একটা বিস্ফোরণ হয়েছিল। তাতে ছয়জন মানুষ মারা গিয়েছিলেন, আর একশোর বেশি মানুষ আহত হয়েছিলেন। এটা একটা সন্ত্রাসবাদী হামলা ছিল, এ বিষয়ে বিশেষ কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু ১৭টা বছর কেটে যাওয়ার পর, দেশের দুটো সেরা তদন্তকারী সংস্থার তদন্তের পর, হাজার হাজার পাতার নথি আর শয়ে শয়ে সাক্ষীর বয়ান শোনার পর, মুম্বইয়ের এক বিশেষ আদালত রায় দিল যে, এই বিস্ফোরণের জন্য কাউকেই দোষী সাব্যস্ত করা গেল না। বিশেষ এনআইএ আদালতের বিচারক এ. কে. লাহোটি তাঁর রায়ে একটা অদ্ভুত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ‘প্রবল সন্দেহ’ রয়েছে, কিন্তু শুধু সন্দেহের বশে বা ‘নৈতিক ধারণার’ উপর ভিত্তি করে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না; তার জন্য দরকার পাকা, অকাট্য প্রমাণ। আর সেই প্রমাণ গায়েব। এই রায় শুধু অভিযুক্তদের নির্দোষ ঘোষণা করল না, বরং আমাদের দেশের পুরো বিচারব্যবস্থার দিকে একটা বিরাট প্রশ্নচিহ্ন ছুড়ে দিল। কীভাবে এমন একটা মামলা, যেখানে এতজন হাই-প্রোফাইল ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, এত বছর ধরে তদন্ত আর বিচার চলল, সেটা শেষ পর্যন্ত এমন একটা জায়গায় এসে পৌঁছল যেখানে অপরাধ প্রমাণিত হল, কিন্তু অপরাধী কে, তা জানা গেল না! এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৭ বছর আগে, সেই ভয়ঙ্কর রাতের ঘটনায় এবং তার পর থেকে বয়ে চলা এক জটিল আর কুটিল তদন্তের গোলকধাঁধায়। আসুন সেই গোলকধাঁধার প্রতিটা মোড়, প্রতিটা চক্রান্ত আর প্রতিটা ব্যর্থতার কাহিনীর দিকে নজর দেওয়া যাক।
তারিখটা ছিল ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮। রমজান মাস চলছিল, আর তার পরেই ছিল নবরাত্রির উৎসব। মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার মালেগাঁও শহর, যা পাওয়ারলুম শিল্পের জন্য পরিচিত, সেদিন সন্ধ্যায় আর পাঁচটা দিনের মতোই ব্যস্ত ছিল। বিশেষ করে মুসলিম-প্রধান এলাকা ভিকু চকে ছিল ভিড়। ঠিক রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ একটা প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে। একটা সোনালী রঙের এলএমএল ফ্রিডম মোটরসাইকেলে বেঁধে রাখা ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (IED) ফেটেছিল। মুহূর্তের মধ্যে উৎসবের পরিবেশ বদলে গেল আতঙ্ক আর কান্নার শব্দে। বিস্ফোরণে ছয়জন প্রাণ হারান এবং প্রায় ১০০ জন আহত হন। নিসার বিলাল, যাঁর ১৯ বছরের ছেলে আজহার সেই বিস্ফোরণে মারা যায়, তিনি বছরের পর বছর ধরে আদালতের দরজায় ঘুরেছেন একটুখানি বিচারের আশায়। আজহার সেদিন মসজিদ থেকে বাড়ি ফেরার পথে অন্য রাস্তা ধরেছিল, আর সেটাই তার জন্য কাল হয়। বিস্ফোরণের শার্পনেলের আঘাতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। সবচেয়ে ছোট শিকার ছিল ১০ বছরের ফারহিন শেখ। সে বাড়ির কাছেই বড়াপাও কিনতে গিয়েছিল। তাঁর বাবা, ৬৭ বছরের লিয়াকত শেখ, মেয়ের ছবি বুকে নিয়ে ১৭টা বছর কাটিয়ে দিয়েছেন এই ভেবে যে একদিন অপরাধীরা শাস্তি পাবে। তিনি বলেন, “যদি আদালত কাউকেই দোষী না পায়, তাহলে বিস্ফোরণটা ঘটাল কে?”। ফারহিনের মৃত্যুবার্ষিকীতে লিয়াকত শেখ আজও রমজান মাসে ছোট ছোট বাচ্চাদের খাওয়ান। রেহান শেখের বাবা রফিক শেখ রাতে পান খেতে বেরিয়েছিলেন, আর ফেরেননি। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের সব দায়িত্ব এসে পড়ে রেহানের ঘাড়ে। ফলে মামলার খোঁজ নেওয়ার মতো সময় বা সুযোগ তাঁর ছিল না। ৬০ বছর বয়সী হারুন শাহের পরিবার আজও স্কুলের বাইরে স্যান্ডউইচ বিক্রি করে দিন চালায়। তাঁর নাতি আমিন শাহ সেই ভয়ঙ্কর দিনের কথা মনে করে শিউরে ওঠেন, যখন দাদুর পুড়ে যাওয়া শরীরের সেবা করতে করতে তিনি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। বিস্ফোরণের পরেই উত্তেজিত জনতা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে যায়। তারা পুলিশের উপর পাথর ছুড়তে থাকে এবং ভাঙচুর চালায়। এই গণ্ডগোলের ফলে পুলিশ ঘটনাস্থল ঠিকমতো ঘিরে ফেলতে পারেনি। ফলে, যা হওয়ার তাই হল—ক্রাইম সিন বা অপরাধস্থল কম্প্রোমাইজড হয়ে গেল। এর ফলে আঙুলের ছাপ, ডিএনএ বা ব্যালিস্টিক প্রমাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফরেনসিক নমুনা চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়। এই মামলার তদন্তের পথে এটাই ছিল প্রথম এবং সম্ভবত সবচেয়ে বড় হোঁচট, যা পরবর্তীকালে কোনো তদন্তকারী সংস্থাই আর পূরণ করতে পারেনি।
আরও পড়ুন: Fourth Pillar | ট্রাম্পের ট্যারিফ, মোদিজি গর্তে
২১শে অক্টোবর, ২০০৮-এ মামলার ভার নেয় মহারাষ্ট্রের অ্যান্টি-টেররিজম স্কোয়াড বা ATS। তৎকালীন ATS প্রধান হেমন্ত কারকারের নেতৃত্বে তদন্ত একটা নাটকীয় মোড় নেয়। তদন্তের কেন্দ্রে ছিল বিস্ফোরণে ব্যবহৃত সেই সোনালী রঙের এলএমএল ফ্রিডম মোটরসাইকেলটা। সেই সূত্র ধরেই ATS পৌঁছে যায় গুজরাতের সুরাটে, গাড়ির মালিক প্রজ্ঞা সিং ঠাকুরের কাছে। ২৩শে অক্টোবর, ২০০৮: সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুরকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (ABVP) প্রাক্তন কর্মী ছিলেন। নভেম্বর, ২০০৮: ভারতীয় সেনার কর্মরত লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদ পুরোহিত এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর রমেশ উপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়। ATS তাদের চার্জশিটে দাবি করে যে, এই অভিযুক্তরা ‘অভিনব ভারত’ নামে এক উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্য। ATS-এর মতে, এই সংগঠন হিন্দুদের উপর হওয়া অত্যাচারের বদলা নিতে এবং ‘আর্যাবর্ত’ নামে এক হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করছিল, যার নিজস্ব সংবিধান এবং পতাকাও নাকি ঠিক করা হয়েছিল। এই প্রথমবার ভারতের কোনও বড় সন্ত্রাসবাদী হামলার জন্য সরকারিভাবে কোনো হিন্দুত্ববাদী সংগঠনকে দায়ী করা হয়। এর পরেই ‘গেরুয়া সন্ত্রাস’ বা ‘Saffron Terror’ শব্দটা রাজনৈতিক মহলে ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে মালেগাঁওয়ে আরেকটা ধারাবাহিক বিস্ফোরণ হয়েছিল, যাতে ৩৭ জন মারা যান। সেই মামলায় ATS প্রথমে স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া (SIMI)-র সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে ৯ জন মুসলিম যুবককে গ্রেফতার করেছিল। তারা পাঁচ বছর জেলও খাটেন। পরে স্বামী অসীমানন্দের স্বীকারোক্তির পর যখন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নাম উঠে আসে, তখন এই মুসলিম যুবকদের আদালত অব্যাহতি দেয়। ২০০৬ সালের এই ভুল তদন্তের প্রেক্ষাপটটা বোঝা জরুরি। কারণ এটা ২০০৮ সালের তদন্তের গতিপ্রকৃতিকে অনেকটাই প্রভাবিত করেছিল। সম্ভবত ATS ২০০৬ সালের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে নতুন আঙ্গিকে তদন্ত শুরু করে, যা তাদের হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের দিকে নিয়ে যায়।
কাহিনীর নতুন মোচড় এল, মালেগাঁও মামলার তদন্ত যখন এই নতুন পথে এগোচ্ছে, তখনই মঞ্চে প্রবেশ করেন স্বামী অসীমানন্দ। অসীমানন্দ, যিনি সমঝৌতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণ, আজমের দরগায় বিস্ফোরণ ইত্যাদি মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন, তিনি ডিসেম্বর ২০১০-এ একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এই জবানবন্দি গোটা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দেয়। অসীমানন্দ তাঁর জবানবন্দিতে বলেন যে, ইসলামিক সন্ত্রাসবাদী হামলার জবাবে ‘বম্ব কা জবাব বম্ব সে’ নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি এবং তাঁর সঙ্গীরা। তিনি জানান, ২০০৬ সালে সাধ্বী প্রজ্ঞা এবং অন্যদের সঙ্গে একটি বৈঠকে তিনিই প্রথম মালেগাঁওয়ে বোমা ফাটানোর প্রস্তাব দেন, কারণ সেখানকার জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই মুসলিম। যদিও অসীমানন্দের এই স্বীকারোক্তি সরাসরি ২০০৬ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্র সম্পর্কিত ছিল, কিন্তু এর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। প্রথমত, এই স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই ২০০৬ সালের মামলায় গ্রেফতার হওয়া ৯ জন মুসলিম যুবককে মুক্তি দেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত, এটা ২০০৮ সালের মামলায় ATS-এর ‘গেরুয়া সন্ত্রাস’ তত্ত্বকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। মনে হচ্ছিল, যেন বিভিন্ন বিস্ফোরণের মধ্যেকার যোগসূত্রটা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু কিছুদিন পরেই অসীমানন্দ তাঁর স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করে নেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, NIA তাঁর উপর অত্যাচার করে জোর করে এই জবানবন্দি আদায় করেছে। অসীমানন্দের স্বীকারোক্তি এবং তার প্রত্যাহার যেন গোটা মালেগাঁও মামলারই একটা ছোট সংস্করণ: একটা চাঞ্চল্যকর তথ্যপ্রমাণ, যা দিয়ে পুরো ষড়যন্ত্রের জাল বোনা সম্ভব ছিল, তা পদ্ধতিগত ত্রুটি আর জোরজবরদস্তির অভিযোগে শেষ পর্যন্ত আইনি বৈধতা হারায়। একটা সম্ভাব্য চাবিকাঠি এভাবেই আরও একটা অমীমাংসিত অধ্যায়ে পরিণত হয়। ২০১১ সালের এপ্রিলে, মালেগাঁও ২০০৮ বিস্ফোরণ মামলার তদন্তের ভার দেওয়া হয় সদ্য তৈরি হওয়া ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি বা NIA-কে। আশা ছিল, দেশের প্রধান সন্ত্রাস-দমন সংস্থা এই জটিল মামলার জট খুলতে পারবে। কিন্তু যা ঘটল, তা ছিল অভাবনীয়। NIA-এর তদন্ত ATS-এর তদন্তকে সমর্থন করার বদলে, তাকে প্রায় পুরোপুরি চ্যালেঞ্জ করে বসল। দুই সংস্থার মধ্যে সংঘাত এমন পর্যায়ে পৌঁছল যে, পুরো মামলাটাই একটা প্রহসনে পরিণত হলো। NIA তাদের চার্জশিটে বলে যে, সাধ্বী প্রজ্ঞা ঠাকুরের বিরুদ্ধে মামলা চালানোর মতো যথেষ্ট প্রমাণ নেই এবং তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নেওয়ার সুপারিশ করে। যদিও বিশেষ আদালত NIA-র এই সুপারিশ খারিজ করে দেয় এবং প্রজ্ঞাকে বিচার প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে নির্দেশ দেয়। NIA আরও এক ধাপ এগিয়ে অভিযোগ করে যে, ATS লেফটেন্যান্ট কর্নেল পুরোহিতকে ফাঁসানোর জন্য তাঁর বাড়িতে RDX রেখে দিয়েছিল। NIA আরও দাবি করে যে ATS বহু সাক্ষীকে ভয় দেখিয়ে বা অত্যাচার করে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করেছিল। NIA যুক্তি দেয় যে, ATS এই মামলায় মহারাষ্ট্র ‘কন্ট্রোল অফ অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যাক্ট’ (MCOCA) আইনটি ভুলভাবে প্রয়োগ করেছে। এই আইনের অধীনে নেওয়া স্বীকারোক্তিগুলো তাই প্রমাণ হিসেবে গ্রাহ্য হতে পারে না।
এবারে আসুন দেখা যাক আদালতের কাঠগড়ায় মামলা: কেন ব্যর্থ হল প্রসিকিউশন? বছরের পর বছর ধরে আইনি টানাপোড়েনের পর অবশেষে ২০১৮ সালের অক্টোবরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয় এবং বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু ততদিনে মামলার ভিত এতটাই নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল যে, তার পতন ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। বিশেষ আদালত যে কারণগুলোর জন্য সমস্ত অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছে, সেগুলো খতিয়ে দেখলেই বোঝা যায় প্রসিকিউশন কতটা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। প্রসিকিউশনের মূল ভিত্তি ছিল ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব, যা প্রমাণের জন্য সাক্ষীদের বয়ান ছিল অপরিহার্য। কিন্তু ৩২৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৯ জনই আদালতে এসে তাঁদের আগের বয়ান অস্বীকার করেন। এঁদের বেশিরভাগই ষড়যন্ত্রের বৈঠক সংক্রান্ত সাক্ষী ছিলেন। তাঁরা আদালতে জানান যে, ATS তাঁদের জোর করে বা অত্যাচার করে মিথ্যা বয়ান দিতে বাধ্য করেছিল। সাক্ষীরাই যদি ঘুরে দাঁড়ায়, তাহলে ষড়যন্ত্র প্রমাণ করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। যে মোটরসাইকেলটাকে কেন্দ্র করে পুরো তদন্ত শুরু হয়েছিল, প্রসিকিউশন তার মালিকানা বা দখল প্রমাণ করতে পারেনি। আদালত জানায় যে, প্রজ্ঞা ঠাকুর বিস্ফোরণের দু’বছর আগেই সন্ন্যাস নিয়েছিলেন এবং জাগতিক বিষয় ত্যাগ করেছিলেন। তাঁর নামে রেজিস্টার করা গাড়িটা বিস্ফোরণের সময় তাঁর দখলে ছিল, এমন কোনও প্রমাণ মেলেনি। গাড়ির চ্যাসিস নম্বরও এমনভাবে নষ্ট করা হয়েছিল যে তা পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করা যায়নি। আদালত এমনকি এও বলে যে, বোমা মোটরসাইকেলের ভেতরে লাগানো হয়েছিল, এমন কোনো প্রমাণ নেই; বাইরে থেকেও ঝুলিয়ে রাখা হতে পারে। ATS-এর দাবি ছিল, কর্নেল পুরোহিত কাশ্মীর থেকে RDX এনেছিলেন এবং তা দিয়ে বোমা বানানো হয়েছিল। কিন্তু আদালত এই দাবির সপক্ষে ‘কোনও প্রমাণই খুঁজে পায়নি’। এমনকি আদালত এক ATS অফিসারের বিরুদ্ধে অন্য এক অভিযুক্তের বাড়িতে RDX রেখে আসার অভিযোগের তদন্ত করার কথাও বলেছে। অভিযুক্তদের ফোন কল যে ট্যাপ করা হয়েছিল, তার জন্য যথাযথ আইনি অনুমতি ছিল না। অভিযুক্তের কাছ থেকে উদ্ধার করা ল্যাপটপও ঠিকমতো সিল করা হয়নি। ফলে তাতে তথ্য বিকৃতির সম্ভাবনা ছিল। এই কারণে এই প্রমাণগুলো আদালত গ্রাহ্য করেনি। মালেগাঁও ২০০৮ বিস্ফোরণ মামলার এই ১৭ বছরের যাত্রা এক কথায় গোলকধাঁধার মতো। শেষ পর্যন্ত যা দাঁড়াল, তা এক কথায় মর্মান্তিক। আদালত নিজেই স্বীকার করেছে যে, এমন একটা গুরুতর অপরাধের কোনও শাস্তি হল না, এটা সমাজের জন্য, বিশেষ করে নিহতদের পরিবারের জন্য অত্যন্ত যন্ত্রণার। কিন্তু আইন আদালতকে অনুমানের ভিত্তিতে শাস্তি দেওয়ার অনুমতি দেয় না। তাই ১৭ বছর পর, আমরা আবার সেই প্রথম দিনের প্রশ্নেই ফিরে এসেছি। বোমা ফেটেছিল, মানুষ মরেছিল। কিন্তু অপরাধী কে? না মানুষ কেন মারা গেল, তা জানা গেল না কিন্তু অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস পেয়ে গেল।