Friday, August 1, 2025
HomeআজকেAajke | পঞ্চায়েত ভোটে বামেরা মাঠে, বিজেপি কোর্টে 

Aajke | পঞ্চায়েত ভোটে বামেরা মাঠে, বিজেপি কোর্টে 

Follow Us :

সেই দুর্বল চিত্ত, ঘ্যানঘ্যানে, সবসময় কুঁকড়ে থাকা স্কুলের ছাত্রটির কথা ভাবুন, যে ক্লাসে মাস্টারমশাই ঢুকলেই বলতে শুরু করত, স্যর, আমায় না অনিমেষ গরু বলেছে আর মাধব কান মুলে দিয়েছে, স্যর আজকে আমার টিফিন খেয়ে নিয়েছে নিশা। এরকম ছাত্র বা ছাত্রী নিশ্চয়ই দেখেছেন সবাই, নালিশ করতে করতেই যাদের স্কুল জীবন কেটে গেছে। বাংলা বিজেপির দিকে তাকান, ওই স্কুলের বন্ধু বা বান্ধবীর কথাই মনে পড়ে যাবে। হয় কোর্টে যাচ্ছেন না হলে রাজভবনে এবং সেই নালিশ করতে, রোজ, রোজ। আজকে আমাকে মেরেছে, কালকে আমার কথা শুনছে না, পরশু আমাদের বলতে দিচ্ছে না। দিলীপ ঘোষ দলের দায়িত্ব নেওয়ার পরে বিজেপির একটা অন্য চেহারা আমরা দেখেছিলাম। সে গরুর কুঁজে সোনা বা শিল্পীদের রগড়ে দেবর মতো লুজ টক করলে কী হবে, নিজেই বাইকে বসে বাইক বাহিনী নিয়ে চলে যাওয়া, রুখে দাঁড়ানো, মাঠে মার খেয়েও টিঁকে থাকা ইত্যাদির চেষ্টা ছিল আর খানিকটা সফলও হয়েছিলেন। তারপর হঠাৎ বিজেপি এক শর্টকাট রুট ধরল, তৃণমূল ভেঙে কয়েকজনকে নিয়ে এসে বাংলার ক্ষমতা দখলের খোয়াব দেখতে শুরু করল। কী ভাবে জিতব নয়, জিতলে কে হবে মুখ্যমন্ত্রী, কে কোন দফতর পাবে তাই নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা চলছিল। শোনা যায়, এক অভিনেতা, যিনি ক’দিন আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মা বলিয়াছিলেন, সেই তিনিই এই দফতর ভাগাভাগির আলোচনায় সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, তথ্য সংস্কৃতি দফতর হলে আছি না হলে মন্ত্রী হবই না। কিন্তু সেসব আলোচনার শেষে পপাত চ, মমাত চ। মাঠে ঘাটে না নেমে সেই খোয়াব দেখনেওয়ালারা তাই প্রতিবার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেই হয় আদালতে চলে যাচ্ছেন, না হলে রাজভবনে। সেটাই বিষয় আজকে, বামেরা মাঠে, বিজেপি কোর্টে।

বামেরা মাঠে, কতখানি লড়বে? জানা নেই, কিন্তু চেষ্টাটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, মিছিল করে নমিনেশন জমা দিতে যাচ্ছেন, কমিশন নিয়ে হাজার অভিযোগ তাঁরাও করছেন কিন্তু রাস্তায় আছেন। শুভেন্দু কোর্ট আর উকিল দিয়ে নির্বাচন যদি পিছোনো যায়, যদি কেন্দ্রীয় বাহিনী আনা যায়, যদি নির্বাচনটা অমিত শাহের দেখরেখেই করানো যায় এসব নিয়েই ব্যস্ত আছেন। তাতে হল কী? নিজেদের এজেন্সি কাজে লাগিয়ে আজ একে তো কাল তাঁকে জেরা করতে ডেকে এনে কিছু ধারণা একটা ন্যারেটিভ তৈরির চেষ্টা অন্তত হচ্ছে, কিন্তু আদালতে গিয়ে বারবার মুখ পুড়ছে তাও প্রতিটা বিষয় নিয়েই শুভেন্দু অ্যান্ড কোম্পানি আদালতমুখো কেন? আসলে নিজেদের সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের কাছে গিয়ে নিরন্তর প্রচারে থেকে মানুষের সমর্থন আদায় করাটা খুব শক্ত কাজ। সে কাজের জন্য একটা প্রস্তুতি থাকতে হয়। বামেরা সেই কবে থেকে এক নির্দিষ্ট আদর্শের ভিত্তিতে মানুষের বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে, চাকরির দাবি, জিনিসপত্রের দাম কমানোর দাবি, মাইনে বাড়ানোর দাবি ইত্যাদি নিয়ে রাস্তায় থেকেছেন, মানুষের সমর্থন পেয়েছেন। মধ্যে মাঠ ছেড়ে মহাকরণের রাজনীতিতেই ব্যস্ত থাকার সময় সে সমর্থন চলে গিয়েছিল মমতার দিকে। তিনিই তখন মাঠে, তিনিই তখন লড়ছেন কৃষকদের জমি কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে, বেকারত্ব নিয়ে কথা বলছেন, মূল্যবৃদ্ধির বিরোধিতায় রাস্তায় থেকেছেন, মিছিল মিটিং করেছেন। 

আরও পড়ুন: Aajke | এ রাজ্যে পঞ্চায়েতে বিজেপি দু’ নম্বরে না তিন নম্বরে?  

শুভেন্দু–সুকান্তদের সেসব করার সুযোগও নেই, কারণ আচ্ছে দিন আনার প্রতিশ্রুতি তো ওনাদের নেতাই দিয়েছিল, আজ সেই আচ্ছে দিন না এলে কার বিরুদ্ধে লড়বেন তাঁরা? এদিকে রাস্তায় নেমে লড়াই করতে হলে লাগে সংগঠন, দাঙ্গায় উসকানি দিয়ে মাথায় গেরুয়া ফেট্টি বেঁধে, হাতে পিস্তল গোঁজা কিছু লুম্পেন জোগাড় করা এক ব্যাপার, সংগঠন, আন্দোলন আরেক ব্যপার। যা সুকান্ত, শুভেন্দুদের জানা নেই, আর জানা নেই বলেই ক্লাসের সেই ন্যাগিং বাচ্চাদের মতো প্রত্যেক কথায় তাঁরা গিয়ে হাজির হচ্ছে রাজ্যপাল বা আদালতে। শিক্ষা দুর্নীতিই হোক বা পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তাঁদের শেষ গন্তব্যস্থল ওই এক জায়গাতেই গিয়ে ঠেকেছে। আমরা মানুষকে সেই প্রশ্নই রেখেছিলাম, বাংলার বিজেপি নেতারা মানুষের মধ্যে থেকে আন্দোলন লড়াই করার বদলে বার বার হয় আদালতে যাচ্ছেন বা রাজভবনে, কেন? এটা কি তাদের দুর্বলতা? শুনে নেওয়া যাক মানুষ কী বলছেন।

শেষমেশ খবর, আদালত মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন তারিখ পিছনোর কোনও নির্দেশ দেননি, যা ছিল আদতে শুভেন্দু অধিকারীর আবেদন। আদালত বলেছে স্পর্শকাতর কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন, বাকি জায়গাতেও ওই কমিশন মনে করলে ব্যবস্থা নিতে পারে। শুভেন্দু জানেন, সুকান্ত জানেন, আমরা জানি, মানুষ জানেন যে রাজ্য নির্বাচন কমিশন রাজ্য সরকারের কথা মতোই চলে, যেমনটা চলে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন কেন্দ্র সরকারের কথায়। তাহলে শেষমেশ হাতে রইল পেনসিল। এক পয়সা ট্রাম ভাড়ার দাবিতে কলকাতা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল, শিক্ষকদের মাইনে বাড়ানোর দাবির পাশে দাঁড়িয়েছিল রাজ্যের মানুষ, সেসব আন্দোলন রাজভবনে জন্ম নেয়নি। নন্দীগ্রাম আর সিঙ্গুরের লড়াই, নো ভোটার কার্ড নো ভোটের দাবিতে লড়াই আদালতে হয়নি, হয়েছে রাজপথে, গুলিতে এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যাওয়া শরীরগুলো নিয়ে মমতা আদালতে যাননি, মানুষের কাছে গিয়েছিলেন। বাংলা বিজেপিতে আছেন বটে শুভেন্দু অধিকারী, তবে ছাত্র হিসেবে তিনি বিলো অ্যাভারেজ, মমতার পাশে পাশে এতদিন থেকেও বুঝলেন না ক্ষমতার চাবিকাঠি আদালতে নেই, রাজভবনেও নেই, আছে মানুষের কাছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular


Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39