নয়াদিল্লি: হারিয়ে যাওয়া সময় ফেরত দেওয়া যাবে না। ২৫ বছর ধরে বন্দি, তাঁকে মুক্তির নির্দেশ দিয়ে মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court of India)। ঘটনার সময় সে ছিল নাবালক অভিমত আদালতের। ১৯৯৪ সালের এক হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে ওম প্রকাশকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শুনিয়েছিল আদালত। নাবালক বলে দাবি করা সত্ত্বেও তাকে সাবালক গণ্য করে সাজা দেয় আদালত। তারই দেওয়া বয়ানকে ভিত্তি করে এবং যেহেতু তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে তাই তাকে সাবালক হিসাবে রায়। হাইকোর্টে তার আবেদন নাকচ করে দেয়। সুপ্রিম কোর্টেও মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। কিউরেটিভ পিটিশন তথা রায় সংশোধনের দাবিতে করা আবেদনে স্কুল সার্টিফিকেট সহ সুপ্রিম কোর্টে নিজেকে নাবালক দাবি। ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ১৪ বলে জানায় উত্তরাখন্ড সরকার। তা সত্ত্বেও আবেদনটি খারিজ করে দেয় আদালত। অগত্যা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাভিক্ষা প্রার্থনা করে বন্দি। মৃত্যুদণ্ডরদ করে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় রাষ্ট্রপতির। শর্ত, ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত তাকে ছাড়া যাবে না।
এতকিছুর পর মেলে তার হাড়ের বয়স নির্ধারণ করা অসিফিকেশন টেস্ট-এর ফল। যেখানে স্পষ্ট বলা হয়, ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ১৪ বছর। তথ্য জানার অধিকারের আবেদনে জানানো হয়, নাবালকও ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারে। এই দুই তথ্যকে ভিত্তি করে 2019 সালে উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টে (Uttarakhand High Court) রাষ্ট্রপতির নির্দেশ চ্যালেঞ্জ। রাষ্ট্রপতির নির্দেশ পর্যালোচনা করার সুযোগ সীমিত জানিয়ে আবেদন খারিজ। হাইকোর্টের সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে বর্তমান আবেদন।
আরও পড়ুন: ভোটের আগে সমর্থন! মমতাকে ধন্যবাদ জানালেন কেজরিওয়াল
কিউরেটিভ পিটিশনের সঙ্গে তার নাবালকত্বের দাবি সম্বলিত সার্টিফিকেটের গ্রহণযোগ্যতা কতটা, জানাতে উত্তরাখণ্ড সরকারকে (Uttarakhand government) নির্দেশ। সত্যিই সে নাবালক ছিল, জানায় রাজ্য। বিচারের প্রতিটি পর্বে আদালত ভুল পথে পরিচালিত হয়েছে। পেশ হওয়া নথিকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে অথবা অজানা কোন কারনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অশিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও আবেদনকারী একই কথা অশিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও আবেদনকারী একই কথা বারবার উল্লেখ করে গিয়েছে। নিম্ন আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। ফলে আদালতের পূর্বের কোন সিদ্ধান্তই গ্রহণযোগ্য নয়। তার বয়ান যখন গ্রহণ করা হয়, তখন তার বয়স ছিল কুড়ি বছর। যার অর্থই হল, ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ১৪ বছর। দ্বিতীয়ত জুভেনাইল জাস্টিস আইনে স্পষ্টই বলা আছে, নাবালকত্বের দাবি যে কোন অভিযুক্ত বিচারের যে কোন পর্যায়ে তুলতেই পারেন। সেই দাবি যখন ওঠে তখন যথাযথ আইনি পদক্ষেপ করা দরকার ছিল। তার না করার ফলেই আবেদনকারীকে প্রায় 25 বছর কারান্তরালে কাটাতে হল। স্রেফ আদালতের ভুলের কারণে।
রিপোর্ট অনুযায়ী সংশোধনাগারে তার আচরণ ছিল স্বাভাবিক। অথচ সে সমাজে মেশার সুযোগ হারিয়েছে। তার কোন ভুল না থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ সময় হারিয়েছে। অভিমত সহ মন্তব্য বিচারপতি এম এম সুন্দরেশ ও বিচারপতি অরবিন্দ কুমারের। ওম প্রকাশের জন্য উপযুক্ত সমাজ কল্যাণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উত্তরাখন্ডের লিগ্যাল সার্ভিস কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ। তার পুনর্বাসনের স্বার্থে। রাজ্য সরকারকেও উপযুক্ত প্রকল্প দ্বারা তাকে সাহায্য করার নির্দেশ।
অন্য খবর দেখুন