Wednesday, August 6, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar: তাওয়াংয়ে আবার ভারত-চীন সেনা-সংঘর্ষ, এদিকে চীনের সঙ্গে বেড়েই চলেছে ব্যবসা!

Fourth Pillar: তাওয়াংয়ে আবার ভারত-চীন সেনা-সংঘর্ষ, এদিকে চীনের সঙ্গে বেড়েই চলেছে ব্যবসা!

Follow Us :

৯ তারিখে অরুণাচলপ্রদেশে তাওয়াং থেকে ২৫ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে ইয়াঙসে এলাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনী আর চিনের পিএলএ পিপলস লিবারেশন আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ হয়। যা খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে ভারতের ৩০ জন জওয়ান আহত হয়েছেন, এদের মধ্যে ৬ জনের আঘাত গুরুতর, তাঁদেরকে চিকিৎসার জন্য গুয়াহাটিতে আনা হয়েছে। খবর আমরা জানলাম ১২ তারিখে। ওই ১২ তারিখ থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া, ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপে বেশ কিছু ভিডিয়ো ঘুরে বেড়াচ্ছে, বিশ্বাস করুন, দায়িত্ব নিয়ে বলছি এরমধ্যে একটাও, হ্যাঁ একটাও ওই ঘটনার নয়, যে ভিডিয়োগুলো ছড়ানো হচ্ছে তার বেশিরভাগটাই লাদাখের, একটা কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া সিকিম সীমান্তের। সাধারণ সীমান্ত পাহারাদারি রীতি মেনেই ছোটখাটো দখলদারিতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয় না, তার জায়গায় কাঁটা লাগানো লাঠি, গদা ধরণের অস্ত্র, হকি স্টিক ইত্যাদি ব্যবহার হয়। কেন? কারণ হঠাৎ ফায়ারিং উত্তেজনাকে যুদ্ধে পরিণত করতে পারে, তাই এরকম রীতি। এসব ঘটনার পরেই দু’পক্ষের সেনাবাহিনীর কমান্ডে থাকা অফিসাররা ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে বসে ঝগড়া মেটান, মেটানোর চেষ্টা করেন। এরপর আরও সিনিয়র আর্মি অফিসাররা হাজির হন, ওদিকে দেশের রাজধানী থেকে দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনাও চলতে থাকে। ভারত-চীনের মধ্যে এরকম ঘটনা বহুবার ঘটেছে, লাদাখে, ভূটানের কাছে ডোকলামে, সিকিম সীমান্তে, অরুণাচলে তো বটেই। কারণ চীন অরুণাচলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিজেদের বলেই দাবী করে আসছে বহুদিন ধরেই। এই দাবির থেকে ১৯৬২-তে চীন ভারত যুদ্ধ হয়েছিল, এবার চীনা ফৌজ অরুণাচলের বমডিলা পর্যন্ত নেমে এসেছিল, কিছুদিন পরে তারা ফিরে যায়। সেই ৬২’র ভারত-চীন যুদ্ধের অনেক গল্পগাথা আছে, তারমধ্যে অন্যতম হল যশবন্ত সিং রাঠোরের গল্প, ফোর্থ গাড়োয়াল রাইফেলসের সেই গল্পের কথা সবাই শুনেছে, তিনজন সিপাই মিলে চীনা বাহিনীর কাছ থেকে একটা এমএমজি মিডিয়াম মেশিন গান কেড়ে নিয়ে চীনা বাহিনীকে রুখে দিয়েছিলেন ফোর্থ গাড়ওয়াল রাইফেলসের তিনজন সেনা, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ল্যান্সনায়েক ত্রিলোক সিং নেগি, রাইফেলম্যান গোপাল সিংয়ের এমএমজি নিয়ে চীনা বাহিনীকে আটকাতে থাকেন রাইফেলম্যান যশবন্ত সিং রাওত। পরে সেই পোস্ট দখল করে চীনা সৈন্যরা, যশবন্ত সিং রাওতের মৃত্যু কীভাবে হয় জানা নেই। অনেকে বলেন, তিনি শেষ গুলিটা নিজের জয় রেখেছিলেন। আবার অনেকে বলেন, তাঁকে চীনা ফৌজ হত্যা করে। যাইহোক যুদ্ধ শেষে তাঁর মাথা এবং ব্যাজ ফেরত দেওয়া হয়। এখনও যশবন্ত সিং রাওতের মেমোরিয়াল আছে, রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর কর্তারা ওইদিকে গেলেই ওই মেমোরিয়ালে যান, শ্রদ্ধা জানান। ট্যুরিস্টরাও যান এবং স্থানীয় লোকেদের মুখে মুখে সেই ঘটনা এখন এক রূপকথা, এক মিথ, সঙ্গে জুড়েছে সেলা আর নুরা, দুই যুবতীর কাহিনী। আজ হঠাৎ এই গল্প বলছি কেন? কারণ ওই যুদ্ধও ঠিক যেখানে শুরু হয়েছিল, সেই ইয়াংসে, সেই ন্যুরেনাং নদীর পাশেই ৯ তারিখে সংঘর্ষ হয়েছে। আমরা যেটাকে ইয়াংসে বলছি, সেটাকেই চীনের ম্যাপে ডঙজাম বলা হয়। এবার আসুন আলোচনা করা যাক কেন গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকা। যে কোনও পাহাড়-পর্বতে ঘেরা সীমান্তে তিনটে জায়গা গুরুত্বপূর্ণ হয়। প্রথমটা হল রিজ বা পর্বতের উঁচু খাঁজ। কেন? কারণ এখান থেকে দূরে পড়শি দেশের রাস্তাঘাট, আসা-যাওয়ার উপর নজর রাখা যায়। কাজেই রিজ দখলে রাখতে পারাটা জরুরি। দু’নম্বর গূরুত্বপূর্ণ জায়গা হল পাস আর ভ্যালি, কারণ সেখানদিয়েই সৈন্যবাহিনীরা যাবে আসবে, তাদের সাপ্লাই লাইন তো ওটাই। তিন নম্বর গুরুত্ব পূর্ণ জায়গা হল নদী, পাহাড়ি নদী, কারণ নদী উপত্যকা সবথেকে তলায় থাকে, অনেক সময়েই এই নদীই সীমান্ত রেখা হয়ে দাঁড়ায়, এই কুলে আমি আর ওই কুলে তুমি, মাঝখানে নদী ওই বয়ে চলে যায়। তো ওই ইয়াংসি হল রিজ, ১৭ হাজার ফুট উচ্চতায় ওই অঞ্চলে সবচেয়ে খাড়াই পর্বতের খাঁজ, যেখানে ম্যাপে চারটে ইন্ডিয়ান মিলিটারি পোস্ট দেখা যাচ্ছে, আসলে ওখানে ৬টা পোস্ট আছে। ওইখানেই আছে সোনাচু ঝোরা, যা নেমে এসেছে ভারতের দিকে, তখন তার নাম ন্যুরেনাং নদী। এই নদীই তাওয়াংয়ে ঝরে পড়ছে এক অনবদ্য জলপ্রপাত, আমার দেখা ভারতবর্ষে সব থেকে সুন্দর জলপ্রপাত। জং ফলস, যেখানে কোয়লা ছবির শ্যুটিং হয়েছিল, শাহরুখ, মাধুরি ছিলেন। সমস্যা আজ থেকে নয়, চীন ওই ইয়াংসে সীমান্তে বিরাট চওড়া রাস্তা তৈরি করেছে, বসতি বানিয়েছে, যেখানে অবসরপ্রাপ্ত চীনা সেনার দল পরিবার নিয়ে থাকছেন,ভারতের দিকে কিন্তু মাইল ১৫-র মধ্যে কোনও বসতি নেই। ভারত সীমান্ত জুড়ে চীন জনবসতি তৈরি করছে, ইয়াংসে, ডোকলাম, গালওয়ান থেকে শুরু করে আরও অন্যান্য জায়গায়। এটা একটা স্ট্রাটেজি, প্রথমত এই জায়গাগুলো সেনাবাহিনীর স্থায়ী জায়গা হবে, সিভিলিয়ানরাও থাকা শুরু করবেন, তারা দেখাবে ওই দুর্গম এলাকাতেও কিভাবে আধুনিক বসতি তৈরি করা যায়, ওই জায়গাজুড়ে জমা হবে অস্ত্রশস্ত্র। তাদের এখনও লক্ষ্য তাওয়াং। চীনের সেনাবাহিনীর হঠাৎ মনে হল যাই একটু লড়ে আসি, লড়তে এল, তা হতে পারে না, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল এক বাহিনী নির্দেশ ছাড়া কিছুই করবে না, কাজেই সর্বোচ্চ নেতাদের নির্দেশ আছে বৈকি। তারা চীনের মূল ভুখণ্ড থেকে তিব্বত হয়ে করাচি পর্যন্ত ৮ লেনের সড়ক বানাতে চায়, বানাচ্ছে, এই ঘটনাগুলো তারই ধারাবাহিকতা। উত্তেজনা কী কেবল ভারত-চীন সীমান্তেই চলছে? না। চলুন অন্যদিকগুলো দেখা যাক। আরব সাগরে গুজরাত তট জুড়ে ভারতের এয়ার ফোর্স আর নেভি ৮ থেকে ২২ ডিসেম্বর মহড়া চালাচ্ছে। ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের একই ধরণের মহড়ার কথা বলা হয়েছে ২০ – ২৩ ডিসেম্বর। সঙ্গে সঙ্গেই চীনা মিসাইল এবং স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং নৌ জাহাজ ভারত মহাসাগরে হাজির, তারা শ্রীলঙ্কার বন্দরেও আসতে পারে, সে অনুমতি তাদের আছে। এদিকে আজ এবং কাল ইডিয়ান এয়ার ফোর্স উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মহড়া চালাচ্ছে, ওখানে নো ফ্লাইং জোন অঞ্চল নির্দিষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওদিকে দিন কয়েক আগে থেকেই তিব্বতের সিগাটসে বিমানবন্দরে হলচল, স্বয়ংচালিত ছোট বিমান ইত্যাদি উড়ছে, চীন ভারত সীমান্ত ঘেঁসে তিনটে আরও বিমানবন্দর তৈরি করছে, প্রথমটা এই তাওয়াংয়ের কাছে ল্যুহন্টসে, দ্বিতীয়টা নেপাল বর্ডারের কাছে টিংরিতে, তৃতীয়টা পুরাংয়ে যেখানে নেপাল, ভারত আর চীনের সীমান্ত আছে। এসব চলছে লুকিয়ে-ছুপিয়ে নয়, খুলে আম। এদিকে ৫৬ ইঞ্চ কা সিনা নিয়ে একটা কথা তো বলছেনই না, উলটে বিরোধীরা সংসদে আলোচনা চাইলে আলোচনা করতেই অস্বীকার করছেন। চীন এই উপমহাদেশে তাদের আধিপত্য বাড়ানোর জন্য এক বিরাট পরিকল্পনা নিয়েই কাজ করছে, তিনটে কাজ একসঙ্গে করছে, তারা সীমান্ত বরাবর তাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার, রাস্তা, ব্রিজ, এয়ারপোর্ট তৈরি করে চলেছে। দুই, সীমান্ত বরাবর তাদের সৈন্য সংখ্যা বাড়াছে, পোস্ট বাড়াচ্ছে, উসকানি দিয়ে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। তিন, উপমহাদেশের বাকি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়িয়ে তুলছে। এদিকে মোদিজি টিকটক বাতিল করছেন, ক’দিন আগেই বলেছিলাম চীনের সঙ্গে আমাদের ট্রেড ডেফিসিট অর্থাৎ বাণিজ্য ঘাটতি ক্রমশ বেড়েই চলেছে, মানে আমরা আমদানি করছি যত তার তুলনায় রপ্তানি কিছুই করছি না, এই বছরে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়াবে ১০০ বিলিয়ন ডলারের ওপর, ওদিকে ‘বি লোকাল, বি ভোকাল’-এর বাওয়ালি চলছে। কীভাবে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে তার হিসাবটা আরেকবার শুনে নিন। ২০১২-তে চীন থেকে আমাদের আমদানি ছিল ৩৯.৩ বিলিয়ন ডলারের সামগ্রী, ২০১৩-তে ৩৮.৪ বিলিয়ন ডলার, ২০১৪-তে ৪২.১ বিলিয়ন ডলার, ২০১৫-তে ৪৫.৬ বিলিয়ন ডলার, ২০১৬-তে ৪৪.৩ বিলিয়ন ডলার, ২০১৭-তে ৫৩.২ বিলিয়ন ডলার, ২০১৮-তে ৫৬.৪ বিলিয়ন ডলার, ২০১৯-এ ৫২.৭ বিলিয়ন ডলার (এরমধ্যে চীনে কোভিড শুরু হয়ে গিয়েছে), ২০২০-তে ৪০.৭ বিলিয়ন ডলার, আমাদের দেশে কোভিড চলছে, ২০২১-এ ৬২.২ বিলিয়ন ডলার আর ২০২২-এ ৮৯.৭ বিলিয়ন ডলারের আমদানি করা হয়েছে। এই পুরো হিসাবটা প্রত্যেক বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের। গতবছরে আমাদের মোট আমদানি ছিল ৯৭.৫২ বিলিয়ন ডলার মুল্যের, এবছর প্রথম ৯ মাসেই ৮৯.৭ বিলিয়ন ডলার। মোদিজির মেক ইন ইন্ডিয়া আসলে এক বিশুদ্ধ তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়, আর তাঁর ভক্তদের উল্লাস আসলে এই তামাশারই অঙ্গ।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Mamata Banerjee | ঝাড়গ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষা মিছিল, দেখুন সরাসরি
00:00
Video thumbnail
Priyanka Gandhi | Uttarkashi |উত্তর কাশীতে ভয়/ঙ্ক/র ঘটনা, কীভাবে রোখা সম্ভব? কী বললেন প্রিয়াঙ্কা?
00:00
Video thumbnail
Mamata Banerjee | ঝাড়গ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষা মিছিল, কী বার্তা মমতার?
45:52
Video thumbnail
Samik Bhattacharya | সংসদে আলোচনা চেয়ে চিঠি শমীক ভট্টাচার্যের, কেন? দেখুন এই ভিডিও
01:13
Video thumbnail
Mamata Banerjee | ঝাড়গ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষা মিছিল, দেখুন সরাসরি
20:14
Video thumbnail
West Bengal BJP | বাংলা বিজেপিতে মহারাষ্ট্র মডেল! কী কী পরিবর্তন হচ্ছে? দেখুন EXCLUSIVE রিপোর্ট
11:44
Video thumbnail
Ajit Doval | Russia | ৭ অগাস্ট নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের বৈঠক রাশিয়ার সঙ্গে
05:40
Video thumbnail
RG Kar Incident |দিল্লির উদ্দেশে রওনা, বৃহস্পতিবার অমিত শাহ-র সঙ্গে দেখা করবেন নি/র্যা/তিতার বাবা-মা
03:25
Video thumbnail
Gujarat | Bridge |কার্বন ফাইবার টেকনোলজিতে ৭২ বছরের ব্রিজকে আপগ্রেড করা হচ্ছে, দেখুন গুজরাটের ভিডিও
03:27
Video thumbnail
Monsoon Session 2025 | বাদল অধিবেশনের সেরা হাসির মুহূর্তগুলো দেখে হেসে নিন, চাপ কমে যাবে
04:50:25

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39