Saturday, June 7, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: সংযুক্ত মোর্চা

চতুর্থ স্তম্ভ: সংযুক্ত মোর্চা

Follow Us :

১৪ মার্চ ২০০৭ এর কথা সবার মনে আছে, বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের এক টার্নিং পয়েন্ট, নন্দীগ্রাম।  আর একটা টার্নিং পয়েন্ট ২৮ ফেব্রুয়ারি, সিপিএম নেতারা ব্রিগেডে মিটিং ডেকে, ২০২১ এ তাদের নতুন সংযুক্ত মোর্চার ঘোষণা করলেন, এবার বিজেপি আর তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে, ক’দিন পরেই সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও, তাদের সমর্থনের কোনও প্রশ্ন নেই। সিপিএম নেতাদের ঔদ্ধত্য কমেছে, এ কথা শত্রুরাও স্বীকার করবে না, তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রোলিং বাহিনী, তাঁদের বক্তৃতা, তাঁদের মুখপত্রের লেখার ছত্রে ছত্রে সেই ঔদ্ধত্য প্রকাশ পায়। রাজ্যের মানুষ কী মনে করল, কৃষকরা তাঁদের ন্যানো কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণকে কিভাবে নিল, সে সব ভাবনা চিন্তা তাঁদের নেই বলেই সেই শিল্পায়ন, আবার সেই ন্যানো কারখানা ইত্যাদির কথা বলে তৃণমূল সরকারকে উৎখাত করার জন্য, ক’দিন আগে চরম মিসোজিনিস্ট, চরম প্যাট্রিয়ার্ক ভাবনা চিন্তায় লালিত পালিত, এক মুসলিম মৌলবাদীকে সঙ্গে নিয়ে সংযুক্ত মোর্চার ঘোষণা করলেন। তা নিয়ে এখনও চলছেন, যদিও সেই পিরজাদা, জলসায় বসে ফতোয়া দেনেবালা আব্বাসকে আর দেখাই যাচ্ছে না। তবুও ওই জোট নিয়ে ভুল স্বীকার করতে তারা রাজি নন। তাঁদের মতে আর একটু সময় নিয়ে মোর্চা গড়া উচিত ছিল, আরও একটু প্রচার দরকার ছিল, দলের মধ্যে আরও আলোচনার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু মোর্চা? না, ওটা ঠিক সিদ্ধান্ত। লিখে রাখুন পাঁচ বছরের মধ্যে ওই ভাইজান পালটি খাবে, খাবেই। কারণ তিনি রাজনীতিতে এসেছিলেন ক্ষমতার ভাগ পেতে, কমরেড সেলিমের দু চারটে শেখানো কথা উগরানোর চেষ্টা করেছেন বটে, কিন্তু তাঁর দর্শন বিলকুল সাফ। তিনি ভাগেদারি চান ক্ষমতার, কিং মেকার হতে চান, সেটাই তিনি জলসায় জলসায় বলে বেড়িয়েছেন দীর্ঘদিন। সেই ক্ষমতা হাতে আসেনি। স্বাভাবিকভাবেই রেজাল্ট বের হবার পর তিন মাস তো কেটেই গেলো, একটা সভায় দেখা গেছে তাঁকে?

নির্বাচনের আগে কমরেড সেলিমের হাত ধরে, গলা জড়াজড়ি করে, অজস্র ফোটোশেসনের পরে গত তিন মাসে একটা বৈঠকেও দেখা গেছে তাঁদের দু’জনকে? অন্য জায়গায় ছেড়েই দিলাম, একজন তো জিতেছেন তাঁর দলের, সেই ভাঙড়েই দেখা গেছে? তাহলে তখন বেরিয়েছিলেন কেন? এই সাব্বাস আব্বাস প্রথমে ওই রাজনৈতিক ক্ষমতার ভাগ পেতে, মমতার দলের সঙ্গে কথা বলেন। চার পাঁচটা বৈঠক হয়। বিরাট হাঁক দিচ্ছিলেন। শুধু তাই নয়, তাঁর দলের সঙ্গে, যদিও তখনও তাঁর দলই নেই, তবুও সেই কল্পিত দলের সঙ্গে আঁতাত চাইছিলেন, জোট হয়নি। দুটো কারণে হয়নি। এক, তিনি অনেক আসনের আবদার করছিলেন। দুই, তিনি নিজের সেই কল্পিত দলের সঙ্গে আঁতাত চাইছিলেন, তৃণমূলের হয়ে নয়, তাঁর দলের হয়ে তাঁর পছন্দের প্রার্থীরা দাঁড়াবেন, এটা ছিল তাঁর দাবি। ওদিকে তৃণমূল নেতৃত্ব কয়েকটা আসনের বিনিময়ে, মুসলমান ভোট যাতে না ভাঙে তেমনটা চাইলেও, আব্বাস ভাইজানের এই প্রস্তাবে রাজি হননি। কাজেই আব্বাস ভাইজান এবার নতুন মুরুব্বি খুঁজতে বের হলেন। বড় মুরুব্বির সঙ্গে কথাও হল, মিমের আসাউদ্দিন ওয়েইসি, তিনি বড় খেলোয়াড়, বিহার নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে বিজেপির তরী পার করে দিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশেও সেই ভূমিকায় নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, সেই তেনার সঙ্গে কথাবার্তা চলল। সেখানে আরও বড় দাবি, কেবল আসনের নয়, নির্বাচনী খরচ খরচা নিয়েও কথাবার্তা হল, এবং আলোচনার শেষ হবার আগেই কমরেড সেলিম হাজির। আসন, নির্বাচনী খরচ, কর্মী সবকিছুর হিসেব নিকেশ খুব দ্রুত সম্পন্ন হল, এবং এমনকি রাজ্য কমিটিতে আলোচনার আগেই কমরেড সেলিমের ব্যক্তিগত উদ্যোগে মোর্চা গড়ে উঠল। সেলিম উল্লসিত, এম পি সিট গেছে, ফিরে পাবার কোনও প্রশ্নই আপাতত নেই, তাহলে আপাতত আব্বাসের হাত ধরে অন্তত বিধায়ক তো হওয়াই যাবে। উল্লসিত সেলিমকে আমরা দেখলাম অধীর চৌধুরির ভাষণ শেষ হবার আগেই, মঞ্চে আব্বাসকে এনে গলা জড়াজড়ি করতে। মাঠে আব্বাস ভাইয়ের সমর্থকদের উল্লাস, অধীর বাবু বক্তৃতার মধ্যেই থমকে গেলেন। সেই ব্রিগেডের ছবি নিশচই মনে আছে আপনাদের? ফলাফল? কমরেড সেলিম কোনওক্রমে তেনার জামানতটা রক্ষা করতে পেরেছিলেন, এই যা।

হাতে পেনসিল নিয়ে আলিমুদ্দিনে বসে আলোচনার পর আলোচনা সেরেও, এই আতাঁত যে অনৈতিক ছিল তা স্বীকার করা হল না। স্বীকার তাঁরা করবেন, কিন্তু ততদিনে এই আঁতাত তাঁদের রাজনৈতিক যাত্রাপথের, এক হাস্যকর মাইলস্টোন হয়ে থেকে যাবে। আর কমরেড সেলিমের, ব্যক্তিগত রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খার আপাতত পরিসমাপ্তি। আব্বাসভাই কিছুদিন চুপ করে বসে থাকবেন, তারপর নিশ্চিত আবার নতুন কথা বলে মাঠে নামবেন। ফুরফুরা শরিফের অনেক পীরজাদাদের রাজনৈতিক জীবন, বাংলার মানুষ জানেন। সংযুক্ত মোর্চার আরেক শরিক বাংলার কংগ্রেস, ৭৭ এর পর থেকে জীবনেও কখনও বাংলার কংগ্রেস হয়ে ওঠেনি, সে কখনও মালদার কংগ্রেস, কখনও ছোড়দার কংগ্রেস, কখনও মানুদার কংগ্রেস, কখনও মুশিদাবাদের কংগ্রেস, কখনও প্রিয়রঞ্জনের কংগ্রেস হয়েই থেকে গেছে। আর কংগ্রেসের মূল সমর্থন ভিত্তি একটা সময়ের পরে চলে এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে, তৃণমূলের কাছে। এরপর থেকে কংগ্রেস মানে, প্রায় হরি ঘোষের গোয়াল, সোমেন মিত্র তৃণমূলে গেছেন, মানস ভুইঁয়া গেছেন, প্রদীপ ভট্টাচার্য তৃণমূলের সহায়তায় সাংসদ হয়েছেন, কংগ্রেস তৃণমূল জোট হয়েছে, ভেঙেছে। শেষমেষ বামফ্রন্টের সঙ্গে জোট, খুব অস্বাভাবিক জোট মনে হলেও সংসদীয় রাজনীতিতে এটা নতুন নয়, কিন্তু এই জোট নিয়ে সিপিএমকে দেখুন, যেন চাঁদ সওদাগর, পেছন ফিরে মনসাকে পুজো দিচ্ছেন। জোট ঠিক জোট নয়, সিট অ্যাডজাস্টমেন্ট, মোর্চা নয়, নির্বাচনী আঁতাত ইত্যাদি ইত্যাদি ফালতু লোক ভোলানো কথা, এবং তারপরেও দলের মধ্যে প্রশ্ন থেকেই গেছে, হ্যাঁ এখনও। কংগ্রেস দলের দিকে তাকান, দলের মধ্যে তৃণমূলপন্থীরা আছেন, যাঁরা তৃণমূলের সঙ্গে জোট চান। মমতা বিরোধীরা আছেন, সব মিলিয়ে পাক্কা হরি ঘোষের গোয়াল। কিন্তু জাতীয় রাজনীতির দিকে তাকান, সেখানে এই একটাই দল, যারা বিজেপির সঙ্গে কোনও জোট করেনি। বিজেপি চায় কংগ্রেস মুক্ত ভারত। তারা জানে রিজিওনাল রাজনৈতিক দলকে ম্যানেজ করা যাবে। কংগ্রেসকে সরানোটাই তাদের মূল লক্ষ, একটা সময়ে বামপন্থীদের সঙ্গেও তাঁরা ঘর করেছে, কংগ্রেসের সঙ্গে নয়। সেই বাধ্যবাধকতার দিক থেকে বিচার করেই, আজ জাতীয় কংগ্রেসকে তাদের নির্বাচনী সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। রাহুল গান্ধীর মেন্টর, গাইড অ্যান্ড ফিলোজফার সীতারাম ইয়েচুরি, তিনি এতদিন রাহুলজিকে গাইড করছিলেন, এই ক’দিন আগেও সোনিয়া গান্ধীর ডাকা বিরোধী বৈঠকে বক্তা তালিকায়, কংগ্রেস নেতাদের পরেই ইয়েচুরির নাম ছিল। তৃণমূল বেঁকে বসায় সোনিয়া গান্ধীর নির্দেশে সেই তালিকায় পরিবর্তন হয়, কংগ্রেস নেতাদের পরেই বলেন মমতা, এবং খেয়াল করুন, তিনি বলতে গিয়ে সার্বিক জোটের কথা বলেন, প্রশ্ন তোলেন, কেজরিওয়ালের আপ বা সিপিআইএমএল লিবারেশনের দীপঙ্কর ভট্টাচার্যদের ডাকা হচ্ছে না কেন? সেদিন বৈঠকের পরে আলোচনার যে ড্রাফট তৈরি করা হয়েছিল ইয়েচুরির সহায়তায়, তা বদলানো হয়, আলাদা করে কথা হয় সোনিয়া – মমতার। আগামী বিজেপি বিরোধী জোটের অন্যতম শরিককে, অযথা চটাতে চান না সোনিয়া গান্ধীও। সেই কারণেই ভবানীপুরে প্রার্থী দেবার প্রস্তাব যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সাফ জানিয়ে দেওয়া হল, কংগ্রেস ভবানীপুরে প্রার্থী দেবে না। না মান্নান সাহেবের শত ইচ্ছে থাকলেও প্রার্থী দেওয়া হবে না। জাতীয় রাজনীতিতে আর ক’দিন পরে, জোটের অন্যতম শরিক মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়ে লোক হাসাতে রাজি নন সোনিয়া, কিন্তু সিপিএম? লোক হাসানোর দায় তো এখন তাঁদের, তাঁরা প্রার্থী দেবেন, ক’দিন পরে জাতীয় রাজনীতিতে সেই মমতার সঙ্গে এক মঞ্চে হাজিরও থাকবেন, হাসি মুখে ফটো তুলবেন। আপাতত তাঁরা দলীয় মুখপত্রে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীদের জয়ী করার ঘোষণা দিচ্ছেন, কোন মোর্চা? যার এক শরিকদলের নেতাকে গত তিন মাস রাজনৈতিক সভা তো ছেড়েই দিলাম, জলসাতেও দেখা যায়নি। তিনি উধাও, মন্দির বা মসজিদের বাইরে নিরন্ন মানুষকে খেতে দেবেন বলেছিলেন, তাঁকে দেখাই যাচ্ছে না, দেখা গেলে তো খেতে দেবার প্রশ্ন। আর অন্য দলের সর্বোচ্চ নেত্রী সাত তাড়াতাড়ি জানিয়েই দিলেন, না ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দল প্রার্থী দেবে না। মান্নান বা প্রদীপ ভট্টাচার্যের হিম্মত নেই, একটা কথা বলার। অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারি আবার সিপিএমের বিরাট ভুলের দিন হয়েই থেকে যাবে, এবং সংযুক্ত মোর্চা তার স্বাভাবিক পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছে, আমেন।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Donald Trump | পরম বন্ধু যখন চরম শত্রু, ট্রাম্প-মাস্কের তুমুল ঝগড়ার কারণ কী?
00:00
Video thumbnail
M.Chinnaswamy | Virat Kohli | চিন্নাস্বামী কাণ্ডে কোহলির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের, কী হবে এবার?
00:00
Video thumbnail
Donald Trump | ট্রাম্প মুখ খুলতেই মাস্কের কোটি কোটি টাকা হাওয়া! কারণ কী? দেখুন এই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Donald Trump | ‘ডিসাপয়েন্টেড’ ইলন মাস্ককে নিয়ে এ কি বলে দিলেন ট্রাম্প? এবার কী হবে?
56:25
Video thumbnail
Trump | ফের ট্রাম্পের নিশানায় হার্ভার্ড! নতুন করে পড়তে আসা বিদেশি পড়ুয়াদের ভিসার উপর নিষেধাজ্ঞা
50:41
Video thumbnail
Narendra Modi | অপারেশন সিঁদুরের পর জম্মু-কাশ্মীরে প্রথম নরেন্দ্র মোদি, দেখুন সরাসরি
01:13:26
Video thumbnail
Mahua Moitra Wedding | মহুয়ার বিয়ে, কী বললেন সায়নী? দেখুন এই ভিডিও
03:41:16
Video thumbnail
TMC | BJP | ২৬-এর ভোটের আগে ফের শক্তিশালী তৃণমূল, বিজেপি-সিপিএমে বিরাট ভাঙন
01:13:00
Video thumbnail
BJP | Supreme Court | এই বিজেপি নেতার বিধায়ক পদ খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট, দেখুন বড় খবর
03:22:05
Video thumbnail
Narendra Modi | পহেলগাম হা/মলা/র পর প্রথমবার কাশ্মীরে নরেন্দ্র মোদি, দেখুন Live
01:32:06