কলকাতা: ২০২১ এর চার বছর পর বাংলায় ফের বিধানসভা ভোট আসন্ন। একুশের প্রত্যেক জনসভা থেকে মোদিকে বলতে শোনা গিয়েছিল দিদি…ও দিদি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি নিশানা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। এবার ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন (WB Assembly Election 2026)। তার আগেই বঙ্গে এসেছেন নরেন্দ্র মোদি। শুধু তাই নয় ৯ বছর পর আলিপুরদুয়ারে জনসভা করলেন প্রধানমন্ত্রী। আসন্ন নির্বাচনের আগে তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় ধরাশায়ী বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন অধরা থেকে গিয়েছে। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে ২৬ এর ভোটের আগে এখন থেকেই কোমর বেঁধে বিজেপি কর্মীদের নামতে নির্দেশ মোদির। এদিন দুপুরে বক্তৃতার শুরু বাংলাতেই করলেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্যের শুরুতেই রাজ্যে তৃণমূল সরকারকে নির্মম আখ্যা দিয়ে বাংলায় ৫ সংকটের কথা ব্যাখ্যা করলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বঙ্গে বিজেপি সরকার এলে কোনও দুর্নীতি চলবে না। বাংলার গৌরব ফিরিয়ে আনতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক সভায় মোদির মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা দিদির নাম একবারের জন্য মুখেও আনলেন না। রাজ্যে তৃণমূল সরকারকে নির্মম আখ্যা দিয়ে বাংলায় ৫ সংকটের কথা ব্যাখ্যা করলেন প্রধানমন্ত্রী। সভায় প্রধানমন্ত্রী (Narendra Modi in Alipurduar) বলেন, “বর্তমান সময় বাংলার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বহু রকমের সংকটে বাংলাকে জেরবার। সমাজে হিংসা ও অরাজকতা। মা বোনেদের নিরাপত্তাহীনতা ও তাঁদের উপর অত্যাচার। তিন নম্বর উদ্বেগজনক। সেটি হল, নতুন প্রজন্মের মধ্যে হতাশা ও কর্মসংস্থার তথা জীবিকার অভাব। বাংলায় বেলাগাম দুর্নীতি। তার ফলে সরকারি ব্যবস্থার উপর থেকে মানুষের বিশ্বাসই উঠে যাচ্ছে। গরিবের অধিকার ছিনিয়ে নিতে তৃণমূলের স্বার্থপর রাজনীতি”। তৃণমূল সরকার রাজ্যের মানুষের উন্নয়নের থেকে রাজনীতি করায় ব্যস্ত।
মোদির কথায়, “মুর্শিদাবাদ মালদায় যা হয়েছে তা এখানকার সরকারের নির্মমতার উদাহরণ। মুর্শিদাবাদে, মালদহে যা হয়েছে তা সরকারের নিমর্মতার উদাহরণ। তুষ্টিকরণের নামে গুণ্ডাগিরিকে খোলা ছাড় দেওয়া হয়েছে। শাসক দলের বিধায়ক, কাউন্সিলর যদি লোকেদের বাড়ি পোড়ায় আর পুলিশ তামাশা দেখছে। বাংলার মা-বোনেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এখানকার সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত। তিনি বলেন, “এখানে এই যে গরিব মানুষের উপর রোজ অত্যাচার হচ্ছে, তাতে বাংলার সরকারের কোনও তাপ উত্তাপ নেই। প্রতি বার আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। এ ভাবে কি কোনও সরকার চলতে পারে?
আরও পড়ুন:
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির প্রসঙ্গও তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দুর্নীতির সবথেকে খারাপ প্রভাব যুব সম্প্রদায়ের উপর পড়ে। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। তৃণমূল সরকার হাজার হাজার শিক্ষকের পরিবারকে বরবাদ করে দিয়েছে। তাঁদের ছেলেমেয়েকে অসহায় করে দিয়েছে, অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। এ শুধু কয়েক হাজার ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা নয়, গোটা বাংলায় শিক্ষা ব্যবস্থা ওরা তছনছ করে দিয়েছে। এ হল মহা পাপ!তিনি বলেন, চা বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছে রাজ্য সরকার। মজুররা কাজ হারাছে, বকেয়া পাচ্ছে না। তৃণমূল সরকার গরিব আদিবাদিদের কোনও উন্নয়ন করছে না। তৃণমূল সরকারের আদিবাদিবাসীদের সম্মান করে না। বিজেপি সরকার গরিবদের মাথার উপর ছাদ দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে দুর্নীতির জন্য গরিবরা মাথার উপর ছাদ পাচ্ছে না। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প এখানে চালু হতে দেওয়া হয়নি। এখানকার লোকেরা বাইরে গেলে ওই প্রকল্পের সুবিধা পান না।বাংলা আর নিমর্মতার সরকার চায় না। কিন্তু এঁরা নিজেদের ভুল মানতেই চাইছেন না। বক্তৃতার শেষে দলের নেতা কর্মীদের উদ্দেশে মোদি বলেন, এবার দায়িত্ব অনেক। একমাত্র বিজেপিই যে সুশাসন ও সমৃদ্ধির গ্যারান্টি দিতে পারে। এই নির্মম সরকারের থেকে মুক্তি দিতে পারে তা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাতে হবে। তাই আরও জোরদার ভাবেই কাজে লাগতে হবে। সময় নষ্ট করার সময় আর নেই।
দেখুন ভিডিও
