কলকাতা: ২৬ এর ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। বছর পেরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন (WB Assembly Election 2026)। ভোট মানেই, জনতা জনার্দনের মন জেতার পালা। কর্মশ্রী-লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের বিপুল সাফল্য রয়েছে রাজ্য সরকারের ঝুলিতে। মঙ্গলবার ১৫ বছরে কাজের খতিয়ান (Mamata Delivers Development Report Card) দিয়ে ‘উন্নয়নের পাঁচালি’ পেশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee )। ২০১১ সাল থেকে অর্থাৎ গত ১৫ বছরে নানা সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন দফতরের কাজ কতটা এগিয়েছে রাজ্যে, তাতে রাজ্যবাসী কতটা উপকৃত হয়েছেন, সেই তথ্য-পরিসংখ্যান জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আগেকার দিনে সন্ধ্যেয় গ্রামে পাঁচালি পড়া হত। গ্রামের দিকে এখনও হয়তো হয়, আগের দিনের সেই গৌরবকে ধরে রাখতে এমন পাঁচালির ভাবনা।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “ক্ষমতায় আসার আগে জনগণকে আমরা কী বলেছিলাম, আর এই সময়ে আমরা কী কী কাজ করেছি, সেটা মানুষকে জানানো আমাদের নিজেদের দায়িত্বের মধ্যে বলে মনে করি। তাই এই রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করা হল।” অদিন মুখ্যমন্ত্রী যে রিপোর্ট কার্ড তুলে ধরেছেন তাতে দেখা গিয়েছে, ২০১১ থেকে ২০২৫। রাজ্যের ক্ষমতায় বসার পর থেকেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, কৃষক বন্ধু, পড়ুয়াদের ক্রেডিট কার্ড-সহ মোট ৯৪টি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করেছে সরকার।রাজ্যের স্বাস্থ্য, শিক্ষা থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ করে চলেছে। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, বিরোধীরা কথায় কথায় বলেন, বাংলায় উন্নয়ন হয়নি। এদিন সরকারের গত ১৫ বছরের রেকর্ড কার্ড তুলে ধরে বিরোধীদের অভিযোগেরও জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: ‘কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে কর্মশ্রী’, আর কী বললেন মমতা?
এদিন কাজের খতিয়ান দেওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে ১০০ দিনের কাজ বা ‘কর্মশ্রী’। এই মুহূর্তে সেই প্রকল্পে কর্মদিবস বেড়ে দাঁড়িয়েছে গড়ে ৭০ দিন। যা কেন্দ্রের তুলনায় বেশি। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, গত ১৫ বছরের নিরিখে রাজ্যের জিডিপি বৃদ্ধি হয়েছে ৪.৪১ গুণ, কর আদায় ৫ গুণ হয়েছে। রাজ্যজুড়ে অসংখ্য ছোট ছোট কর্মসংস্থান ও স্বনির্ভর প্রকল্প হয়েছে, যা পরিসংখ্যানের নিরিখে অত্যন্ত ভালো বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজ্যের অন্যতম জনপ্রিয় সামাজিক প্রকল্প ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর সুবিধা পেয়েছেন ২ কোটি ২১ লক্ষ মহিলা, যার জন্য খরচ হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। ২০১৩ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত দারিদ্রসীমার উপরে ১ কোটি ৭২ লক্ষ মানুযকে আনা হয়েছে। রাজ্যে ৪০ লক্ষ বেকারত্ব হ্রাস পেয়েছে। ২ কোটি ৪৫ লক্ষ পরিবার স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধাপ্রাপ্ত। দুয়ারে রেশন প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপ্ত ৭ কোটি ৪১ লক্ষ। অর্থনৈতিক করিডরে কর্মসংস্থান ১ লক্ষ। বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালিতে ২০০০ সংস্থায় ২ লক্ষ কর্মসংস্থান। আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্প তালুকের ২২০০০ কোটির বিনিয়োগ।
এছাড়াও মমতা জানান, ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পে ১ লক্ষ ৩০ লক্ষ। কন্যাশ্রীর সুবিধাভোগী ১ কোটির বেশি। রূপশ্রীর সুবিধা পেয়েছেন ৫৫৯৮ কোটি। দুয়ারে রেশন ৭ কোটি ৪১ লক্ষ সুবিধা প্রাপ্ত। রাজ্যের পরিকাঠামো উন্নয়নের খাতে ৭০ হাজার কোটি খরচ হয়েছে। ‘বাংলার বাড়ি’ তৈরির টার্গেট ১ লক্ষ। ২৩ জেলায় শপিং মল, ৫১৪টি কর্মতীর্থ। গঙ্গাসাগর সেতু তৈরির ব্যয় ১ হাজার ৭০০ কোটি। পথশ্রীর টার্গেট ৭ হাজার কিলোমিটার রাস্তা (৫ হাজার কিলোমিটার সম্পূর্ণ)। ২৪ কোটি দেশি বিদেশি পর্যটক এসেছে বাংলায় শুধু ২০২৫ এর অক্টোবরে। দেশের মধ্যে এখন দ্বিতীয়। এদিন কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়েও সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার কথায়,জিএসটি বাবদ কেন্দ্র রাজ্যেরও টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে। তারপরও রাজ্যের প্রাপ্য প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা আটকে রয়েছে। তা সত্ত্বেও নিজস্ব উদ্যোগে আমরা কর্মশ্রী, বাংলার বাড়ির মতো প্রকল্পগুলি চালু রেখেছি। ”বাংলা এখন সারা দেশের মডেল।”
অন্য খবর দেখুন







