কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন তিনি। মনে হয়েছিল তাঁর কারিশ্মা কাজে লাগবে। হাথরাস থেকে উন্নাও সর্বত্র ছুটে যেতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। কিন্তু ইভিএম অন্য কথাই বলল। উত্তরপ্রদেশ (Uttarpradesh) মুখ ফিরিয়ে নিল প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদরার (Priyanka Gandhi Vadra) থেকে। আরও স্পষ্ট করে বললে, পাঁচ রাজ্যের ভোটে ( 2022 Assembly election) একপ্রকার মুছেই গেল হাত। হাত (Congress) ধরতে আর ভরসা পাচ্ছে না পাঁচ রাজ্যের মানুষ।
গত লোকসভা ভোটে ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসের (Congress)। নিজেকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে নিয়েছেন রাহুল গান্ধি (Rahul Gandhi)। সুকৌশলে এগিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রিয়াঙ্কাকে। উত্তরপ্রদেশ (Uttarpradesh) কংগ্রেসের (Congress) মুখ ছিলেন তিনি। তাঁকে সামনে রেখেই শুধু উত্তরপ্রদেশ নয় ২০২৪-এর লড়াইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছিল। নিজের মতো করে উত্তরপ্রদেশে লড়াই করছিলেন প্রিয়াঙ্কা। মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন। কিন্তু একদিকে বিজেপি অন্যদিকে সমাজবাদী পার্টি। এর মাঝখানে দাঁত ফোটাতে পারল না কংগ্রেস। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনকে সাধারণ ভাবে লোকসভা ভোটের সেমিফাইনাল হিসেবে ধরা হয়। সেই হিসেবে উত্তরপ্রদেশে দুই সংখ্যায় পৌঁছাতে না পারা কংগ্রেসের আগামী দিন যে আরও কঠিন হতে চলেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়। হাতে বিশ্বাস নেই গোয়া (Goa), উত্তরাখণ্ড (Uttarakhand), মণিপুর (Manipur), পঞ্জাব (Panjab) কোথাও। এর মধ্যে পঞ্জাবে ক্ষমতায় থাকলেও এবার ২০টি আসনও পায়নি তারা। যা বুঝিয়ে দিচ্ছে কতটা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সনিয়া-রাহুল-প্রিয়াঙ্কার দল। গোয়ায় কংগ্রেস জোট দু’অঙ্কের সংখ্যায় পৌঁছেছে কোনও মতে। মণিপুরেও দুই অঙ্কে যেতে পারেনি। উত্তরাখণ্ডেও ম্যাজিক ফিগার থেকে অনেকটাই কম।
কেন এই অবস্থা কংগ্রেসের?
নিঃসন্দেহে আঙুল উঠতে শুরু করেছে নেতৃত্বের দিকে। সনিয়া গান্ধিকে সামনে রেখে একসময় লড়াইয়ের ময়দানে ছিল কংগ্রেস। কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু জনবিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে শতবর্ষ প্রাচীন এই দল। যার অন্যতম কারণ নেতৃত্বের অভাব। সাংগঠনিক দুর্বলতা। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারা। রাহুল গান্ধির ‘অদক্ষ পরিচালনা’ ইতিমধ্যেই প্রশ্নের মুখে। মনে করা হয়েছিল উত্তরপ্রদেশে প্রিয়াঙ্কাকে সামনে রেখে হয়ত ঘুরে দাঁড়াতে পারে দল। চলনে বলনে ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধির ছায়া লক্ষ্য করা গিয়েছিল প্রিয়াঙ্কার মধ্যে। একাধিক প্রচারে বেশ ভিড়ও হতে দেখা যায়। বাড়ির ছাদ থেকে পুষ্পবৃষ্টি কংগ্রেসিদের মনে ফুল ফোটাতে শুরু করেছিল। চার দফায় ইশতেহার প্রকাশ করে উত্তরপ্রদেশে অক্সিজেন খোঁজার চেষ্টা করেছিল কংগ্রেস। প্রিয়াঙ্কা-রাহুল দুই ভাইবোন মিলে রাস্তায় বসে আন্দোলনের সুর তুলেছিলেন। বাস্তব অন্য কথাই বলল।
Humbly accept the people’s verdict. Best wishes to those who have won the mandate.
My gratitude to all Congress workers and volunteers for their hard work and dedication.
We will learn from this and keep working for the interests of the people of India.
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) March 10, 2022
গোয়া। জোট গড়ার বার্তা নিয়ে গিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। গোয়া কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিদম্বরমের ভূমিকা তার পরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। জোট পক্রিয়া ভেঙে যায়। আর ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা গেল গোয়া আর হাতের মধ্যে নেই। পঞ্জাবে সরকার ছিল কংগ্রেসের। পাঁচ বছর ধরে একাধিক অভিযোগ উঠেছিল তাদের বিরুদ্ধে। ভোটের দিনই আভাস মিলেছিল। পঞ্জাবের ছবিটাই যেন ধরা পড়েছে মণিপুরে। একক হিসেবে গত বার সবচেয়ে বেশি আসন ছিল কংগ্রেসের দখলে। এইবার পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে গেল। উত্তরাখণ্ডে প্রত্যাশা মতোই বিজেপি তাদের ক্ষমতা দেখাল।
আরও পড়ুন- Amarinder Singh: পাতিয়ালায় বোল্ড ক্যাপ্টেন, অমরিন্দরের উইকেট নিলেন কোহলি
যে গান্ধি পরিবারকে সামনে রেখে ২০২৪-এর লড়াইয়ের চেষ্টা করছিল তাদের ভূমিকা ফের প্রশ্নের মুখে। রাহুলকে বার বার বোঝানোর সত্ত্বেও তিনি দলের নেতৃত্ব নিতে চাননি। সনিয়ার কাঁধে বন্দুক রেখেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিল দলটা।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বেশ কয়েকটা আঞ্চলিক দল ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কংগ্রেসের বিজেপি বিরোধী অবস্থান কতটা সঠিক প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। বৃহস্পতিবার পাঁচ রাজ্যের ফল প্রকাশের পর খালি চোখে দেখা গেল কংগ্রেস ধুয়ে মুছে সাফ! হয়ত পরবর্তীতে একাধিক সমীক্ষা কংগ্রেস সামনে আনবে। শতকরা হিসেব প্রকাশ্যে আনবে। কিন্তু আজ সব সমীকরণ, আলোচনা, সংখ্যাতত্ত্ব দূরে সরিয়ে সনিয়া রাহুলদের হয়ত ভাবার সময় এসেছে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?