Tuesday, August 5, 2025
HomeScrollFourth Pillar | ট্রাম্পের টাকা মোদির পকেটে
Fourth Pillar

Fourth Pillar | ট্রাম্পের টাকা মোদির পকেটে

বিদেশ মন্ত্রক এখন বলছে, এই অনুদান-বিতর্ক ট্রাম্পের তৈরি করা

Follow Us :

পৃথিবীর যে কোনও রাষ্ট্রে তাদের সামরিক বাহিনীর যে কোনও অংশের ৪০ জনকে তাদের দেশের মধ্যেই হত্যা করা হলে সে দেশের সরকার গদি হারাত, হারাবে। কিন্তু বিজেপি এক অদ্ভুত দল, অসম্ভব এক প্রচারতন্ত্র নিয়ে তারা সেই ভয়ঙ্কর কাণ্ডকে নিজেদের দিকে নিয়ে গেল, নিজেদের প্রচারের পক্ষে ব্যবহার করল, এক জঙ্গি জাতীয়তাবাদী প্রচারে ভর করে নিশ্চিত হারের মুখ থেকে তারা ফিরে এল। এরকম একবার নয়, বারবার তারা তাদের বিরুদ্ধে ওঠা ভয়ঙ্কর অভিযোগ, তাদের অপশাসন, তাদের ভুল সিদ্ধান্তকে শেষমেশ নিজেদের হাতিয়ার করে তুলেছে। ধরুন কৃষি বিল, আমরা ভেবেছিলাম পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে জাঠভূমিতে বিজেপি মুছে যাবে, কিন্তু কোনও কথা না বলে, কোনও কারণ না দেখিয়েই কৃষি বিল কেবল ফেরত নিয়ে তারা রুখে দিয়েছিল সেই হার। এরকম বারবার। তো এবারেও তেমন এক ইস্যু আর তেমন এক প্রচার শুরু হয়েছে। আসুন ঘটনাটা একটু বুঝে নিই। গত শুক্রবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, আমেরিকার সরকারের ইউএসএড ভারতে যে ২১ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছিল, তা ‘ঘুষ’ ছিল। মানে ভারতের রাজনৈতিক নেতাদেরকে প্রভাবিত করার ব্যবস্থা ছিল। তারপরেই শনিবার ডোনাল্ড ট্রাম্প বললেন, “আমার বন্ধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে ২১ মিলিয়ন ডলার যাচ্ছিল। আমরা ভারতে ভোটের হার বাড়ানোর জন্য ২১ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছিলাম।”

অভিযোগ আসার পর থেকেই বিজেপির উল্টো প্যাঁচ শুরু, ভারতে ইউএসএড-এর অর্থ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যকে হাতিয়ার করেই বিজেপি রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপ চাওয়ার অভিযোগ তুলছিল। কংগ্রেস টাকা নিয়েছে, রবীশ কুমার থেকে প্রশান্তভূষণ টাকা নিয়েছে। শুক্রবার ট্রাম্পের মন্তব্যে খোদ মোদি সরকার, বিজেপি দলই অস্বস্তিতে পড়েছে। কংগ্রেস এবারে খিল্লি করছে, ট্রাম্প তা হলে মোদিকেই ‘ঘুষ’ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছেন! কংগ্রেসের জনসংযোগ বিভাগের চেয়ারম্যান পবন খেরা ওই শনিবারেই সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি তুলেছেন, “আমেরিকা যে নরেন্দ্র মোদিকে ২ কোটি ১০ লক্ষ ডলার ঘুষ দিচ্ছিল বলে অভিযোগ করছে, তার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উচিত তাঁর বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলে এই অভিযোগ খারিজ করা।” মানে সাফ, হয় স্বীকার করুন ঘুষ এসেছে, না হলে বলুন ট্রাম্প সাহেব মিথ্যে বলছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে ক্ষমতায় এসে ইলন মাস্কের নেতৃত্বে যে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ তৈরি করেছেন, এবং কাজ করার শুরুতেই তারা ভারতে ২ কোটি ১০ লক্ষ ডলারের আর্থিক অনুদান বন্ধ করেছে। ট্রাম্পের দাবি, ভারতে ভোটের হার বাড়ানোর জন্য এই অর্থ দেওয়া হচ্ছিল। যদিও ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ সংবাদপত্রের দাবি, আমেরিকান সরকারের টাকায় চলা ইউএসএড-এর তরফে ভারতে এই অর্থ বরাদ্দ হওয়ার কোনও নথিই নেই। বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয় পাল্টা বলেন, ‘‘পরপর তিন দিন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বললেন যে, ইউএসএড ভারতে ২ কোটি ১০ লক্ষ ডলার দিচ্ছিল ভোটের হার বাড়াতে। তিনি কি নিজের দেশের টাকা কোথায় খরচ হচ্ছিল, জানেন না?’’ কিন্তু ট্রাম্প যে তাঁর ‘বন্ধু প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে’ ২ কোটি ১০ লক্ষ ডলার গিয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন, সে প্রসঙ্গ নিয়ে মালবীয় স্যর মুখে তালা দিয়েছেন, এড়িয়ে গিয়েছেন।

কংগ্রেস নেতা পবন খেরা এবার খেলার সুযোগ পেয়েছেন তাঁর প্রশ্ন, ভারতে ইউএসএড-এর টাকা দেওয়ার কোনও নথি নেই, আমরা জানি। ভারতে টাকা আসেনি। বাংলাদেশে টাকা যাওয়ার নথি রয়েছে। মোদি সরকার কেন ভারতের প্রতিবেশী দেশে আমেরিকার টাকা ঢালার খবর পেল না? কেন আমেরিকা টাকা ঢেলেছিল, হাসিনা জমানার কারা সেই টাকা পেয়েছিল? ‘ছোটদের জেমস বন্ড’ অজিত ডোভাল কী করছিলেন? এদিকে বিজেপি বেড়ে খেলতে গিয়ে আগেই জানিয়ে দিয়েছে বিবৃতি দিয়ে দাবি করছে, ২০১২-য় ভারতে ভোটের হার বাড়াতে ইউএসএড-এর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের চুক্তি হয়। কিন্তু পবন খেরার প্রশ্ন তাহলে কংগ্রেসের জন্য সেই টাকা ঢালা হলে ২০১৪-র লোকসভা ভোটে কংগ্রেস মাত্র ৪৪টি আসন পেল, বিজেপি ২৮২টি আসন পেল কী ভাবে? সেই চুক্তি কেন ২০২০-তে নতুন করে করা হল? ২০০১ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে ভারতে ইউএসএড-এর ২৯০ কোটি ডলার এসেছে। মোদি থেকে ‘আধুনিক চাণক্য’ অমিত শাহ এত দিন এর খোঁজ পাননি? ‘‘এই টাকায় কি বিরোধী দল, নাগরিক সংগঠন, সংবাদমাধ্যমকে দুর্বল করার কাজ চলছিল? বিদেশি তহবিলের টাকা ভারতে ঢোকার ক্ষেত্রে এত কঠোর আইন। তা সত্ত্বেও সরকার কোনও খোঁজ রাখে না? এ কেমন সরকার চলছে?’’ বিরোধী শিবির আজ ফের এ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি তুলেছে। বিশ্বগুরুর আমেরিকা সফর প্রথম দিন থেকেই বেশ গন্ডগোলে পড়েছে। ঢাকঢোল পিটিয়ে মোদি সদ্য ২৩ পাতার, প্রায় সাড়ে তিন হাজার শব্দের যৌথ বিবৃতি সই করে ওয়াশিংটন সফর সেরে ফিরেছেন। ফিরেই ‘পরম বন্ধু’ ট্রাম্পের কথায় লগা চুনরি মে দাগ।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | আমার আ মরি বাংলা ভাষা উবে যাওয়ার আগে ক’টা কথা

বিদেশ মন্ত্রক এখন বলছে, এই অনুদান-বিতর্ক ট্রাম্পের তৈরি করা। তিনি এবং তাঁর দল তাঁর পূর্বসূরি বাইডেন প্রশাসনের বৈদেশিক অর্থ অনুদানের নীতিতে অবিশ্বাসী। ইউএসএড-এর সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক নেই। তাই ধারাবাহিক ভাবে জলঘোলা করছেন। ঘরোয়া রাজনীতিতে লাভের অঙ্ক কষেই ট্রাম্প এগোচ্ছেন, মনে করছে বিদেশ মন্ত্রক, কিন্তু মুখে জানাচ্ছে কি? বিবৃতি দিয়ে কিছু বলার ক্ষমতা আছে মোদি সরকারের? এই আঁচ যাতে এ দেশের রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে না পড়ে, তা নিশ্চিত করাও সাউথ ব্লকের দায়। এ কাজে বরাবরের মতোই ভাষ্য তৈরির কাজে লাগানো হয়েছে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে। তিনি অসম্ভব গোল গোল ভাষায় যে কোনও বিষয়কে মানুষের সামনে বলতে পারেন, যা শুনে মনে হবে তিনি দারুণ কিছু একটা বলছেন, কিন্তু বলার পরে বুঝে ওঠা যাবে না যে উনি ঠিক কী বললেন বা বলতে চাইলেন। আজ এক অনুষ্ঠানে যথারীতি তিনি বলেন, ‘‘ট্রাম্প দ্বিতীয় দফার গোড়াতেই যে রাষ্ট্রনেতাদের ডেকেছিলেন, তার একজন নরেন্দ্র মোদি। মোদি একজন সুদৃঢ় জাতীয়তাবাদী নেতা এবং সেটা ফুটেও ওঠে। ট্রাম্পও আমেরিকান জাতীয়তাবাদী। আমার ধারণা জাতীয়তাবাদীরা একে অন্যকে সম্মান করেন। মোদি ভারতের জন্য যা করেন, ট্রাম্প মেনে নিয়েছেন। মোদিও মেনে নিয়েছেন আমেরিকার জন্য ট্রাম্পের ভূমিকা। দু’জনের মধ্যে রসায়ন ভালো। আমরা জানি ট্রাম্প কিছুটা চিরাচরিত ছকের বাইরে হাঁটেন। বিশ্বের বহু রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ইতিহাস নেতিবাচক। মোদির ক্ষেত্রে তা নয়।’’

বুঝুন, প্রশ্ন হল ট্রাম্প সাহেব বলছেন আমেরিকা মোদিজি, মানে ট্রাম্প সাহেবের বন্ধুকে ২১ মিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন, সেটা নিয়ে কিছু বলুন। না উনি সেসব নিয়ে কিছু বলেননি। ওদিকে মোদিজি যথারীতি চুপ করে বসে আছেন। আসলে এই ইউএসএইড দফতর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সাহায্য পাঠানোর কাজ করে, আর সে সব এমনি এমনি নয়, বহু নজরদারি চালানোর জন্য, বহু সরকার বিরোধী আন্দোলনে সাহায্যের জন্য, বহু সরকারে থাকা দলকে টিকিয়ে রাখার জন্য। মোদ্দা কথা হল দুনিয়াতে মার্কিনি রাজত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য আমেরিকার একটা দফতর যা বিভিন্ন সাহায্য করে থাকে। একসময়ে আমাদের বিজেপি নেত্রী স্ম্রৃতি ইরানি এই ইউএসএইড-এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর ছিলেন। কেন্দ্র জানাচ্ছে, ২২-২৩ অর্থবর্ষে আমেরিকার থেকে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার অনুদান পেয়েছে ভারত। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সেই টাকায় দেশে সাতটি প্রকল্প চলছে এই মুহূর্তে। কী সেই ৭ প্রকল্পের ক্ষেত্র, তা জানিয়ে দিয়েছে দিল্লি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক বলছে, ভারতে ভোটের হার বাড়াতে টাকা দেওয়া হয়নি, বরং কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, পানীয় জল, পরিচ্ছন্নতা, পুনর্নবীকরণ শক্তি, স্বাস্থ্য এবং বিপর্যয় মোকাবিলা খাতেই অনুদান দেওয়া হয়। এই ক্ষেত্রগুলির ৭ প্রকল্পে দেওয়া হয়েছে টাকা। এই প্রকল্পের ভাগ গিয়েছে মহারাষ্ট্র, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশেও। দেবেন্দ্র ফড়নবিশ এই বরাদ্দের বৈঠকে হাজির ছিলেন।

আসলে এই ইউএসএইড সংস্থা কেবল বিভিন্ন খাতে টাকা পাঠায় এমনও নয়, এঁরা বিভিন্ন সংস্থাকে দিয়ে বিভিন্ন দেশের উঠতি নেতাদের নিজেদের দেশে আমন্ত্রণ জানান, বিভিন্ন সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে যান, ৫/৭/১০/১৫ দিন তাঁদের বিভিন্ন জায়গাতে নিয়ে যাওয়া হয়, সেমিনার সিম্পোজিয়াম হয়, বোঝার চেষ্টা হয় কাদের কাদের কাজে লাগানো যায়। এবং মজার ব্যাপার হল এই সংস্থা দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দল ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিক দলকেই এই কাজের জন্য ফান্ড অ্যালট করে। নরেন্দ্র মোদিও এরকমই এক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য আমেরিকাতে গিয়েছিলেন। যখনই যে দল ক্ষমতায় আসুক, আদতে আমেরিকার স্বার্থ বজায় রাখার জন্যই এই কাজ করা হয়, এসব শুরু হয়েছে বিশ্বজোড়া কমিউনিজমকে আটকাতে, তখন রাশিয়ার নেতৃত্বে বিপ্লব রফতানি হচ্ছে, এই অভিযোগ এনে আমেরিকা এই দফতর খুলে বসে যার সঙ্গে সিআইএ ছাড়াও বেশ কিছু নজরদারি সংস্থার গভীর যোগাযোগ আছে। আজ সেই কথাগুলো বেরিয়ে এসেছে। কেন? কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প সাহেব মনে করেন বাণিজ্য দিয়েই সবটা সামলে নেবেন, তাছাড়া বিশ্বজোড়া কমিউনিস্টদের সেই অগ্রগতিও নেই, চীনের অগ্রগতি কমিউনিজমের নয়, বাণিজ্যের, তাই ট্রাম্প সাহেব এসব ফালতু খরচ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, আর সেসবের মধ্যেই আমেরিকার কালো চক্রান্তের কিছু অংশ বেরিয়ে এসেছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | বিজেপির অভিধানে বাংলাই নেই !!
00:00
Video thumbnail
Kalyan Banerjee | চিফ হুইফ পদ থেকে ইস্তফা কল্যাণের? দেখুন বড় আপডেট
00:00
Video thumbnail
IND vs Eng | Oval Test | রুদ্ধশ্বাস লড়াই, ওভাল টেস্ট জিতে সিরিজ ড্র ভারতের
00:00
Video thumbnail
Bratya Basu | বাংলা ভাষা, ভাষা নয়, অমিত মালব্যকে ধুয়ে দিলেন ব্রাত্য বসু, দেখুন এই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Kalyan Banerjee | লোকসভায় চিফ হুইপের পদ থেকে ইস্তফা কল্যাণের, X হ্যান্ডেলে বি/স্ফো/রক কল্যাণ
00:00
Video thumbnail
Mamata-Abhishek | লোকসভায় 'অভি'-নব অধ্যায়, কী বললেন মমতা?
00:00
Video thumbnail
Amit Shah | J.P. Nadda | বাংলা ভাষা আর নাগরিকত্ব পাল্টা আ/ক্র/মণের নিদান শাহ-নাড্ডার
04:37
Video thumbnail
Beyond Politics (বিয়ন্ড পলিটিক্স) | বাংলা মানেই বাংলাদেশির ভাষা? বিজেপি তোর কানুন সর্বনাশা!
07:56
Video thumbnail
চতুর্থ স্তম্ভ (Fourth Pillar) | মোদিজি, সময় থাকতে থাকতে শেখ হাসিনা নিয়ে স্পষ্ট নীতি নিন
15:46
Video thumbnail
ঘোষাল নামা | Ghosal Nama | শিবু সোরেনের প্র/য়াণ এক যুগের অবসান, দেখুন ঘোষালনামা
05:12

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39