ইন্ডিয়া টুডের মুড অফ দ্য নেশন কিছুদিন আগেই বলেছিল এ রাজ্যে বিজেপি আর তৃণমূলের ভোটের ফারাক মাত্র ৬%। এই মুহূর্তে ভোট হলে তৃণমূল ৪৬% ভোট পেতে পারে আর বিজেপি ৪০% ভোট পেতে পারে। আর ৪৬% ভোট পেলে তৃণমূল কমবেশি ২১০-২১৫টা আসন পাবে। ব্যস, শুনেই মুষড়ে পড়েছে তাবত বিজেপি ভক্তগণ, ২০২৬ এও, এই বিশাল পূর্ণকুম্ভ, এত জলে ডুবকি দেওয়ার পরেও এই হাল? তো নেমেছেন আসরে কাঁথির খোকাবাবু, ওনার অঙ্কের জ্ঞান সম্পর্কে আমার কাছে কোনও তথ্য নেই। কিন্তু কে না জানে যে ওনার গুরুদেব শ্রীল শ্রীযুক্ত নরেন্দ্র মোদিজি এ প্লাস বি হোল স্কোয়ারে এক্সট্রা টু এ বি খুঁজে পান, তো সেই হেন গুরুর শিষয় বাজারে নেমে জনে জনে বোঝাচ্ছেন অঙ্ক, মাত্র ৩% ভোট ওদিক থেকে এদিকে আসলেই তো কেল্লা ফতে, বিজেপি ১২০-র ওপরে। তারপরে বাকিটা নাকি অমিত শাহ সামলে দেবেন বলেছেন। এখন সেই অঙ্কই নাকি বিজেপি শিবিরে খানিক জান এনে দিয়েছে, ৩ শতাংশের খোঁজে বিজেপি বেরিয়েছেন রাস্তায়। কোন বিজেপি? শুভেন্দুর বিজেপি। দিলু ঘোষের বিজেপি কী করছে? সভাপতির নাম না আসা অবদি অপেক্ষা করছে, তো সেই শিবিরের এক বড় হনুর সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তিনিই জানালেন এখন নাকি আর দিলীপ ঘোষ আগ্রহীই নয় সভাপতি হতে। কেন ভাই? তো উনিই জানালেন হার নিশ্চিত, তাই উনি চাইছেন যে কেউ আপাতত দায়িত্ব নিক, উনি ২০২৬-এর পরেই আবার পদে ফিরতে চান, এখনই গদিতে বসে ২০২৬-এর বিরাট হার এর দায় কাঁধে নিতে হাজির নন। তো স্বাভাবিকভাবেই জিজ্ঞেস করলাম যে কেন? শুভেন্দু যে বলছে ৬ শতাংশের ফারাক, ৩ শতাংশ ভোট এধারে টানলেই তো কেল্লা ফতেহ। তিনি শুনে মুখের আগুন নিভে যাওয়া বিড়িটা ফেলে নতুন বিড়ি ধরাতে ধরাতে বললেন হিসেবটা অত সহজ নয়। আজ বিষয় সেই হিসেব নিয়েই, এই মুহূর্তে ভোট হলে ৩০-এর উপরে উঠবে না বিজেপি।
আসলে মুড অফ দ্য নেশনের হিসেবটা লোকসভাকে ধরেই করা হয়েছে, আর কাঁথির খোকাবাবু না জানলেও সব্বাই জানেন যে রাজ্য বিধানসভার ভোটে বিজেপি লোকসভার যে ভোট পায় বা পেয়েছে তার থেকে কমসম করে ৬ থেকে ১০% কম পায়। কারণ লোকসভার ভোটের সময়ে বহু মানুষের কাছে এক গ্রহণযোগ্য বিকল্প থাকে না, মোদির বদলে কে? এটাই খুঁজে না পেয়ে উইনিং পার্টিকে ভোট দেন। মোদিজির ক্যাম্পেন ফর প্রাইম মিনিস্টারশিপ বিরাটভাবে কাজ করে। কতটা কাজ করে?
আরও পড়ুন: Aajke | ঘটি হারাল এ বাংলার বেশ কিছু বিজেপি নেতাদের
মাত্র ক’দিন আগেই বিহারের নির্বাচনে এনডিএ-কে বিরাটভাবে এগিয়ে রেখেছিল ওই মুড অফ দ্য নেশন, মাত্র একদিন আগে সি-ভোটারের সমীক্ষাতে দেখা যাচ্ছে এক আসনে হলেও বৃহত্তম দল হচ্ছে আরজেডি, আর এই জোট যত ভোট আসবে তত শক্তিশালী হবে কারণ বিজেপি আর জেডিইউ-র মধ্যে মন কষাকষি শুরু হয়ে গেছে। কেবল বিহারেই নয়, সারা দেশের নির্বাচনী পরিসংখ্যান বলছে ফারাক বেড়ে যাওয়ারও ৬ থেকে ১০%। আজ্ঞে হ্যাঁ। তারমানে আদত ভোটের ফারাক এখনই প্রায় ১০ শতাংশের বেশি। এরপরে আছে ঘোড়ার গাড়ির তিনমুখো তিন ঘোড়া। সুকান্ত গাড়ি উত্তরে নিয়ে যেতে চান, দিলীপ গাড়ি যেদিকে মন চায়, যেদিকে খুশি সে দিকে নিয়ে যেতে চান আর খোকাবাবুর দুনিয়া কুয়োর ব্যাঙের মতোই ওই মেদিনীপুর। কাজেই যত নির্বাচনের দিন এগিয়ে আসবে, তত রথের ঘোড়ার টানে রথের চাকা, পাটাতন আর ছাউনিতে টান পড়বে, নির্বাচন পর্যন্ত টিকলে হয়। ইতিমধ্যেই শুভেন্দু শিবিরের ইউটিউবারেরা ঢের হয়েছে ক্ষ্যামা দিন বলা শুরু করেছে। এবং কে না জানে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলু ঘোষের কথা অনুযায়ী এবারেও কাঠিবাজি হবেই। যদি সেইসব হিসেবকে ধরে নেওয়া হয় তাহলে ২০২৬ আসতে আসতে বিজেপি আর তৃণমূলের ভোটের ফারাক ৪৬–৩৪-এ গিয়ে দাঁড়াবে, এবং এখন থেকে বলে রাখছি লিখে নিন সে ক্ষেত্রে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি স্বীকৃত বিরোধী দলের তকমাটুকুও পাবে না। তবে ওই পৃথিবীতে শূন্যস্থান তো থাকে না, কেউ না কেউ পূর্ণ করে, মমতা বিরোধী এই ভোট বেশ কিছুটা যাবে বামেদের দিকে, সেক্ষেত্রে বামেরা সম্ভবত তাঁদের শূন্যের গেরো থেকে বের হয়ে আসতে পারেন। এবং একবারও মনে করার কোনও কারণ নেই যে এই খবর আমি জানি, আপনাদেরও অনেকেই জানেন কিন্তু দিল্লির বিজেপি নেতারা জানেন না, এমনকী বঙ্গ বিজেপির দু’ একজন বুদ্ধিমান নেতাও এই হিসেব জানেন, জানেন বলেই নির্দেশ তৃণমূল দল ভাঙো। আগামী কয়েক মাস তৃণমূল তার শক্তিকে সংহত করার চেষ্টা করবে, সিপিএম অন্তত শূন্য থেকে বার হওয়ার চেষ্টা করবে, কিন্তু বিজেপির আপাতত একটাই টাস্ক, তৃণমূলকে আড়াআড়ি ভাঙো, একমাত্র সেটাই উপায় এই বঙ্গ জয়ের। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, হিসেব বলছে, সমীক্ষা বলছে যে ২৬-এর বিধানসভায় বিজেপি ৩০টার বেশি আসন পাবে না, সেক্ষেত্রে এই শুভেন্দু অধিকারী, বা শঙ্কুদেব পণ্ডা বা রুদ্রনীল ঘোষেরা কি আবার দল বদলাবেন? শুনুন মানুষজন কী বলছেন।
যাঁরা জানেন সিপিএমের নির্বাচনী যন্ত্রের কথা, সেই অসম্ভব শক্তিশালী মেশিনারি ছিল, কাজও করছিল, কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক বোকামি, সিঙ্গুর নন্দীগ্রামে, শিল্প স্থাপনের তারা আর কংগ্রেসের হাত ছাড়ার ভুলের জন্যই তাঁরা হেরেছেন এবং আপাতত শূন্য। আর সেই রক সলিড ইলেকশন মেশিনারির দখল এখন তৃণমূলের হাতে, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে ম্যান মার্কিংয়ের বিরুদ্ধে বিজেপি এখনও শিশু। তাঁদের জয় আসতে পারে তৃণমূল দলের বিরাট কোনও রাজনৈতিক ভুলের জন্য, যা এখনও দেখা যাচ্ছে না, অসম্ভব মেপে চলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, টের পাওয়া গেল ওই আরজি কর আন্দোলনের সময়ে। আর যে উপায় আছে তা হল তৃণমূলকে আড়াআড়ি ভাঙা, হ্যাঁ সেই একটা উপায় নিয়েই রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর কাজ চলছে বিজেপির দিল্লি দফতরে যার জন্য অন্তত দুটো এজেন্সি এই বাংলাতে কাজ করছেন, সেই দুই এজেন্সির কাজ ওই ভোটার তালিকাতে কিছু লোক ঢোকানো নয়, তারা বেশ কিছু আড়কাঠির উপরে বাজি ধরেছে, বেশ কিছু অবাঙালি ব্যবসায়ী তাদের পয়সা জোগাচ্ছে, হ্যাঁ ওই চক্রান্তকে সামলাতে পারলে আগামী বিধানসভাতে শুভেন্দু অধিকারী লালবাতির গাড়ি চালিয়েও আসতে পারবেন না।