Saturday, June 7, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ : আন্দোলন, দেশ, রাজনৈতিক দল

চতুর্থ স্তম্ভ : আন্দোলন, দেশ, রাজনৈতিক দল

Follow Us :

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচিত সরকার থাকে, এক দলের বা মিলিজুলি। বিরোধী দল থাকে, একটা, দুটো, চারটে, দশটা। সরকারে যে দল আছে বা যে দলগুলো আছে, তারা বিভিন্ন পলিসি ডিসিসন নেয়, সিদ্ধান্ত নেয়, কিছু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, কিছু প্রকল্প আর বেশ কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত, যা তারা নির্বাচনের আগে মানুষকে বলে এসেছে। প্রয়োজনে বিরোধী দল বা দলগুলো তাকে সমর্থন করে, প্রয়োজনে বিরোধিতা করে, এ হল এক আদর্শ গণতান্ত্রিক কাঠামো।

একটা উদাহরণ দিই, ইন্দিরা গান্ধী ৪২তম সংবিধান সংশোধন করেছিলেন, দেশের বিচারব্যবস্থার বহু অধিকার কেড়ে নিয়ে, সংসদকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, মেজরেতেরিয়ান রুল, সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন চালু করার পদ্ধতি, মানে সংবিধান নয়, যারা সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ তারা তাদের ইচ্ছে খুশি মতো আইন তৈরি করতে পারবে, সংবিধানে স্বীকৃত অধিকারও কেড়ে নিতে পারবে, এমন এক ব্যবস্থা। যারা সেদিন বিরোধিতায় ছিলেন, তারা এই সংবিধান সংশোধনের বিরোধিতা করেছিলেন, সংসদের আয়ু ৫ থেকে ৬ বছর করার বিরোধিতা, জাতীয় সুরক্ষার নামে যাকে খুশি তাকে জেলে পোরার বিরোধিতা, বিচারব্যবস্থাকে পঙ্গু করে তোলার বিরোধিতা, কেবল বিরোধিতাই নয়, তাঁরা বলেছিলেন, আমরা ক্ষমতায় এলে প্রথম দিনেই আবার সংবিধান সংশোধন বিল এনে, এই বদলকে রদ করবো। করেও ছিল। জনতা সরকার আসার পরেই ৪৩ আর ৪৪ তম সংবিধান সংশোধন করে, আগের প্রায় সমস্ত সংশোধন কে বাতিল করা হয়েছিল, তাঁরা বলেছিলেন, অন্যায়ভাবে যাদের জেলে পোরা হয়েছে, তাদের জেল থেকে ছাড়া হবে, রেল ধর্মঘটে যাদের চাকরি গেছে, তারা চাকরি ফেরত পাবে, জেল থেকে বেরিয়েছিল হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দি, ডাক, তার, রেল এর নেতারা চাকরি ফিরে পেয়েছিলেন। এটাই তো গণতন্ত্র।

বিরোধী থাকা কালীন যে দাবি তোলা হয়েছে, বিরোধীরা সরকারে এলে সেই দাবি পূরণ করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। এমনটা বহুবার হয়েছে, বাংলার দিকে তাকিয়ে দেখুন, বলা হয়েছিল সিঙ্গুরে অন্যায়ভাবে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, আমরা ক্ষমতায় আসলে তা ফেরত দেওয়া হবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পরে তা করেছিলেন, বহু আগে বাম দলগুলো ১৯৭৭ এর আগে বলেছিলেন, বন্দিমুক্তি করতে হবে, ভূমি সংস্কার চাই, বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর হয়েছিল, বন্দিরা ছাড়া পেয়েছিলেন, ডাকাতির অভিযোগে বন্দী চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখলের নেতা অনন্ত সিংহও ছাড়া পেয়েছিলেন, ভূমি সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল সেই আমলেই, এটাই তো গণতন্ত্র। আবার মানা হয়নি, নিজেদের তোলা দাবি সরকারে এসে মানা হয়নি, তার তালিকাও খুব বড়, বাম দলগুলো বলেছিলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশ যাবে না, গুলি চলবে না, বেশিদিন নয়, ১৯৭৮ এই খিদিরপুর বন্দরে গুলি চলেছিল, মানুষ মারা গিয়েছিল, তারপর তো বহুবার, ২১ এ জুলাই থেকে নন্দীগ্রাম আমাদের সামনে আছে।

পরিবর্তনের ডাক দিয়ে তৃণমূল সরকার এল, দাবি তো ছিলই রাজনৈতিক কর্মীদের জেল থেকে মুক্তির, না হয় নি, অনেকেই এখনও জেলে আছেন, বহু রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসে ভুলেই যান, তাঁরা বিরোধী হিসেবে কী কী বলেছিলেন, কোন দাবি তুলেছিলেন! এবং এক্ষেত্রে বিজেপি হল নাটের গুরু, সবথেকে ওপরে।

বিরোধী থাকা কালীন যা যা বলেছিল, যে দাবি তুলেছিল, তার সবটাই ভুলে গেছে, পার্মানেন্ট মেমরি লস যাকে বলে। স্মৃতি ইরানি, ইদানিং ডায়েট করে, আবার শাস ভি কভি বহু থি র আকারে ফিরে গেছেন, কিন্তু সে সময়ের কথাগুলো মনে নেই, গ্যাস সিলিন্ডার মাথায় করে হেঁটেছিলেন, রান্নার গ্যাসের দাম ১০০০ টাকা হতে চলল, তেনার পার্মানেন্ট মেমরি লস, পেট্রল ডিজেলের দাম বাড়ছে বললে কম বলা হবে, রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি, কিন্তু তখন পেট্রল ডিজেলের মুল্যবৃদ্ধি নিয়ে মাঠ কাঁপানো আন্দোলনের বিজেপি নেতাদের মুখে কুলুপ, যেন কিচ্ছুটি হয় নি।

সেদিন, বি এস এফ এর সীমানা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মনমোহন সরকার, এখন প্রধানসেভক, তখন মুখ্যমন্ত্রীর জ্বালাময়ী প্রতিবাদ, চলবে না, আমাদের, মানে রাজ্যের ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে কেন্দ্র সরকার, আর এখন নিজে বাংলা, পাঞ্জাবের বি এস এফ এর এলাকা বাড়িয়ে দিলেন, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, পার্মানেন্ট মেমরি লস? সেদিন এসমা – নাসা নিয়ে বিজেপির সে কি প্রতিবাদ, এমনকি ইউ এ পি এ নিয়েও। ক্ষমতায় আসার পর অন্য খেলা, অধ্যাপক থেকে কবি, সাংবাদিক থেকে সমাজকর্মী সব্বাই দেশদ্রোহী, সব্বার ওপরে ইউ এ পি এ। মোদী সরকারের এই ক বছরে, দেশদ্রোহীতার মামলা বেড়েছে ১৬৫ শতাংশ, ইউ এ পি এ মামলা বেড়েছে ৩৩ শতাংশ, মৌনি বাবা কেবল মন কি বাত বলেই যাচ্ছেন, আগে কী বলেছিলেন, সব ভুলে গেছেন। এবং এম এস পি, ধান, গম ইত্যাদি ফসলের একটা মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস জানিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার, তারপর?

১৫/১৮ শতাংশ ফসল ওই মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইসে বিক্রি হয়, বাকি? চিন্তাই করতে পারবেন না, এই বছরে ধানের সহায়ক মূল্য ১৯৬৫ টাকা কুইন্টাল পিছু, এই বাংলা কেবল নয়, সারা দেশের কৃষকরা কোথাও ১১০০, কোথাও ১০০০, কোথাওবা ৯০০ টাকা ধান বেচছেন বলা ভুল হবে, বেচতে বাধ্য হচ্ছে। আম্বানির জিও বিক্রি হচ্ছে ঘোষিত মূল্যে, এক পয়সাও ছাড় নেই, ১০০ শতাংশ ঘোষিত দামে। কলগেট থেকে ফরচুন তেল থেকে ডাভ সাবান, ১০/১৫/২০ পয়সা ডিসকাউন্ট দিয়ে বিক্রি হচ্ছে এম আর পি তে, কেবল কৃষকের আনাজ বিক্রি হবে ৭০০/ ৮০০ টাকা কমে, কেন? সারা দেশ জুড়ে তাই নিয়েই তো আন্দোলন, আবার কমিটি তৈরি হল, দরকার ছিল কি? আজকের প্রধানমন্ত্রী ২০১১ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এম এস পি নিয়ে কমিটির রিপোর্ট, জমা করতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে, সেই কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে, এখন মিঃ গজনি?

পার্মানেন্ট মেমরি লস? কৃষকরা কী চাইছে? সরকার যে দাম ঘোষণা করেছে, সেই দাম তাদের দেওয়া হোক, যেই কিনুক, ওই দামেই কিনতে হবে, এম এস পি র লিগাল রাইট, আইনী অধিকার, এই তো। একবছর লেগে গেল কেবল কমিটি তৈরি করতে, কিন্তু আজ আলোচনা তাই নিয়ে নয়। মোদি-বিজেপি-আর এস এস আজ আছে, কাল থাকবে না, কিন্তু আজকের বিরোধীরা, কাল এই এম এস পির আইনী অধিকার দেবেন? সে প্রতিশ্রুতি কোথায়? কৃষি তো রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত, বিরোধী দল যেখানে ক্ষমতায় আছে, সেখানে এম এস পির আইনী অধিকার দেওয়া হোক, বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা বাপ বাপ বলে এই অধিকার দেবে, দিতে বাধ্য হবে।

কংগ্রেস থেকে তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী দল ঘোষণা করুক এম এস পির আইনী অধিকারের, উত্তর প্রদেশে নির্বাচন, অখিলেশ বলুন ক্ষমতায় আসলে এম এস পি দেবো, নাহলে এই গণতান্ত্রিক কাঠামো অর্থহীন হয়ে উঠবে, ক্ষমতায় থাকাকালীন আগের সমস্ত কথা ভুলে যাবো, বিরোধী হয়েই সেই সব দাবি নিয়ে রাস্তায় নামবো, যা ক্ষমতায় থেকে পালন করেন নি, এ তো গণতন্ত্র নয়, গণতান্ত্রিক রীতি নীতি পদ্ধতি মেনে মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করুন, আসুন আমরা প্রশ্ন করি সরকার কে, প্রত্যেক সরকারকে, তাদের প্রতিশ্রুতি তারা ভুলে গেলে, মনে করিয়ে দেবার দায়িত্ব তো আমাদেরই, তাঁদের মেমরি লসের ওষুধ, রাস্তায় নামা, যে কাজটা এবার কৃষক রা করে দেখালেন, ব্রেনোলিয়ার কাজ করলেন তাঁরা, প্রতিশ্রুতি পালন করো, নাহলে মানুষ রাস্তায় থাকবে, এটাই গণতন্ত্র, এটাই গণতান্ত্রিক কাঠামো।  

মোদিজীর জামানায় সেই গণতন্ত্র আজ আক্রান্ত, কেবল আমরা বলছি তা নয়, ডেমোক্রাসি ইনডেক্স, ২০২০ সালের রিপোর্টে আমরা ৫৩ নম্বরে আছি, ২০১৪ তে আমরা ছিলাম ২৭ নম্বরে, মানে ২৬ পয়েন্ট কমেছে, আমাদের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ফ্লড ডেমোক্রাসি, অসম্পূর্ণ গণতন্ত্র বলা হচ্ছে, এই পতন হয়েছে চওকিদার কাম চা ওলার নেতৃত্বে, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংগঠিত আক্রমণ, দেশদ্রোহীতার ধুয়ো তুলে মানুষকে জেলে পোরা, সংসদকে এড়িয়ে নিজের ইচ্ছে খুসি মত আইন তৈরি করা, দেশের ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিসর্জন দেবার চেষ্টার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ভেঙে ফেলার চক্রান্ত চলছে। আমাদের এই চক্রান্তকে রুখতে হবে, এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, এখনই, এটাই আমাদের প্রথম কাজ।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Tejashwi Yadav | বিহার চালাচ্ছেন ক্লান্ত মুখ্যমন্ত্রী আর অবসরপ্রাপ্ত অফিসাররা, বিস্ফোরক তেজস্বী যাদব
01:33:25
Video thumbnail
Narendra Modi | প্রধানমন্ত্রীর মুখে আদিল শাহর নাম, কী বললেন?
01:03:25
Video thumbnail
Narendra Modi | কাশ্মীরে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিরাট মন্তব্য মোদির
55:06
Video thumbnail
Vijay Mallya | 'অরুণ জেটলিকে বলেছিলাম লন্ডন যাচ্ছি', পডকাস্টে বি/স্ফো/রক দাবি বিজয় মালিয়ার
01:31:21
Video thumbnail
M.Chinnaswamy | CID | চিন্নাস্বামী কাণ্ডে তদন্ত করবে CID
43:31
Video thumbnail
Narendra Modi | বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল সেতুর উদ্বোধনে নরেন্দ্র মোদি, দেখুন Live
01:40:06
Video thumbnail
Repo Rate | মধ‍্যবিত্তের জন‍্য দারুন সুখবর, স্বস্তির খবর জানতে দেখুন এই ভিডিও
02:58:41
Video thumbnail
Vijay Mallya | ‘পলাতক’ কিন্তু ‘চোর’ নই, ভারতে ফেরার শর্ত দিলেন বিজয় মালিয়া
02:29:16
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী, দেখুন সরাসরি
48:30
Video thumbnail
Donald Trump | ট্রাম্পের কড়া হুঁশিয়ারি, কী সিদ্ধান্ত নেবেন মাস্ক? দেখুন বড় খবর
01:20:16