লখনউ: উম্ভার মতো ঘটনা আর চায় না উত্তরপ্রদেশের আদিবাসী সমাজ৷ কিন্তু জমি মাফিয়ারা তাদের জন্য বরাদ্দ জমি যদি গোগ্রাসে গিলতেই থাকে তাহলে উম্ভার মতো ঘটনা এড়ানো মুশকিল হবে৷ উত্তরপ্রদেশে আদিবাসীদের নামে বরাদ্দ জমি বেআইনিভাবে কেড়ে নিচ্ছে জমি হাঙরের দল৷ সরকারি কর্তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিঘার পর বিঘা জমি নিজেদের পকেটে পুরছে৷ তিন বছর আগে উম্ভাতে জমি আন্দোলনে নেমে প্রাণ হারান ১১ জন আদিবাসী৷ যা আজও ‘উম্ভা কাণ্ড’ নামে পরিচিত৷
কেন ঘটেছিল সেই গণহত্যা? বলা হয়, আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছিল৷ তাঁরা প্রতিবাদ করেছিলেন৷ তাই ১১ জনকে মেরে ফেলা হয়৷ কিন্তু ওই জমির অধিকার কারা দিল আদিবাসীদের? জানতে হলে একটু পিছন ফিরে তাকাতে হবে৷
উত্তরপ্রদেশের সোনভদ্র জেলার আদিবাসীদের গ্রাম উম্ভা৷ বহু দশক আগে জঙ্গলে ঘেরা এই গ্রামে এসে থাকা শুরু করেন আদিবাসীরা৷ বর্তমানে আদিবাসীদের চতুর্থ প্রজন্ম এখানে বসবাস করছে৷ রাম্পত সিং গৌড় নামে এক আদিবাসীর কথায়, সেই সময় গ্রামের রাজা আদিবাসীদের জঙ্গল কেটে চাষবাস এবং বসবাস করার অনুমতি দেন৷ তখন আদিবাসীরা এখানে শুধু চাষবাস করত৷ লেখাপড়া খুব একটা জানত না বলে জমির কাগজপত্র নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায়নি৷
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫৫ সালে তৈরি হয় আদর্শ কো-অপারেটিভ সোসাইটি৷ আদিবাসীদের জমিগুলি হস্তান্তরিত করা হয় ওই সোসাইটিকে৷ ধীরে ধীরে সেখানেই বাসা বাঁধে দুর্নীতি৷ অভিযোগ, বেআইনিভাবে জমিগুলি বেসরকারি সংস্থাগুলিকে বেচে দেওয়া শুরু করে৷ এটা জানার পর শুরু হয় জমি আন্দোলন৷ সেই আন্দোলনে প্রাণ হারান উম্ভার ১১ জন আদিবাসী৷ সালটা ছিল ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই৷
এই ঘটনার পর উত্তরপ্রদেশে বিতর্কের ঝড় ওঠে৷ আদিবাসী গণহত্যার নিন্দা শুরু হয়৷ লখনউয়ের গদিতে তখনও যোগী আদিত্যনাথের সরকার৷ তিনি সিটকে তদন্তের নির্দেশ দেন৷ সিটের তদন্তে ২১ জনের নাম উঠে আসে৷ যাঁদের মধ্যে ১৬ জন সরকারি অফিসার বেআইনিভাবে জমি হস্তান্তরে জড়িত বলে জানা যায়৷ যদিও অধিকাংশ অভিযুক্ত এখন জামিনে মুক্ত৷ আদিবাসীদের ক্ষোভে প্রলেপ দিতে রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে ৷ স্বজনহারানো পরিবারগুলিকে জমি-টাকা ও সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়৷ কিন্তু অভিযোগ সেই প্রতিশ্রুতিও ঠিক মতো পালন করেনি সরকার৷ এক আদিবাসী হরিবংশ লাল বলেন, ‘সরকার ১০ বিঘা জমির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ কিন্তু আমরা পেয়েছি ৭.৫ বিঘা জমি৷ নিয়ম বলছে, ১০ বিঘা জমি নাকি দেওয়া যায় না৷ আর ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও বাড়ি পেয়েছি৷ কিন্তু শিক্ষিতদের সরকারি চাকরির যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা আজও পূরণ হয়নি৷’