জয়জ্যোতি ঘোষ
২০০৪-এর মার্চ মাস। পাকিস্তান (Pakistan) সফরে ভারতীয় (India) দল। এই সময় একটা ড্রিম ফেজের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল টিম ইন্ডিয়া। ইতিপূর্বে পাকিস্তানের মাটিতে ওয়ান ডে সিরিজ (One Day Series) জিতে স্বপ্নের উড়ানে সৌরভের টিম ইন্ডিয়া। মুলতানে (Mooltan Test) প্রথম টেস্টেও ভারত সেখান থেকেই শুরু করল যেখান থেকে ওয়ান ডে সিরিজ শেষ করেছিল। টেস্টের প্রথম দিনই দ্বিশতরান করেন বীরেন্দ্র শেহবাগ। তবে দ্বিতীয় দিন মুলতান সাক্ষী হয় এমন দৃশ্যের যা ভারতের চিরকালীন ক্রিকেট বিতর্কে জায়গা করে নিয়েছে। কোথাও মুলতানে শেহবাগের করা ত্রিশতরানকেও ছাপিয়ে যায় এই বিতর্ক! ১৯৪ নট আউট শচীন (Sachin Tendulakr)। অপর প্রান্তে থাকা যুবরাজ আউট হতেই স্ট্যান্ডিং ক্যাপ্টেন রাহুল দ্রাবিড় ড্রেসিংরুমে হাত দেখিয়ে ডেকে নেন। ডিক্লেয়ার ঘোষণা করে দেয় ভারত। শচীন কল্পনাও করতে পারেননি এমন কিছু হতে চলেছে। নিজে গিয়ে আম্পায়ারের সঙ্গে কথাও বলেন মাস্টার। কিন্তু আম্পায়ার জানালেন এটা সত্যি যে ভারত ডিক্লেয়ার ঘোষণা করেছে। এবার সবথেকে বড় প্রশ্ন- শচীন ১৯৪ অপরাজিত দেখেও কেন ডিক্লেয়ার দিল ভারত?
লাহোরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শেষ ওয়ান ডে খেলার সময় চোট পান সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তা সত্ত্বেও দলের সঙ্গে মুলতানে যান মহারাজ। যদিও মুলতান টেস্ট খেলেননি তিনি। ভারতীয় ড্রেসিংরুমে তিন মাথা- জন রাইট, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়- শচীনের দ্বিশতরানের ৬ রান আগে ভারতের ডিক্লেয়ারেশনের সিদ্ধান্ত কার মস্তিষ্কপ্রসূত? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এত বছর পরও ধোঁয়াশা রয়েই গিয়েছে।
আরও পড়ুন: খেলরত্ন পাচ্ছেন মনু ভাকের, জানাল ক্রীড়ামন্ত্রক
মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, দ্বিতীয় দিন চা-বিরতির সময় ভারতীয় ড্রেসিংরুম থেকে বার্তা পাঠানো হয় যে ১৫ ওভারের পর ডিক্লেয়ার দেবে ভারত। তাই দ্রুত রান তোলার কথা বলা হয়। দ্বিতীয় দিন ম্যাচ শেষে সেই সফরের ভারতীয় দলের ম্যানেজার অমৃত মাথুরের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে দেখা যায় লিটল মাস্টারকে। এরপর আসল টুইস্ট দেখা যায় শচীনের সেদিনের করা প্রেস কনফারেন্সে। শচীনের বডি ল্যাঙ্গুয়েজই বলে দিচ্ছিল সব কথা। স্পষ্ট বলেন, ‘’ডিক্লেয়ারেশন যে দিতে চলেছি আমরা জানা ছিল না। আমাকে বলা হয়েছিল ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে। ওভার প্রতি চার রান করে নিচ্ছিলাম যেটা যথেষ্ট ইতিবাচক।”
প্রসঙ্গত, ভারত চা-বিরতির পর ১৫ ওভারও ব্যাটিং করেনি। ১৩.৫ ওভার ব্যাটিং করে। যুবরাজ আউট হতেই ডিক্লেয়ারেশন! পরবর্তীতে যুবরাজ বলেন, “আমি আউট হয়েছি সেটার জন্য খারাপ লাগছিল না। শচীন পাজি যে বিরাট ক্ষেপে রয়েছেন সেটা ভেবেই ভয় লাগছিল।” শোনা যায় ড্রেসিংরুমে গিয়ে শচীন দ্রাবিড়কে বলেছিলেন- ‘’লিভ মি এলোন!”
ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মঞ্জরেকর বলেছিলেন, “ভারতীয় ক্রিকেটের দুর্দান্ত মুভ। এই প্রথম ব্যক্তিস্বার্থ থেকে দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়াটাকে প্রশংসা করতেই হবে।” শচীন-সঞ্জয়ের সম্পর্কের ভাঙন তখন থেকেই।
আজ এত বছর পর পিছনে ফিরে তাকালে মনে হয় ডিক্লেয়ারেশনের সিদ্ধান্ত হয়ত সঠিক ছিল না। ম্যাচ চারদিনে জিতে যায় ভারত। শচীন দ্বিশতরানের জন্য ২-৩ ওভার অপেক্ষা করলেও ম্যাচের ফলাফলের কিন্তু কোনও পরিবর্তন হত না। পরবর্তীতে শচীন তাঁর আত্মজীবনীতে লেখেন- “ That was a senseless decision.”
দেখুন অন্য খবর: