Wednesday, July 30, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: বিজেপি, ভারত ছাড়

চতুর্থ স্তম্ভ: বিজেপি, ভারত ছাড়

Follow Us :

“যা হয় হোক, কেউ যেন এই ব্যারিকেড পার না করতে পারে, এই ব্যারিকেড কোনওভাবেই যেন না ভাঙে, আমি স্পষ্ট করে বলছি, ওই প্রত্যেকের মাথা ভেঙে দাও, যারা এই ব্যারিকেড ভাঙতে আসবে। আমি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং এই লিখিত আদেশ আমি আপনাদের  দিচ্ছি, আপনাদের হাতে যে লাঠি আছে সরাসরি তাই দিয়েই ওদের মারুন, আমাদের কাছে যথেষ্ট পুলিশি ব্যবস্থা আছে, আমি গত দু’দিন শুইনি, আপনারা তো খানিক রেস্ট করেই এখানে এসেছেন, কেউ যেন ব্যারিকেড ভেঙে আমার দফতরে পৌঁছতে না পারে”, কে বললেন? কার্নালের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, একজন আইএএস অফিসার, যিনি গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষের, সংবিধানের শপথ নিয়ে নিজের আসনে বসেছেন। ফলাফল? একজনের মৃত্যু, একজন দৃষ্টিহীন হলেন, ৬০ জনের বেশি কৃষককে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হল, তা ছাড়াও আহতের সংখ্যা অন্তত সাড়ে ৩০০।

২৮ অগস্ট কার্নালে কৃষক সমাবেশের ঘটনা। এই মুহূর্তেও কৃষকরা বসে আছেন কার্নালে, তাঁদের অবরোধ ভাঙা যায়নি, তা আরও সুদৃঢ় হয়েছে। মনে পড়ে যাবেই, ১২ মার্চ ১৯৩০, গান্ধীজির সত্যাগ্রহ আন্দোলনের কথা, সেদিন সবরমতি আশ্রম থেকে গান্ধীজি বেরিয়েছিলেন ডান্ডি অভিযানে, লবণ আইন ভঙ্গ করো, এটাই ছিল শ্লোগান। সেদিনও সারি দিয়ে মানুষ আইন অমান্যে নেমেছিলেন। নির্দয় ভাবে লাঠিপেটা করেছিল ব্রিটিশ পুলিশ। একদল আসছে, লাঠির ঘায়ে রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে পড়ছে, কংগ্রেস সেবাদলের কর্মীরা তাঁদের তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অন্যদল আসছে, ব্রিটিশ পুলিশ অফিসারদের নির্দেশ ছিল, যে কোনও মূল্যে তাঁদের আটকাতে হবে, মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েও আটকাতে হবে। একবছরেরও বেশি সময় ধরে সেই সত্যাগ্রহ চলেছিল, লক্ষ লক্ষ মানুষ, সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল। আজকের সঙ্গে সেদিনের তফাতটা হল, সেদিন দেশের সরকার ছিল ব্রিটিশদের, আমরা পরাধীন ছিলাম, আজ আমরা স্বাধীন, তবে আজ যারা সরকারে রয়েছে, সেদিন তারা ছিল ব্রিটিশ সরকারের দালাল। সেদিন ব্রিটিশ সরকারের, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ মেনে চলা গণতান্ত্রিক নিয়মনীতি মেনে চলার কোনও দায় ছিল না, কিন্তু আজ? এক গণতান্ত্রিক দেশে, সংবিধানের শপথ নেওয়া সরকারও একইভাবে চরম অগণতান্ত্রিক ভাবে শাসন চালাচ্ছে, দেশের অন্নদাতাদের আন্দোলনকে জলকামান, লাঠি, গুলি, টিয়ার গ্যাস দিয়ে নির্মমভাবে দমন করার চেষ্টা চালাচ্ছে, কোন সরকার? যে সরকারের প্রতিটা দফতর, নেগেটিভ গ্রোথের থেকে বের হতে পারছে না, একমাত্র কৃষিতে লাগাতার পজিটিভ গ্রোথ, তাঁদের ঋণ মকুব না করার পরেও, তাঁদের সেচের বন্দোবস্ত না করার পরেও তাঁদের তৈরি আনাজ ছিল বলেই, লকডাউনের সময় বিরাট বিপর্যয় এড়ানো গিয়েছে। গত ৩০/৩৫ বছর ধরে একমাত্র কৃষিক্ষেত্রই লাগাতার পজিটিভ গ্রোথ দিয়ে যাচ্ছে। সেই অন্নদাতারা যখন রাস্তায়, যখন তারা সরকারের আনা আইনের বিরোধিতা করছে, তখন সরকারে এক আইএএস অফিসার, আমাদের ট্যাক্সের টাকায় বেতনভুক এক কর্মচারী, কৃষকদের মাথা ফাটিয়ে দেবার নিদান দেবার পরে, তাকে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে বদলি করা হচ্ছে। তিনি এখন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী, খট্টর সাহেবের প্রিয়পাত্র। যে হরিয়ানার বেকারত্ব দেশের গড় বেকারত্ব ৮% এর চারগুণেরও বেশি, প্রায় ৩৫ %। সেই অপদার্থ সরকার, ওই আইএএস অফিসারটিকে জেলে পোরার বদলে, তার হাতে তুলে দিলো নীতি নির্ধারণের ক্ষমতা। সারা দেশে আমলাদের কাছে মেসেজও পাঠানো হল, সরকারের হয়ে যত পারো দমন, নিপীড়ন চালিয়ে যাও, পদোন্নতি অনিবার্য, গণতন্ত্র? গয়া ভাঁড় মে। এ সরকার গণতন্ত্রের ধার ধারে না। প্রমাণ? আসুন দেখে নিই, কেমনভাবে এই কৃষি বিল পাশ করানো হয়েছিল, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, সংসদে কৃষি বিল পেশ করা হল, ঘড়িতে তখন সকাল ৯ টা ৩৯। কৃষিমন্ত্রী তোমর, কৃষিবিল পেশ করলেন। কংগ্রেসের কে সি বেনুগোপাল উঠে দাঁড়ালেন, উনি বললেন, এই বিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কৃষকের জমি কেড়ে কর্পোরেটের হাতে তুলে দেবার চক্রান্ত হচ্ছে, এই বিলকে সিলেক্ট কমিটির কাছে পাঠানো হোক। এরপরে তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে, সিপিএমের নেতারা একে একে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁদের বিরোধিতার কথা বললেন। ১০ টা ৮ মিনিটে বিজেপি নেতা ভূপেন্দ্র যাদব, উঠে দাঁড়িয়ে বিলের সমর্থন করে বললেন, ‘আমরা দেশের কৃষকদের নিয়ে ভাবছি, তাঁদের উন্নতির জন্যই এই বিল আনা হয়েছে।’ এরপর সমাজবাদী দলের রাম গোপাল ভার্মা তাঁর বিরোধিতার কথা বললেন, এই সমর্থন আর বিরোধিতার মধ্যেই ১ টা বাজল, ডেপুটি চেয়ারম্যান বললেন, লাঞ্চের সময় হয়েছে, আপনারাই বলুন, লাঞ্চ ব্রেক দেওয়া হবে, না এই আলোচনা চলবে, কারা কী বলছে শোনা গেল না। এরপর তুমুল হট্টগোলের মধ্যে তিনি বললেন বেশ আপনারা যখন চাইছেন, তখন ধ্বনি ভোটে এর ফয়সালা হোক। যারা পক্ষে, তাঁরা হ্যাঁ বলুন। আবার শোরগোল। এবার তিনি বললেন, যাঁরা বিপক্ষে, তারা না বলুন, আবার হৈচৈ হল। ডেপুটি চেয়ারম্যান জানালেন, বিল ধ্বনিভোটে পাশ হল, তখন ঘড়িতে ১ টা ৩৯। মানে, ৪ ঘন্টার ভেতরে কৃষিপ্রধান ভারতবর্ষের সংসদে কৃষক বিল আইন হয়ে গেলো। ভোটাভুটিও হল না! অর্থাৎ এখানেও ওই একই নির্দেশ ছিল, যে কোনওভাবে বিল পাশ করাতে হবে, গণতন্ত্রের নামে গা-জোয়ারি।

গণতন্ত্র মানে তো সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন নয়, গণতন্ত্র এক ব্যবস্থা যেখানে মানুষের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শাসন সুনিশ্চিত হবে। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভূমিকা যেমন থাকবে, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যালঘুদের বক্তব্য, তাঁদের ভূমিকা। মোদি সরকার সেই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা যা চাইছে তা হল, সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন, মেজরেটেরিয়া‍নিজম, গণতন্ত্রের নামে এক স্বৈরাচার। যেখানে স্বৈরাচার চলবে সংসদের বাইরে, স্বৈরাচার একই ভাবে চলবে রাস্তায়, মাঠে ঘাটে, কোনও বিরোধিতাই সহ্য করা হবে না, বিরোধিতা হলেই মাথা ভেঙে দাও, নির্দেশ আসবে। সেটাই আমরা দেখেছি সেদিন কার্নালে, সেটাই আমরা দেখেছি কৃষক আন্দোলনের শুরুর দিন থেকে, সরকার আলোচনা চায় না, যাদের জন্য আইন তারা চাইছেনা, তাতে কী? সরকার চাইছে, তাই আইন আসছে। তাহলে উপায়? দেশের ১১ টা বড় রাজ্য বিজেপি বিরোধীদের হাতে। পঞ্জাব, ছত্তিশগড়, রাজস্থান কংগ্রেসের হাতে, ঝাড়খন্ড, মহারাষ্ট্র কংগ্রেস এবং অন্যান্য রাজ্যের মিলিজুলি সরকার, বাংলা, কেরালা, তামিলনাড়ু তীব্র বিজেপি বিরোধীদের সরকার। তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ এমন কি ওড়িশার সরকারও বিজেপি বিরোধী। মধ্যপ্রদেশ, বিহার, গুজরাটে বিরোধীরা সরকারি দলের থেকে খুব পিছিয়ে নেই। ওই ১১টা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের উদ্যোগ নিতেই হবে, বাকি রাজ্যের মানুষকে নিয়ে গড়ে তুলতে হবে বিজেপি বিরোধী ঐক্য। ১১ জন মুখ্যমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির কাছে যান, সঙ্গে থাকুন কৃষক নেতারা। কৃষকদের সঙ্গে দেশের বিজেপি বিরোধী মানুষজন, সংসদের সামনে বসতে হবে, এই সরকারকে গণতন্ত্রের প্রকৃত পাঠ পড়ানোর দায় এদেশের বিজেপি বিরোধী মানুষ, বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলের, সেই দায়িত্ব পালন করুন। এই মেজরেটেরিয়ানিজমের বিরুদ্ধে, সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কেবল সংসদ নয়, রাস্তাই হল লড়াইয়ের আসল জায়গা।

আবার ফিরে চলুন ১৯৩০ এ, গান্ধীজির ডাকা সত্যাগ্রহ আন্দোলন বছরখানেক পর থেমেছিল, স্বাধীনতা আসেনি। এরপর গান্ধীজির ডাকে ৪২ এর ভারত ছাড় আন্দোলন, সারা দেশ জুড়ে মানুষ নেমেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, সেই দেশ জোড়া আন্দোলনের ফল, আমাদের দেশের স্বাধীনতা, শ্লোগান ছিল ইংরেজ ভারত ছাড়, ইংরেজ ভারত ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল, সেদিনও এই আরএসএস, বিজেপি নাম লিখিয়েছিল বিশ্বাসঘাতকদের দলে, সেদিন এদের তোলা দ্বিজাতি তত্ত্বের দাবি ছিল জিন্নার পাকিস্তানের দাবির সমার্থক। সেদিন এদের চক্রান্তের ফলেই দেশ ভাগ হয়েছিল কিন্তু স্বাধীনতা এসেছিল, দেশের নয়া সংবিধান রচনা হয়েছিল, যেখানে দেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা মিলে দেশ চালানোর শপথ নিয়েছিলেন। কেবল সরকারি দল নয়, স্বাধীনতার পরেই যে সরকার তৈরি হল, খেয়াল করুন, সেই জাতীয় সরকারে ঠাঁই পেয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও। সেদিন দেশের সংবিধান সভার চেয়ারম্যান করা হয়েছিল, বাবাসাহেব আম্বেদকরকে, যিনি ছিলেন কংগ্রেস বিরোধী। দেশের ইতিহাসে বহুবার, দেশের বিরোধী দলের উজ্জ্বল ভূমিকা আমরা দেখেছি, নরসিমহা রাওয়ের সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন রাষ্ট্রসংঘে, ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী, এটাই গণতন্ত্র। সরকার গঠন না করতে পারলে, তাদের কথা শোনাই হবে না, এরকম অগণতান্ত্রিক চেহারা আগে ছিল না। এই মোদি সরকার সেই অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করতে চাইছে, দেশকে বাঁচাতে হলে, দেশের সংবিধান, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে, আজকে দেশের মানুষের বলা উচিত, সমস্বরে বলা উচিত, বিজেপি ভারত ছাড়, এ এক নতুন স্বাধীনতার লড়াই, এক প্রকৃত গণতন্ত্রের জন্য লড়াই।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
TMC | তৃণমূলের প্রেস কনফারেন্সে বি/স্ফো/রক ঘটনার বর্ণনা পরিযায়ী নি/র্যাতি/তার
00:00
Video thumbnail
PM Modi | Mohan Bhagwat | চরম ল/ড়া/ই মোদি-ভগবতের,বারবার পিছোচ্ছে বিজেপির সভাপতি নাম ঘোষণা!
00:00
Video thumbnail
Parliament | Jaya Bachchan | 'প্রিয়াঙ্কা ডোন্ট কন্ট্রোল মি' রাজ্যসভায় রেগে আ/গু/ন জয়া বচ্চন, কেন?
00:00
Video thumbnail
Mamata Thakur |আমি বাঙালি গর্বিত বাংলা ভাষায় কথা বলে,অপারেশন সিঁদুর নিয়ে ঝাঁঝাল বক্তব্য মমতা ঠাকুরের
00:00
Video thumbnail
TMC | দিল্লি পুলিশের অভিযোগ খণ্ডন করে তৃণমূলের প্রেস কনফারেন্সে বি/স্ফোরক নি/র্যা/তিতার পরিবার
00:00
Video thumbnail
Rajya Sabha | Dola Sen | অপারেশন সিঁদুর নিয়ে রাজ্যসভায় বাংলা ভাষায় ঝড় তুললেন দোলা সেন
00:00
Video thumbnail
Rahul Gandhi | ট্রাম্প মিথ্যে বলছেন একথা কেন বলতে পারছেন না মোদি? বি/স্ফোর/ক রাহুল গান্ধী
08:49
Video thumbnail
Ghatal | Dev | ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে বিরাট মন্তব্য দেবের, কী বললেন শুনুন
04:34
Video thumbnail
PM Modi | Mohan Bhagwat | চরম ল/ড়া/ই মোদি-ভগবতের,বারবার পিছোচ্ছে বিজেপির সভাপতি নাম ঘোষণা!
13:35
Video thumbnail
Ghatal | Dev | ঘাটালে দেব, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কী কী কর্মসূচি সাংসদের? দেখুন বড় খবর
02:19:33

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39