Tuesday, August 19, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: সিপিএমের ভুলভুলাইয়া

চতুর্থ স্তম্ভ: সিপিএমের ভুলভুলাইয়া

Follow Us :

সূর্যকান্ত মিশ্র, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের প্রায় দু’মাস পরে ফেসবুক লাইভে এলেন, জানালেন যে খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করে ফাইনাল রিপোর্ট এখনও তৈরি হয়নি, তবুও যে বিষয়গুলো সামনে এসেছে তা পার্টি সদস্য, গণসংগঠনের সদস্য, সমর্থকদের জানানোর তাগিদেই দল এক সিদ্ধান্ত নিয়ে এই ফেসবুক লাইভের আয়োজন করেছে, এক ঘন্টা আটান্ন মিনিট তিরিশ সেকেন্ড বক্তৃতা দিলেন, বিরাট বক্তৃতা, দল, দলের বাইরে কেউই সূর্যকান্ত মিশ্রকে ভাল বক্তা বলেন না, কেউ আশাও করেন না যে তিনি জ্যোতি বসু, হরেকৃষ্ণ কোঙারের মত বক্তৃতা দেবেন, কিন্তু তা বলে এই বক্তৃতা? খেই হারানো, একঘেঁয়ে, পুনরাবৃত্তিতে ভরা, এক বিশাল লম্বা বক্তৃতা মানুষের কাছে বিরক্তিকর মনে হতে বাধ্য, কিন্তু তবু সাংবাদিক হিসেবে পুরোটা শুনতেই হল। একটা সময়ে সূর্যকান্ত মিশ্র মানে, কোট প্যান্ট এবং ইয়া মোটা এক টাই, কি শীত কি গরম, ওনার পোষাক একইরকম ছিল, রবীন্দ্র জয়ন্তীর ভ্যাপসা গরমেও ওনাকে ওই মোটা টাই পরেই আসতে দেখেছি, কিন্তু মন্ত্রীত্ব, বিধানসভার সদস্যপদ যাবার পরে অন্য আরও অনেক কিছুর মত সে টাইও বিদেয় নিয়েছে, বয়সের ক্লান্তির ছাপ চোখে মুখে, তার ওপর দু ঘন্টার বক্তৃতা। দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ থেকে পরিবেশ, ভ্যাক্সিন, অতিমারি, পোস্ট মর্ডানিজম সব নিয়ে ধৈর্যচ্যুতি ঘটবেই। তো উনি বললেন, শুনলেন ক’জন?

ফেসবুক বলছে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার জন এই ভিডিও দেখেছেন, মাথায় রাখুন দেখা মানেই পুরোটা শোনা নয়। ৭ হাজার ৯০০ জন রিঅ্যাক্ট করেছেন, ওয়াও ২৭ জন, কান্না ৪২ জনের, ৬১ জনের হা হা হাসি, ৬৫ জনের ক্রোধ, ১০৩ জনের কোভিড কেয়ার, ২২০০ জনের ভালবাসা, আর বাকি ৫৩০০ জনের লাইক পেয়েছেন। আর ৬১০০ জন কমেন্টস করেছেন, তো কমেন্টসগুলো উল্টেপাল্টে দেখলাম, লাল সেলাম আছে, মতামত আছে, অভিযোগ আছে, খিল্লি আছে, দেখ কেমন লাগে আছে, বিরোধিতা আছে। শেষমেষ কোনও পথ নির্দেশ? না আমি পাইনি, সেই পুরোন কথা, সংগঠন বাড়াতে হবে, মানুষের মাঝে যেতে হবে। কিভাবে? মানুষের কাছে যাওয়া হচ্ছে না কেন? কোথায় ত্রুটি? ঠিক কী কী করিতে হইবে? না সেসব কিছুই নেই। আজ সেই বক্তৃতা নিয়ে আলোচনা, কেন? কারণ সিপিআইএম এই নির্বাচনেও যে ক’টা আসনে প্রার্থী দিয়েছিল, তার নিরিখে ৯.৮৯% ভোট পেয়েছে, গোটা রাজ্যে বৈধ ভোটের ৪.৭৩% ভোট পেয়েছে, অন্য বামেরদের কেউই ০.৫% ভোটও পায়নি। মানে ঘোষিত বামপন্থী হিসেবে সিপিআইএম এখনও, এখনও রাজ্যের এবং দেশের সবথেকে বড় দল, সবথেকে বেশি মানুষের সমর্থন আছে তাদেরই। কাজেই তাদের নিয়ে আলোচনা জরুরি, বামেদের উত্থান এক ধরণের চাপ তৈরি করে, সামাজিক এবং রাজনৈতিক চাপ, যার ফলে গরীব গুর্বো মানুষদের কিছুটা হলেও কাজ হয়, কিছু সামাজিক প্রকল্পের ঘোষণা হয়, এটা এদেশে নয়, সারা পৃথিবীতেই সত্যি। এটা তো সত্যিই যে বাম আর কমিউনিস্টদের জুজু, ইউরোপ আমেরিকার পুঁজিবাদকে চিন্তায় ফেলেছিল, সে সব দেশের সরকার খুব দ্রুত সামাজিক সুরক্ষার বিভিন্ন প্রকল্প ঘোষণা করেছে, রূপায়ণ করেছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানের মতো বেসিক সুবিধে মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে, সে তো এমনি এমনি নয়, কোথাও সংসদীয় বাম, কোথাও গেরিলা যুদ্ধ করছে এমন কমিউনিস্ট পার্টি, দুনিয়া জুড়ে তাদের আন্দোলনে তাদের জয় হোক না হোক, তারা জিতে যাক বা হেরে যাক, সামাজিক রাজনৈতিক একটা চাপ তারা তৈরি করেছে, আজও সেই চাপ বজায় রয়েছে। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়, কমিউনিস্টদের আটকাতে, নেহেরু সোশ্যালিস্টিক প্যাটার্ন অফ সোসাইটির কথা বলা শুরু করেন সেই কবে? গরীবি হটাও থেকে মিড ডে মিল, থেকে ১০০ দিনের কাজ, প্রত্যেকটাই বাম দলগুলোর আনা নয়, কিন্তু তা আনার যে চাহিদা, তার চাপ কিন্তু ওই বাম, কমিউনিস্ট দল, তাদের আন্দোলনের জন্যই, সেই জন্যেই বাম বা কমিউনিস্টদের প্রাসঙ্গিকতা থেকে যায়, সিপিআইএমেরও প্রাসঙ্গিকতা ওইখানেই।

তো আসুন, কমরেড সূর্যকান্ত মিশ্রের ফেসবুক লাইভ, তাঁর বক্তব্য নিয়ে আলোচনা করা যাক। আগেই বলেছি, এই ফেসবুক লাইভ অন্তত খুলে দেখেছেন এমন সংখ্যা হল ১ লক্ষ ৩৪ হাজার মানুষ, আচ্ছা সিপিএমের সদস্য সংখ্যা কত? ২০১৮ সালের রিপোর্ট বলছে ১ লক্ষ ৩১ হাজার ৩৬৯ জন, এবং দলের গণসংগঠনের সদস্য এক কোটি ৭৬ লক্ষের সামান্য বেশি, হ্যাঁ দলের রাজ্য সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে, কৃষক, ক্ষেত মজুর, ছাত্র, যুব, শ্রমিক, মহিলা ইত্যাদি মিলিয়ে রাজ্যে এক কোটি ছিয়াত্তর লক্ষ সদস্য আছে, এখানেই শেষ নয়, এরপর আছে কালচারাল ফ্রন্ট, আছে শিক্ষক ফ্রন্ট, আছে অধ্যাপকেরা। গণসংগঠনের সদস্য ১ কোটি ৭৬ লক্ষ, ফেসবুক লাইভ দেখেছেন এ পর্যন্ত ১ লক্ষ ৩৪ হাজার, মাথায় রাখবেন, এটা ওপেন ফোরাম, মানে চাইলে যে কেউ দেখতে পারে, দেখেছেও, বহু সাংবাদিক এমন কি অন্য বাম দলের কর্মীরাও দেখেছেন, সম্ভবত কিছু বিরোধী মানুষজনও দেখেছেন। তার মানে দাঁড়ালো কী? দলের সদস্য, গণসংগঠনের সদস্যর ১০% ও দলের রাজ্য সম্পাদকের বক্তব্য খুলেও দেখেননি, গোটাটা দেখা তো বহু দূরের ব্যাপার, কেন? তার দুটো কারণ থাকতেই পারে। প্রথম হল গণসংগঠনের সংখ্যা প্রচুর বাড়িয়ে দেখানো আছে। দুই, যাঁরা আছেন তাদের কাছে, এই ধরনের গতানুগতিক বক্তব্যের কোনও আকর্ষণ নেই। বা দুটো মিলিয়েও একটা কারণ হতে পারে, মানে সংখ্যা অতটা নয়, আবার যাঁরা আছেন তাঁরা এই ধরনের সম্পাদকের ভাষণ শোনার আগ্রহ বোধ করেননি।

এবার আসুন সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্যে, না পুরো বক্তব্য তন্ন তন্ন করে খুঁজেও, কেউ, আগামী দিনে কী করতে হবে তার হদিশ পাবেন না, কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ হল একবারও জোট নিয়ে একটা কথাও নেই, মানে দলের বহু সদস্য সমর্থক, দলের বাইরের বহু লোক মনে করেন এ ছিল এক অনৈতিক জোট, তা নিয়ে কোনও কথা নেই। কেন এই জোট জরুরি ছিল, পেছনে যুক্তি কী ছিল, যারা বলছেন এই জোট ছিল অনৈতিক, তাঁরা কোথায় ভুল বলছেন, সেসব নিয়ে কোনও কথা নেই, জোট থাকলে থাকবে, আমরা ভাঙবো না, এটাই মোদ্দা কথা। মানে এক বিরাট সংখ্যক, কর্মী সমর্থক যেমনটা মনে করছিলেন যে আইএসএফের সঙ্গে জোট করা ঠিক হয়নি, তাঁদের জন্য কোনও জবাব নেই। ঠিক যেমন এ রাজ্যের অন্য বহু বাম দল, বামপন্থী সংগঠন, বাম মনস্ক মানুষ, এমন কি সংগ্রামী কৃষক নেতারাও নো ভোট টু বিজেপির ডাক দিয়েছিল, সেই আহ্বানকে প্রকাশ্যেই সমর্থন জানিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী, সিপিআইএমের র‍্যাঙ্ক অ্যান্ড ফাইল তার বিরোধিতা করেছিল, এ নিয়ে সূর্যবাবুর বক্তব্য? কিছুই নেই। আগামী দিনে দেশ জুড়ে নো ভোট টু বিজেপি আন্দোলন গড়ে উঠলে তাঁদের ভূমিকা কী হবে, তাই নিয়েও কোনও কথাই নেই। তাহলে কী নিয়ে আছে? একটা জিনিস অন্তত পরিস্কার করে বলেছেন যে ওই বিজেমূল ইত্যাদি বলাটা ছিল রাজনৈতিক ভুল, তিনি বললেন আজ নয়, বহু আগে ২২ বছর আগেই নাকি দল বলেছে যে বিজেপি অন্য সব দল থেকে আলাদা, খেয়াল রাখুন সূর্য বাবু কী বলছেন, ‘বিজেপি টিএমসি এক নয়,’ মানে রাজ্য সম্পাদক মনে করেন যে বিজেপি তৃণমূল এক নয়, সে দল বা দলে বাইরে গোপাল ভাঁড় বা সৌরভ পালধি কি বললো সেটা আলাদা ব্যাপার, টুম্পার গানে বিজেমূল গানে কী বলা হল, সে সব রাজ্য সম্পাদক শোনেননি। তাই নাকি? তাহলে সূর্যবাবুর বক্তৃতা শুনুন, (https://youtu.be/iV4UO-wAQaU , ১৩.৪০  – ১৫.২৫ পর্দার পেছনে একই বিড়ি টানছে।) পরিস্কার বলছেন যে, কৃষ্ণ পালায় কংস আর শ্রীকৃষ্ণের মত বিজেপি আর টিএমসি একই বিড়ি খায়, ওরা আসলে একই। মানে বক্তৃতায় বিজেমূল তত্ত্ব ছড়াবেন, হেরে গিয়ে সদস্যদের অন্য তত্ত্ব শোনাবেন? কেবল তাই? নির্বাচন চলাকালীন ওনারা স্বপ্ন দেখেছিলেন জিততে না পারলেও একটা ভাল সংখ্যক এম এল এ তাঁদের থাকবে, এবং তখন তৃণমূলের দরকার হলেও, বিধানসভায় সরকার গড়ার জন্য তৃণমূলকে সমর্থন দেবেন না, কারণ ওই যে বিজেমূল তত্ত্ব, বিজেপি টিএমসি আসলে এক, কেবল একই নয়, তৃণমূল আরএসএসের, সংঘ পরিবারেরই সদস্য, শুনুন। (https://youtu.be/XplEoNJv4Ko  ১৫.৩১ – ১৬.৩৫) ৯ এপ্রিল প্রেস ক্লাবে বসে এই কথা বললেন, আর ৭ জুলাই রাজ্য দফতরে বসে, প্রকাশ্যে মিথ্যে বলে যাচ্ছেন কমিউনিস্ট পার্টির রাজ্য সম্পাদক, কমরেড সূর্যকান্ত মিশ্র। আসল সমস্যা হল এইখানেই, অনেকেই বলেন সিপিএম নাকি ভুল স্বীকার করে, সিপিএমের কিছু নেতাও বুক বাজিয়ে বলেন, আমরা ভুল স্বীকার করার সাহস রাখি, আসলে সিপিএম একটা ভুলকে আর একটা ভুল দিয়েই ঢাকে, ঢেকে রাখতে চায়, ভুল স্বীকার করে ঠিক পথ বেছে নিতে হলে ভুলটা সরাসরি স্বীকার করতে হবে, কমরেড রাজ্য সম্পাদক, পলিটব্যুরো সদস্য বলেতেই পারতেন যে আমাদের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ভুল ছিল, উনি সেটা বললেন না, বললেন, আমাদের নীতিই তো ছিল, বিজেপি যে সব দলের থেকে আলাদা, তা তো আমরা ২২ বছর আগেই বলেছি, আসলে কিছু লোকজন বলতে গিয়ে ওই বিজেমূল বলেছে, সেটা বলা ঠিক হয়নি, মানে গোপাল ভাঁড়, সৌরভ পালধী বা শতরূপ ঘোষের ভুল, একবারও বললেন না যে তিনি নিজেই ওই ভুলের উৎস, আর যাই হোক এটা ভুল স্বীকার করা নয়।

১ ঘন্টা ৫৮ মিনিট এর বক্তৃতা অস্পষ্টতায় ভরা, সংযুক্ত মোর্চা কী? আইএসএফ কেন? গণ সংগঠনের ১ কোটি ৭৬ লক্ষ সদস্য আর রাজ্যে সিপিএমের ভোট মাত্র ২৮ লক্ষ ৩৭ হাজার ২শো ৭৬ ভোট, কেন? বিজেমূল তত্ত্ব কেন তিনি নিজেই ছড়িয়েছিলেন? নো ভোট টু বিজেপি নিয়ে তাঁদের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ কী? আগামী দিনে কোন কোন পদক্ষেপ দলকে আবার সঠিক রাস্তায় নিয়ে আসবে? এই বিপর্যয়ের দায় নিলেন ক’জন? ক’জন সরে যাচ্ছেন? নতুন নেতৃত্ব কিভাবে তৈরি হবে? না কোনও কথাই নেই, অর্থাৎ এইভাবেই চলবে দল, নেতৃত্বের স্ববিরোধিতা তৈরি করবে আরও আরও হতাশা, ক্রমশ জনবিচ্ছিন্ন হবেন তাঁরা, এটাই সম্ভবত সিপিএমের ভবিতব্য, অন্তত এই বাংলায়।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Trump-Zelenskyy | ট্রাম্প- জেলেনস্কি বৈঠক, কী হল? শুনুন বাংলায়
00:00
Video thumbnail
Trump-Zelenskyy | ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকের পর এখন কী হচ্ছে হোয়াইট হাউসে? দেখে নিন সরাসরি
36:20
Video thumbnail
Bangla Bolche | Prasun Banerjee | কেন ইমপিচমেন্ট হওয়া উচিত নির্বাচন কমিশনারের?
03:03
Video thumbnail
Bangla Bolche | Sabyasachi Chatterjee | কমিশনকে কেন বিজেপির B-টিম বলছে বিরোধীরা?
01:42
Video thumbnail
Bangla Bolche | Prasun Banerjee | কমিশনকে কোন প্রশ্ন তৃণমূলের?
00:53
Video thumbnail
Yogendra Yadav | যোগেন্দ্র যাদবের কোন ১০ প্রশ্নে ফেঁ/সে গেল নির্বাচন কমিশন? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
13:00
Video thumbnail
Politics | 'মানসিক চিকিৎসার ঢাল NRC করছে হাসপাতাল'
04:07
Video thumbnail
Politics | ইমপিচমেন্টের দাবী উঠল এবার নি/শা/নায় জ্ঞানেশকুমার
04:08
Video thumbnail
Trump-Zelenskyy | ট্রাম্প জেলেনস্কি বৈঠকের বিস্তারিত বিবরণ বাংলায় জানতে চোখ রাখুন এই লিংকে
04:24
Video thumbnail
ঘোষাল নামা | Ghosal Nama | হে/ন/স্থা হলে বাংলায় ফিরুন! পরিযায়ীদের জন্য নয়া প্রকল্প, দেখুন ঘোষালনামা
10:14