Friday, September 26, 2025
বাঙালি কাউন্টডাউন
HomeScrollদেবীদুর্গা 'দশভুজা' নন, 'দ্বিভুজা' মঙ্গলচন্ডী বা অভয়া রূপে পূজিত হন
Puja Story

দেবীদুর্গা ‘দশভুজা’ নন, ‘দ্বিভুজা’ মঙ্গলচন্ডী বা অভয়া রূপে পূজিত হন

মেদিনীপুরের মুখার্জি বাড়ির পুজো এবার ৩০৬ বছরে পদার্পণ করল

সঞ্জীব কুমার দাস, মেদিনীপুর: দেবী দুর্গা (Devi Durga) এখানে ‘দশভুজা’ নন, ‘দ্বিভুজা’ মঙ্গলচন্ডী বা অভয়া রূপে পূজিত হন। তিনি এখানে মহিষাসুরমর্দিনী রূপেও ধরা দেন না, তাই মায়ের সঙ্গে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ ও সিংহ থাকলেও, মহিষাসুর থাকে না। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে পুজো হয়। পাঁচদিন ধরে বাড়িতে নিরামিষ রান্নাবান্না হয়। মেদিনীপুর (Midnapore city) শহরের চিড়িমারসাই (Chirimarsai) এলাকার মুখার্জি (বা, ব্যানার্জি) বাড়ির পুজো এবার ৩০৬ বছরে পড়ল বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।

জানা যায়, দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজো শুরু করেছিলেন জ্ঞানেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি। পরবর্তী সময়ে দুর্গাচরণ ব্যানার্জির এবং রাম ব্যানার্জির হাত ধরে এই পুজোর সুনাম ছাড়িয়ে পড়ে জেলাজুড়ে। তবে, রাম ব্যানার্জির পুত্র সন্তান না থাকায়, তাঁর পিসির বংশধরেরা গত ৫০-৬০ বছর ধরে পুজো করছেন।

তাঁরা যেহেতু মুখার্জি পরিবারের সন্তান, তাই একসময়ের ব্যানার্জি বাড়ির পুজো এখন মুখার্জি বাড়ির পুজো হিসেবেই জনপ্রিয়। পুজোর দায়িত্বে এখন আছেন পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন-  চিল্কিগড় রাজবাড়ির কুলদেবী কনক দুর্গার পুজো

পুজোর জৌলুস কমলেও, এই পুজোকে কেন্দ্র করে উন্মাদনা কমেনি। পরিবারের সদস্যরা তো বটেই, স্থানীয় বাসিন্দারাও এই পুজোয় সামিল হন। পরিবারের সদস্য-সদস্যাদের কথায়, ষষ্ঠীতে বোধন এবং সপ্তমীর দিন হোম – যজ্ঞ শুরু হয়। চারদিন ধরে যজ্ঞ চলে। যজ্ঞের আগুন নেভে না। এখানে দুর্গা মা নিরস্ত্র। পুজোর পাঁচটা দিন নিরামিষ খাওয়ার রীতি রয়েছে। শহরের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই পুজো দেখতে আসেন।

গৃহকর্তা, পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘মা খুবই জাগ্রত। বাড়িতেই ঠাকুর তৈরি করা হয়। মাকে পাঁচ দিন ধরে নিরামিষ খাবার ও নানা ধরনের নৈবেদ্য নিবেদন করা হয়। সপ্তমীর দিন লাউয়ের ঘন্ট, অষ্টমীর দিন মোচার ঘন্ট ও নবমীতে ফুলকপি, বাঁধাকপি সহ পঞ্চব্যঞ্জন দেওয়া হয় দুর্গা মায়ের সামনে। নবমীর দিন হয় কুমারী পুজো।’

তিনি এও জানান, জাগ্রত এই মা প্রতি বছর দশমীর দিন সিঁদুরের থালার উপর রেখে যান কোন সংকেত। আর মায়ের সেই আশীর্বাদ-ধন্য সিঁদুর পাঠানো হয় বিদেশেও, আত্মীয়-পরিজনদের কাছে। আগে পুজোর সময় রথ বের করা হলেও, এখন আর তা সম্ভব হয়না!

পার্থপ্রতিম বাবুর দুই মেয়ে ও এক ছেলে। তাঁরা বলেন, স্বপ্নাদেশ অনুসারে সিংহের রঙ সাদা রাখা হয়। যা শান্তির বার্তা বহন করে। একইসঙ্গে রীতি অনুসারে অষ্টমীতে মা দুর্গার মায়ের নিচে রুপোর থালাতে সিঁদুর রাখা হয়। পরে দশমীর দিন সেই থালাতেই মা দুর্গা বিভিন্ন সংকেত দিয়ে যান।

পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে ব্যানার্জী পরিবারের সদস্যদের অনেকে বিদেশে থাকেন। ইংল্যান্ডেও মায়ের সিঁদুর পাঠানো হয়। এই পুজোতে কোনও বলি প্রথা নেই। পুজোর মাধ্যমে শান্তির বার্তা দেওয়া হয়।

মা দুর্গা ছাড়াও লক্ষ্মী, সরস্বতী, গনেশ ও কার্তিক ঠাকুরের হাতেও কোনও অস্ত্র থাকে না। বাড়ির পুরোহিত অজিত ভট্টাচার্য বলেন, “মহিষাসুরকে বধ করার পর মায়ের যে শান্তির রূপ তাই অভয়া বা মঙ্গলচন্ডী রূপে পুজো করা হয়। মা এখানে সংহারক নন, মাতৃরূপিনী। স্বর্গে ফিরে যাওয়ার আগে ভক্তদের আশীর্বাদ করে যান।”

দেখুন আরও খবর-

Read More

Latest News