Friday, August 1, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: মোদিজির আমেরিকা ভ্রমণ

চতুর্থ স্তম্ভ: মোদিজির আমেরিকা ভ্রমণ

Follow Us :

কম বেশি ৬৪ কোটি টাকার নিজস্ব প্লেনে চেপে মোদিজি আমেরিকা গেলেন। প্লেনে বসেও যে তিনি কাজ করেন, তার ছবিও ছাপা হল। বাড়িতে বসে ময়ূর খাওয়ান, প্লেনে বসে কাজ করেন। তো এমন ছবি ভাড়া করা প্লেনে চেপেও, এর আগের প্রায় প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীর আছে। দেশের ৮৫ লক্ষ মানুষের রেশন কেনার ক্ষমতা নেই, তবুও সে দেশের প্রধানমন্ত্রী দিনে দশবার ড্রেস চেঞ্জ করেন। ম ব্লাঁ পেনে লেখেন। কার্টিয়ের গগলস পরেন। ৬৪ কোটি টাকার প্লেনে চড়ে বিদেশ সফরে যান। মধ্যে কিছুদিন প্যান্ডেমিকের জন্য বন্ধ ছিল, আবার চালু হয়েছে। আশা করা যায় আগের মতই ওনাকে আমরা মাঝে মধ্যেই দেশে দেখতে পাব। কাগজে হেডলাইন হবে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভারতে এলেন। এসব হাস্যকর ঘটনা চলতেই থাকবে। কিন্তু তার আগে এবারের ভ্রমণ নিয়ে কথা বলা যাক, এই বিদেশযাত্রার গুরুত্বটা কোথায়?
উনি আমেরিকা গেছেন কোয়াড্রিল্যাটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগ, বা কোয়াডের মিটিংয়ে, রাষ্ট্রসংঘের বৈঠকেও ভাষণ দিয়েছেন। প্রথমে আসা যাক ওই কোয়াড বৈঠকে, এই কোয়াড কেন তৈরি হল? আমেরিকা, জাপান অস্ট্রেলিয়া আর জাপানের পারস্পরিক উন্নয়ন, ইত্যাদির জন্য বলা হলেও আসলে এই সংগঠনের লক্ষ চীন। চীনের তথাকথিত আগ্রাসন রুখতে, চীনের উল্টোদিকে নিজেদের বাণিজ্য ইত্যাদি সুরক্ষিত রাখতেই এই সংগঠন তৈরি হয়েছে, এটা নতুন করে বলার কিছু নেই, সবাই জানে। একটু পেছনের দিকে তাকানো যাক, নেহেরুর আমল ছিল নন অ্যালায়েনমেন্ট, নির্জোট সম্মেলনের রাজনীতি, বকলমে সোভিয়েত ঘেঁষা রাজনীতির, সেই সময় পৃথিবীতে দুটো শক্তি, আমেরিকা রাশিয়া। ভারত নির্জোট সম্মেলনভুক্ত দেশ হলেও সোভিয়েত ঘেঁষা দেশ ছিল। ইন ফ্যাক্ট নির্জোট সম্মেলনের প্রায় সব দেশই তাই ছিল, ইন্দিরা গান্ধীর সময়ে তা আরও বেশি করে সোভিয়েত ঘেঁষা হয়ে ওঠে। সোভিয়েত রাশিয়া আর ভারতের অনাক্রমণ চুক্তিই শুধু নয়, কোনও আক্রমণে পাশে দাঁড়ানোর চুক্তিও হয়। সেই চুক্তি মতন আমেরিকা ১৯৭১ এ নৌবহর পাঠানোর কথা বলা মাত্র রাশিয়ার নৌবহর এসে হাজির হয়। ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ জয়ের এটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু তারপর ১৯৮৯ এ সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙে গেলো। পৃথিবী ক্রমশ ইউনি পোলার হতে শুরু করল, একটাই শক্তি, আমেরিকা। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিদেশনীতিরও পরিবর্তন হতে শুরু করল, নরসিমহা রাও, অটলবিহারি বাজপেয়ীর জমানায় সেই নীতি সুস্পষ্ট আকার নিচ্ছিল। মনমোহন সিংয়ের সময়ে পরমাণু চুক্তি, ভারতকে আরও বেশী আমেরিকার কাছাকাছি নিয়ে যায়।
কিন্তু এরপর থেকেই পৃথিবীতে দুটো ঘটনা ঘটতে থাকে যা এই হিসেব নিকেশকে পালটে দিতে থাকে। সেই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে বলে নিই, ওই পরমাণু চুক্তির সময়ে বিজেপির ভূমিকার কথা। সি পি এম বা বামেদের ভূমিকা তো জানাই আছে, তারা অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল, তারা ওই পরমাণু চুক্তির বিরোধিতাও করে ছিল, সঙ্গে ছিল বিজেপি। বিজেপির সুষমা স্বরাজ সেদিন ওই অনাস্থা প্রস্তাবে অংশ নিয়ে বলেন, দেশকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে তুলে দেবার মত ঘটনা ঘটছে। এই চুক্তির পর দেশের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকবে না। বাকি বিজেপি নেতারাও সেদিন ওই একই কথা বলেছিলেন। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক কুশলতায়, সেদিন অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়। আবার নির্বাচন হয়, মনমোহন সিংয়ের দ্বিতীয় টার্ম। এবারও আমেরিকার সঙ্গে সদ্ভাব রেখেই বিদেশ নীতি তৈরি হয়, কিন্তু ততদিনে, সারা পৃথিবী জুড়ে, ইসলামিক মৌলবাদ এক বিরাট চেহারা নিয়েছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। আমেরিকার বিদেশনীতি তখন ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলাকে ঘিরেই চলছে। আমেরিকা, আফগানিস্তান, আল কায়দা, তালিবান সামলাতে পাকিস্তানের হাত ধরেছে। আবার ইসলামিক মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইতে ভারতও সামিল। পাকিস্তান, ভারত, কখনও এদেশ, কখনও ওদেশ সামলাতে ব্যস্ত। আমেরিকা কাউকে না চটিয়ে তাদের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে। এরমধ্যে আমেরিকার পালাবদল, এলেন ট্রাম্প, দল এবং ব্যক্তিগতভাবে তিনি নিজেও ইসলাম বিরোধী। ট্রাম্পের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত সবকিছুই ভারতে মোদিজির সঙ্গে মিলে গেলো। দু’জনের কোলাকুলি, অব কি বার ট্রাম্প সরকার ইত্যাদি হল। এরপর ট্রাম্পের বিদায়, ডেমোক্রাটরা এলেন ক্ষমতায় বাইডেন, কমলা হ্যারিস। মোদিজির অবকি বার ট্রাম্প সরকার তাঁরা কি জানেন না? নিশ্চই জানেন, কিন্তু এদিকে পৃথিবীতে আবার একটা বদল, চীনের উত্থান, তাদের বাণিজ্যিক আগ্রাসী মনোভাব, বিশ্বের ইউনিপোলার পলিটিক্স, একদেশীয় রাজনীতির বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে। আমেরিকার রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা তো জানিয়েই দিলেন যে এখন বিশ্বের বিপদ আর ইসলামিক টেরোরিজম নয়, এখন চীনের এই আগ্রাসী চেহারাই সবথেকে বড় বিপদ। ভারত কী ভাবলো? আফগানিস্তানের জনগণের কী হবে? সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমেরিকান সেনাবাহিনী গিয়েছিল, সেই গণতন্ত্রের কী হবে? বয়ে গেছে এসব ভাবতে, আমেরিকা এখন সরাসরিই তার শত্রুকে চিহ্নিত করেছে। চীন হল সেই শত্রু, কাজেই আবার বিশ্ব রাজনীতির বদল।
পাকিস্তানের আর কোনও গুরুত্বই নেই, তারা বড়জোর চীনের এক ছোট্ট বাজার হয়ে থেকে যাবে। চীন তার ইকোনমিক করিডোর বাড়াবে আফগানিস্তানকেও ব্যবহার করবে। বেজিং থেকে সোজা স্থলপথেই যাওয়া যাবে ইরান, ভারত যে ভৌগোলিক সুবিধা পেত, এরফলে তা অনেকটাই ক্ষুণ্ণ হবে। চীনের লাভ হবে, সামরিক আর বাণিজ্যিক দিক দিয়ে তারা অনেকটা সুবিধা পাবে। সেই পরিস্থিতিতে মোদিজির আমেরিকা যাত্রা, রাষ্ট্রসঙ্ঘের বক্তৃতায় সেই স্টেশনে চা বিক্রির কথা বললেন। যে স্টেশন তখন ছিলই না। ওসব গুলগল্প আমাদের জানা আছে। আর কী বললেন? আফগানিস্তানের কথা বললেন, ঠারেঠোরে পাকিস্তানের ভূমিকার কথা বললেন। কিন্তু আমেরিকার কাছে তা এখন গুরুত্বপূর্ণতো নয়ই, বরং উল্টোটা। ডেমোক্রাটদের এক বিরাট মুসলমান ভোটের সমর্থন আছে, যে ভোট ট্রাম্প বিরোধী, যে ভোট গেছে বাইডেন, কমলা হ্যারিসের ঝোলায়। কাজেই সেই ভোট অক্ষুণ্ণ রাখার জন্যই তাঁরা এসব কথা পাত্তাও দেবে না, দেয়ও নি। বরং কমলা হ্যারিস, আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট, কূটনৈতিক মর্যাদায় মোদিজির নিচেই, সেই কমলা হ্যারিস সাংবাদিকদের সামনে, মোদিজির সামনেই সাফ বললেন, গণতন্ত্রের গুরুত্বের কথা। বললেন আমরা যেন, নিজের নিজের দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করি। মানে আমরা ট্রাম্পের অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে হারিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি, আপনিও আপনার দেশে গণতন্ত্রের দিকে নজর দিন। সব্বার সামনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে জ্ঞান দিলেন, দেশে গণতন্ত্র সামলান। এর আগে কোনওদিনও বিশ্বের কোনও নেতা, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির সামনে এরকম কথা বলার সাহস দেখাননি। আমাদের দেশে গণতন্ত্রের কিছু সমস্যা বরাবরই ছিল, সব দেশেই আছে, কিন্তু আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক চেহারা নিয়ে এরকম কথা বলা, এর আগে সত্যিই দেখা যায়নি। কেন এই কথা বললেন? মাথায় রাখুন এই কমলা হ্যারিসের আত্মীয় কৃষক আন্দোলনে পুলিশি জুলুম নিয়ে কথা বলেছেন। কমলা হ্যারিসও বলেছেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন। কারণ খুব সোজা, আমেরিকার শিখ, পঞ্জাবিরা ডেমোক্রাটদের সমর্থক। কাজেই কমলা হ্যারিস সেই অংশের সমর্থনে কিছু তো বলবেনই। কানাডারও একই সমস্যা, ওখানে তো শিখ নেতার দলের সাহায্য নিয়েই জাস্টিন ট্রুডোর পরের সরকার তৈরি হবে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ফ্রিডম হাউস ইত্যাদি জানাচ্ছে, ভারতে এখন আংশিক গণতন্ত্র আছে।

মোদিজি ৬৪ কোটি টাকার প্লেনে চেপে, আমেরিকার মানুষকে বললেন, সারা বিশ্বের মধ্যে এক নম্বর হল ভারতের গণতন্ত্র, কখন বললেন? যেদিন বললেন, তার এক দিন আগে সারা বিশ্ব দেখেছে, অসমে পুলিশ গুলি চালিয়েছে, সেই পুলিশ বাহিনীর সামনে তাদের সঙ্গে থাকা এক ফটোগ্রাফার, মৃত ব্যক্তির দেহের ওপরে নাচছে, দুনিয়াজোড়া মানুষ এই নৃশংস ঘটনা দেখলো। আর শুনলো সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের কথা বলছেন!
তালিবানি গণতন্ত্র, সব্বাই জানলো, দেশের এক অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে, যাঁকে ইতালির শান্তি সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তাঁকে যেতে দেওয়া হল না। সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলছেন, যে দেশে ফ্রিজে গরুর মাংস থাকতে পারে মনে করে, মানুষকে জ্যান্ত জ্বালিয়ে মারা হল, সে দেশের প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের কথা বলছেন! এটা তো ঘটনাই যে আমাদের দেশের গণতন্ত্র, তার প্রাচীন ঐতিহ্য নিয়ে আমরা গর্বিত। একসময় পৃথিবীর মানুষ তো দেখেছে, স্বৈরাচারী জননেতাকে কিভাবে সরিয়ে দিয়েছে দেশের মানুষ। কেবল মাত্র গণতন্ত্রের প্রশ্নে রাজনৈতিক পালাবদল হয়েছে, কেবল মানুষের ভোটে, সেই দেশে আজ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে, এক নজিরবিহীন আক্রমণের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে মোদি সরকার, আরএসএস বিজেপি এবং তারই ফল, আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট, পদমর্যাদায় আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর নীচে। তিনি আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে, সবার সামনে, গণতন্ত্র রক্ষার উপদেশ দিলেন। আমাদের লজ্জা, আমরা উল্টে বলতে পারলাম না, যে আপনারা আপনাদের চরকায় তেল দিন, আমাদের গণতন্ত্র অনেক গভীর, অনেক বিস্তৃত। বলতে পারলাম না কারণ এই ৭ বছরে মোদি সরকার সেই গণতন্ত্রকে রোজ, তিলে তিলে মেরে ফেলছে। গণতন্ত্র রোজ ধর্ষিত হচ্ছে। ৬৪ কোটি টাকার প্লেনে চেপে আমেরিকা গিয়ে। আমার দেশের প্রধানমন্ত্রী অপমানিত হয়ে ফিরছেন, এ আমাদের লজ্জা, আমাদের অপমান।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Malegaon Incident | বিগ ব্রেকিং, মালেগাঁও বি/স্ফো/রণ কাণ্ডে সব অভিযুক্তকে বেকসুর খা/লা/স
03:32:16
Video thumbnail
Metro News | আ/গু/নের ফুলকি, সাতসকালে থমকে গেল মেট্রো, এখন কী অবস্থা?
03:44:21
Video thumbnail
Politics | বাংলায় NRC নোটিশ আবার পাঠাল অসম সরকার
06:13
Video thumbnail
BJP-RSS | BJP-RSS দ্ব/ন্ধ চরমে, রফা সূত্র মিলবে কি? কবে ঘোষণা হবে জাতীয় সভাপতি?
02:48:40
Video thumbnail
Parliament | Jaya Bachchan | 'প্রিয়াঙ্কা ডোন্ট কন্ট্রোল মি' রাজ্যসভায় রেগে আ/গু/ন জয়া বচ্চন, কেন?
02:35:21
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | ট্রাম্পের খামখেয়ালিপনা বুঝতে পেরেছিলেন মাস্ক?
03:34
Video thumbnail
Politics | তিন দফা সমীক্ষা করে বিজেপি-প্রার্থী বাছাই তারপরে
05:19
Video thumbnail
Bangla Bolche | 'মোদি-ট্রাম্প বন্ধুত্ব এই জায়গায় যাবে এটা ভারতের কাছে আ/ঘা/ত'
02:05
Video thumbnail
Politics | বাংলায় ১০০ দিনের কাজ বিজেপি নারাজ
05:30
Video thumbnail
Bangla Bolche | বিজেপির হোমযজ্ঞ কি ধাক্কা খেল?
00:39

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39