Saturday, August 2, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: জাতীয় পতাকা, ত্রিবর্ণ পতাকার ৭৫ বছর

চতুর্থ স্তম্ভ: জাতীয় পতাকা, ত্রিবর্ণ পতাকার ৭৫ বছর

Follow Us :

অনেকেই জানেন না, আবার কিছু আনুষ জেনে ফেলেছেন, আমরা এখন অমৃতকালে রয়েছি৷ হ্যাঁ ছোট্টবেলায় পড়া অতীত, ভবিষ্যৎ, বর্তমান কালের বাইরে এই অমৃতকাল৷ যে কাল খন্ডে আদানি, আম্বানির ১ মিনিটের রোজগার কয়েক কোটি আর ধনো মুর্মু বা সুধন্য জানার রোজগার মাসে ৪৫০০ টাকা। সেই অমৃতকালেই জানা গেল দেশের ৭১% মানুষ পুষ্টিকর খাবার পায় না। জানা গেল দেশের ৮০ কোটি মানুষ এখনও ফ্রি রেশনের দিকে তাকিয়ে থাকেন এবং তারই মধ্যে নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করলেন, ১৩ থেকে ১৫ অগাস্ট হর ঘর তিরঙ্গা, প্রত্যেক ঘরে জাতীয় পতাকা তোলা হবে৷ কেবল তাই নয়, বিজেপি দলের জাতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডা ওই ১৩ থেকে ১৫ অগাস্ট, বিজেপি কর্মীদের জাতীয় পতাকা, তিরঙ্গা ঝান্ডা নিয়ে রাস্তায় নামতে বলেছেন৷ নির্দেশ দিয়েছেন, দলের কর্মীদের রঘুপতি রাঘব রাজা রাম গাইতে হবে, গাইতে হবে জাতীয় গান, ন্যাশনাল সং বন্দেমাতরম।

২২ জুলাই, ১৯৪৭ সালে সংবিধান সভায় আমাদের জাতীয় পতাকা গৃহীত হয়৷ সেদিন আজকের এই জাতীয় পতাকার প্রস্তাব পেশ করেছিলেন জহরলাল নেহরু৷ তিনি বলেছিলেন, We thought of a Flag which would in its combination and in its separate parts would somehow represent the spirit of the nation, the tradition of the nation, that mixed spirit and tradition which has grown up through thousands of years in India. So, we devised this Flag. Perhaps I am partial but I do think that it is a very beautiful Flag to Look at purely from the point of view of artistry, and it has come to symbolise many other beautiful things, things of the spirit, things of the mind, that give value to the individual’s life and to the nation’s life, for a nation does not live merely by material things, although they are highly important. বলেছিলেন, এই জাতীয় পতাকা দেশের ঐতিহ্যকে, দেশের বিভিন্ন অংশের মানুষের মিলিত শক্তিকে তুলে ধরেছে। না নেহরুজি কোনও রঙের ব্যাখ্যায় যাননি৷ পরিষ্কার বলেছিলেন, জাতীয় পতাকা এক অপূর্ব শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই তৈরি হয়েছে। সেদিন এই প্রস্তাবের বিপক্ষে সংসদের ভেতরে মাত্র তিনজন ছিলেন, এইচ ভি কামাথ, তিনি চেয়েছিলেন চক্রের মধ্যে স্বস্তিকা চিহ্ন থাকুক, কিন্তু পতাকা পেশ করার পরেই তিনি তাঁর প্রস্তাব তুলে নিয়ে এই জাতীয় পতাকাকেই সমর্থন করেন। আর একজন সদস্য তাজমুল হোসেইন, প্রস্তাবের বিপক্ষে ছিলেন, কিন্তু সেদিন তিনি হাজিরই ছিলেন না।

প্রস্তাবের বিপক্ষে শেষের জন ছিলেন প্রবীন কংগ্রেস নেতা পি এস দেশমুখ৷ তিনি চেয়েছিলেন কংগ্রেসের পতাকার মতই জাতীয় পতাকাতে থাকুক চরখা, যা গান্ধিজীর দেখানো সততা ও নিষ্ঠার প্রতীক৷ কিন্তু সেদিন বলতে উঠে তিনি নিজের প্রস্তাব ফিরিয়ে নিয়ে নেহরুজির পেশ করা প্রস্তাবকেই সমর্থন করেন, সেদিন এই আলোচনার শেষ বক্তা ছিলেন সরোজিনী নাইডু৷ তিনি বলেছিলেন, I as a poet and as a woman, I am speaking prose to you when I say that we women stand for the unity of India. Remember this Flag there is no prince and there is no peasant, there is no rich and there is no poor. There is no privilege there is only duty and responsibility and sacrifice. Whether we be Hindus or Muslims, Christians, Sikhs or Zorostrians and others, our Mother India has one undivided heart and one indivisible spirit. Men and women of reborn India. rise and salute this Flag I bid you, rise and salute the Flag. বলেছিলেন এই জাতীয় পতাকা কোনও রাজপুত্র বা কৃষকের নয়, বড়লোক বা গরিবের নয়, হিন্দু, মুসলমান, ক্রিস্টান, শিখ, জরুথ্রিস্টিয়ান বা অন্যান্যদের, নতুন জন্ম হওয়া ভারতবর্ষের প্রত্যেকের৷ আসুন আমরা এই পতাকাকে সন্মান জানানোর জন্য উঠে দাঁড়াই।

হ্যাঁ সংসদে উপস্থিত প্রত্যেক সদস্য উঠে দাঁড়িয়েছিল, কোনও বিরোধিতা ছাড়াই ২২ জুলাই আমাদের জাতীয় পতাকা গৃহীত হয়েছিল। সেই হিসেব ধরে আমাদের জাতীয় পতাকার বয়স হল নয় নয় করেও ৭৫। আচ্ছা সেদিন সংসদের বাইরে বসে কংগ্রেস বিরোধী, জাতীয় রাজনীতির অন্য শক্তিরা কী করছিল? কমিউনিস্ট পার্টি সোজা জানিয়ে দিয়েছিল, এটা কোনও স্বাধীনতাই নয়, ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়৷ অতএব জাতীয় পতাকার প্রশ্নই নেই, দীর্ঘদিন কমিউনিস্টরা স্লোগান দিয়েছেন, লাল কিলে পর লাল নিশান মাংগ রহা হ্যায় হিন্দুস্তান। অর্থৎ জাতীয় পতাকা নয়, ত্রিবর্ণ পতাকা নয়, লাল পতাকাতেই ছিল তাঁদের আস্থা। না প্রমোদ দাশগুপ্ত, মুজফফর আহমেদ, বি টি রণদিভেকে কোনওদিনও তেরঙ্গা তুলতে দেখা যায়নি।

বহু পরে জ্যোতি বসু এই প্রথা ভাঙেন৷ প্রাগম্যাটিক কমিউনিস্ট হিসেবে তেনার নাম থেকে গিয়েছে। ওদিকে হিন্দু মহাসভা, রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ, আরএসএস, এনারা সাফ জানিয়েছিলেন, তেরঙ্গা আমাদের জাতীয় পতাকা হতেই পারে না৷ তিন সংখ্যাই তো অপয়া, বলেছিলেন আমাদের তো ভাগওয়া ঝান্ডা আছে, সেটা ছেড়ে খামোখা তেরঙ্গা কেন? তাঁরা সেদিন সংবিধানের বিরোধিতা করেছিলেন, জাতীয় পতাকার বিরোধিতা করেছিলেন, ধর্মনিরপেক্ষতার বিরোধিতা করেছিলেন, এবং শেষমেষ ভিনায়ক দামোদর সাভারকারের নেতৃত্বে ষড়যন্ত্র শুরু হয়, সাভারকার, নাথুরাম গডসে, নারায়ন আপ্তে একই বিমানে চেপে দিল্লিতে হিন্দু মহাসভার মিটিং এ আসেন, গান্ধী হত্যার পরিকল্পনা হয়৷ ৩০ জানুয়ারি ১৯৪৮ গান্ধিজীকে খুন করা হয়।

আগামী বছর সে ঘটনাও পা দেবে ৭৫ বছরে। সেদিন জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কথা বলা আরএসএস বা হিন্দু মহাসভার লোকজন আজ হর ঘর মে তেরঙ্গা দিবস পালন করার কথা বলছেন৷ আগামী বছর গান্ধিজীর কথা বলবেন। কেন? আরএসএস–বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে গিয়েছে, দেশের যাবতীয় সাংবিধানিক, প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ কর্তৃত্ব তেনাদেরই হাতে। যা যা লেখা ছিল তাঁদের সংগঠনের কর্মসূচিতে, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ, তালাকের বিরুদ্ধে বিল, বাবরি মসজিদ ভেঙে রামমন্দির নির্মাণ, সব করেছেন৷ আগামী নির্বাচনের আগেই ইউনিফর্ম সিভিল কোডের বিল আসবে লিখে রাখুন৷ তাঁদের চাপ আর ভারে বিরোধী দলগুলো ছিন্নভিন্ন৷ সে সব দলে রাজনীতি করতে আসা ক্ষমতালোভী নেতারা টপ করে গিলে নিচ্ছেন বিজেপির টোপ৷ সবই তো তাঁদের ফেভারে, তাহলে এই জাতীয় পতাকা নিয়ে মাতামাতি করার দরকার কেন পড়ছে?

একটা বিজেপির সমাবেশ দেখাতে পারবেন, যেখানে সমর্থকদের হাতে জাতীয় পতাকা আছে? সরকারি অনুষ্ঠানেও গেরুয়া পাগড়ি পরে আসা এই দলের নেতারা আজ হঠাৎ তেরঙ্গা নিয়ে মাঠে কেন? প্রথমত এই আরএসএস, হিন্দু মহাসভা, বিজেপি নেতারা বহু জায়গাতেই বন্দেমাতরম দেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়া উচিত বলেছেন, এক যুক্তরাষ্ট্র, ফেডারেল ধাঁচের সংবিধানের বদলে এক কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত সংবিধানের কথা বলে থাকেন এবং শেষমেষ এক হিন্দু রাষ্ট্র চান৷ যেখানে সংখ্যালঘুরা নেহাতই দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকই হিসেবে থেকে যাবে। ওনারা সেই লক্ষ্যেই চলেছেন, কিছুটা অর্জন করা হয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু তারপরেও দেখছেন যে ওই তথাকথিত হিন্দু ভোটের অন্তত ৮০% পেতে হবে তাঁদের, সেই লক্ষ্য থেকে তাঁরা অনেকটাই দূরে, এখনও হিন্দু জনসংখ্যার ৫০% এর কিছুটা বেশি তাঁরা তাঁদের ধারে নিয়ে যেতে পেরেছেন, এখনও খানিকটা পথ চলা বাকি।

নারা তাড়াহুড়ো করতে চান না, ওপরের নেতারা কিছু নিয়মমাফিক নির্দেশ দিতে থাকবেন, তার কতটা পালনীয়, তা ঠিক করে দেবেন নীচের নেতারা, আরএসএস প্রচারকরা। কী ভাবছেন? ওই বিজেপি নেতা কর্মীরা ১৩ থেকে ১৫ অগাস্ট রাস্তায় গাইবেন ইশ্বর আল্লা তেরো নাম, সবকো সন্মতি দে ভগবান? একজনও না। হ্যাঁ মাথায়, গলায় গেরুয়া ফেট্টি জড়িয়ে তেরঙ্গা গায়ে দেবেন, বন্দে মাতরম গাইবেন, কেউ না গাইলে মারপিট করবেন, ওনাদের আপাতত ধর্মের জিগিরের সঙ্গে চাই জঙ্গি জাতীয়তাবাদের ককটেল, হ্যাঁ সেটাই কারণ, হঠাৎ ওনাদের দেশভক্ত সাজার হিড়িক পড়েছে, ওনারা তেরঙ্গার কথা বলছেন, যে তেরঙ্গা এই সেদিন পর্যত ওনাদের নাগপুরের সদর কার্যালয়ে তোলাও হত না। দেশের মানুষের কাছে দু’দিক থেকে নিজেদের অস্তিত্বকে তুলে ধরতে চায় আরএসএস – বিজেপি। প্রথম হল দেখো আমরাই হলাম হিন্দুদের রক্ষাকর্তা, হিন্দু খতরে মে হ্যায়। দ্বিতীয়টা হল, আগে সবাই ছিল দেশদ্রোহী, এই আমরা এসছি আসলি দেশভক্ত। আর কে না জানে দেশভক্ত সাজতে হলে কাঁধে তেরঙ্গা রাখতেই হবে, নরেন্দ্র মোদি, আরএসএস – বিজেপি সেই নির্দেশই দিয়েছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Durgapur Incident | কলকাতা টিভি’র খবরের জের, ‘বাংলা বলছে’ শো-এর পরই গ্রে/ফ/তার ২ গোরক্ষক
00:00
Video thumbnail
Politics | ভোটার লিস্ট সংশোধন নিয়ে তৃণমূল পড়বে ঝাঁপিয়ে
05:49
Video thumbnail
Politics | ভোট চুরির অভিযোগ এখন রাহুল গান্ধীর বি/স্ফো/রণ
04:24
Video thumbnail
Donald Trump | ট্রাম্পের নির্দেশে রাশিয়ায় পারমাণবিক সাবমেরিন
03:27
Video thumbnail
Politics | বিহার ছাড়ো নীতীশ-সরকার, মহাআন্দোলন জোরদার
06:14
Video thumbnail
Stadium Bulletin | প্রসিদ্ধ-সিরাজের দাপট! জমজমাট ওভাল টেস্ট
18:17
Video thumbnail
Narendra Modi | রামমন্দিরে ভগবানের নামেও লুট, এই সাংসদের ভাষণের জেরেই কি রাজ্যসভায় গেলেন না মোদি?
04:08
Video thumbnail
Donald Trump | ট্রাম্পের নির্দেশে পা/রমা/ণবিক সাবমেরিন পাঠাল আমেরিকা, রাশিয়াও তৈরি
03:27
Video thumbnail
Donald Trump | গদগদ পাক প্রেম, তেল খুঁজতে গিয়ে মিলল থ্রে/ট, এবার কী করবেন ট্রাম্প?
02:54
Video thumbnail
Politics | বিজেপি নেতারা এইবার ক্লাস করবে ভদ্রতা শেখার
05:38

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39