Tuesday, August 5, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: বিচারপতি তোমার বিচার করবে কারা?

চতুর্থ স্তম্ভ: বিচারপতি তোমার বিচার করবে কারা?

Follow Us :

আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার তিন স্তম্ভ হল, আইনসভা, প্রশাসন আর বিচারব্যবস্থা। এর মধ্যে বিচারব্যবস্থাকে নিরপেক্ষ রাখার জন্য, তার স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য সংবিধান প্রণেতারা যথাসম্ভব চেষ্টা করেছেন৷ ক্ষমতাশীন দল যাতে বিচারব্যবস্থায় নাক না গলাতে পারে, তার চেষ্টা করেছেন। কারণ প্রশাসন তো চলবেই সরকারের নির্দেশে৷ বিচারব্যবস্থা যেন সরকার দ্বারা প্রভাবিত না হয়৷ এটাই সংবিধান প্রণেতাদের লক্ষ্য ছিল। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল,  ১৯৭৫-এ এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়৷ জাস্টিস জগমোহন সিনহা সেই ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিলেন৷ রায়ে বলা হয়েছিল, ইন্দিরা গান্ধীর নির্বাচন কেবল বাতিল করাই হল না, তিনি আগামী ৬ বছর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না৷ সেই রায়কে অমান্য করতেই ইন্দিরা গান্ধী, জরুরি অবস্থা জারি করেন, সে অন্য গল্প।

কেবল ইন্দিরা গান্ধীর রায়ই নয়৷ বহু ক্ষেত্রে আমাদের দেশের বিভিন্ন হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট ক্ষমতাসীন সরকার, মুখ্যমন্ত্রী, যুক্তরাষ্ট্রীয় মন্ত্রিসভার ক্যাবিনেট মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে৷ সে সব রায়ের ফলে অনেক গণ্যমান্যকে জেলেও জেতে হয়েছে৷ তার লিস্টও কম বড় নয়। এসব কথা বলার মানে কি আমাদের বিচারব্যবস্থা ১০০% নিরপেক্ষ বা কার্যকরী? না তাও নয়৷ বিচার পদ্ধতি আর ব্যবস্থা এখনও বড়লোকেদেরই জন্য, গণ্যমান্যদের জন্য। একটা দেশি পিস্তল রাখার অভিযোগে, বিনা বিচারে জেলেই কেটে যায় বছর কুড়ি৷ ওদিকে একে ফর্টি সেভেন রাখার পরেও কিছুদিন জেল খেটে বেরিয়ে আসেন সঞ্জয় দত্ত৷ ধর্ষিতা বিচার পান না, নির্দোষরা জেলে থাকে, এমন ঘটনাও কম নয়। তবুও মোটের ওপর নিরপেক্ষ এক বিচার ব্যবস্থা আমাদের ছিল৷ সে বিচারব্যবস্থা কেবল সরকারের নির্দেশেই চলে, এমনটা ছিল না।

কিন্তু আজ বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷ প্রশ্ন তুলছেন সাংবাদিকরা, সমাজের বিশিষ্ট মানুষজন, এমন কি বিশিষ্ট বিচারপতিদের গলাতেও সেই সুর। হঠাৎ এমন কী হল? বিচার ব্যবস্থা নিয়ে এত অবিশ্বাস গণতান্ত্রিক ধ্যান ধারণাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তা বলা বাহুল্য। কিন্তু এটাই বাস্তব, বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আজ আমরা কোনও প্রশ্ন তুলবো না, কোনও প্রশ্ন নয়, কিছু তথ্য আপনাদের সামনে রাখবো৷ আপনারাই ঠিক করুন, প্রশ্ন তুলবেন কি না, আমরা কেবল তথ্যের যোগানদার।

আজ জাস্টিস অরুণ মিশ্রা নিয়ে কিছু কথা৷ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০৷ এক অনুষ্ঠানে মোদিজি উপস্থিত৷ জাস্টিস মিশ্রাও ছিলেন৷ তিনি তাঁর ভাষণে বললেন, “India is a responsible and most friendly member of the International Community under the stewardship of internationally acclaimed visionary Prime Minister Shri Narendra Modi. We thank the versatile genius who thinks globally and acts locally, Shri Narendra Modi, for his inspiring speech which will act as a catalyst in initiating the deliberations and setting the agenda for the conference.” 

বেঙ্গালুরু প্রিন্সিপাল অফ জুডিসিয়াল কনডাক্টে বলা হয়েছে, কোনও বিচারপতি, কোনওভাবেই যেন প্রশাসন বা আইনসভার কোনও ব্যক্তি দ্বারা প্রভাবিত না হন, তাদের প্রভাব থেকে বিচারপতিকে মুক্ত থাকতে হবে। একজন বিচারপতির আচরণ, বক্তব্য যেন মানুষের কাছে তাঁর নিরপেক্ষতাই প্রমাণ করে, বিচার কেবল দিলেই হবে না, বিচার দেওয়া হচ্ছে, তা যেন দৃশ্যমান হয়, মানুষ যেন সেটা বুঝতে পারে।

তাঁর এই ভাষণের পরেই, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন, তাঁর এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করে৷ তাঁরা আবেদন রাখেন বিচারপতি যেন সরকার প্রশাসনে বসে থাকা মানুষদের গা ঘেঁসাঘেসি থেকে, নিজেকে বিরত রাখেন।  এই অরুণ মিশ্রা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হলেন কবে? ৭ জুলাই, ২০১৪। মাত্র কদিন আগে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন৷ না আমরা কোনও প্রশ্ন তুলছি না৷ কেবল তথ্য সামনে রাখছি মাত্র।

১৩ অক্টোবর, ২০১৫৷  জাস্টিস মিশ্রা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের এক বেঞ্চের সদস্য ছিলেন৷ যে বেঞ্চ আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাটের জামিন আবেদন নিয়ে রায় দিয়েছিল৷ যে রায়ে সঞ্জীব ভাটের জামিনের আবেদন নাকচ করা হয়েছিল। কে এই সঞ্জীব ভাট? যিনি গুজরাট দাঙ্গা পরবর্তী বিচারের সময় জানিয়েছিলেন, তিনি সেই মিটিংয়ে হাজির ছিলেন, যেখানে গোধরা কাণ্ডের পরে পালটা মার দেওয়ার কথা বলেছিলেন, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি। সঞ্জীব ভাট, সেই সময়ে গুজরাটের অ্যাডভোকেট জেনারেল এবং দাঙ্গায় অভিযুক্তদের বেশ কিছু ই-মেইল সামনে এনেছিলেন, যাতে প্রমাণিত হয়, রাজ্য সরকার এই দাঙ্গায় সরাসরি অংশ নিয়েছিল৷ প্রমাণিত হয় যে মামলার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি, অভিযুক্তদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। সঞ্জীব ভাটকে জেলে পোরা হয়৷ এখনও তিনি জেলে৷ তৎকালীন গুজরাটের অ্যাডভোকেট জেনারেল তুষার মেহেতা সলিসিটর জেনারেল অফ ইন্ডিয়া হন৷ আমরা কোনও প্রশ্ন করছি না৷ আমরা কেবল তথ্য সামনে রাখছি মাত্র।

১১ জানুয়ারি, ২০১৭৷  সুপ্রিম কোর্টের এক বেঞ্চ আদিত্য বিড়লা গ্রুপের দপ্তরে রেইড চলাকালীন পাওয়া এক ডায়রি নিয়ে তদন্ত খারিজ করার রায় দিল৷ জাস্টিস মিশ্রাও সেই বেঞ্চের সদস্য ছিলেন৷ কী ছিল সেই ডায়রিতে? তার এক পাতায় লেখা ছিল মোদীকে ২৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, কোন মোদী? তারই তদন্ত খারিজ হয়ে গেলো। আমরা কোনও প্রশ্ন করছি না, আমরা কেবল তথ্য সামনে রাখছি মাত্র।

৮ মে ২০১৭৷ লালু প্রসাদ যাদবকে আবার পশুখাদ্য মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হল৷ জেলে পোরা হল৷ যদিও এই একই মামলায় আগেই তিনি অভিযুক্ত ছিলেন, জেলও খাটছিলেন। আরও চার বছর জেলের মেয়াদ বাড়ল। এই রায় যে বেঞ্চের কাছ থেকে আসল, তার অন্যতম সদস্য ছিলেন জাস্টিস মিশ্রা। আমরা কোনও প্রশ্ন করছি না৷ আমরা কেবল তথ্য সামনে রাখছি মাত্র।

পয়লা ডিসেম্বর, ২০১৭৷ জাস্টিস মিশ্রা চিফ জাস্টিসে দীপক মিশ্রার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ করলেন৷ যে অভিযোগ এনেছিলেন,ক্যাম্পেইন ফর জুডিসিয়াল অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যান্ড রিফর্মস নামে এক সংগঠন, সংগঠনের পক্ষে মামলা দায়ের করেছিলেন বিশিষ্ট আইনিজীবি প্রশান্ত ভূষণ, কেবল খারিজ নয়, মামলাকারীর বিরুদ্ধে ২৫ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণেরও রায় দেওয়া হল৷ বলাই বাহুল্য এই বিচারপতি মন্ডলীর অন্যতম সদস্য ছিলেন, জাস্টিস মিশ্রা। আমরা কোনও প্রশ্ন করছি না, আমরা কেবল তথ্য সামনে রাখছি মাত্র।

২০ এপ্রিল, ২০১৯। জাস্টিস মিশ্রা এবং বাকি বিচারপতিরা মিলে এক বিচারে বসলেন, যা জাস্টিস গগৈর বিরুদ্ধে আনা যৌন নির্যাতন, এবং নির্যাতিতার বয়ান নিয়ে তাদের রায় দিল। মজার কথা হল, এই বিচারপতি মন্ডলী বা সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চের অন্যতম সদস্য ছিলেন জাস্টিস গগৈ নিজেই, বলা হল জাস্টিস গগৈ এবং ভারতীয় বিচারব্যবস্থাকে, নড়বড়ে করার ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা কোনও প্রশ্ন করছি না, আমরা কেবল তথ্য সামনে রাখছি মাত্র।

৫ জুলাই ২০১৯৷ হরেন পান্ডিয়া, যিনি ঘোষিত ভাবেই মোদি বিরোধী ছিলেন, যাঁর মা শেষ দিন পর্যন্ত এই হত্যার জন্য মোদী-শাহকে দায়ী করে গেছেন৷ সেই হরেন পান্ডিয়া হত্যায় গ্রেপ্তার করে জেলে রাখা ১২ জনের মুক্তির আদেশ খারিজ করলেন৷ সিবিআই বলেছিল এটা এক আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র৷ হিন্দুদের মধ্যে সন্ত্রাস ছড়ানোর জন্য এই হত্যা করা হয়েছিল৷ ১২ জন মুসলমান অপরাধীকে মুক্ত করার গুজরাত হাইকোর্টের রায় খারিজ হয়ে গেলো৷ তাঁরা আবার জেলে ফিরলেন। ১৪ আগস্ট, ২০১৯ কাশ্মীরে লাগাতার কারফিউ, ইন্টারনেট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রাখার ফলে এমন কি মেডিকেল এমার্জেন্সিও বন্ধ হয়ে রয়েছে, এর ফলে জনসাধারণের জীবন বিপর্যস্ত৷ তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের কাছে বিচার চেয়েছিলেন, খারিজ করে দেওয়া হল, বলা হল আসলে কাশ্মীরে কী ঘটছে তা তো কারোরই জানা নেই৷ কাজেই এর বিচার সম্ভব নয়৷ তবে আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি৷ সরকার বলেছে কিছুদিন পরেই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে৷ আমরাও তাই মনে করি। জাস্টিস অরুণ মিশ্রা, এই বিচারপতি মন্ডলীর অন্যতম সদস্য ছিলেন। আমরা কোনও প্রশ্ন করছি না, আমরা কেবল তথ্য সামনে রাখছি মাত্র।

আদানি গ্রুপের, একটার পর একটা মামলা তাঁর কাছে এসেছে, তৎপরতার সঙ্গে তিনি সেসব মামলার রায় দিয়েছেন, প্রত্যেকটি রায় আদানিদের পক্ষেই গিয়েছে, তৎপরতার উদাহরণ, ২০১৭ ফেব্রুয়ারিতে শেষ শুনানি হয়েছিল, আদানি গোষ্ঠীর এমন এক মামলা তাঁর কাছে আসে, ২৩ মে ২০১৯, পরের দিন সেই মামলার রায় দেওয়া হয়, অবশ্যই তা আদানিদের পক্ষেই গিয়েছিল। আমরা কোনও প্রশ্ন করছি না, আমরা কেবল তথ্য সামনে রাখছি মাত্র।

এবার ১০ মে ২০১৯৷ নির্বাচনের ঠিক আগে বিশাল মিশ্রা, জাস্টিস অরুণ মিশ্রার ভাইকে  মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগ করা হয়৷ তাঁর বয়স তখনও ৪৫ নয়৷ সাধারণত ৪৫ এর ওপরেই এই নিয়োগ হয়, যে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক মন্ডলি এই নিয়োগ করলেন, জাস্টিস মিশ্রা তার সদস্য ছিলেন। বিশাল মিশ্রা অবসর নেবেন ২০৩৬ এ, সুপ্রিম কোর্টে এলে আরও তিন বছর পরে, মানে ২০৩৯ এ, উনি চিফ জাস্টিস হলে মাস ৬/৮/১০ নয়, বহু বছর থেকেই যাবেন চিফ জাস্টিস। এই বিশাল মিশ্রা, তাঁর ফেসবুক পোস্ট এ লিখেছেন, নেহেরু – গান্ধীরা আসলে মুসলিম ছিল, সেই জন্যই তারা হিন্দু বিরোধী। আমরা কোনও প্রশ্ন করছি না, আমরা কেবল তথ্য সামনে রাখছি মাত্র।  কী ভাবছেন? এখানেই শেষ? পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত। অবসর নিলেন জাস্টিস অরুণ মিশ্রা, আট মাস তাঁর বাংলো খালি করলেন না, খালি করতে হলও না৷  এরপর জুন মাস, ২০২১ তিন বছরের জন্য, তাঁকে ন্যাশন্যাল হিউম্যান রাইটস কমিশনের চেয়ারম্যান করা হল, তিনিই সেই একমাত্র চেয়ারম্যান, যিনি চিফ জাস্টিস না হয়েও এই পদে অভিষিক্ত হলেন। প্রথম কাজ? বাংলায় নির্বাচনের পরে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, মানবাধিকার টিম পাঠালেন চেয়ারম্যান সাহেব, জাস্টিস অরুণ মিশ্রা। আমরা কোনও প্রশ্ন করছি না, আমরা কেবল তথ্য সামনে রাখছি মাত্র।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
RG Kar Incident | আরজি কর নি/র্যা/তিতার পরিবারের মামলা মুলতুবি, শুনানি কবে?
01:42:51
Video thumbnail
Trump-Modi | ট্রাম্পের হু/ম/কিই সার, রাশিয়া থেকে তেল কিনছে ভারত! ট্রাম্প-মোদি সম্পর্কে ফাটল ধরবে?
02:46:16
Video thumbnail
Aadhar Update | ব্লক করা হল ১ কোটি আধার! কেন? দেখুন চাঞ্চল্যকর ভিডিও
03:58:07
Video thumbnail
Bangla Bolche | TMC | 'ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়ে গেছে'
01:30
Video thumbnail
Bangla Bolche | CPM | 'বাংলা ভাষাকে অপমান বিজেপির সু-পরিকল্পিত'
01:41
Video thumbnail
Bangla Bolche | BJP | ভাষার আড়ালে কী চলছে?
03:16
Video thumbnail
Politics | ভালো লোক নীতীশকুমার পাপ্পু যাদব বললেন এবার
03:40
Video thumbnail
Politics | কর্ণাটকের মন্দির চত্বরে দে/হাংশ মিলল এইবারে
04:47
Video thumbnail
Russia | ৮৭-র প/রমা/ণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এল রাশিয়া! প/রমা/ণু যুদ্ধ কবে? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
07:07
Video thumbnail
Politics | রাষ্ট্রপতির আলাদা আলোচনা রাজনৈতিক মহলে জল্পনা
05:23

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39