Friday, June 6, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: হাতে অস্ত্র সি বি আই, ইডি, ভিজিলেন্স

চতুর্থ স্তম্ভ: হাতে অস্ত্র সি বি আই, ইডি, ভিজিলেন্স

Follow Us :

লগত ২৭ অগস্ট, অভিনেতা সোনু সুদ দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে দেখা করেন। দিল্লি সরকারের শিক্ষা সংক্রান্ত এক প্রকল্পের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হবার কথা ঘোষণা করেন। সাংবাদিক বৈঠকে সোনু সুদ কেজরিওয়ালের সঙ্গে বসে, দিল্লির শিক্ষা দফতরের প্রশংসাও করেন। ব্যাস, গতকাল ১৫ সেপ্টেম্বর, মুম্বইতে সোনু সুদের বিভিন্ন দফতর বা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ আছে, এমন ৬ জায়গায় ভোরবেলা থেকে ইনকাম ট্যাক্স রেড শুরু হয়েছে। জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাগজপত্রের ছানবিন চলছে বলে জানা গেছে। এখনও পর্যন্ত আইটি দফতর থেকে কিছু জানানোও হয়নি, বলা হয়েছে, এটা নাকি আইটি সার্ভে, আইটি রেড নয়। যদিও নিয়মমাফিক সোনু সুদের মোবাইল বন্ধ। তাঁর দফতর ঘিরে রাখা হয়েছে। আগে রাজা রাজড়ারা আলোচনা চাইলে, বরকন্দাজ সমেত দূত পাঠাতেন, বাদশাহ, নবাব, সুলতান, রাজামশাই ডেকে পাঠিয়েছেন, তারা এসে জানাতো। এখন মোদিজি, আইটি, সিবিআই, ভিজিলেন্স, ইডি পাঠান। আপনি ভয় পাবেন, যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন, দালাল আছে প্রচুর তারা আপনাকে জায়গা মত নিয়ে যাবে, তারপর হয় মোদি, নয় অমিত শাহ আপনার সঙ্গে কথা বলে, আপনার আনুগত্য চাইবেন, আপনি রাজী হলে ছাড়। না হলে একের পর এক দফতর আপনার জান কয়লা করে দেবে, এটাই নিও নর্মাল। এটাই দস্তুর। দেশের মানুষের ট্যাক্সের পয়সায় চলা সিবিআই, ইডি, ইনকাম ট্যাক্স দফতর এখন মোদি –শাহের অস্ত্র, যখন খুশি মর্জিমত তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। কাদের বিরুদ্ধে? প্রত্যেকের, যে কোনও বিরোধিতার বিরুদ্ধে ডালকুত্তা লেলানোর মত, লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে এই সব দফতরের অফিসারদের, নির্দেশ মত কাজ করলে প্রমোশন, অবসরের পরেও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধে, চাই কি এমপি এমএলেরা, রাজ্যসভার পেছন দরজা তো আছেই। এই তালিকায় বিরোধী দলের নেতা, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, সরকারি অফিসার, বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতা, ব্যবসায়ী, প্রত্যেকে প্রত্যেকে আছেন। রাজার শাসন, হয় বশ্যতা স্বীকার করো, না হলে শেষ করে দেব। শেষ করার দুটো তারিকা, জেলে পুরে দাও, অজস্র কেস দাও, একটা কেসের জামিন হলে অন্য কেস দাও। এক রাজ্যের কেস শেষ হলে অন্য রাজ্যের কেস দাও, গত ৪/৫ বছর ধরে জেলে পচছেন সমাজকর্মী সুধা ভরদ্বাজ, অরুণ ফেরেইরা, রোনা উইলসন, অধ্যাপিকা সোমা সেন, সাংবাদিক গৌতম নভলাখা, জেলেই মারা গেলেন অশীতিপর বৃদ্ধ ফাদার স্ট্যান স্বামী, বিছানায় শয্যাসায়ী ভারাভারা রাও ক’দিন আগে বেল পেয়েছেন। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পঙ্গু হুইল চেয়ারে বসা জি এন সাইবাবা, জেএনইউ’র ছাত্র নেতা উমর খালিদ এখনও জেলে।

অন্য ভয় দেখানোর অস্ত্র হল সিবিআই, ইডি পাঠিয়ে দেওয়া, বা দফতরে ডেকে এনে লাগাতার জেরা করা। কিছু রাজনৈতিক নেতা নতিস্বীকার করবেন, কিছু শিরদাঁড়া সোজা নেতা আছেন, তারা বশ্যতা স্বীকার করবেন না। তাঁদের নিয়ে খবর হবে, লোকে বলবে, যা রটে তার কিছু তো বটে। আর এসব আমরা জানতে পারবো, কিন্তু যা জানাও যাবে না তা হল দেশের লক্ষ লক্ষ ব্যবসায়ীদের কথা, তাঁরা আপোষেই বিশ্বাস করেন, বেশিরভাগই তাই, অতএব উপচে পড়ছে, বিজেপি আর তার বিভিন্ন গণসংগঠনের তহবিল। মোদি–শাহ বিরোধীদের বশ করতে, আর তাঁদের নির্বাচন তহবিলের জন্য ব্যবহার করছেন। দেশের মানুষের ট্যাক্সের পয়সায় চলা সরকারি পরিকাঠামোকে, এসবের এই নগ্ন ব্যবহার এর আগে কোনওদিন দেখা যায়নি। প্রমাণ? ২৭ এ আগস্ট সোনু সুদ কেজরিওয়ালের সঙ্গে মিটিং করলেন, ১৫ সেপ্টেম্বর, মাত্র ১৮ দিন পরেই, তাঁর দফতরে আইটি রেড হল। একটা নয়, এরকম অজস্র ঘটনা আছে, আসুন সেগুলো একবার দেখে নেওয়া যাক।

প্রথমে আসি সাংবাদিকদের, সংবাদ মাধ্যমের মালিকদের ভয় দেখানোর কিছু উদাহরণে, প্রণয় রায়, পরিচয়ের দরকার নেই। আত্মীয় স্বজন নিয়ে বিদেশে যাচ্ছেন, দিন পনেরোর ভিসা আছে, না ফেরার কোনও প্রশ্নই নেই, তাঁদের বিমান বন্দরেই জানানো হল, তিনি এবং তাঁর স্ত্রী বিদেশে যেতে পারবেন না, সরকারি নিষেধাজ্ঞা আছে। তারপর থেকে মামলার পাহাড় জমেছে। সিদ্ধার্থ বরদারাজন, দ্য ওয়ারের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করল উত্তর প্রদেশ সরকার, সে মামলায় বেল পেলেন তিনি, কিন্তু মামলা চলছে। দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হল সাংবাদিক বিনোদ দুয়ার বিরুদ্ধে, বেশ কিছুদিন জেলে পোরার চেষ্টা চলল, শেষমেষ তিনি জামিন পেয়েছেন, কিন্তু মামলা চলছে। এরকম আরও বেশ কিছু ঘটনা আছে, সাংবাদিক পেটানোর, এমন কি খুন করার ঘটনাও আছে, বাকি গোদি মিডিয়ার দিকে তাকান, সেখানে কোনও সমস্যাই নেই।

এবার আসুন রাজনৈতিক নেতাদের উদাহরণ গুলো দেখা যাক। ২০১৮, আট মাস আগে চন্দ্রবাবু নাইডু এনডিএ ছেড়েছেন, বিজেপির বিরোধিতায় সোচ্চার, চারমাস পরে অন্ধ্রপ্রদেশে ভোট, টিডিপিএমপি ওয়াই এস চৌধুরির বাড়িতে ইডি’র আগমন, অভিযোগ বে আইনি লেনদেন, টাকা আত্মস্মাৎ করা, ব্যাঙ্কের টাকা মেরে দেওয়া। বিরাট খবর হল, রাজ্যের নির্বাচনের পরেই চৌধুরি বিজেপিতে গেলেন, ব্যস, ওয়াশিং পাউডার নিরমা, ওনার বিরুদ্ধে আর কোনও তদন্তের কথা শোনা যায়নি, উনি মিঃ ক্লিন। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের চার মাস আগে, হরিয়ানায় কংগ্রেস নেতা ভূপেন্দ্র সিং হুডার বাড়িতে সিবিআই, ২০ টা বিভিন্ন জায়গায় তল্লাসি, এখনও পর্যন্ত কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি, কোনও তথ্য দেয়নি সরকার। ২০১৮ সেপ্টেম্বর, নির্বাচনের দু মাস আগে ছত্তিশগড়ের কংগ্রেস নেতা, এখন মুখ্যমন্ত্রী, ভূপেশ বাঘেলকে সিবি আই নোটিস ধরালো, এই মামলারও আর কোনও অগ্রগতি নেই। সেপ্টেম্বর ২০১৯, মহারাষ্ট্র নির্বাচনের ১ মাস আগে এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারকে আর তার বোনপো অজিত পাওয়ারকে, ইডি থেকে নোটিস দেওয়া হল, মহারাষ্ট্র রাজ্য কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক ঘোটালার জন্য। ক’দিনের মধ্যে সেই স্ক্যামের অভিযোগ মাথায় থাকা অজিত পাওয়ারকে নিয়ে বিজেপি সরকার গড়ার চেষ্টা করল। সেই সমস্ত অভিযোগ তুলেও নিল, সরকার হল না, সেসব মামলা নিয়ে আর কোনও উচ্চবাচ্য নেই, আবার নির্বাচন আসলে সিবিআই আসবে। ২০১২ -১৩ তে মিউরেট অফ পটাশ আমদানি নিয়ে এক মামলা রুজু হয়েছিল। রাজস্থানের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের বিরুদ্ধে, বহুদিন সাড়াশব্দ ছিল না। গতবছর শচীন পাইলট আর গেহলটকে নিয়ে কংগ্রেসী বিবাদ যখন তুঙ্গে, ঠিক তখন ইনকাম ট্যাক্স এবং ইডি চলে এল অশোক গেহলটের বাড়িতে। বিভিন্ন দফতরে, ঝগড়া সামলে নিল কংগ্রেস, মামলাও ঠান্ডা। অক্টোবর ২০২০ তে কর্ণাটকের কংগ্রেস নেতা ডি কে শিবকুমার, তার ভাই ডি কে সুরেশের বিরুদ্ধে সঙ্গতিহীন আয়ের অভিযোগ এল, তল্লাশি চলল, শিবকুমার গ্রেফতার হলেন, পরে বেল পেলেন, মামলা ঠান্ডা। কতদিন? আগামী কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচন আসতে দিন, জানা যাবে।

অক্টোবর ২০২০ তে গুপকর কনফারেন্স হল, কাশ্মীরের প্রায় সমস্ত বিরোধী নেতারা সংগঠিত হলেন, চার দিনের মাথায় ইডি এল ফারুক আবদুল্লার বাড়িতে, জম্মু কাশ্মীর ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন নিয়ে পুছতাছ শুরু হল, সে জিজ্ঞাসাবাদ আপাতত ঠান্ডাঘরে। কেরালা রাজ্য বিধান সভার নির্বাচনের ক’দিন আগে, স্বপ্না সুরেশকে ইডি জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করল, সোনা পাচারের অভিযোগ, ইডি’র আবদার ছিল, মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই ভিজয়নের নাম নিতেই হবে। তার আগে ৩ মার্চ, কেরালা ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বোর্ডের দু’জন অফিসারকে এনে টানা জেরা চলল, যে সংস্থার চেয়ারম্যান মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, আপাতত সব ঠান্ডাঘরে। বাংলাতে তো ইডি আর সিবিআইয়ের রোজকার কাজ হল, তৃণমূল নেতাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা, দিল্লিতে বা কলকাতায় ডেকে নিয়ে গিয়ে ম্যারাথন জেরা, চিটফান্ড নিয়ে, নারদা কেস নিয়ে তদন্ত চলছে তো চলছেই। ওদিকে সেই তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে, যাঁরা বিজেপি তে ঢুকে গেছেন, কোনও কথা নেই, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ নেই। আসলে এক ভয়ের আবহ তৈরি করছেন মোদি – শাহ, ভয় দেখিয়ে বশ্যতা। কিন্তু একটা কথা ওনারা জানেন না, চিরটাকাল ভয় দেখিয়ে বশ্যতা স্বীকার করানোর উপায়টা বেশিদিন কার্যকরী হয় না। একটা সময়ে ভয় কেটে যায়, একটা সময়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ লড়ে যায়, তৈমুর পারেনি, চেঙ্গিজ পারেনি, নাদির শাহ পারেনি, হিটলার মুসোলিনি পারেনি, পল পট, কিম্বা ইদি আমিন পারেনি, ইন্দিরা গান্ধী পারেননি, মোদি – শাহও পারবেন না।

ওনারা রবি ঠাকুর পড়েননি, পড়ার কথাও নয়, মগজে আবর্জনা আর কারফিউ নিয়ে মধ্যযুগীয় সুলতান, বাদশাহদের মত ভয়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির, জানেন না। সেসব মানুষের কথাও জানেন না, জানেন না আমাদের ঠাকুর বলে গেছেন,

তোমার ভ্রূকুটিভঙ্গে তরঙ্গিল আসন্ন উৎপাত —

নামিল আঘাত।

পাঁজর উঠিল কেঁপে,

বক্ষে হাত চেপে

শুধালেম, ‘ আরো কিছু আছে নাকি,

আছে বাকি শেষ বজ্রপাত?’

নামিল আঘাত।

এইমাত্র?   আর কিছু নয়?

ভেঙে গেল ভয়।

যখন উদ্যত ছিল তোমার অশনি,

তোমারে আমার চেয়ে বড়ো ব’লে নিয়েছিনু গনি।

তোমার আঘাত-সাথে নেমে এলে তুমি

যেথা মোর আপনার ভূমি।

ছোটো হয়ে গেছ আজ।

আমার টুটিল সব লাজ।

যত বড়ো হও,

তুমি তো মৃত্যুর চেয়ে বড়ো নও।

আমি মৃত্যু-চেয়ে বড়ো এই শেষ কথা বলে

যাব আমি চলে।

একদিন পরাজিত মোদি – শাহ বুঝতে পারবেন, আত্মসম্মানী মানুষ, শিরদাঁড়া সোজা মানুষ অনেক আছেন। সবাইকে ভয় দেখিয়ে শাসন করা যায়নি, যাবেও না।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Narendra Modi | দেশের সঙ্গে রেলপথে জুড়ল শ্রীনগর, এবার রেলপথে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী
00:00
Video thumbnail
Narendra Modi | ২টি বন্দে ভারত পেল জম্মু ও কাশ্মীর
00:00
Video thumbnail
Narendra Modi | ২টি বন্দে ভারত পেল জম্মু ও কাশ্মীর
02:40
Video thumbnail
Md Salim | সাংবাদিক বৈঠকে মহম্মদ সেলিম, দেখুন সরাসরি
00:00
Video thumbnail
Narendra Modi | প্রধানমন্ত্রীর মুখে আদিল শাহর নাম, কী বললেন?
01:03:43
Video thumbnail
Narendra Modi | কাশ্মীরে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিরাট মন্তব্য মোদির
55:17
Video thumbnail
Kailash Vijayvargiya | মহিলাদের পোশাক নিয়ে এ কি বলে দিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়? কী বলছে তৃণমূল?
01:57:48
Video thumbnail
M.Chinnaswamy | CID | চিন্নাস্বামী কাণ্ডে তদন্ত করবে CID
43:38
Video thumbnail
Vijay Mallya | 'অরুণ জেটলিকে বলেছিলাম লন্ডন যাচ্ছি', পডকাস্টে বি/স্ফো/রক দাবি বিজয় মালিয়ার
01:31:35
Video thumbnail
Tejashwi Yadav | বিহার চালাচ্ছেন ক্লান্ত মুখ্যমন্ত্রী আর অবসরপ্রাপ্ত অফিসাররা, বিস্ফোরক তেজস্বী যাদব
01:33:51