ওয়েবডেস্ক: সোমবার খুশির ঈদে (Eid) মেতেছে মুসলিম সম্প্রদায়। পাড়ায় পাড়ায় খুশির আনন্দ। এদিনই মহাসমারোহে পুজো হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা (Chandrakona) পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নবকুঞ্জে। সেই উপলক্ষে বসেছে মেলা (Fair)। সকাল থেকেই মাইক্রোফোন হাতে মেলার তদারকি করছেন সেখ জুম্মন আলি। অন্যান্য বারের মতোই। তাঁর সঙ্গে মুসিলম সম্প্রদায়ের আরও অনেকে রয়েছেন। রমজান মাস শেষে ঈদের খুশির সঙ্গে পুজোয় মেলার আনন্দ মিশে একাকার। হৃদয়ের বার্তা একটাই, সম্প্রীতির (Harmony) মেলা। নব কুঞ্জে নব আনন্দের বসন্তের বাতাস বইছে। বছরের পর বছর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে এই মেলা। মেলা পরিচালনার জন্য ৪৫ জনের কমিটি রয়েছে। কমিটির সহ সম্পাদকের পদে রয়েছেন মুসলমান সম্প্রদায়ের সেখ জুম্মন আলি। বাংলার ১৩৫৭ বর্ষে গোপেশ্বর গোস্বামীর হাত ধরে মেলা শুরু হয়েছিল। ৯টি বেদি সম্বলিত নবকুঞ্জ। এটি চন্দ্রকোনার ঐতিহ্যের মেলা।
কথিত আছে, চন্দ্রকোনায় চন্দ্রকেতু রাজার রাজত্ব ছিল। চন্দ্রকেতু রাজার গুরুদেব ছিলেন প্রেমসখী গোস্বামী। গুরুদেবের আদেশানুসারে বর্তমান নবকুঞ্জতলায় একটি বটগাছের নীচে জীবন্ত সমাধিস্থ করা হয়েছিল তাঁকে। তাঁরই বংশধরেরা ওই সমাধিস্থলকে ঘিরে মুর্তি তৈরি করেন। পুজো অর্চনাও শুরু করেন। গোঁসাই অর্থাৎ গোস্বামী পরিবারের বংশধর গোপেশ্বর গোস্বামী ওই সমাধিস্থলকে ঘিরে ৯ টি বেদি নির্মাণ করেন। তিনিই প্রথম নবকুঞ্জ মেলার আয়োজন করেছিলেন। বর্তমানে এই মেলা প্রায় ৭৫ বছরে পদার্পণ করেছে। ন’দিন ব্যাপী চলে এই মেলা।
আরও পড়ুন: ‘আমি সবাইকে নিয়ে চলি, বিভাজন চাই না,’ রেড থেকে সম্প্রীতির বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
মেলার বাঁধাধরা দিনক্ষণ প্রতিবছর চৈত্র মাসের ১৩ তারিখ। ন’দিনই হয় হরিনাম সংকীর্তন। নানান দোকানের পসরা। নাগরদোলা সহ জমজমাট মেলা। মেলা কমিটির সহ সম্পাদক প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক সেখ জুম্মন। সভাপতি হচ্ছেন মেলার প্রতিষ্ঠাতার বর্তমান বংশধর মনোরঞ্জন গোস্বামী। যদিও উনি বাইরে থাকেন। মেলার কয়েকদিন আসেন। মেলা পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্যান্য সদস্যদের মতো জুম্মনকেও মুখ্য ভুমিকায় দেখে আসছেন এলাকাবাসী। শুধু জুম্মনই নন। মেলাতলা সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী মুসলমান সম্প্রদায়ের অনেকেই মেলায় স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ করেন। মেলায় যাতে কোনও বিঘ্ন না ঘটে সেদিকেও নজর রাখেন কমিটির সব সদস্য। মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও। দুই সম্প্রদায়ের মানুষই সুষ্ঠভাবে মেলা পরিচালনার জন্য অংশগ্রহণ করেন। জাতপাত ভুলে একে অপরের পরামর্শ, উপদেশ, সম্প্রীতির ভাবনায় এই মেলা জমজমাট হয়ে উঠে। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও সাড়ম্বরে শুরু হয়েছে মেলা। সোমবার মেলার পঞ্চম দিন। মেলা কমিটির অনুসন্ধান অফিসে চোখ পড়লেই দেখা মিলছে মাইক্রোফোন হাতে সেখ জুম্মনকে। তিনি কমিটির বাকি সদস্যদের সঙ্গে বসে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের শান্তিপুর্ণভাবে মেলা দেখার জন্য বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। জুম্মনের কথায়, “কেবল আমি না। আমার বাপ ঠাকুরদাও এই মেলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আর গোস্বামী তথা গোঁসাইদের শিষ্যের মতোই আমি সহ এই মেলায় সব সম্প্রদায়ের মানুষ ভিড় জমান। দোকানের স্টলও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের থাকে। এখানে কোনও ভেদাভেদ নেই। আমার ভালো লাগে আমার উপর বর্তমানে মেলার সিংহভাগ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সম্প্রীতির বার্তা দিলেন গোস্বামী পরিবারের সেবায়েত নরোত্তম গোস্বামী। একই সুর স্থানীয় বাসিন্দা সেখ সিরাজ, মেলা কমিটির সদস্য সমর পান, নিমাই লাহাদের কথাতেও। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এখানে আজানের সুর ও হরিনাম সংকীর্তন হাত ধরাধরি করে চলে।
দেখুন অন্য খবর: