লখনউ: করিডোর দিয়ে হাঁটার সেই ছবিটা আজ বারবার মনে পড়ছে। হাজারও অভিযোগ। তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাঁর কথায় বিতর্ক হয়েছে। তাঁর আমলেই ভাইরাল হয়েছে গঙ্গায় লাশ ভেসে যাওয়ার ছবি। কিন্তু বরাবরই তিনি পাশে পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। বৃহস্পতিবারের বারবেলায় ভোটের ফলপ্রকাশের পর দেখা গেল উত্তরপ্রদেশে সেই যোগী আদিত্যনাথের কাঁধেই ৫ বছরের জন্য রাজ্যপাট তুলে দিয়েছেন সেখানকার মানুষ। মোদি-যোগী ডবল ইঞ্জিন সরকারই উত্তরপ্রদেশে থাকছে।
জয় এসেছে। ২৪-এ লোকসভা ভোট। তার আগে এই জয় নিঃসন্দেহে অক্সিজেন দেবে বিজেপিকে। অক্সিজেনের মাত্রা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন থাকছেই। হিন্দুত্ববাদ, রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা বারবার এসেছে ভোটের প্রচারে। মোদি ছুটে গিয়েছেন বারবার। পুজো দিয়েছেন, গঙ্গাস্নান সেরেছেন। হিন্দুত্ববাদের ফেরিওয়ালা হিসেবে মোদি-যোগীকে দেখা গিয়েছে বারবার। এত কিছুর পরও আসন সংখ্যা কিন্তু অনেকটাই কমেছে বিজেপির।
৩০০-র থেকে অনেকটাই কমে গিয়েছে আসন। উলটো দিকে সেঞ্চুরি টপকেছে অখিলেশের সমাজবাদী পার্টি। যা প্রমাণ করছে, যোগী বিরোধী হাওয়া উত্তরপ্রদেশে বইছে। এবারের ভোটটা নরেন্দ্র মোদির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। গত ৫ বছরে যোগী আদিত্যনাথের শাসনকাল নিয়ে অভিযোগ উঠছিল অনেক। ২০১৭-তে যোগীকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে নিয়ে আসার পর থেকেই সমালোচনা হয়েছিল অনেক। যোগীর মত আদ্যপান্ত হিন্দুত্ববাদীকে মুখ্যমন্ত্রী করা ঠিক হল কি না, প্রশ্ন উঠেছিল না নিয়ে। নিজ সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন নরেন্দ্র মোদি।
আরও পড়ুন: Mamata Varanasi: হিন্দুত্ববাদকে সামনে রেখেই গেরুয়াবেশি যোগীকে আক্রমণ মমতার
সময় যত এগিয়েছে যোগী বিরোধী হাওয়া ততই তীব্র হয়েছে। প্রথম দিকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তা নিশ্চিত করেনি গেরুয়া শিবির। যোগী আদিত্যনাথকে প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে না বলেন, দলের একপক্ষ থেকে আওয়াজ উঠেছিল। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়েছিল, প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগে কয়েক দফায় দিল্লি ছুটে গিয়েছিলেন যোগী। কথা বলেছিলেন মোদির সঙ্গে।
এখানেই শেষ নয়। দফায় দফায় উত্তরপ্রদেশে প্রচারে গিয়েছিলেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি। যোগীকে পাশে নিয়ে হিন্দুত্ববাদের স্বপ্ন ফেরি করেছিলেন। যোগীই যে ‘মুখ্যমন্ত্রী মুখ’, সেকথা ঘোষণা করেছিলেন মোদি। যোগীর সময় উত্তরপ্রদেশে যে ‘উন্নয়ন’ হয়েছে, সেকথা দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য ছিল, এ রাজ্যে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
যোগী আমলেই সংখ্যালঘু খুন বিতর্ক তৈরি করেছিল অনেকটাই। ছবি প্রকাশ হয়েছিল সংখ্যালঘুকে পিটিয়ে মারার। সব বিতর্ক সীমা ছাড়িয়েছিল হাথরস-উন্নাওয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ধর্ষণের পর খুন যোগীর গেরুয়া পোশাকে রক্তের ছিটে দিতে বিন্দুমাত্র দেরি করেনি। যোগীরাজের শেষ বেলায় লখিমপুর খেরির ঘটনা বিব্রত করেছিল কেন্দ্রকেও। কৃষক আন্দোলনের ঝড়কে নিজেদের পালে টানার চেষ্টা করেছিল সমাজবাদী পার্টি। অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বে সপা যোগী বিরোধী প্রচারকে সপ্তমে তুলতে কার্পণ্য করেনি।
আরও পড়ুন: Mamata attacks Yogi: যোগী না, আসলে উনি ভোগী, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ মমতার
পরিস্থিতি যখন নড়বড়ে তখন ফের একবার হিন্দুত্ববাদকেই আঁকড়ে ধরেছিলেন মোদি-যোগীরা। বারাণসীর ঘাটে মোদির ডুব যেন শুদ্ধিকরণের এক নামান্তরে পরিণত হয়েছিল। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে বেশ কিছুদিন চুপ ছিলেন স্বয়ং যোগীও। উত্তরপ্রদেশে দলের হয়ে প্রচারে সবসময় নিজেকে এগিয়ে দিয়েছিলেন মোদি। কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক প্রকল্পকে উত্তরপ্রদেশমুখী করতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি।
করোনা মোকাবিলায় বিপুল আর্থিক সাহায্য গোবলয়ের এই রাজ্যকে করা হয়েছিল। করোনার দাপটে ধুঁকতে থাকা গোটা দেশের থেকে উত্তরপ্রদেশকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। যা নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। কিন্তু কোনও কিছুই টলাতে পারেনি যোগী-মোদি রসায়নকে। যোগীকে সামনে রেখেই ভোট প্রচার-রাম মন্দির নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, সবই করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: Adityanath Filed Nomination: অমিত শাহের উপস্থিতিতে গোরক্ষপুর থেকে মনোনয়ন দাখিল যোগীর
উত্তরপ্রদেশ সবসময় দিল্লি দখলের শেষ ধাপ বলে ধরা হয়। গতবারের থেকে আসন কমেছে সন্দেহ নেই। তা বলে হিন্দুত্ববাদ থেকে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার যে সরছে না, কট্টর আরএসএসের বিরোধিতার পরেও যোগীর প্রতি আস্থা যে একফোঁটা কমেনি, সে কথা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবারের ফল প্রকাশের পর আরও একবার প্রমাণিত হল, মোদি ক্যারিশমাকে কাজে লাগিয়ে যোগীর কাঁধেই হাত রেখেই এগিয়ে চলবে উত্তরপ্রদেশ।