Sunday, August 17, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: যা দেখছেন, তাই সত্যি? যা শুনছেন তাই সত্যি?

চতুর্থ স্তম্ভ: যা দেখছেন, তাই সত্যি? যা শুনছেন তাই সত্যি?

Follow Us :

বিজেপির কথা বাদ দিলাম৷ আরএসএসের কথা বাদ দিলাম৷ তারা রাষ্ট্র ক্ষ্মতায় আছে৷ পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই আছে৷ তাদের কাছে গণতন্ত্র মানে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ, মেজরেটেরিয়ানিজম। সংখ্যা আছে, অতএব যা খুশি তাই করার ক্ষমতা ওনাদের আছে, করছেন ও। ঢাকঢোল পিটিয়ে নির্বাচন হল, প্রচার হল, কোটি কোটি কোটি টাকার ব্যানার, হোর্ডিং, পোস্টার, লিফলেট, মাইক, নেতাদের রথ, নেতাদের চার্টার্ড ফ্লাইটে আনাগোনা, মোদিজীর তো আবার আস্ত একটা প্লেনই আছে। সব হল, নির্বাচন কমিশনের নিয়ম আছে, ৫/৬/৯/১৫ দফায় ভোট আছে, আধাসামরিক বাহিনীর দাপাদাপি আছে, তারপর গণনা আছে এবং সবশেষে নির্বাচিত এমএলএ কিনে রিসর্টে নিয়ে গিয়ে কোটি কোটি টাকার হাতবদল হবার পরে তখতাপলট, সরকার বদলে গেল।

বলে বলে এই একই কাজ বিজেপি করেই চলেছে, কী অহঙ্কার ঝরে পড়ছিল বিষাক্ত সাপের মুখে, যিনি এক ছোবলেই মেরে ফেলতে পারেন মানুষ, তিনি সাংবাদিকদের সামনে বললেন আমার সঙ্গে ৩০/৩২ জন বিধায়ক, তৃণমূলের বিধায়ক যোগাযোগ রাখছে, কোনও রাখঢাক নেই, যোগাযোগ রাখছে, দরদাম চলছে, রাজী হলে, প্রয়োজনীয় ঘোড়া, গাধা, গরু কিনে, জনগণের নির্বাচিত সরকার ফেলে দেবো। ছেড়ে দিন ওনার কথা রাজনৈতিক মহলে উনি জোকার ছাড়া তো কিছুই নন, ওনার কথা বাদই দিলাম, বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা কঁথির খোকাবাবু, তিনিও ওই একই কথা বলেছেন, কিছুদিন আগেই। কি কনফিডেন্স? কোথা থেকে আসছে এই কনফিডেন্স? সি বি আই দপ্তর থেকে, ইডি দপ্তর থেকে, ইনকাম ট্যাক্স দপ্তর থেকে, ভিজিল্যান্স দপ্তর থেকে পাচ্ছেন অক্সিজেন। বিরোধিতার প্রত্যেকটা স্বর, প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, মাথাটা নোয়াও, শো যা নহি তো গব্বর আয়ে গা, মাথা না ঝোঁকালে বাড়িতে মধ্যরাতে কড়া নাড়বে ই ডির অফিসারেরা, সিবিআই এর কর্মচারিরা বা ডেকে পাঠানো হবে তাদের দফতরে। আপনি বিরোধিতা করছেন, আপনার জামাইবাবু কি আপনার পিসেমশাইও ছাড় পাবে না। আপনার পরিচিত শিক্ষক থেকে ব্যবসায়ীর বাড়িতেও পৌঁছে যাবে তারা, আপনি চিহ্নিত হবেন গণশত্রু হিসেবে, সে কাজটা মিডিয়াই করে দেবে।

দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস৷ সেই দলের সর্বোচ্চ নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, নেতা রাহুল গান্ধীকে ইডি দফতরে ডেকে ম্যারাথন জেরা করছে ইডি, চিদাম্বারামকে জেলে রেখেছে মাস ছয়েক, ওনার ছেলেকে মানে কার্তি চিদাম্বারামকে রোজই ডাকছে, আম আদমি পার্টির নেতাদের জেরা করা চলছে, শারদ পাওয়ার তাঁর বোনপো অজিত পাওয়ারকে ডাকা হয়েছে, শিবসেনার সঞ্জয় রাউত এই মূহুর্তে জেলে, বিএসপির মায়াবতীর নামে গুচ্ছ কেস, একই অবস্থা এসপি নেতা অখিলেশ যাদব এবং আরও অনেকের, আর জে ডির লালু যাদব, মেয়ে মিসা যাদব, বৌ রাবড়ি যাদবের নামে কেস চলছে, অন্ধ্রপ্রদেশের জগন রেড্ডি বা তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রিয় পার্টির কে চন্দ্রশেখর রাও এর নামে এক গুচ্ছ কেস ঝুলছে, দেশের এরকম কোনও বিরোধী দল নেই, যাদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে না, কেরালায় সোনা পাচারের কেস এ পিনারাই বিজয়নকেও জড়ানো আছে।

অথচ দেশে বিজেপি, এনডিএ র কোনও শরিক দল, বিজেপিকে চটায় না এমন কোনও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ইডি সিবিআই কিচ্ছুটি খুঁজে পায়নি৷ তারা প্রত্যেকে দেবশিশু, ধোওয়া তুলসি পাতা। এমন কি বিরোধী দলে থাকাকালীন যাদের নামে মামলা হয়েছে, যাদেরকে ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, সেই তাঁদের মধ্যে যারা বিজেপি তে নাম লিখিয়েছে, নাকে খত দিয়ে মোদি – শাহের কাছে মাথা বিকিয়েছে, সেই রাজনৈতিক নেতাদের আর ইডিও ডাকে না, সিবি আই ও সমন পাঠায় না। কি কিউট তাই না? রশোমন বলে এক বিখ্যাত সিনেমা আছে, রশোমন জাপানি শব্দ, অর্থ হল ডিসপিউট, বিতর্কিত, সিনেমা তে একজন সামুরাই এর খুন আর তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণ, একই গল্প চারবার, চারজনের মুখে শুনেছি দেখেছি, প্রত্যেকটাই আলাদা এবং চারটে অপশন সম্ভব, প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই দোষী এবং নির্দোষ পালটে যাবে, এরপর থেকে বশ্য এরকম ছবি বেশ কয়েকটা হয়েছে। আসলে একটা ঘটনাকে যে ভাবে বলা হল, যে ভাবে বর্ণনা করা হল, তা দেখে বা শুনেই যদি কোনও সিদ্ধান্তে আসতে হয়, তাহলে সেই সিদ্ধান্ত এক শতাংশ হলেও ভুল হবার সম্ভাবনা থেকেই যায়, যা আপনি শুনলেন, যা আপনাকে বলা হল, তার বাইরেও একটা সত্যি লুকিয়ে থাকতে পারে। সেই জন্যই পুলিশের কাজ অভিযুক্ত কে ধরা, ই ডি অভিযুক্ত কে ধরবে, প্রমাণ সহ, সিবি আই তদন্ত করবে, কিন্তু শেষ মেষ এক বিচার ব্যবস্থা আছে, সেখানে সেই অপরাধ, সেই খুন, সেই চুরির প্রত্যেকটা দিক বিচার করা হবে, আলোচনা হবে, প্রশ্ন উত্তর হবে, সওয়াল জবাব হবে, তারপর বিচারক সিদ্ধান্ত জানাবেন। কিন্তু এখানে তদন্তকারী দল কিছু সিলেকটিভ, কিছু বাছাই করা খবর ছড়িয়ে দিচ্ছেন সংবাদ মাধ্যমে, সংবাদমাধ্যম ব্রেকিং নিউজ আর এক্সক্লুসিভ নিউজের চক্করে প্রতি মিনিটে আরও নতুন, আরও উত্তেজনা ছড়ানোর জন্যই খবর বানানো শুরু করছে, মিথ্যে বোঝার আগে আরও মিথ্যে তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে নেট দুনিয়ায়, সেটা চালাচালি হচ্ছে সংবাদ মাধ্যমে, এবং শুরু হচ্ছে মিডিয়া ট্রায়াল।

ইডি বলেছে চোর হ্যায়, তো চোর হ্যায়, ইডি বলেনি তো চোর নয়। শূণ্য এক, এক শূণ্য, শূণ্য শূণ্য এক, এই বাইনারির মধ্যেই ঘুরে চলেছে। অন্য কোনও অপশন নেই। তাহলে বিজেপির কাজটা সোজা হয়ে গ্যালো, বিজেপি বা বিজেপি শরিক দলের কেউ চোর নয়, বিরোধী দলের প্রত্যেকে চোর। বিরোধী শূণ্য হয়ে যাবে দেশ। আসুন না সবচেয়ে খারাপ দৃষ্টান্তটাই হাতে নেওয়া যাক। পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জেরা করতে গ্যালো ইডি, ভোরবেলায় তারা হাজির, বাড়ির বিভিন্ন আলমারি, ড্রয়ার থেকে বের হল পাঁচ ছটা দলিল, সেখানে বিভিন্ন ফ্ল্যাটের হদিশ, যেগুলোর মালিক অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। নাম পেয়েই অর্পিতার খোঁজ শুরু করল ই ডি, তার ফ্ল্যাটের হদিশ পেল, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ভেবেছিলেন, ইডি কেবল টাকা খুঁজতে আসবে, তাই দলিল সরাননি, দলিলের নাম থেকে তারা অর্পিতার ফ্ল্যাটে গিয়ে পেয়ে গেল কোটি কোটি টাকা, বস্তায় ভরা টাকা। মানুষ চোখের সামনে দেখলো, রাজ্য মন্ত্রিসভার সবচেয়ে ভোদাই মন্ত্রী মশাই এর কীর্তি, কেলোর কীর্তি বললেও চলে।

এবার আসুন আরেকটা বয়ান তৈরি করা যাক, সেই ভোদাই মন্ত্রীর সঙ্গে বেশ ভালো পরিচয় আছে অর্পিতার, অসমবয়সী প্রেম, চিনি কমে অমিতাভ বচ্চনকে তো ভালোই লেগেছিল বা গৃহপ্রবেশে সঞ্জীব কুমারকে। ছিল সেরকম অসমবয়সী প্রেম। কাজেই ওই অপা, ইত্যাদি বাড়িও ছিল। অমিতাভ বচ্চন কিংবা সঞ্জীব কুমারের আকর্ষণ তো পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ছিল না, তাহলে আকর্ষণ ক্ষমতার, ক্ষমতার পেছনে টাকা পয়সার। তো অর্পিতার সেটাই ছিল আকর্ষণ বিন্দু, দল আর মন্ত্রী সভার দ্বিতীয় নম্বর কে ধরাশায়ী করার জন্য অর্পিতাকে ব্যবহার করা হল, কিছুদিন নাটক করো, তারপর ৫/১০/২০ কোটি টাকা নিয়ে জীবন কাটিও, আপাতত কিছু বস্তা নোট রাখো ঘরে, তাতে কিছু খাম ইত্যাদি ইত্যাদি। এবার সকালে পার্থর বাড়ি, বিকেলে অর্পিতার বাড়ি, ইডি রেইড চালালো, বস্তা বস্তা টাকা বেরিয়ে এলো। এটা হতে পারে না বলছেন? আমিও বলছি, এটা হয় নি। প্রথমটাই সত্য। কিন্তু যদি প্রথমটা সত্য না হয়? তাহলে?

ইডি জানিয়ে দিয়েছে সঞ্জয় রাউতের জমি দুর্নীতি মামলায় ১০০০ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হয়েছে৷ সকাল সন্ধ্যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইডি ডেকে পাঠাচ্ছে, হাজারে হাজারে মামলা হচ্ছে, অথচ দোষী সাব্যস্ত হচ্ছে ক’জন? কদিন আগেই বলেছি, আবার বলছি, কতটা ব্যাপক হয়েছে এই আক্রমণ? ২০০৫ থেকে ২০১৪ রমধ্যে এই মনিলন্ডারিং মামলায় সার্চ করা হয়েছে ১১২ টা ঘটনায়, ২০১৪ থেকে ২০২২ এর মধ্যে সার্চ করা হয়েছে ২৯৭৪ জায়গায়, ২০০৫ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত মামলা করা হয়েছে ১৮৬৭ টা, সেটাই ১৪ থেকে২২ এর মধ্যে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭৭০ টাতে। তদন্তকরে, ২০০৫ থেকে ১৪ র মধ্যে চার্জশিট দেওয়াহয়েছে ১০৪ টাতে, ১৪ থেকে ২২ এর মধ্যে মাত্র ৮৩৯ টা ক্ষেত্রে এবং এই ১৭ বছরে দোষী সাব্যস্ত করা গেছে কত মামলায়? শুনলে অবাক হবেন, মাত্র২৩ টা মামলাতে দোষীদের শাস্তি দেওয়া গেছে, কিন্তু এই ক বছরে ওই যে নিশির ডাক, থুড়ী ইডির ডাক, কতটা বেড়েছে? ২০১৬-১৭ তে ৪৫৬৭ জন কে সমন ধরানো হয়েছে, ২০১৭-১৮ তে ৫৮৩৭ জন কে, ২০১৮-১৯ এ ৯১৭৫ জন কে, ২০১৯-২০ তে১০৬৬৮ জন কে, ২০২০-২১ এ ১২১৭৩ জনকে, ২০২১ – ২২ এর নভেম্বার পর্যন্ত ১১২৫২ জনকে মনিলন্ডারিং মামলায় সমন ধরানো হয়েছে। তার মানে খুব পরিস্কার, বিজেপি সরকার ইডি, সি বি আই, ইনকাম ট্যাক্সের মত ভিজিল্যান্স প্রতিষ্ঠান গুলোকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে, থাকতেই পারে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মত জেনুইন ঘাপলার কেস, দুর্নীতির মামলা, যেখানে সত্যিই চুরি হয়েছে, কিন্তু যেভাবে ইডি বা এই প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে, তাতে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য, উঠছেও। তখনই এক শতাংশ হলেও মাথায় এ প্রশ্নটাও ঘুরছে, ঘুরতে বাধ্য, যা দেখলাম, যা শুনলাম, তা সত্যি তো?

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
India-Russia | Trump | বৈঠকে ট্রাম্পকে মাত পুতিনের, রাশিয়ায় অনড় দিল্লি, দেবে ডিভিডেন্ড?
00:00
Video thumbnail
India-Russia | Trump | পুতিনে জ/ব্দ ট্রাম্প, সিদ্ধান্তহীনতায় থমথমে মুখ ট্রাম্পের, আর কী হল?
00:00
Video thumbnail
Uttar Pradesh | UP থেকে বিহার, ৩১৬ বোতল হু/ই/স্কি এসির ডাক্টে পা/চার কাণ্ডে গ্রে/ফতার খোদ রেলকর্মী
00:00
Video thumbnail
Midnapore News | TMC | ফুটবল শহীদ দিবসে ফিরল ল/জ্জার ছবি, গোল দিয়ে গোল, লা/থি রেফারিকে
00:00
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | SIR-ই কি মোদির 'মিশন ডেমোগ্রাফি' ?
00:00
Video thumbnail
Shubhanshu Shukla | Narendra Modi | দেশে ফিরছেন শুভাংশু শুক্লা, দেখা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে
00:57
Video thumbnail
Bangla Bolche | Suman Bhattacharya | প্রধানমন্ত্রী জানলেন কী করে ডেমোগ্রাফি বদলাচ্ছে?
02:22
Video thumbnail
Bangla Bolche | Shamim Ahmed | পপুলার স্টেটমেন্ট দেওয়ার চেষ্টা মোদির?
02:49
Video thumbnail
Bangla Bolche | Sandeepa Chakraborty | মোদির 'মিশন ডেমোগ্রাফি' ষ/ড়য/ন্ত্র কার?
02:10
Video thumbnail
Bangla Bolche | Sambit Pal | মোদির 'মিশন ডেমোগ্রাফি' আসলে ইসলামিকোরিয়ার চেষ্টা?
02:27