Tuesday, August 19, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: মোদিজীর পুজো, মন্ত্রোচ্চারণের পর নতুন সংসদ ভবনের ওপর অশোক স্তম্ভ...

চতুর্থ স্তম্ভ: মোদিজীর পুজো, মন্ত্রোচ্চারণের পর নতুন সংসদ ভবনের ওপর অশোক স্তম্ভ বসানোর কাজ শুরু হল

Follow Us :

ইউনাইটেড নেশসন বলছে, দেশের ৯৭ কোটি মানুষের সুষম খাবার জোটে না৷ তো সেই হাঘরেদের চোখের সামনে মোদিজী আর এক কীর্তি স্থাপন করলেন৷ কোটি কোটি কোটি টাকা দিয়ে যে নতুন সংসদ ভবন তৈরি হচ্ছে, তার ওপরে ৯৫০০ কেজির, ৬.৫ মিটার লম্বা অশোক স্তম্ভ বসানো হবে, তিনি কাল পুজোপাঠ করে, মন্ত্রোচ্চারণ করে সেই অশোক স্তম্ভ বসানোর সূচনা করলেন। সেন্ট্রাল ভিস্তা, যেখানে নতুন সংসদ ভবন তৈরি হবে, তার ভূমিপুজন আগেই হয়েছে৷ এই অশোক স্তম্ভ তার মাথার ওপর বসবে কি না৷ তাই সম্ভবত ব্যালেন্স ঠিক রাখতে আবার পুজোপাঠ হল। মোদিজী আসা ইস্তক এ এক নতুন নৌটঙ্কি৷ বিরাট বিরাট, বিরাট কাজ করে যেতে চান৷ তাই বল্লভ ভাই প্যাটেলের বিরাট মূর্তি, রামলালার বিরাট মন্দির, হনুমানের বিরাট মূর্তি, বিরাট অশোক স্তম্ভ৷ তাঁর সব কিছুই বিরাট৷ সবকিছুর প্রমাণ না পাওয়া গেলেও, অন্তত তিনি যা যা করছেন, সেগুলো বিরাট। এখন কারোর বাপের জমিদারি হলে তো কিছু বলার নেই৷ সে সেখানে হনুমানের মূর্তি গড়বে না খ্যাঁকশেয়ালের, তা তাঁর ইচ্ছে৷ সেই মূর্তি কত ফুট লম্বা হবে, নাকি বেঁটে হবে, সেটাও তাঁর ইচ্ছে। কিন্তু এক ধর্ম নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশে, হ্যাঁ এখনও তো সংবিধানটা বদলে ফেলা হয়নি৷ তাই বলছি এক ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক দেশে এটা করা সম্ভব? সংসদ ভবন কি কোনও দলের? শাসক দলের? তার মাথায় অশোক স্তম্ভ বসানো হবে? হোক না। জাতীয় প্রতীক বসুক, কিন্তু সেখানে একটা বিশেষ ধর্মের স্থান হবে? অন্যরা বাদ। বড় প্রশ্ন হল কোনও ধর্মই বা আসবে কেন? যদি আনাই হয়, তাহলে একটা ধর্ম আসবে কেন? ভোটের সময় দাড়ি রেখে রবি ঠাকুর হতে চাওয়া মোদিজীর, জানার কথা নয়, জানেন ও না, জাতীয় সংগীতের পরের স্তবকে রবি ঠাকুর কী বলে গিয়েছেন,
অহরহ তব আহ্বান প্রচারিত, শুনি তব উদার বাণী
হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পারসিক, মুসলমান, খৃস্টানী
পূরব পশ্চিম আসে তব সিংহাসন-পাশে
প্রেমহার, হয় গাঁথা।
জনগণ-ঐক্য-বিধায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!

আসলে এটা ডিএনএ-র সমস্যা৷ আরএসএস – হিন্দু মহাসভা কোনওদিনও ধর্মনিরপেক্ষ ছিল না৷ তাদের হাত ধরে জনসংঘ বা বিজেপিও না, তাদের বরাবরের লক্ষ্য হিন্দু রাষ্ট্র৷আজ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন, তার জোরেই দেশের ধর্মনিরপেক্ষতাকে চুরমার করতে চাইছেন৷ প্রতিটা পদক্ষেপে হিন্দু মেরুকরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সংসদ ভবনের ওপর অশোক স্তম্ভ বসানোর জন্য পুজোপাঠ, সেটারই অঙ্গ মাত্র। আমাদের কল্পনায় প্রেমহার গাঁথা হবে সবার সখ্যে, সেখানে সব ধর্ম, সব চিন্তা, সব মতের মানুষ থাকবেন, তাদের পরিচয় তাঁরা ভারতীয় হবেন। মোদিজী অ্যান্ড কোম্পানির, সেই প্রেমহার কেবল হিন্দুদের, আরও ভালো করে বললে বর্ণ হিন্দুদের, আপাতত ওবিসি, এসসি, এসটি দের প্রত্যেককে হিন্দু ব্রাকেটে আনা হলেও, লক্ষ্য তো সেই হিন্দুরাষ্ট্র।

দেশ ধর্ম নিরপেক্ষ, তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংসদ, সুপ্রিম কোর্ট, ধর্ম নিরপেক্ষ, রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী একজন প্র্যাকটিসিং হিন্দু হতে পারেন, মুসলমানও হতে পারেন, ক্রিস্টান হতে পারেন, যে কোনও ধর্মের মানুষ হতে পারেন বা নাস্তিকও হতে পারেন৷ কিন্তু রাষ্ট্রপতির পদ, প্রধানমন্ত্রীর পদ, সংসদ, সুপ্রিম কোর্ট, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধর্মনিরপেক্ষ থাকবে৷ এটাই আমাদের সংবিধান বলছে৷ আমাদের প্রধানমন্ত্রী সে কথা মানেন না৷ প্রতিটা পদক্ষেপে তিনি বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তিনি হিন্দু, রাষ্ট্রও হিন্দু পদ্ধতিতেই চলবে৷ তাঁর ইচ্ছে, আর এস এস – বিজেপির আদর্শ সেটাই, এটাই তাঁরা বহু বছর ধরে বলে আসছেন, সেটাই তাঁরা এখন করছেন। দেশের আর পাঁচটা দলের সঙ্গে বিজেপির ফারাকটা ঠিক কোথায়? তাহলে তার উত্তর হল, বাকি পাঁচ কেন? সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করা বাকি সব দল, দেশের সংবিধান, দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, দেশের ঐতিহ্য, দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র নিয়ে যা ভাবে, বিজেপি তা ভাবে না। বিজেপির কাছে স্বাধীনতা আন্দোলনের কোনও অর্থই নেই, কারণ তাদের পূর্বসূরিরা, কেউ কেউ স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন, বাকিরা স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেননি, আরএসএসের নির্দেশ মেনেই হাত মিলিয়েছিলেন ইংরেজদের সঙ্গে, তাদের তীব্র ঘৃণা গান্ধী, নেহরু, কংগ্রেসের জন্য। কমিউনিস্টদের সঙ্গে শত্রুতা। ধর্মনিরপেক্ষতা, কোনওদিনই তাদের সিলেবাসে ছিল না, তারা সংবিধান সভায় যোগ দেন নি, সংবিধান প্রণয়নে তাদের কোনও ভূমিকাই নেই, তীব্র মুসলমান বিরোধিতা ছিল তাদের দর্শনের ভিত্তি। স্বাভাবিকভাবেই, সেই ঐতিহ্যকেই বিজেপি বহন করেচলেছে, সংঘ পরিবারের প্রত্যক্ষ নির্দেশে, সেই দর্শনকেই তারা আঁকড়ে ধরেছে।

সেই দর্শন মেনেই তারা গান্ধী নেহরুকে বিশ্বাসঘাতক বলে৷ গান্ধী হত্যাকারী নাথুরাম গডসের পুজো করে৷ সেই দর্শন মেনেই তারা ইংরেজদের কাছে মুচলেকা দিয়ে, জেল থেকে বের হওয়া সাভারকারকে তাদের গুরু হিসেবে মান্য করে৷ সেই দর্শন মেনেই তারা দেশের ধর্মনিরপেক্ষতাকে অস্বীকার করে৷ সেই দর্শনকে সামনে রেখেই তারা হিন্দু রাষ্ট্রের ছক কষে, সেই একই দর্শনের ভিত্তিতেই মুসলমানদের এদেশের নাগরিক হিসেবে মানতে চায় না, তাদেরকে এদেশে থাকতে হলে, হিন্দু নিয়ম নীতি রীতি মেনে চলার ফতোয়া দেয়।

খেয়াল করে দেখুন, কত সুন্দর এক মুখোশের আড়ালে তারা নিজেদের রেখেছিল, তাদের আসল পরিচয়, তাদের এই সংবিধানের প্রতি ঘৃণা, তাদের নাথুরাম গডসে প্রীতি, কত সুন্দর ভাবে আড়ালে রেখেছিল, যত দিন যাচ্ছে, সংসদীয় গণতন্ত্রে সংখ্যারগরিষ্ঠতা পাচ্ছে, ততই আসল রূপ ফুটে বের হচ্ছে। শুনেছিলেন নাকি, লাভ জেহাদের কথা ১৯৯০ এ? শুনেছিলেন নাথুরাম গডসে পুজো করার কথা? শুনেছিলেন কখনও সেকুলার শব্দ নিয়ে ব্যঙ্গ, ঠাট্টা? এসব এখন সামনে আসছে, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ও তারা তাদের নিজেদের মতই লিখতে চাইছেন, বলছেনও। তার জন্য ভাড়া করা ইতিহাসবিদ থেকে চলচিত্র পরিচালক, লেখক থেকে সাংবাদিক জড় করা হচ্ছে। তাঁরা নতুন নতুন তথ্য বের করছেন, নতুন নতুন মনোহর কঁহানিয়াঁ রচনা হচ্ছে। গান্ধী নেহরুর বিরুদ্ধে, নেতাজী আর প্যাটেল কে দাঁড় করানো হচ্ছে, বলা হচ্ছে, নেতাজী বেঁচে ফিরে এসেছিলেন, কেবল গান্ধী, নেহেরুর ভয়ে তাঁকে লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল, তিনি এদেশে ফিরে ভিখিরির মত দিন কাটালেন, নেহরুর পুলিশের ভয়ে, সিনেমা শেষে পরিচালকের আক্ষেপ, আহা যে মানুষটা বেঁচে মারা গেলে লক্ষ মানুষের পথে নামা কথা, সে মানুষের চিতা মাঝরাতে অন্ধকারে চোরের মত জ্বালিয়ে দিতে হচ্ছে, কেন? কংগ্রেস দলের জন্য। ভাবা যায় এ মিথ্যাচার! ভাবা যায় এই অপপ্রচার, কিন্তু তারা সফলও হচ্ছেন। মানুষ উদ্ভট তত্ত্বে বিশ্বাসও করছেন, রাম এক অনৈতিহাসিক কল্পনার চরিত্র, তার জন্মদিন, জন্মভূমি মায় আঁতুড় ঘর পর্যন্ত খুঁজে, সারা দেশের মানুষ কে বিশ্বাস করাতে পেরেছেন, ঐ বাবরি মসজিদের তলায় ছিল, রামের জন্মভূমী। কিছু মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে বা কিছু মানুষকে বিশ্বাস করানো গিয়েছে, যে রাম সেতু হল এক ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিস্ময়, সেখান থেকে নাকি ইঞ্জিনিয়ারিং এর নতুন সূত্র পাওয়া যাবে, প্রধানমন্ত্রী নিজেই এই বালখিল্য কথা বলেছেন, যে গণেশের মাথায়, হাতির মাথা নাকি প্লাস্টিক সার্জারিতে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল, আর এক মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরার, তিনি মনে করেন কুরুক্ষেত্রে মহাভারতের যুদ্ধের সময় ইন্টারনেট ছিল, এসব আজগুবি খবর এমনি এমনি দেওয়া হচ্ছে না, দেওয়ার পেছনে পরিকল্পনা আছে, প্রথমে কাউকে দিয়ে, সে যেই হোক, প্রধানমন্ত্রী, বা দলের সাধ্বী ঋতাম্ভরা হোক, একটা কথা ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তারপর তা নিয়ে বড় করে কাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে, বলা হল গণেশের মাথার প্লাস্টিক সার্জারির কথা, তারপরে আয়ুর্বেদ পাশ ডাক্তারদের, সার্জন হিসেবে সার্টিফিকেট দেবার কথা বলা হচ্ছে, আরে কাটা মাথায় যদি, সেই তখনকার আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা হাতির মাথা জুড়ে দিতে পারেন, তাহলে সার্জারি তো আয়ুর্বেদের হাতের মুঠোয়। এদিকে অসুখ করলে অমিত শাহ চলে যাবেন, স্পেশালিটি হাসপাতালে। সাধারণ মানুষ? তাদের দেহ সঁপে দেবে আয়ুর্বেদাচার্যদের হাতে, যার হাতে যা মানায়, ওসির হাতে পিস্তল, কনস্টেবলের হাতে ডান্ডা। অ্যালোপাথি পড়ে, সার্জনরা হাঁ করে তাকিয়ে দেখছেন, ওদিকে অ্যালোপাথি চিকিৎসাকে ক্রমশ মহার্ঘ বানিয়ে, বিশাল প্রাইভেট পুঁজি এনে, সাধারণ মানুষের কাছে কবেই ভিলেন বানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এখন তার বিকল্প আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথি। নেতা মন্ত্রী, আম্বানি আদানিদের জন্য থেকে গেল বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা, কেমন মজা।

এক চরম অগণতান্ত্রিক, ধর্মান্ধ, মধ্যযুগীয় পরিবেশ তৈর হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর পুজোপাঠ, ভূমিপুজন তারই অঙ্গ। তিনি হিমালয়ে গিয়ে ধ্যান করুন, অযোধ্যার মন্দিরে পুজো করুন, সংসদ ভবনের অমর্যাদা করার অধিকার তাঁকে দিল কে? এবং এইখানেই একটা প্রশ্ন অনেকে তুলছেন, তাতে কী? উদার গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা না থাকলে কী হবে? আসল প্রশ্ন তো মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের, দেশের উন্নতির, পার ক্যাপিটা ইনকাম, জিডিপির, চাকরির, তাহলে এসব নিয়ে এত আলোচনা কেন? হ্যাঁ এটাই অত্যন্ত জরুরি প্রশ্ন, যা নিয়ে কালকের চতুর্থস্তম্ভ, উদার গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার প্রয়োজনীয়তাটা কোথায়, সঙ্গে থাকুন……।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Abhishek Banerjee | দিল্লি থেকে ফেরার সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, দেখুন সরাসরি
01:13:40
Video thumbnail
ABVP | Bikash Bhavan | বিকাশ ভবন অভিযান ABVP-র, ধু/ন্ধু/মার কাণ্ড, দেখুন কী অবস্থা
02:00:35
Video thumbnail
Supreme Court | মিলিটারি ট্রেনিংয়ে পাওয়া আ/ঘা/তের জেরে চাকরি থেকে ছাঁটাই, খোদ মামলা শীর্ষকোর্টের
02:07:36
Video thumbnail
Gaza | গাজা দখলের পরিকল্পনা নিয়ে হিং/স্র/তার চ/রম নিদর্শন নেতানিয়াহু বাহিনীর, চলছে গ/ণহ/ত্যা
01:12:45
Video thumbnail
Donald Trump | সোমবার বৈঠকের আগেই জেলেনস্কিকে আগাম ট্রাম্প-বার্তা, কী বার্তা দিলেন?
44:36
Video thumbnail
Trump-Zelenskyy | ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকের পর এখন কী হচ্ছে হোয়াইট হাউসে? দেখে নিন সরাসরি
36:20
Video thumbnail
Bangla Bolche | Prasun Banerjee | কেন ইমপিচমেন্ট হওয়া উচিত নির্বাচন কমিশনারের?
03:03
Video thumbnail
Bangla Bolche | Sabyasachi Chatterjee | কমিশনকে কেন বিজেপির B-টিম বলছে বিরোধীরা?
01:42
Video thumbnail
Bangla Bolche | Prasun Banerjee | কমিশনকে কোন প্রশ্ন তৃণমূলের?
00:53
Video thumbnail
Yogendra Yadav | যোগেন্দ্র যাদবের কোন ১০ প্রশ্নে ফেঁ/সে গেল নির্বাচন কমিশন? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
13:00