Thursday, September 18, 2025
বাঙালি কাউন্টডাউন
HomeScrollFourth Pillar | যিনি দেশে আসলি মালিক তাঁর নাম নেওয়া চলবে না,...
Fourth Pillar

Fourth Pillar | যিনি দেশে আসলি মালিক তাঁর নাম নেওয়া চলবে না, আপাতত বাল নরেন্দ্রর জীবনী পড়তে হবে?

খোদ ওনার ব্যবসায়ী গ্রুপই জানিয়েছে, পাঁচ বছরের আগে এই প্রকল্প শেষই হবে না

দিল্লি থেকে ফতোয়া জারি হয়েছে সেই উনি যিনি দেশের আপাতত আসলি মালিক তাঁর নাম নেওয়া চলবে না, নাম নিলেই চাক্কি পিসিং অ্যান্ড চাক্কি পিসিং। মানে দেশজুড়ে লুঠমার চলছে, এক টাকাতে কেবল এক টাকায় ওনাকে, মানে সেই উনি যাঁর নামও নেওয়া যাবে না বলে ফতোয়া জারি হয়েছে, সেই উনি ১০ লক্ষ আম গাছ সমেত ১৭০০ বিঘে জমি পেয়েছেন, এখন থেকে এক বছরে তাঁকে ওই ১৭০০ বিঘে জমির জন্য দিতে হবে মাত্র ১ টাকা। খবর হচ্ছে এটাই, বছরে ১ টাকা ভাড়ায় আদানিকে অন্তত ১৭০০ বিঘা জমি লিজ দিয়েছে বিহারের বিজেপি জোট সরকার! সেখানে নাকি এক অত্যাধুনিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হবে। কৃষকদের থেকে নেওয়া সরকারি জমিতে, রাজ্যের মানুষের দেওয়া করের টাকায় তৈরি এই প্রকল্পে তৈরি বিদ্যুৎ ইউনিট পিছু ৬ টাকায় বিক্রি করবেন গৌতম আদানি। এরকম কতবার শুনেছেন? বহুবার, এনারা কমিউনিস্টদের কাছ থেকে রীতিমতো তাদের সাহায্য নিয়েই জেলেদের উৎখাত করে মৎস্য বন্দরের দখল নিয়েছেন, এনারাই আন্দামান নিকোবরে জমি নিচ্ছেন, গুজরাট তো এনাদের বাপের সম্পত্তি। এর আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে বলা হয়েছিল ঝাড়খণ্ডের বিকাশের জন্য, ঝাড়খণ্ডের মানুষজনদের সস্তায় বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্যই গোড্ডাতে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প হচ্ছে। ঝাড়খণ্ডের লোকেরা সস্তা বিদ্যুৎ পাননি, পাননি বাংলাদেশের মানুষজন কিন্তু ওনার লাভ হয়েছে।

এবারে বলা হচ্ছে, বিহারের বিকাশ দরকার, বিকাশের জন্য বিদ্যুৎ দরকার তো সেই বিদ্যুৎ উৎপাদন কে করবে? উনি করবেন। বছরে এক টাকায় আগামী ২৫ বছরের জন্য ১৭০০ বিঘে জমি লিজে পেলেন, এবারে জমির কাগজ নিয়ে তিনি চলে যাবেন কোনও এক ব্যাঙ্কে, যেখানে তাঁর আগমনের জন্যই বসে থাকবেন সেই ব্যাঙ্কের তাবড় মাথারা, তাঁরা ঋণ দেবেন, আমার আপনার ট্যাক্সের টাকা, আমার আপনার জমানো টাকা থেকে ঋণ পাবেন সেই উনি যাঁর নাম নিলেই চাক্কি পিসিং অ্যান্ড পিসিং অ্যান্ড পিসিং, এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হলে ওনার শেয়ার বাজারেও দর বাড়বে, শেয়ারের দাম চড়বে, সেখানে থেকেও টাকা আসবে, ঝর ঝর ঝর ঝরনার মতো। সেই প্রকল্পের অংশ হিসেবে, ভাগলপুরের পীরপৈত্তিতে মোদীঘনিষ্ঠ এই ধনকুবেরকে অন্তত ১৭০০ বিঘা জমির ‘তোফা’ দেওয়া হয়েছে। বছরে ১ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে আদানিকে ৩৩ বছরের জন্য এই জমি লিজ দেওয়া হয়েছে। এই জমিতে বিশাল মাপের এক অত্যাধুনিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার তাতে কয়লা ও অন্যান্য কাঁচা মালের জোগান দেবে। সঙ্গে বিশেষ ছাড়ও দেওয়া হবে। এবং মজাটা দেখুন পীরপৈত্তির এই জমিকে সরকারি নথিতে গ্রিন ফিল্ড সাইট’ বা ‘অনুন্নত জমি’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিজেপি জোটের একাধিক নেতা আবার তাকে ‘বনজর জমিন’ মানে ‘চাষের অযোগ্য’ বলে দাবি করেছে। তবে সম্প্রতি স্থানীয় কিছু সাংবাদিক ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই এই মিথ্যের ফানুশ ফেটে গিয়েছে! যে ১৭০০ বিঘা জমি, ওনাকে সর্বসাকুল্যে ১ টাকায় লিজ দেওয়া হচ্ছে, তা মোটেই চাষের অযোগ্য নয়। উর্বর মাটি থাকলেও জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে তাতে বহুদিন চাষ হয় না।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | বাংলাদেশিরা ভারতে ঢুকে জনবিন্যাস বদলে দিচ্ছে?

এই জমি ওনাকে লিজ দেওয়ার আগে, স্থানীয় কৃষকদের উপর জোর খাটিয়ে জমির স্বত্ব হস্তান্তর হয়েছে আর বর্তমানে সেই জমিতে প্রায় ১০ লক্ষ আম গাছ রয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানাতে তা আগাগোড়া কেটে সাফ করা হবে। শুভ কাজে দেরি করতে নেই বলে, ঘোষণার পরে সময় নষ্ট না করেই শনিবারেই জেসিবি দিয়ে গাছপালা কেটে ফেলার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। বিহারে ভোটের আগেই এই ঘোষণা দেখে চমকে যাবেন না, এটাই তো দস্তুর, মহারাষ্ট্রেও ভোটের আগে ধারাভি বস্তির জমি ওনাকে রিয়েল এস্টেট নির্মাণের জন্য দিয়ে দেওয়া হয়। দুনিয়ার সবথেকে বড় বস্তিতে তৈরি হবে স্কাইস্ক্র্যাপার, বিশাল গগনচুম্বী অট্টালিকা। জুগগি ঝোপড়ির বাসিন্দাদের জন্য দূরে কোথাও ২৫০/৩০০ স্কোয়ার ফুটের খুপরি ফ্ল্যাট, তুম ভি খুস, হাম ভি খুস। ঝাড়খণ্ড ও ছত্তিশগড়েও ঠিক ভোটের আগে বিশেষ ছাড় সমেত একাধিক প্রকল্পের বরাত ওনার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। এই তালিকা বেশ দীর্ঘ। ওনার এবং বিজেপি’র এই ঘনিষ্ঠতা ভোট যত এগোয় তত বাড়তে দেখা যায়। যখনই বিজেপি ভোট হেরে যাবে বলে বোঝে, তখনই ওনার হাতে ঝটপট কোনও এক লাভজনক ক্ষেত্র বা জমি জলের দরে তুলে দেওয়া হয়। বিহারের জমিতে, বিহারের মানুষের টাকায় কারখানা হবে। তাতে তৈরি বিদ্যুৎ আবার ইউনিট পিছু ৬ টাকা করে রাজ্যের মানুষকে বিক্রিও করা হবে। এ যে ‘ডবল লুঠ!’ আসলে ওনাকে বরাত দিয়ে বিহারে ইউনিট পিছু বিদ্যুতের দাম অন্যান্য বিজেপি শাসিত রাজ্যের তুলনায় অহেতুক বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেখানে মহারাষ্ট্র ও উত্তরপ্রদেশের ইউনিট পিছু বিদ্যুতের দাম ৩ থেকে ৪ টাকা, সেখানে ওনাকে ইউনিট পিছু ৬.৭৫ টাকায় বিদ্যুতের দাম নির্ধারিত করার অনুমতি দিয়েছে বিহারের বিজেপি জোট সরকার। মানে জমি থেকে কামাও, বিদ্যুৎ বেচে কামাও, শেয়ারের উত্থান থেকে তো ঝরবেই পয়সা। আর বলা হচ্ছে, এর ফলে নাকি বিরাট কর্মসংস্থান হবে, বিহারের ছেলেমেয়েরা চাকরি পাবে।

এদিকে খোদ ওনার ব্যবসায়ী গ্রুপই জানিয়েছে, পাঁচ বছরের আগে এই প্রকল্প শেষই হবে না। তৈরির পর্যায়ে যা কর্মসংস্থান হবে তা পুরোটাই অস্থায়ী ঠিকা-ভিত্তিক। তারও এক অংশ আসবে বাইরে থেকে। বছর পাঁচেক পর ৩ হাজার মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে তা কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বিহার সরকারের সঙ্গে আদানি গ্রুপের এই চুক্তিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য কোনও ক্ষতিপূরণ, কর্মসংস্থান কিংবা বিশেষ সুযোগ সুবিধার শর্ত ধর্তব্যের মধ্যে রাখা হয়নি। মানে এই যে বলা হচ্ছে ৫-৬ বছর পরে চাকরি পাওয়া যাবে তা কিন্তু বিজেপি জেডিইউ-এর নেতামন্ত্রীরা বলছেন, চুক্তিতে কিছুই লেখা নেই। এই হল ওনার গল্প যাঁর নাম নেওয়া যাবে না, ধর্মাবতার ওনার নাম একবারও নিইনি, এ দেশের আইন মেনেই নাম না করেই লিখেছি, কিন্তু কিছু দুষ্টু লোকজন ঠিক বুঝে ফেলেছেন, তাঁরা খ্যাক খ্যাক করে হাসছেন। কিন্তু তাতে তো কিচ্ছুটি হওয়ার নয়, কারণ সরকার কানে দিয়েছে তুলো, পিঠে বেঁধেছে কুলো, তাই এসব সামান্য ঠেসবাক্য দিয়ে এই সরকারের মাথার টনক নাড়ানো যাবে বলে আমি মনে করি না। যা করা যাবে না সেই কথা তো বললাম, এবার আসুন যা করতে হবে, সেটা জেনে নেওয়া যাক। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক দেশের স্কুলগুলোয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শৈশবের স্মৃতি অবলম্বনে তৈরি ছবি ‘চলো জিতে হ্যায়’ দেখানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় শিক্ষা বোর্ড সিবিএসই-কে। কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় সংগঠন এবং নবোদয় বিদ্যালয় সমিতিকেও মন্ত্রকের পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়েছে, ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত ওই ছবি স্কুলে স্কুলে দেখাতেই হবে। কেন? শিক্ষা মন্ত্রক জানাচ্ছে, এই উদ্যোগ নাকি ছাত্রছাত্রীদের চরিত্র গঠন করতে, দায়িত্ববোধ তৈরিতে এবং সেবার মানসিকতা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

পাশাপাশি, সামাজিক-আবেগঘন শিক্ষা, সহমর্মিতা, আত্মবিশ্লেষণ, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং অনুপ্রেরণার ক্ষেত্রেও ছবিটি নাকি দারুণ কার্যকর হতে পারে। এবং এই ছবি যার আপনি নামও শোনেননি তা কিন্তু জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত। ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি ইতিমধ্যেই ৬৬তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে পারিবারিক মূল্যবোধের জন্য সেরা নন-ফিচার ফিল্মহিসেবে পুরস্কার পেয়েছে। এই ছবি কিন্তু ইউটিউবে দেখা যাচ্ছে, মানে কোনও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এই ছবি নিতে রাজি না হওয়ায়, শেষমেশ ইউটিউবে ছবিটাকে আপলোড করে দেওয়া হয়েছে সাত বছর আগে। এবং সাত বছর ধরে ইউটিউবে থাকার পরেও দেশেছেন কত জন? আজ সকাল পর্যন্ত মাত্র ১ লক্ষ ৫৮ হাজার ২৫২ জন। সেই ছবিতে কে আছে, কী আছে? আছে নরেন্দ্র, এক বালক, যে স্বামী বিবেকানন্দের লেখা পড়ে উদ্বুদ্ধ আর ভগৎ সিং সুখদেব রাজগুরুর আত্মত্যাগ তার কাছে আদর্শ। ও হ্যাঁ ছেলেটি ভাডনগর রেল স্টেশনে প্যাসেঞ্জারদের চা বেচে বেড়ায়, মাঝেমধ্যে স্কুলেও যায়। ঠিক ধরেছেন নরেন্দ্র মোদিজির নিজের মুখে বলা জীবনগাথা। কিন্তু প্রশ্ন কেবল তিনটেই রইল, স্বামী বিবেকানন্দের জীবন যার প্রেরণা সে কীভাবে আরএসএস করা শুরু করলো, যে মানুষ চেয়েছিলেন ইসলামের দেহ আর হিন্দু মস্তিষ্ক, সেই বিবেকানন্দের অনুপ্রেরণায় কীভাবে একজন আরএসএস কর্মী হয়? ২) ভগৎ সিং, সুখদেব, রাজগুরু যাঁরা হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান পার্টির তিন নেতা যাঁর আদর্শ তিনি কোন লক্ষ্য নিয়ে আরএসএস-এ যোগ দিয়েছিলেন? আরএসএস-এর সঙ্গে সমাজতন্ত্রের যোগসূত্র কোথায়? ৩) নরেন্দ্র মোদি যে ভাডনগর স্টেশনে চা বিক্রি করতেন বলে জানিয়েছিলেন, ছবিতেও সেই ভাডনগর স্টেশনই দেখানো হয়েছে, কিন্তু সমস্যা হল সেই ভাডনগর স্টেশনে ট্রেন থামা শুরু হয়েছিল যখন তখন মোদিজি যুবক, ইতিমধ্যে আমেরিকার ২৭টা অঙ্গরাজ্য ঘুরে এসেছেন। আর তথ্য বলছে ভাডনগর স্টেশনের বাইরে একটা চায়ের দোকান চালাতেন তাঁর কাকা, যিনি কংগ্রেস করার সুবাদেই ওই চায়ের দোকান চালানোর সুযোগটা পেয়েছিলেন। হতেই পারে যে সেই দোকানে নরেন্দ্র মোদি কখনও সখনও গিয়েছেন আর এইখানে বলে রাখি গুজরাটের মোদ ঘাঁচি কমিউনিটি থেকে এসেছেন মোদিজি, যে মোদ ঘাঁচিরা অন্যতম সম্পদশালী কমিউনিটি ছিল। এক স্কুল ড্রপ আউটের জীবনী এখন স্কুলে পড়াতে হবে, সেটাই দেশের দুর্ভাগ্য। হ্যাঁ উনি যিনি চুরি করছেন, তাঁর নাম নেওয়া যাবে না, আর ইনি যিনি মিথ্যের পর মিথ্যে মিথ্যের পর মিথ্যে বলেই চলেছেন, তাঁর জীবনী দেখাতে হবে দেশের ছাত্রদের।

Read More

Latest News