাড়া ফেলেছিল। তিনি এক নতুন বিকল্প তৈরির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, যা বিহারকে পুরানো রাজনৈতিক জোটের প্রভাবমুক্ত করবে। কিন্তু নির্বাচন যত এগিয়ে এল, তত দ্রুত এই আশাবাদ, যাবতীয় পজিটিভ কথাবার্তা ম্লান হতে শুরু করল।
প্রথম পর্যায়ের ভোটের পরেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বিহার তার চিরাচরিত ভোট বিভাজনে—উচ্চবর্ণ, ব্রাহ্মণ, রাজপুত, ভূমিহার, ওবিসি, ইবিসি, এবং দলিতদের ভিত্তিতে—ফিরে এসেছে। দুই প্রধান জোট, অর্থাৎ এনডিএ এবং মহাগঠবন্ধন, অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এই চিরাচরিত জাতপাতের সমীকরণগুলিকে আবার প্রচুর অক্সিজেন দিয়ে সক্রিয় করে তুলেছে, যার ফলে পিকে-র জন সুরাজ অনেকটা সাইডলাইনের বাইরে চলে গিয়েছেন, যাচ্ছেন। তাহলে প্রশ্ন তো উঠবেই যে, জাতপাতের এই নিরন্তর ফিরে ফিরে আসার কারণ কী? সমীক্ষা বলছে, বিহারের মাত্র ২৩ শতাংশ ভোটার উন্নয়ন বা ইস্যু-ভিত্তিক বিষয়কে তাঁদের সিদ্ধান্তের প্রাথমিক মাপকাঠি ধরেন। বাকিরা জাতপাত, ধর্ম এবং অন্যান্য নানা আলাদা কারণে প্রভাবিত হন। পিকে-র এই নির্বাচনে হঠাৎ পিছিয়ে পড়া আসলে এই মৌলিক কাঠামোগত বাস্তবতাকে তুলে ধরছে। তিনি রাজনৈতিক অদক্ষতা ও দুর্নীতির দীর্ঘ ইতিহাসের সমাধানের জন্য সাধারণ দাওয়াই হিসেবে উন্নয়ন বিকাশকে তুলে ধরছিলেন, যা আসলে একট গভীর, কাঠামোগতভাবে অর্থনৈতিক সমস্যা, সম্পদ ও ক্ষমতার চরম অসম বন্টন থেকেই তৈরি। যতদিন না পিকে বা অন্য কেউ সরাসরি এই অর্থনৈতিক অসমতাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারছেন, ততদিন জাতপাতের রাজনীতিকে অস্বীকার করা সম্ভব হবে না। বিহারের জাতিগত সমীকরণ কেবল সামাজিক পরিচয়ের লড়াই নয়, বরং তা অর্থনৈতিক ক্ষমতার হদিশও দেয়। এইটাই কিছুদিন আগে বিহার জাতিভিত্তিক জনগণনা ২০২৩-এর অর্থনৈতিক তথ্য থেকে পরিস্কার বেরিয়ে এসেছে। এই জনগণনাটাই আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে, এটা এখন পরিস্কার যে, মার্কস-এর শ্রেণি দন্দ্ব, হ্যাভ আর হ্যাভনটস-এর দন্দ্ব এখানে, আমাদের দেশে, বিহারে ঐ জাতিগুলোর মধ্যেকার সম্পর্ক। ঐ জাতিগত জনগণনা থেকে পাওয়া তথ্যগুলো জাতি আর অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যেকার কঠোর সম্পর্ককে পরিস্কার করে তুলে ধরেছে।
আরও পড়ুন: Fourth Pillar | কী হবে বিহার ভোটের ফলাফল? তেজস্বী না কি নীতীশ?
বিহারের জনসংখ্যার মাত্র ১৫.৫২ শতাংশ সাধারণ বা উচ্চবর্ণের (General Communities)। অন্যদিকে, বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ—মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৩ শতাংশ—অনগ্রসর (ওবিসি), অতি অনগ্রসর (ইবিসি) এবং তফসিলি জাতি (এসসি) দ্বারা গঠিত। এর মধ্যে ওবিসি এবং ইবিসি একত্রে ৬৩.১৪ শতাংশ এবং তফসিলি জাতি (এসসি) ১৯.৬৫ শতাংশ। বিহারের রাজনীতিতে এই বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীকে, তাঁদের সমস্যাগুলোকে, তাদের উপরে চাপানো এক সামাজিক ব্যবস্থাকে না সরিয়ে কেবল ‘উন্নয়ন’-এর বিমূর্ত কথা বলে সাফল্য অর্জন করা কার্যত অসম্ভব। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে, ভোটদানের সিদ্ধান্ত পরিচিতির পাশাপাশি ক্ষমতার লড়াইয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ২০২৩ সালের জনগণনার অর্থনৈতিক তথ্য স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, বিহারে সম্পদ ও ক্ষমতার ভাগ-বাঁটোয়ারা জাতিগত লাইনে কতটা গভীরভাবে অসম। উচ্চ আয়ের ক্ষেত্রে উচ্চবর্ণের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ, যে পরিবারগুলোর মাসিক আয় ৫০,০০০ টাকা বা তার বেশি, সেই উচ্চ আয়ের গোষ্ঠীগুলোতে ১৫.৫২ শতাংশ জনসংখ্যার সাধারণ ক্যাটেগরির পরিবারগুলির অংশ প্রায় ১০ শতাংশ (৯.৮৬ শতাংশ)। মানে সিংহভাগ উচ্চবর্ণের মানুষ ওই হাই-ইনকাম গ্রুপের মধ্যেই আছে। অন্যদিকে, রাজ্যের বৃহত্তর অনগ্রসর শ্রেণীগুলোর মধ্যে উচ্চ আয়ের পরিবারের হার তুলনামূলকভাবে হতাশাজনক। যে ওবিসি গোষ্ঠী রাজ্যের এক-তৃতীয়াংশের বেশি জনসংখ্যা ধারণ করে, সেখানে মাত্র ৪.২২ শতাংশ পরিবার মাসিক ৫০,০০০ টাকার বেশি আয় করে। ইবিসি গোষ্ঠীর (যা রাজ্যের সবচেয়ে বড় অংশ) ক্ষেত্রে এই হার আরও কম, মাত্র ২.২৮ শতাংশ। তফসিলি জাতি (এসসি)-র পরিবারগুলিতে উচ্চ আয়ের হার মাত্র ১.৭২ শতাংশ। এই তথ্যগুলো স্পষ্ট করে যে, সম্পদ এবং অর্থনৈতিক সুযোগের চূড়ায় উচ্চবর্ণের একটা ছোট অংশ আজও নিজেদের অবস্থান দৃঢ়ভাবে ধরে রেখেছে।
এই বৈষম্যের অন্য দিকটা হল দারিদ্র্য। বিহারের দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে এমন পরিবারের সংখ্যা তফসিলি জাতিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, যা প্রায় ৪৩ শতাংশ। ইবিসি পরিবারগুলির মধ্যেও ৩৩.৫৮ শতাংশ চরম দারিদ্র্যের শিকার। ওবিসিদের ক্ষেত্রেও এই হার ৩৩ শতাংশের বেশি। এমনকি জেনারেল ক্যাটেগরি যারা নাকি মাত্র ১৫ শতাংশ, তাঁদের মাত্র ২৫.০৯ শতাংশ পরিবার দরিদ্র। উচ্চ আয়ের ক্ষেত্রে তাঁদের যে নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ, তা কাঠামোগত সুবিধাকেই তুলে ধরে। যখন প্রশান্ত কিশোর ‘উন্নয়ন’ মানে নতুন শিল্প স্থাপন, পরিকাঠামো নির্মাণ নিয়ে কথা বলেন, তখন তিনি সেই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মূল অর্থনৈতিক সংগ্রামকে এড়িয়ে যান, যারা চরম বঞ্চনা এবং দারিদ্র্যের শিকার (৪০ শতাংশের বেশি পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে)। মানে ওনার সেই কল্পিত উন্নয়ন যদি বা হয়ও, তাহলেও এই হাঘরে মানুষের জীবনে কোনও পরিবর্তন আসতেই পারে না, যতক্ষণ না তাঁরা নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিজেদের হাতে পাচ্ছে। তাই এই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে ‘উন্নয়ন’-এর চেয়েও জরুরি ‘বন্টন’ (Distribution) আর সীমিত সরকারি সম্পদ (চাকরি, কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলোর সুবিধে গ্যারান্টি করা অনেক বেশি জরুরি।
ঐতিহাসিকভাবে, ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’ বা ‘জাতপাতের রাজনীতি’ হল সেই রাজনৈতিক ভাষা, যার মাধ্যমে এই বঞ্চনার শিকার মানুষজন সম্পদের বৃহত্তর অংশীদারিত্বের দাবি জানায়। বিহারের মানুষ কেবল জাতের ভিত্তিতে ভোট দেয় না; তাঁরা জাতের মাধ্যমে তাঁদের অর্থনৈতিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়ার কথা বলেন, ভাবেন। পিকে যখন উন্নয়নকে জাতপাতের উপরে রাখতে চাইলেন, তখন তিনি আসলে এই ৮৩ শতাংশ মানুষের জীবন ও জীবিকার প্রধান সমস্যাকেই অস্বীকার করলেন। এই কারণেই জাতপাতের রাজনীতি অর্থনৈতিক ক্ষমতার লড়াইকে সুরক্ষিত করে এবং পিকে-র এজেন্ডা মুখ থুবড়ে পড়েছে, বিহার আবার ফিরে গিয়েছে এক অমিমাংসিত ধাঁধার মিমাংসা করতে। কেন ১৫ শতাংশ মানুষের হাতেই ক্ষমতা থাকবে? কেন ৩৬ শতাংশ ইবিসি রাজনীতিতে মাত্র ১০ শতাংশের কম ভাগেদারি পাবে? কেন একজন ইবিসি মুখ্যমন্ত্রী হবে না? কেন তাঁদের একজন উচ্চবর্ণের বা তাদের চেয়ে উঁচু বর্ণের কাছে মাথা নোয়াতে হবে? বিহারের বর্তমান রাজনৈতিক কাঠামো একদিনে তৈরি হয়নি; আগেই বলেছি এটা ১৯৯০-পরবর্তী দশকের উত্তরাধিকার। এই সময়ের রাজনীতি মূলত লালু প্রসাদ যাদবের নেতৃত্বে নিম্নবর্ণের এমপাওয়ারমেন্ট, ক্ষমতায়ন আর সামাজিক ‘মর্যাদা’র প্রতীকী রাজনীতি হয়ে উঠেছিল। এরপরে নীতীশ কুমার যখন ‘সুশাসন’ এবং উন্নয়নের এজেন্ডা নিয়ে আসেন, তখনও তিনি ইবিসি এবং মহিলাদের এক নতুন ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করেন, যা জাতপাতের বিদ্যমান কাঠামোর উপরই নির্ভরশীল ছিল। এই রাজনীতি কেবল সমাজে বিভেদ তৈরি করেনি, বরং নিম্নবর্ণের পরিচয়গুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিল।
পিকে যে ‘জঙ্গলরাজ’ বনাম ‘সুশাসন’-এর বিতর্ক ব্যবহার করে নীতীশ-লালুকে আক্রমণ করেন, সেই বিতর্কটাও শেষ পর্যন্ত এক শক্তিশালী মেরুকরণ সৃষ্টি করে, যা জাতিগত লাইনে ভোটদাতাদের দুটো শিবিরে ভাগ করে দেয়। এই কাঠামোগত স্থিতাবস্থা, স্ট্যাগনেন্সি এত শক্তিশালী যে একটা নতুন রাজনৈতিক দল রাতারাতি তা ভেঙে দিতে পারে না। পিকে-র ‘জন সুরাজ’ যদি এই ইবিসি বা তাঁদের উপ-গোষ্ঠীগুলোকে নতুন বা শক্তিশালী অর্থনৈতিক বন্টনের প্রতিশ্রুতি দিতে না পারে, তবে তাঁরা সেই জোটগুলোর সঙ্গেই থাকবে, যারা তাদের দাবি মেটানোর জন্য মাঠে আছে। প্রশান্ত কিশোর তাঁর প্রচারে মহিলাদের সমর্থন এবং যুব সমাজের পরিবর্তনের চাহিদার জন্য নির্ভর করেছিলেন। মহিলাদের এক বড় অংশ একসময় জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে নীতীশ কুমারকে ভোট দিয়েছিল এবং তাঁদের ‘জাতি-নিরপেক্ষ’ ভোটার হিসেবে দেখা হত। উনি ভেবেছিলেন যে, সেরকমটা ওনার সঙ্গেও হবে। কিন্তু সেটাও ছিল সরাসরি তাঁদের জন্য বড় কিছু সুবিধে, যেমন মদ্যপান বন্ধ, মহিলাদের ওপর গার্হস্থ হিংসার ঘটনা ক’মাসের মধ্যে বিরাট ভাবেই কমেছিল, সব জাতের, সব অর্থনৈতিক স্তরেই। বা ধরুন ট্রানজ্যাকশনাল বেনিফিট, ১০ হাজার করে টাকা ইত্যাদি কিছুটা হলেও জাতপাতের বেড়াটা ভাঙতে পারে, কিন্তু কেবল কথায়? কেবল আদর্শের কিছু কথায় সেই বেড়া ভাঙবে না। কাজেই বিহার ফিরে এসেছে তার পুরানো খেলায়। দুই জোটের ভয়ঙ্কর মেরুকরণের মধ্যে বাংলার সিপিএম-এর মতোই। বহু দরকারি কথা, সত্যি কথা বলার পরেও এই নির্বাচনে তিনি কোনও দাগই কাটতে পারলেন না।
দেখুন ভিডিও:








