Monday, August 18, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: গ্রাফ নামছে, পতন অনিবার্য

চতুর্থ স্তম্ভ: গ্রাফ নামছে, পতন অনিবার্য

Follow Us :

জীবনের ওঠা নামা নিয়ে কথা হচ্ছিল, আমার বন্ধু বরুণ বলেছিল, ওই ওঠা নামার মধ্যেই লুকিয়ে আছে রহস্যটা। মানে? আমরা তাকিয়েছিলাম। বরুণ বলেছিল, দেখ আমরা কেউই কেবল ওঠা বা কেবল নামা নিয়ে প্রশ্ন করছি না, আমরা ওঠা নামা নিয়ে আলোচনা করছি, একটা বল ওপরে ছুড়ে দে, উঠবে, উঠবে, উঠবে। তারপর নীচে নামবে। ইতিহাস দেখ, কেউই কেবল ওপরে ওঠেনি, শক, হুন, পাঠান, মোঘল, রোম, গ্রীস, মিশর, এমন কি ইনকা সভ্যতা প্রথমে উঠেছে, অনেক ওপরে উঠেছে, তারপর কিন্তু পড়েছে। মানুষ ওই পড়ার মানে পতনের দিকটা খেয়াল করে না, করতে চায় না। তার মনে হয়, এই তো জীবন কালি দা। তারপর নাটক শেষ হয়, কলাকুশলীরা মুখের রং তুলে, জব্বর যে সব পোশাক পরেছিল, সেগুলো খুলে বাড়ির দিকে রওনা দেয়, শেষ ট্রামের ঘন্টি বাজে, বা কোনও শবদেহ চলে যায়, বলহরি হরিবোল। মাটির ভেতরে, কোন পাতালে শেকড় ঢুকিয়ে নিশ্চিন্তে বেড়ে ওঠা বটগাছ, একদিন মড়াৎ করে ভেঙে যায়, যেখানে নদী বইতো, সেখানে ধান রোয়ানো হয়, যেখানে রাজ সিংহাসন ছিল, সেখানে ছলাৎ ছল, ছলাৎছল, ছলাৎ ছল, ঘাটের কাছে গল্প বলে নদীর জল।

আজ হঠাৎ সাত সকালে এই কথাটা মনে পড়ে গেলো, মনে পড়লো কারণ কাল রাতে শোবার আগে দেখছিলাম এই ছবিটা, মমতা দাঁড়িয়ে, হাতজোড় করা। সামনে মোদি, ইষৎ ঝুঁকে, হাত জোড় করা। মনে পড়ে গেলো মাত্র কিছুদিন আগে, দিদি, ও দিদি, মঞ্চে বসা বিভীষণদের কী উল্লাস! কাঁথির খোকাবাবুর চোখ চকচক করছে, কাঁথি টু নবান্নের স্বপ্ন দু’চোখে, একই স্বপ্ন নিয়ে বিলাস বহুল বাসে ঘুরছেন দিলীপ ঘোষ, তাঁদের চেলা চামুন্ডাদের হুঙ্কার, একবার আসতে দে, দেখে নেবো। শুধু আমি নই, হাজার হাজার মানুষ যারা আমরা তীব্র বিরোধীতা করছিলাম, তাঁদের প্রত্যেককে রাস্তায় ফেলে, কুপিয়ে খুন করার হুমকি দিয়েছিল ওই গুণ্ডারা, আজ যারা হিউম্যান রাইটসের কথা বলছে, অহিংসার কথা বলছে। সে সব কথা থাক, যে কথা বলছিলাম, একটা উচ্চতার পর পতন শুরু হয়, আর সেই পতনের সুনির্দিষ্ট লক্ষণ থাকে, ঔরঙ্গজেবের শাসন কাল দেখুন, সেই লক্ষণ ছিল স্পষ্ট, যদিও ওই সময়টাই ছিল, মুঘল সাম্রাজ্যের চূড়ান্ত বিস্তার, পিক পিরিয়ড।

মনে পড়ে গেলো মোদি – শাহের ২০১৯, ম্যাজিক চলছে চারদিকে। তার আগে অবিশ্বাস্য জয় উত্তরপ্রদেশে, ভাবাই যায় না, কেউ ভাবেনি, বিজেপিও ভাবেনি, তারা ৩১৩টা আসন পাবে, অপনা দল ১১টা আসন পাবে? তারা ভেবেছিল? বিজেপির শরিক হিসেবে তারা পেল ১১টা আসন, অনুপ্রিয়া প্যাটেলের অপনা দল। আর ২০১৯, সবাইকে অবাক করে দিয়ে, সেফোলজিস্টদের ঘোল খাইয়ে, বিজেপি থ্রি নট থ্রি, ৩০৩। তারপরে তো শরিক দল আছেই, নরেন্দ্র মোদি – অমিত শাহের অশ্বমেধের যজ্ঞের ঘোড়া ছুটছে তো ছুটছে, তাকে রোখার কেউ নেই। হ্যাঁ ২০১৯ এ লোকসভার নির্বাচনের পর, এইজন্যই বিরোধীদের হতাশা ছিল দেখার মত, ক’দিন আগে যে নির্বাচনে হেরেছে বিজেপি, সেই রাজস্থান, ছত্তিশগড়ে বিজেপি সুইপ করলো বলা চলে, এমন কি এই বাংলায় ১৮টা আসন, পণ্ডিতেরা বলতে শুরু করলো, ২০২১ এ তৃণমূলের পতন অনিবার্য। কিন্তু ওটাই ছিল পাহাড়ের চূড়ো, তারপরই শুরু হল পতন। প্রথমে মহারাষ্ট্র, বিজেপি নাকি একাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, পেল না। শিবসেনা বেঁকে বসলো। দল ভাঙানোর চেষ্টাও ব্যর্থ, মহারাষ্ট্র বিকাশ আগাড়ি তৈরি হয়ে গেলো, কং – এনসিপি – শিবসেনার সরকার তৈরি হল, রোজই শোনা গেলো সরকার পড়ে যাবে, সরকার পড়ল না, ভাঙাও গেলো না। এরপর দিল্লি। কী হয়নি? মন্ত্রী উঠে গোলি মারো বলছে, নেতা গিয়ে পুলিশের সামনে ধর্না না তুলে দিলে মেরে হাটিয়ে দেবার হুমকি দিচ্ছে, পুরো মন্ত্রিসভা, মোদি–শাহ মাঠে নেমে পড়ল। রেজাল্ট? আম আদমি পার্টি ৬২, বিজেপি ৮, অমিত শাহ ক’দিন ঘর থেকে বের হলেন না। তারপর তামিলনাডু আর কেরল, আশি ঊর্দ্ধ শ্রীধরন, মেট্রোম্যানকে নামিয়েও শূন্য, তামিলনাড়ুতে হাওয়া বুঝে থালাইভা ঘরে চলে গেছেন, বিজেপি ৪। আর বাংলা, কাঁথির খোকা, আর কিছু দলবদলু মিলে মন্ত্রিসভা কেমন হবে তার তৈয়ারিতে ব্যস্ত, প্রধানমন্ত্রী রাস্তার লোফারের মত, জনসভায় দিদি ও দিদি, দিদি ও দিদি করছেন, অমিত শাহ বাঙালির ঘরে, ভরদুপুরে রোটি আর লৌকি কি সব্জি দিয়ে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন, এবং শেষমেষ বোলতি বন্ধ। ওদিকে কৃষিবিল নিয়ে উত্তাল দেশ, অকালি দল জোট থেকে বেরিয়ে গেলো, সিএএ লাগু করা গেলো না এখনও, রুল সই তৈরি হয়নি, আন্তর্জাতিক চাপে কাশ্মীরের নেতাদের নিয়ে বৈঠক হল বটে, সুরাহা হল না। কোভিডের দ্বিতীয় ওয়েভে নমামি গঙ্গে, গঙ্গায় লাশ ভাসছে। দেশের বাইরে হিসেব হচ্ছে কম করে ৩৫ লক্ষ মানুষ মারা গেছেন, অক্সিজেন নেই। সরকার আছে বলে মনে হচ্ছে না, মন্ত্রিসভার রি শাফলে সরাতে হল স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে। টুইটার, ফেসবুক স্যোশাল মিডিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ, সরে যেতে হল মন্ত্রীকে।

অর্থনীতি নিয়ে যত কম বলা যায় ততই ভালো। তারমধ্যে শোনা যাচ্ছে তৃতীয় ওয়েভ আসছে, জানা নেই কী হবে! ওদিকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জাস্টিস রামানা, প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে চলেছেন, কোভিড নিয়ে, সিডিশন নিয়ে তাঁর মন্তব্য বুঝিয়ে দিচ্ছে তৃতীয় স্তম্ভ বেঁকে বসেছে, গগৈয়ের মত জো হুজুর নয়। আরও বিপদ সামনে, কারণ এরপরের প্রধান বিচারপতি হিসেবে যাঁর নাম আছে, তিনি হলেন জাস্টিস চন্দ্রচূড়, জাস্টিস রামানার থেকে দু তিন কাঠি ওপরে, তাঁদের দেখাদেখি হাইকোর্টেও অন্য সুর। রাফাল ডিল আবার সামনে হাজির, মেহুল চোকসিকে আনতে গিয়ে ৬০/৬৫ কোটি টাকা খরচ হয়ে গেলো, ফলাফল শূন্য। মালিয়া, নীরব মোদি এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। দেশ বিদেশের ৪০ টা সংবাদ মাধ্যম, একসঙ্গে বোমা ফাটালো, পেগাসাস। দেশের, বিদেশের লোক জানলো সরকার বিরোধী দলনেতাদের ওপরে নজরদারি চালাচ্ছে, সংবাদপত্রের মালিক, সাংবাদিকদের ওপর নজরদারি চলছে, বিচারপতি, শিল্পপতিদের ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে, সমাজকর্মী, মানবাধিকার কর্মীদের ওপর তো বটেই, এমন কি দেশ বিদেশের রাষ্ট্রদূত, দূতাবাস কর্মীদের ওপরেও নজরদারি চলছে। সরকার অস্বীকার করতে পারছে না, যাঁদের সঙ্গে বিরোধীদের একটু ভাল সম্পর্ক, সেই রাজনাথ সিং, নীতীন গড়কড়ি সাইড লাইনের বাইরে থেকে মজা দেখছেন, সংসদে কাজ বন্ধ, বিরোধীদের দাবি তদন্ত চাই, তদন্ত হলে সত্যিটা বেরিয়ে আসবে, মোদি – শাহ ভাল করেই জানেন।

এরমধ্যে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে ভারত একলা। আফগানিস্তান নিয়ে এক ঘরে, তালিবানদের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলার চেষ্টা প্রায় ব্যর্থ, তালিবানরা কাবুল দখল করলে কাশ্মীরে তার প্রভাব পড়বে, এমনিতেই কাশ্মীরের মানুষ ক্ষুব্ধ। আমেরিকায় ট্রাম্প বিদায়ের পর বাইডেন সরকার ভারতকে সামান্য সুযোগ পেলেই, বুঝিয়ে দিচ্ছে, ক’দিন আগে ভ্যাক্সিন নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেই জানিয়ে দিল তারা, ভ্যাক্সিন পাঠানো হয়েছে মোদি সরকার তা গ্রহণ করেনি। গুজরাটে দলের মধ্যে কোন্দল থামার আগেই কর্ণাটক, আরএসএস নয়, বিজেপি ও নয়, প্রাক্তন জনতা দল ইউনাইটেড নেতা, মাত্র ২০০৮ এ বিজেপিতে এসেছেন, ইয়েদুরিয়াপ্পাকে সরিয়ে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করতে হল, কারণ লিঙ্গায়েত ভোট। রাজ্যের আদি বিজেপিরা রেগে আগুন। যোগী – মোদি সুসম্পর্ক যে নেই তা তো সবাই জানে, অন্য সময় হলে বেকপাতা ধরিয়ে গোরখপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হত, কিন্তু সময় খারাপ, মোদিজি যোগীজির প্রশংসা করছেন।

এসবের মধ্যে মমতা দিল্লিতে, একটা কিছু যে হতে চলেছে, তা তো মোদিজি বুঝতেই পারছেন কিন্তু কী হবে? তার হদিশ পাচ্ছেন না। বাংলায় সুবিধে ছিল, অবিবেচক সূর্যকান্ত বা সুজন মমতার বিরোধিতা করে খানিক সুবিধে করে দিয়েছিল। জাতীয় রাজনীতিতে তা হবার নয়। সে বিমান বসু কী বললেন, সুজন চক্রবর্তী কী ভাবলেন, পলিটব্যুরোতে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তাতে কিচ্ছু এসে যাবে না, নেতৃত্বে মমতাই থাক আর এনসিপিই থাক, জোটে শিবসেনাই থাক আর তৃণমূলই থাক, বিরোধী জোটকে সমর্থন করতে বাধ্য বামেরা। আর তাই আমরা এখন পতনের শব্দ শুনতে পাচ্ছি, পতনের লক্ষণ পরিস্কার। আজ থেকে কিছু বছর পরেই ইতিহাস বা পলিটিক্যাল সায়েন্সের পরীক্ষায়, অনিবার্য প্রশ্ন থাকবে, বিজেপি সরকারের পতনের কারণগুলি ব্যাখ্যা কর, ছাত্রছাত্রীরা লিখবে, পতনের শুরু ২০১৯, যে বছর নরেন্দ্র মোদি সরকার ৩০৩ জন সাংসদ নিয়ে গদিতে বসেছিল, হ্যাঁ ওই বছর থেকেই পতনের শুরু, কারণ ওটাই ছিল পিক পিরিয়ড, তারপর শুরু হয়েছে পতন, অনিবার্য পতন।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Rahul Gandhi | Election Commission | সাত দিনের ডেডলাইন রাহুল vs কমিশন, কী হবে এবার?
11:44:00
Video thumbnail
Rahul Gandhi | বিহারে রাহুলের পদযাত্রা শুরু হতেই এ কি হল..দেখুন এই ভিডিও
02:49:15
Video thumbnail
Rahul Gandhi | বিহারে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ, এই আবহে রাহুলের পদযাত্রা, দেখুন সরাসরি
01:57:16
Video thumbnail
China | Robot Games | চীনে শুরু হচ্ছে বিশ্বের প্রথম হিউম্যানয়েড রোবট গেমস
01:40:40
Video thumbnail
Rahul Gandhi | Bihar | বিহারে রাহুলের ভোট অধিকার যাত্রা, দেখুন Live
03:07:11
Video thumbnail
Trump | ‘ট্রাম্প মাস্ট গো’, হোয়াইট হাউসের বাইরে ট্রাম্প বিরোধী প্রবল বি/ক্ষো/ভ
01:37:15
Video thumbnail
Good Morning Kolkata | সকালের গুরুত্বপূর্ণ খবর, দেখুন একনজরে সরাসরি
03:42:56
Video thumbnail
Tejashwi Yadav | Narendra Modi | চুনা VS খৈনি মে চুনা, মোদি VS তেজস্বী, এই ভিডিও না দেখলে মিস
09:17
Video thumbnail
Stadium Bulletin | মরসুম তাহলে ইস্টবেঙ্গলের?
23:02
Video thumbnail
Ek Brishti Raate | 'এক বৃষ্টির রাতে'-র টিজার রিলিজ
01:52