Saturday, September 20, 2025
বাঙালি কাউন্টডাউন
HomeScrollAajke | নিশ্চিন্তে নেই শুভেন্দু অধিকারি, নিশ্চিন্ত নন দিলীপ ঘোষও
Aajke

Aajke | নিশ্চিন্তে নেই শুভেন্দু অধিকারি, নিশ্চিন্ত নন দিলীপ ঘোষও

বঙ্গ বিজেপির নতুন রাজ্য কমিটি গঠন নিয়ে দলের অন্দরে চূড়ান্ত মতভেদ

বঙ্গ বিজেপির মধ্যে ধুন্দুমার লড়াইটা এখন আপাতত দুই রথীর মধ্যে, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সাংসদ দিলীপ ঘোষ, আর আপাতত বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) মধ্যেই যাবতীয় আকচাআকচি চলছে। বাকি যা দেখছেন, সবই ছানা পোনা, হয় এ শিবিরে, নয় ওই শিবিরে। কেউ ভোক্যাল তার শিবির এবং স্ট্যাণ্ড নিয়ে, কেউবা প্রচ্ছন্ন সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছেন দুজনের একজনকে। এই লড়াইটা আজকের নয়, বহু পুরনো। বার কয়েক মেটানোর চেষ্টা হয়েছে কিন্তু ফারাক এতটাই যে তা মেটার নয়, আর এখনও সাপে নেউলে সম্পর্ক বললেও কম বলা হয়। কেন এমনটা? সেটা বুঝতে হলে ২০২১ এ যেতে হবে। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের সময়ে সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh), কাঁধে গামছা আর বাইক বাহিনী নিয়ে বাংলা চষে ফেলছেন, খানিকটা তৃণমূলি কায়দায়। ওনার এই হেক্কড়বাজ চেহেরা দেখে এতদিন মার খাওয়া, কুঁকড়ে যাওয়া বাম ছোট, মেজ নেতা কর্মীরা বিজেপিতে কেউ প্রকাশ্যে কেউ অপ্রকাশ্যে কাজ করছেন। বিজেপি ১৮ টা সাংসদ জিতে নিল, পেল ৪০.৬৪% ভোট। লকেট চট্টোপাধ্যায় গণনা কেন্দ্রেই যান নি, পরে ফোন করে ডাকা হয়েছিল, আসুন, আপনি জিতছেন। আর বাংলা জুড়ে সেই ২০০৯ এর লোকসভাতে তৃণমূলের দাপটের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলা শুরু হয়ে গেল এবারে তো লেম অ্যান্ড ডাক সরকার, ২০২১ এই শেষ। তো সেই ২০১৯ এ তৃণমূলের হয়ে মমতা হাল তো ধরেই ছিলেন, দ্বিতীয় যাকে মাঠে দেখা যাচ্ছিল তিনি হলেন শুভেন্দু অধিকারি। এমনকি ওই কাঁথিতেই দিলীপ ঘোষের গাড়ি ঘিরে ধরে তান্ডবনেত্য হয়েছিল। কিন্তু ২০২১ এর নির্বাচনের আগে বিজেপিতে এলেন শুভেন্দু অধিকারি, জিতলে মুখ্যমন্ত্রীর পদ, হ্যাঁ এক্কেবারে এই কড়ারে। ঐ খান থেকেই শুরু হয়েছিল যে দন্দ্ব তা এখন চুড়ান্ত পর্যায়ে গেছে। সামনে কেবল নির্বাচন নয়, নতুন সভাপতির নতুন টিম কেমন হবে? কারা থাকবেন? কারা বাদ যাবেন। কেউ জানেনা। আর সেটাই বিষয় আজকে। নিশ্চিন্তে নেই শুভেন্দু অধিকারি, নিশ্চিন্ত নন দিলীপ ঘোষও।

বঙ্গ বিজেপির নতুন রাজ্য কমিটি গঠন নিয়ে দলের অন্দরে চূড়ান্ত মতভেদ। দলের ভেতর থেকে ঘোড়ার মুখের খবর, ছাব্বিশের ভোটের আগে রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যর নেতৃত্বে তাঁর নতুন টিমে নিজেদের নিজেদের লোক ঢোকাতে মরিয়া তিন শিবিরের নানান ছকবাজি চলছে। সুকান্ত মজুমদার রাজ্য সভাপতি থাকাকালীন বঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক ক্ষমতা ছিল সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর হাতে। শমীক রাজ্য সভাপতি হওয়ার পর তাঁর পছন্দমতো টিম গঠনের ক্ষেত্রেও নিজেদের লোকদেরই রাখতে চায় অমিতাভ শিবির। সেখানে শুভেন্দুর আপত্তি রয়েছে, দিলীপ ঘোষেরও বক্তব্য আছে। আর তা নিয়েই ব্যাপক মতভেদ আপাতত বঙ্গ বিজেপির সর্বস্তরে। জানা গেছে, শমীকের পছন্দমতো টিম গঠনেও বাগড়া দিচ্ছে কেউ কেউ, বিভিন্ন জেলায় মারমুখো হয়ে রয়েছে বিভিন্ন শিবিরের নেতারা, একবার নাম বের হলেই রে রে করে ঝাঁপিয়ে পড়বে।  আর এই গন্ডগোলের মধ্যেই বুধবার রাত এবং বৃহস্পতিবার সকালে সল্টলেকে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ। নয়া রাজ্য কমিটি গঠন নিয়ে দু’পক্ষের মতভেদ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে, একে রাখলে সে চটে যায়, তাকে রাখলে এর রাগ হয়। শমীক ভট্টাচার্য পুরনো বেশকিছু নেতাকে নতুন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আনতে চান, তা মানতে নারাজ শুভেন্দু শিবিরের লোকজন, দলের পরবর্তী কোর কমিটিতে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে ফের রাখার পক্ষে শমীক শিবির। কিন্তু তাতে নারাজ বঙ্গ বিজেপির দদুই মাথা শুভেন্দু আর সুকান্ত। সব মিলিয়ে দেদার হট্টোগোল আর এই ক্যাওসের মধ্যেই শোনা যাচ্ছে দলের মহিলা মোর্চার দায়িত্বে ফের নাকি রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে (Roopa Ganguly) আনা হতে পারে, কারণ বাকিরা বিধানসভাতে লড়তে চান। যুব মোর্চার সভাপতি হিসাবে এগিয়ে আছেন আইনজীবী তরুণজ্যোতি তেওয়ারি আর সভাপতির পরে দলের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ চারজন সাধারণ সম্পাদকের তালিকায় একাধিক নাম নিয়ে লড়াই চলছে। সেখানে জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো, লকেট চট্টোপাধ্যায়, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়রা যেমন রয়েছেন তেমন উঠেছে রীতেশ তেওয়ারি, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, সঞ্জয় সিং, উত্তরবঙ্গের প্রবাল রাহার নাম। মানে এই লড়াই এও সেই নব্য বিজেপি আর আদি বিজেপির ছোঁয়া রয়েছে।

আরও পড়ুন: Aajke | পদ্মের থেকে জন্ম ঘাসফুলের? বিজেপি তৃণমূলের জন্মদাতা?

গত ক দিন ধরে বঙ্গের গেরুয়া শিবিরের নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে কখনও একসঙ্গে অনেকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বি এল সন্তোষ। ছিলেন বনশল, মালব্য-সহ শমীক, সুকান্ত, শুভেন্দু, অমিতাভরা। বৈঠকে ছিলেন জলধর মাহাতো, শচীন্দ্রনাথ সিনহা, রমাপদ পাল, জিষ্ণু বসু, প্রদীপ যোশী-সমেত এই রাজ্যের আরএসএসের শীর্ষনেতৃত্বও। কিন্তু মীমাংসা দূর অস্ত। শমীক নাকি বলেছেন এসব মিটে যাবে, কিন্তু দিলীপ – শুভেন্দু মিটমাট না হলে দলের ক্ষতি হবে, আর সেই মিটমাটের কোনও লক্ষণও নেই। সবেমাত্র দিলীপ ঘোষের ব্যক্তিগত মূহুর্তের কিছু ভিডিও ভাইরাল করে দেবার পেছনে যে এই মতবিরোধই আছে তাও এই বৈঠকেই উঠে এসেছে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেষ করেছিলাম যে একটা দল গত তিন বছর ধরে সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচন করে উঠতে পারলো না, সেই দল এই রাজ্যের সভাপতি স্থির করার পরে আজ তিন মাস ধরে রাজ্য কমিটিই তৈরি করতে পারলো না, সেই দল ২০২৬ এ তৃণমূলের সঙ্গে লড়বে কেমন করে? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
ভক্স পপ

কিন্তু একটাই বড় খবর যা বিজেপির অনেককে খানিক আশ্বস্থ করবে, তা হল এই সময়ের মধ্যেই দলের সংগঠন ও কর্মসূচি নিয়ে আরএসএসের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠকও হয়েছে। আর শমীকের পরিকল্পনা মতই রাজ্য বিজেপি এবারে এই রাজ্যের আর এস এস নেতৃত্বের সঙ্গে এক বোঝাপড়া রেখেই নির্বাচনে মাঠে নামতে চায়। চব্বিশের মহারাষ্ট্র মডেলের ধাঁচে ছাব্বিশে বাংলার ভোটে আরএসএস কাজ করতে চায়, যেখানে কেবল প্রার্থী নির্বাচনেই আর এস এস এক বড় ভূমিকা নিয়েছিল তাই নয়, তারাই ঠিক করে দিয়েছিল প্রচারের সুর। হ্যাঁ আর এস এস মাঠে নামলে আর এস এস এর প্রচারক দিলীপ ঘোষ এক পা এগিয়ে থাকবেন, আবার বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনও শুভেন্দুর পেছনে। কাজেই দুজনেই এক অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকবেন যতদিন না বিধান সভার চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় দিল্লির সিলমোহর না পড়ে।

Read More

Latest News