Monday, August 11, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: খেলা হোবে, খদেড়া হোবে

চতুর্থ স্তম্ভ: খেলা হোবে, খদেড়া হোবে

Follow Us :

ঠিক একবছর আগের ঘটনা৷ একটু মনে করিয়ে দিই। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী হিসারে এক জনসভায় যাচ্ছিলেন৷ তাঁকে নিয়ে হেলিকপ্টার রওনা দেয় হিসার৷ মনোহরলাল খট্টর, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর নিজের জেলা৷ উনি ওখান থেকেই রাজনীতি শুরু করেন৷ ওদিকে সেই হিসারে বিরাট প্যান্ডেল তৈরি হয়েছে, ফুল গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে, উপস্থিত আছেন হরিয়ানার বিজেপি সভাপতি, ওম প্রকাশ ধনখড়, মন্ত্রী কানোয়ার পাল গুজ্জর, সন্দীপ সিং এবং স্থানীয় দুই বিধায়ক। বুঝতেই পারছেন, কড়া পুলিশি বন্দোবস্ত আছে, বিজেপি সমর্থকরা আছে। ওদিকে কৃষক আন্দোলন তখন তুঙ্গে৷ ২০২১ জানুয়ারির ১০ তারিখ৷ তার কদিন পরেই দিল্লি মার্চের ডাক দিয়েছেন কৃষক নেতারা৷ তো ওই হিসার সংলগ্ন কৃষক আন্দোলনকারীরা বললেন, খট্টরকে ঢুকতে দেওয়া হবে না৷ বড় কোনও নেতা নয়, স্থানীয় আন্দোলনকারীরা এই সিদ্ধান্ত নিলেন৷ সেদিন সকাল না হতেই দলে দলে কৃষক হিসারের দিকে চলল, একদল নতুন তৈরি হেলিপ্যাডের দিকে, অন্যদল সভাস্থলের দিকে, মুহূর্তের মধ্যে হেলিপ্যাড মানুষের সমুদ্র হয়ে গেল৷ সভাস্থল লন্ডভন্ড, মন্ত্রী বিধায়কদের পুলিশ পাহারা দিয়ে বের করা হল কোনওমতে, খট্টর ওপর থেকে দেখলেন, হেলিকপ্টার চক্কর মেরে ফিরে গেল। সেদিনের পর থেকে হরিয়ানা, পঞ্জাবে বিজেপি নেতারা গৃহবন্দি৷ ঘর থেকে বের হলেই মানুষ ঘিরে ধরছে৷ স্লোগান দিচ্ছে, শুরু হল প্রতিবাদ।

এই প্রতিবাদ নিয়ে বলতে গিয়ে হিটলারের প্রচার মন্ত্রী গোয়েবলস বলেছিল, প্রতিবাদ বড্ড ছোঁয়াচে, বড্ড তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে যায়, তাই সামান্যতম প্রতিবাদকেও অঙ্কুরে বিনষ্ট করতে হয়৷ কিন্তু এখানে তো শুরুই হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার ফিরিয়ে দিয়ে, তাই এই ঘেরাও ছড়িয়ে পড়ল। ছড়িয়ে পড়ল উত্তর প্রদেশে, লখিমপুরে ঢুকতে দেওয়া হল না মন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্যকে৷ বদলা নিতে কৃষকদের গাড়ির চাকার তলায় পিষে মারা হল৷ তাতে আন্দোলন থামল না৷ আরও ছড়িয়ে পড়ল, পশ্চিম উত্তর প্রদেশে বিজেপি নেতারা ঢুকতে পারছেন না৷ এদিকে শিরে সংক্রান্তি৷ নির্বাচন এসে গিয়েছে৷ সামাল দিতে চৌকিদার সাহেব কৃষি আইন ফিরিয়ে নিলেন, কেন এনেছিলেন? তাও জানাননি। কেন ফিরিয়ে নিলেন, তাও জানালেন না, কিন্তু মানুষ ততদিনে বুঝে ফেলেছে ৫৬ ইঞ্চ কা সিনা মে ডর ঘুস গয়া, ভয় পেয়েছেন মোদিজী।

নির্বাচন আসতেই পশ্চিম ইউপি থেকে ওম প্রকাশ রাজভর, এতদিন বিজেপিতেই ছিলেন, শিবির বদলে সমাজবাদি পার্টির সঙ্গে জোট করলেন, স্লোগান দিলেন, খেলা হবে, খদেড়া হবে। খেলা তো হবেই তার সঙ্গে খ্যাদানোও হবে। প্রথমে ভাবা হয়েছিল এই খদেড়া হবে, সীমিত থাকবে পশ্চিম ইউপিতেই৷ কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ছবিটা বদলে যাচ্ছে৷ এখন গোটা ইউপির বিভিন্ন অঞ্চল থাকতে খদেড়া হবে চলছে৷ বিজেপি বিধায়ক, নেতারা গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন, আর মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়ে ফিরে আসছেন, গোদি মিডিয়া সে খবর লুকিয়ে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু এই মুখে গ্যামাক্সিন ঢেলে দেবার গল্প মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে, মানুষ মজা দেখছে।

বিজেপি বিরোধের এই নানা ঘটনার এক বিস্তৃত রিপোর্ট ছেপেছে দৈনিক ভাস্কর৷ তার হেডলাইন হল, কেবল পশ্চিম নয়, গোটা ইউপিতেই বিজেপি নেতা মন্ত্রীদের খ্যাদানো হচ্ছে, নির্বাচন সমীক্ষাগুলোতে, এখনও বিজেপি এগিয়ে গোছের খবর বের হবার পরেও বিভিন্ন গ্রাম মহল্লা থেকে স্লোগান উঠছে, খেলা হোবে, খদেড়া হোবে, খেল হোই, খদেড়া হোই। বুধবারে প্রকাশিত সেই রিপোর্ট বলছে, গত ১০ দিনে ৯ টা এমন ঘটনার খবর পাওয়া গিয়েছে, যেখানে পুলিশি পাহারা নিয়েও বিজেপি মন্ত্রী, বিধায়ক, নেতারা গ্রামে ঢুকতে পারেনি, কোথাও মহিলারা, কেবল মহিলারা মিলেই তাদের গ্রাম থেকে ফিরে যেতে বাধ্য করেছে, তারা মান বাঁচিয়ে পালিয়েছে, নিজেদেরই ভোটারদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে, কেউ কেউ আর একটু চালাক, তারা, ওসব দু একজনের ঘটনা ইত্যাদি বলে এড়িয়ে গিয়েছে।

প্রথমেই নাম বিজেপির প্রবীণ নেতা, রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্যের, প্রয়াগরাজ জেলার পাশের জেলা কৌশ্মবির সিরাথু থেকে তিনি বিধানসভায় দাঁড়িয়েছেন, এটা তাঁর পুরনো এলাকা, আগে দুবার নির্বাচিত হয়েছেন, মাথায় রাখুন তিনি রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী, ২২ জানুয়ারি তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র গুলামিপুরে প্রচার করতে পৌঁছন৷ সঙ্গে সমর্থকরাও ছিলেন, একদল মহিলা আসছে দেখে তিনি একটু দাঁড়িয়ে যান৷ মহিলারা এসে কেশব মৌর্য মুর্দাবাদ স্লোগান দিতে থাকে৷ ঘিরে ধরে, তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাঁর সঙ্গের সিকিউরিটি এগিয়ে আসে, মহিলারা ঘেরাও চালাতে থাকে, তিনি বাধ্য হয়ে ফিরে যান। ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে যায়, এক সমাজবাদী পার্টি নেতা টুইট করেন, আগে চেয়ার ছিল না, এখন তো টুলটাও চলে যাবে।

এটা বলার পিছনে গল্প আছে, সুহেলদেব সমাজের নেতা, ওম প্রকাশ রাজভর জানিয়েছিলেন, উপমুখ্যমন্ত্রী হলে কি হবে, ক্যাবিনেট মিটিংয়ে কেশব মৌর্যকে সোফাতে বসতে দেওয়া হত না, তিনি টুলে বসতেন, এরপর থেকে কেশব প্রসাদ মৌর্য যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই খিল্লি হচ্ছে, টুলো গৈলল বা, টুল টাও গেল, তিনি নাকি রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী।

এরপরের নেতা সুরেন্দ্র চৌধুরি, প্রয়াগরাজ জেলার এম এল সি, ২৯ জানুয়ারি তিনি কেশব প্রসাদ মৌর্যের প্রচারের জন্য সিরাথু যাচ্ছিলেন, রাস্তাতে আফজল পুরবারি গ্রামে তাঁকে কৃষকেরা ঘিরে ধরে, সুরেন্দ্র চৌধুরি বলতে থাকেন, আমরা রামমন্দির তৈরি করেছি, আমরা আমাদের ওয়াদা নিভিয়েছি ইত্যাদি ইত্যাদি, মানুষজন মূল্যবৃদ্ধি, কৃষক হত্যা ইত্যাদি নিয়ে বলতেই থাকেন, শেষে রণে ভঙ্গ দিয়ে চৌধুরি ফিরে যান।

এরপর গৌরী শঙ্কর বর্মা, জালৌন জেলার উরই বিধানসভা থেকে নির্বাচিত বিধায়ক, এবারও প্রার্থী বিজেপির, ২৯ তারিখ নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে পৌঁছলে মানুষজন ঘিরে ধরে, জল কই? রাস্তা কই? তিনি বোঝানোর চেষ্টা করলেও শেষমেষ ফিরে যেতে বাধ্য হন৷ ফেরার পর অবশ্য তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দু জন মাতাল চিৎকার করছিল, উত্তেজনা না বাড়িয়ে তিনি ফিরে এসেছেন, যদিও খবর বলছে তিনি আর ওই গ্রামমুখো হন নি।

বুলন্দশহরের, সায়ানা আসনের গতবারের নির্বাচিত বিজেপি বিধায়ক প্রচারে বেরিয়েছিলেন৷ গ্রামবাসীরা ঘিরে ধরে, স্লোগান চলতে থাকে, তিনি বাধ্য হন ফিরে যেতে৷ পুলিশ এফআইআর লিখতে বলে৷ তিনি এফআইআর দায়ের করেননি৷ বলেছেন, ওরা আমার কনস্টিটুয়েন্সির ভোটার, একটু রাগ করেছে৷ সব ঠিক হয়ে যাবে, ওরা আমাকেই ভোট দেবে।

বিক্রম সাইনি মুজফফরনগরের খতৌলি বিধানসভার বিধায়ক, আবার দাঁড়িয়েছেন, তিনি ২০ জানুয়ারি প্রচারে বের হয়েছিলেন, মনব্বরপুর গ্রামে তাঁকে ঘিরে ধরা হয়, স্লোগান ইত্যাদির মাঝে তিনি পালান৷ এখানেই শেষ নয়৷ ২৯ তারিখে আবার তিনি প্রচারের জন্য যানচাঁদ সম্মন্দ গ্রামে, আবার এক ঘটনা, আবার তিনি পালিয়ে বাঁচেন, ভৈসি গ্রামের মানুষজন বলে রেখেছেন, এখানে হলেও একই বিক্ষোভ হবে, তিনি আর সে মুখো হচ্ছেন না, উলটে এফআইআর দায়ের করেছেন, তাঁকে প্রচার করতে দেওয়া হচ্ছে না, তিনি বিজেপির বিধায়ক, বিজেপি ক্ষমতায় পূর্ণ বহুমত নিয়ে, পুলিশ আছে সঙ্গে, তিনি প্রচার করতে গিয়ে পালিয়ে আসছেন, শেষ খবর হল তিনি আগে গাড়ি পাঠাচ্ছেন, সেই বুঝে নিজে যাচ্ছেন।

পিংকি যাদব, দু’বারের সমজাবাদী দলের এমএলএ, তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারের জন্য বিজেপি নেতা হরেন্দ্র সিং রিংকু, সম্ভলের আসমৌলি আসনের, শংকরপুর গ্রামে পৌঁছলে কৃষকরা তাকে ঘিরে ধরে৷ গাজিপুর বর্ডারে কেন রাস্তায় পেরেক পোঁতা হয়েছিল, সরকার কেন টিয়ার গ্যাস চালিয়েছিল, এসব প্রশ্নে মুখোমুখি হতে হয়৷ শেষমেষ তিনিও যঃ পলায়তি স জীবতি বলেই পালিয়ে আসেন। পিছনে তখন স্লোগান উঠছে, হম ভুলে নহিঁ হ্যায়, ন ভুলেঙ্গে।

এবারে সেম সাইড গোল, প্রেম পাল বিজেপির প্রার্থী ২৯ জানুয়ারি নারখিতে যান প্রচার করতে, বিজেপি সমর্থকরাই ঘিরে ধরে, বহিরাগতদের আনা চলবে না বলে স্লোগান দিতে থাকে, শেষমেষ পালিয়ে বাঁচেন তিনি, গাড়ির কাঁচ ভেঙে দেওয়া হয়।

একটা প্রশ্ন এখানে উঠতেই পারে, গণতন্ত্রে এ ধরনের অসহিষ্ণুতা কি কাম্য? নির্বাচনের প্রার্থীদের গ্রামে ঢুকতেই দেওয়া হবে না, এটা কি গণতন্ত্র? এই প্রশ্ন ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই মাথায় রাখুন, গণতন্ত্র যে ভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছে, যেভাবে গণতন্ত্রকে পিষে মারা হচ্ছে, যে ধরণের অত্যাচার নামিয়ে আনা হচ্ছে সেখানে মানুষের এই ক্ষোভ স্বাভাবিক, ইতিহাসে বহুবার মানুষের এই পবিত্র ক্রোধকে আমরা দেখেছি, দেখেছি সাম্রাজ্য ভেঙে যেতে, অত্যাচারীর নির্মম পতনও আমরা দেখেছি৷ একদা ইতালির জনগণমন অধিনায়ক বেনিত্তো মুসোলিনি মানুষের মেজাজ বুঝেই পালাচ্ছিলেন, তাঁকে ধরে ফেলে রেজিস্ট্যান্স ফোর্স৷ তাঁকে গুলি করে মারার পরে মানুষ রোমে প্রকাশ্য রাস্তায় তাঁকে তাঁর বান্ধবী সমেত, উলটো করে ঝুলিয়ে রেখেছিল৷ ২৪ ঘন্টা ঝুলে থেকেছিল সেই মৃতদেহ৷ শেষের সেদিন ভয়ঙ্করই হয়৷ ইতিহাস সেই কথাই বলে, বারবার বলে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Good Morning Kolkata | সকালের গুরুত্বপূর্ণ খবর, দেখুন একনজরে সরাসরি
51:30
Video thumbnail
Jagdeep Dhankar | লাপাতা লেডিসের পর লাপাতা উপরাষ্ট্রপতি! একি বলে দিলেন কপিল সিব্বল!
02:32:21
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | Manoj Kumar Verma | মনোজ ভার্মাকে শু/য়ো/রের…বললেন বিরোধী দলনেতা
02:37:25
Video thumbnail
Anubrata Mondal | কেষ্টর শিব-সেবা, শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবারের আগে পূণ্যার্থীদের সেবা অনুব্রতর
05:46
Video thumbnail
Hilsa Festival | রবিবাসরীয় দুপুরে শহরে ইলিশ উৎসবে চাঁদের হাট, ফরচুনের ২৫ বছরের উদ্যোগ 'বর্ষা মঙ্গল'
02:24
Video thumbnail
Stadium Bulletin | ২০২৭ বিশ্বকাপে কি দেখা যাবে 'রো-কো' জুটিকে? ডুরান্ডে হাফ ডজন গোল ইস্টবেঙ্গলের
20:59
Video thumbnail
Nabanna Abhijan | Rekha Patra | নিজের হাতে ব‍্যারিকেড খুললেন র/ণং/দেহী রেখা পাত্র, দর্শক পুলিশ
11:55:01
Video thumbnail
Sajal Ghosh | Mamata Banerjee | মুখ্যমন্ত্রীকে অশালীন ভাষায় আ/ক্র/মণ শ্রীলেখার, কী বললেন সজল ঘোষ?
05:40:30
Video thumbnail
Bibhas Adhikari | প্রাক্তন তৃণমূল নেতার 'প্রাইভেট থানা', দেখুন Exclusive রিপোর্ট
00:00
Video thumbnail
Operation Sindoor | অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তানকে দাবার চাল? কী বললেন সেনাপ্রধান? দেখুন এই ভিডিয়োয়
00:00