বিপ্লব কী করে হবে? কবে হবে? বিজেপি আধা না সিকি নাকি পুরো ফ্যাসিস্ট, তৃণমূল আর বিজেপি একই নাকি আলাদা এসব প্রশ্নের উত্তরে কমরেড সেলিম অ্যান্ড কোম্পানি ডানকুনির মাঠে যা যা বলেছেন তা বোঝা অসম্ভব, ওনারা নিজেরাও বুঝেছেন এমন দাবিও আমি করছি না। কিন্তু গতকাল তাঁদের ওই মঞ্চ থেকেই ভাষণে তাঁরা রাজ্য, দেশ এবং দুনিয়ার মানুষকে একটা পরিষ্কার মেসেজ অন্তত দিতে পেরেছেন যে এ রাজ্যে মহিলাদের কোনও নিরাপত্তাই নেই, উদাহরণ? হাতে গরম এক দুর্ঘটনা এবং এক মহিলার মৃত্যু। যেমন করে এক বিশাল মিথ্যের বিনির্মাণ হয়েছিল আরজি কর ধর্ষণ আর হত্যাকে ঘিরে, ঠিক সেরকম এক মিথ্যের পাহাড়কে এনে হাজির করা হল এক দুর্ঘটনায় মৃত যুবতীর মৃত্যুকে ঘিরে। রাজ্যের মানুষের কাছ থেকে সর্ব অর্থে বিচ্ছিন্ন বিধানসভাতে একজন প্রতিনিধিও যে দল পাঠাতে পারে না, তাঁদের সম্মেলনে চিংড়ি মাছের মালাইকারি হয়েছে এটাই তো খবর হওয়ার কথা এবং তা হয়েওছে। কিন্তু প্রকাশ্য জনসভাতে মানুষের কাছে নিজেদের দোষ ত্রুটিগুলোকে সামনে রেখে আগামী লড়াইয়ের কথা বলার আগেই তাঁরা ঢুকে পড়লেন আর এক মিথ্যের বিনির্মাণে। এবং সভা শেষেই চলে গেলেন সেই মৃতার বাড়িতে, ভাগ্য ভালো যে বিকাশ উকিল ছিলেন না, না হলে এই মৃত্যুর জন্য যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায়ী তা রাজ্যের মানুষজন জেনে ফেলতেন, অপরাধের চরিত্র, কারা দোষী আর তাদের সঙ্গে কীভাবে তৃণমূল জড়িত এবং সেই ঘটনাকে কীভাবে পুলিশ প্রশাসন ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে, সে সব তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খ বুঝিয়ে বলে দিতেন। তাই একটা দায় আবার আমাদেরই নিতে হয়, মানুষকে জানাতে, যে আসল ঘটনাটা কী? সেটাই বিষয় আজকে, কী হয়েছিল সেদিন মাঝরাতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে?
তথ্য হিসেবে যা জানা গেছে তা হল এক যুবতী, যিনি বিহারে নাচের কোনও অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন, যাঁর সঙ্গে তাঁর গাড়িতে ড্রাইভার সমেত চার যুবক ছিলেন। সেই গাড়ি দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যাওয়ার পথে পানাগড় বাজারে রাইস মিল মোড়ের কাছে উল্টে যায়, সেখানেই সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায় নামের ওই যুবতীর মৃত্যু হয়। সেই গাড়ির ড্রাইভার জানান যে পিছনে একটা ক্রেটা গাড়ির কিছু আরোহী গাড়িতে বসে মদ খাচ্ছিলেন, তাঁদের দিকে নোংরা ইঙিত করছিলেন, তাঁর মনে হয় সুতন্দ্রা ম্যাডামকে কিডন্যাপ করার চেষ্টা হচ্ছে, তিনি অবস্থা এড়িয়ে পালানোর জন্যই চেষ্টা করছিলেন, তখন পিছনের সাদা গাড়িটা ধাক্কা দেয় এবং দুর্ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: Aajke | মমতা বুঝিয়ে দিলেন ফাঁকা আওয়াজে তাঁকে নড়ানো যাবে না
ব্যস, এর থেকেই কমরেড সেলিম এবং আরও কয়েকজন এবং রাজ্যের সেই মিডিয়া যাঁরা ক’দিন আগেই আমি সোমা বলছির রোল প্লে করছিলেন তাঁরা বলতে শুরু করলেন রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার কী অবস্থা, মহিলারা নিরাপদ নয়। আসুন ব্যাপারটা একটু খতিয়ে দেখা যাক। একজন মহিলা বিহারে নাচতে যাবেন বা ইউপিতে সে তো তাঁর ব্যাপার, কিন্তু এই বাংলা থেকে যাওয়ার জন্য তিনি বের হলেন রাত ১০টা নাগাদ, অর্থাৎ তিনি একবারও মনে করেননি যে বাংলার এই রাস্তা মেয়েদের জন্য নিরাপদ নয়, বরং তিনি রাতে বাংলার রাস্তা পার করে ভোর নাগাদ বিহারে ঢোকার পরিকল্পনা করেছিলেন। মানে মৃতা একবারের জন্যও মনেই করেননি যে এই বাংলা মেয়েদের জন্য নিরাপদ নয়, তা ভাবলে তিনি ১০-১১টায় রওনা দিতেন না। দুই, তিনি এবং তাঁর ড্রাইভার সমেত চারজন পুরুষ মিলে রওনা দিয়েছিলেন, কোন আহাম্মক চার পুরুষ এবং এক নারীকে গাড়িতে দেখে ইভটিজিংয়ের কথা ভাববে? কিডন্যাপ করার কথা ভাববে, যদি না তাদের সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র থাকে। ছিল না, কারণ থাকলে তার ব্যবহার হত, বরং ঘটনার আকস্মিকতায় সেই ক্রেটা গাড়ির লোকজন গাড়ি ফেলে পালিয়েছে। অন্তত এক জায়গার প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া গেছে যেখানে সেই প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন যে ওই সাদা ক্রেটা গাড়ির কয়েকজনের সঙ্গে সুতন্দ্রাদের গাড়িতে বসে থাকা পুরুষদের তর্কাতর্কি হচ্ছিল। এবং শেষমেশ আমাদের হাতে সেই এক্সক্লুসিভ সিসিটিভি ফুটেজ যেখানে খুব পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যে সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের ওই গাড়ি সাদা রংয়ের ক্রেটা গাড়িটিকে ধাওয়া করছে। যারা কিডন্যাপ করতে চাইছে তাদেরকেই ধাওয়া করার ইতিহাস তো বিরল, কিন্তু ছবিতে পরিষ্কার সেই তাড়া করার ছবি দেখা গেল, সত্যিই ভয় পেলে তখনই গাড়ি ঘুরিয়ে থানা বা কোনও জায়গায় যেখানে মানুষ আছে সেখানে চলে যাওয়ার কথা। আসলে এখন এটা পরিষ্কার যে সম্ভবত ক্রেটা গাড়িটা সঙ্গে ছোটখাটো ধাক্কা লেগেছিল, তারপর ফাঁকা মাঝরাতের রাস্তায় রেষারেষি চলতে থাকে, এবং একটা সময়ে টাল না সামলাতে পেরে গাড়ি উল্টোয়, আর সম্ভবত সিট বেল্ট না বাঁধার ফলে যুবতী ছিটকে যান, মারা যান। গাড়ির বাকিরা অক্ষত। আর সেই ঘটনা ঢাকতে ড্রাইভার মিথ্যে বলা শুরু করে, কিন্তু বহু প্রমাণ আছে যা বলে দেয় এটা ছিল মধ্যরাতে বীরত্ব ফলানোর এক আস্ফালন, যার পরিণতি এক দুঃখজনক মৃত্যু। কিন্তু সেই ঘটনার এতটুকুও না জেনে দেশে যাঁরা বিপ্লব আনবেন তাঁরা এই ঘটনাকে রাজনৈতিক সুবিধের জন্য কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের সিসিটিভি ফুটেজ পরিষ্কার বলে দিচ্ছে যে দুটো গাড়ির মধ্যে রেষারেষির ফলেই এক দুর্ঘটনায় এক যুবতীর মৃত্যু হয়, কিন্তু সেই দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুকেই কি আবার রাজনীতির এক ইস্যু করে তুলে নিজেদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার তালে আছেন সিপিএম নেতারা? শুনুন মানুষজন কী বলছেন।
ন্যাড়া ক’বার বেলতলায় যায়? বুদ্ধিমান হলে একবারই যাবে, মাথায় বেল পড়ার ভয়েই বা সেই দুর্ঘটনা এড়াতেই সে আর বেলতলা-মুখো হবেই না। কিন্তু সেই ন্যাড়া যদি সিপিএম হয়? তাহলে সে বার বার যাবে। কারণ ভুল করার এক অদ্ভুত প্রবণতা এই দলের শিরায় শিরায় বহমান। এক ধর্ষণ আর মৃত্যুকে ক্ষমতা দখলের ইস্যু বানানোর পরে নেট রেজাল্ট কী হয়েছে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও ভালোভাবে তাঁর শিবিরকে গুছিয়ে নিতে পেরেছেন। তার থেকে শিক্ষা নিয়েই হঠাৎ এক দুর্ঘটনাকে ঘিরে নারীরা রাজ্যে নিরাপদ নয় বলে সিপিএম-এর প্রচার আবার ঘা খেতে বাধ্য, কারণ যথেষ্ট প্রমাণ, সিসিটিভি ফুটেজ বলে দিচ্ছে যে এটা ছিল এক দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা, যা ওই গাড়ির ড্রাইভার বা আরোহীরা অনায়াসে এড়াতে পারতেন। কিন্তু সিপিএম তো সিপিএম, সে সেই ন্যাড়া যে বার বার বেলতলাতে যায়, ইনফ্যাক্ট বেলতলাতেই তার বাড়ি।