কলকাতা: নবরাত্রির পর দশম দিনে দশেরা (Dussehra) উদযাপিত হয়। বিজয়া দশমীও পালিত হয় এই দিনে। সারা ভারতেই হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে দশেরা পবিত্র উৎসব। এই দিনে রাবণের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। এই কুশপুত্তলিকা দাহ হল সমস্ত মন্দের উপর ভালোর জয়ের প্রতীক। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায়, প্রতিটি কোণে দশেরা উৎসব পালিত হয়। কিন্তু এমন একটি জায়গা রয়েছে, যেখানে স্থানীয়রা রাবণের কুশপুতুল দাহ করা হয় না। হিমাচল প্রদেশের কাংড়া জেলার বৈজনাথ শহরে স্থানীয়রা রাবণের কুশপুতুল দাহ করেন না। তবে, এর পিছনে অবশ্য সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় কারণ রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক-
শিবভক্তরা জানেন হিমাচলের বৈজনাথ শহর মহাদেবের মন্দিরের জন্য বিখ্যাত। আর রাবণ ছিল শিবের অন্যতম বড় উপাসক। শিবের প্রতি তাঁর ভক্তি ও শ্রদ্ধা ছিল প্রশ্নাতীত। শিবের পুজো না করে তিনি কোনওদিন খাদ্যগ্রহণ করতেন না। এমনকী শিবকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে নিজের মস্তকও আগুনে সমপর্ণ করেছিলেন তিনি। মহাদেব তাঁর উপাসনায় সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে একটি শিবলিঙ্গ লঙ্কায় নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। সব দেবতারা রাবণের এই কর্মকাণ্ডে ভয় পান ও তাঁদের মায়ায় সেই শিবলিঙ্গ স্থাপিত হয় বৈজনাথে। ঠিক এই কারণেই বৈজনাথের স্থানীয় বাসিন্দারা কোনওভাবেই এহেন মহান শিবভক্তের কুশপুতুল পোড়াতে চান না। বরং স্থানীয়রা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে রাবণের কুশপুতুল পোড়ালে মহাদেব রুষ্ট হবেন। তবে, এখানে শুধু রাবণের কুশপুতুল পোড়ায় না এমন নয়, তার সঙ্গে রাবণের ভাই কুম্ভকর্ণ এবং সন্তান মেঘনাদের কুশপুতুলও পোড়াতে চান না স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে কুশপুত্তলিকা দাহ নিয়ে আরও একটি বিশেষ একটি কাহিনি প্রচলিত আছে। কিছু বছর আগে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা রাবণের কুশপুত্তলিকা দাহ করার ব্যবস্থা করেছিলেন। দেখা যায়, পরবর্তী দশেরা আসার আগেই তারা অদ্ভুতভাবে মারা যান। ওই ঘটনার পর থেকে মানুষ কিংবদন্তিতেই বিশ্বাস রাখেন ও আর কোনওদিন দশেরা পালনের চেষ্টা করেননি।
আরও পড়ুন: দশমীকে কেন ‘বিজয়া’ দশমী বলা হয়? জানুন আসল কারণ
হিমাচল প্রদেশের বৈজনাথ অত্যন্ত ছোট্ট একটি শহর। সেখানেই রয়েছে মহাদেবের বিখ্যাত উপাসনাস্থল বৈজনাথ ধাম। সারা দেশের মানুষের কাছেই অত্যন্ত পবিত্র এই মন্দির। মহাদেবের প্রতি ভক্তির প্রদর্শনের জন্য দেশের প্রতিটি কোণ থেকে ভক্তরা ছুটে আসেন এই মন্দিরে। তবে শুধু মহাদেব নয়, সেখানে রয়েছে ভগবান গণেশ এবং বিষ্ণুর মূর্তিও। এমনকী মন্দিরের গাত্রে মহাদেব এবং বিষ্ণু সম্পর্কিত নানা পৌরাণিক কাহিনীও খোদাই করা রয়েছে।
মনে করা হয় এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ত্রয়োদশ শতাব্দীতে। অর্থাৎ কাতুরি রাজবংশের সময় থেকেই এই মন্দির রয়েছে বৈজনাথে। কাংড়া উপত্যকায় যে কটি মন্দির রয়েছে তাদের মধ্যে মহাদেবের প্রতি উৎসর্গীকৃত এই উপাসনাস্থল সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বৈজনাথে না হলেও হিমাচল প্রদেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় কিন্তু দশেরা উৎসব পালন হয়। মন্দিরের নিয়ম মেনেই পালিত হয় আচার-অনুষ্ঠান।
দেখুন আরও অন্য খবর: