Tuesday, September 23, 2025
বাঙালি কাউন্টডাউন
HomeScrollAajke | ধর্মের কার্ড খেলেও শুভেন্দু পিছিয়ে, মমতা এগিয়ে কেন?
Aajke

Aajke | ধর্মের কার্ড খেলেও শুভেন্দু পিছিয়ে, মমতা এগিয়ে কেন?

বিজেপির হিন্দুত্বের অস্ত্র এ রাজ্যে এক্কেবারেই কাজ করছে না!

প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে যাচ্ছেন মমতা, পুজো উদ্বোধন, পুজোর গান, ‘জাগো মা জাগো মা’ ইত্যাদি চলছে, আর ক্রমশ এক নার্ভাস বিজেপিকে দেখতে পাচ্ছি। এখন পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষ জেনে ফেলেছে আরএসএস–বিজেপি, মোদি–শাহের হাতের অস্ত্রগুলো। ক্রমশ সেই অস্ত্রগুলোর ধার-ভার কমছে, আর যাদের বিরুদ্ধে সেই অস্ত্রগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে, তারাও সেই ভাইরাসের অ্যান্টি-ভাইরাস বা সেই অস্ত্রগুলোর জবাবী অস্ত্র তৈরি করে ফেলছে। বিজেপি, আরএসএস-এর হাতে অস্ত্রগুলো কী? (১) প্রবল হিন্দুত্বের ভিত্তিতে এক চুড়ান্ত মেরুকরণ। দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২০ থেকে ২২ শতাংশ সংখ্যালঘু, বাকি ৭৮ শতাংশ ভোটের ৭০ শতাংশ পেলেই তো কেল্লাফতে, টু-থার্ড মেজরিটি তো গ্যারান্টেড। হ্যাঁ, এরকম একটা হিসেব নিয়েই তাঁরা তাঁদের প্রথম অস্ত্রের ব্যবহার করেন। এখানে শ্লোগান হল – ‘হিন্দু খতরে মে হ্যায়’। (২) দ্বিতীয় অস্ত্র হল, এক প্রবল জঙ্গি জাতীয়তাবাদ, ‘শিয়াচীন মে জওয়ান খড়ে হ্যায়’, অতএব আমাদের লড়তে হবে, বালাকোট, ‘অপারেশন সিঁদুর’ ইত্যাদি। এখানে শ্লোগান – ‘দেশ খতরে মে হ্যায়’। (৩) ভারত বিশ্বগুরু, বিশাল উন্নয়ন, বিকাশ, আধুনিকতম কম্পিউটার, ডিজিটাল ইকোনমি, শ্লোগান – ‘বিকশিত ভারত’। এবার তিনটে শ্লোগান এই বাংলাতে এসে কূল পাচ্ছে না। উত্তর ভারতে ‘হিন্দু খতরে মে হ্যায়’ কিছুটা কাজ করেছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ আর তারপরে একতরফা যুদ্ধ বিরতির ফলে ঐ জঙ্গি জাতীয়তাবাদী হুঙ্কার এখন মিউ-মিউ করছে, বাঘ বিড়ালের মত ডাকছে। ৫০ শতাংশ ট্যারিফ, এইচওয়ানবি ভিসা ইত্যাদির সমস্যা ঐ বিকশিত ভারত, বিশ্বগুরু ভারতের যাবতীয় স্বপ্নকে ভেঙে খানখান করেছে। কাজেই এ বঙ্গে বিজেপি নেতা শুভেন্দু, শমীকের হাতে পড়ে রয়েছে পেনসিল। এমনকি এক উগ্র হিন্দুত্বের চেহারা, এক হিংস্র হনুমানের ছবি এই বাংলার মানুষকে আকর্ষণ করতে পারছে না। সেটাই বিষয় আজকে, ধর্মের কার্ড খেলেও শুভেন্দু পিছিয়ে, মমতা এগিয়ে কেন?

আসলে সেই কবে থেকেই কংগ্রেস আর জওহরলাল নেহেরু তো সুযোগ পেয়েও দান ছেড়ে দেওয়ার ফলেই ‘পাক অকুপায়েড কাশ্মীর’ চলে গিয়েছে পাকিস্থানের হাতে, তা আমাদের ভারতের অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ, আমরা তা ফেরত আনব – এই কথাগুলো নিয়মিত বলেছে বিজেপি নেতারা। সংসদে দাঁড়িয়ে পিওকে ছিনিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন অমিত শাহ নিজে। এবারে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন যে, পাকিস্থান নাকি হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছিল, তাদের অনুরোধেই ভারত যুদ্ধ বিরতিতে সায় দিয়েছে। তাহলে প্রশ্ন তো উঠবেই, উঠেছেও, পিওকে ফেরত আনার কী হল? সেটা ছিনিয়ে নেওয়া হল না কেন? এবং জবাবে যাকে বলে বোলতি বন্ধ, ঐ ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে কথাবার্তা কমেছে। এখন ‘আত্মনির্ভর ভারত’, ‘বিকশিত ভারত’ ইত্যাদি। সেখানেও বঙ্গ সন্তানেরা কেন গোটা দেশের আমেরিকান ড্রিম বুকে নিয়ে বড় হয়ে ওঠা যুবক-যুবতীরা বুঝতে পারছে কোথাও বিরাট ভুল হয়ে গিয়েছে। এই সরকারের এজেন্ডা আম্বানি আদানির বিকাশ, বিকশিত ভারত নয়। যার ফলে তাদের এতদিনের ম্যারিকার স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। হ্যাঁ, সেই তালিকাতে এই বঙ্গের সেই মেধাবীরাও আছেন। যাঁরা সেদেশেই আছেন, তাঁরাও খুব শান্তিতে নেই, ভাবছেন পাততাড়ি গুটিয়ে চলে এলে কেমন হয়। তাহলে হাতে রইল সবেধন নীলমণি – ‘হিন্দু খতরে মে হ্যায়’। ২০১৮ থেকে এই শ্লোগান এই বাংলাতে চালানো হয়েছে। শুরুর দিকে কিছুটা কাজও করেছিল, মমতাকে ‘বেগম মমতা’, ‘মুসলমান তোষক মমতা’ বলে হিন্দুদের এক অংশকে বিভ্রান্ত করা গিয়েছিল। কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে নেমেছিল তৃণমূল নেতৃত্ব। পালটা এক হিন্দু চেহারা নয়, সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের চেহারা নিয়ে মমতা পথে নামলেন, এবং ওষুধে কাজ হল।

আরও পড়ুন: Aajke | নিশ্চিন্তে নেই শুভেন্দু অধিকারি, নিশ্চিন্ত নন দিলীপ ঘোষও

রাহুল গান্ধীর মত আনাড়ি হাতে শিবের মাথার উপর জল ঢেলে পৈতে দেখিয়ে আমিও ব্রাহ্মণ না বলে মমতা আঁকড়ে ধরলেন বাংলার শাশ্বত চেহারাকে, সর্বধর্ম সমন্বয়ের ধারণাকে। তিনি দুর্গাপুজোকে এক বিরাট ইভেন্ট করে তুললেন, কার্নিভাল, এক বড় উৎসবের চেহারা। কেবল দুর্গাপুজো নয়, আনুষাঙ্গিক সব কিছু নিয়েই শারদ উৎসব। ওদিকে শুভেন্দু অধিকারীর নাকের ডগায় জগন্নাথ মন্দির, দিলীপ ঘোষকে ডেকে নিয়ে গিয়ে রাজনীতিতে মাস্টার স্ট্রোক। এদিকে দুর্গাঙ্গনের ঘোষণা। আবার একই সঙ্গে ঈদে মাথায় কাপড় দিয়ে ইফতারে হাজির, ওয়াকফ বিলের বিরোধিতায় চড়া সুর তুলে রাজ্যের মুসলমান সংখ্যালঘুদের আস্বস্ত করা। ওদিকে বড়দিনে সেন্টস পলস ক্যাথিড্রালে হাজির থাকা। বিভিন্ন সমাবেশে শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মের মানুষজনকে সামিল করা। কাজেই এই বাংলার মাটিতে এক চড়া হিন্দুত্বের শ্লোগান দিয়ে শুভেন্দু অধিকারী ‘হিন্দু খতরে মে হ্যায়’ বলে যতই শ্লোগান দিন না কেন, কূল পাচ্ছেন না। আর এ রাজ্যের আরেক হিসেব হল সংখ্যালঘুরা প্রায় ৩২ শতাংশ, কাজেই বাকি ৬৮ শতাংশের ৮০ শতাংশ না পেলে বিজেপির পদ্ম ফুটবে না। বাস্তবে তাঁরা এক্কেবারে উগ্র হিন্দুত্বের ভোট সবটা মেলালেও খুব বেশি হলে ১৬ থেকে ১৮ শতাংশের বেশি পান না। বাকি ভোট এককালে বাম সমর্থকদের ভোট, যে ভোট খসতে শুরু করেছে। কাজেই একটা প্যারামিটারও শুভেন্দু, শমীকের দিকে ঝুঁকে নেই। সবটাই এখন উল্টোদিকে কাজ করছে। দুর্গাপুজো এসে গেল, প্যান্ডেলে-প্যান্ডেলে যাচ্ছেন মমতা, তৃণমূল নেতারা। টেলিস্কোপ দিয়ে দেখতে হবে বিজেপির মাথাদের, শুভেন্দু, সুকান্তকে দেখা গেল অনভ্যস্থ খাঁকি আরএসএস পোশাকে। হ্যাঁ, এমনকি হিন্দুত্বের শ্লোগানেও তাঁরা যোজন মাইল পিছিয়ে আছেন তৃণমূলের থেকে। আমরা আমাদের দর্শকদের স্রেফ জিজ্ঞেস করেছিলাম, কোনও একটা দিক থেকেও কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হিন্দু-বিরোধী, হিন্দু-বিদ্বেষী বলে মনে হয়? মনে হয় যে, উনি হিন্দুদের স্বার্থ উপেক্ষা করেই কেবল সংখ্যালঘুদের তোষণ করতে ব্যর্থ?

মনে আছে? ২০১৮ নাগাদ বেশ কিছু ঘটনাতে আমরা দেখেছিলাম ‘জয় শ্রী রাম’ বললে মমতা রেগে যাচ্ছিলেন, গাড়ি থেকে নেমে উত্তেজিত হয়ে কথা বলছিলেন। আজ তাকিয়ে দেখুন, সেই ‘জয় শ্রী রাম’ যুদ্ধ হুঙ্কারটাই বন্ধ, আর দিলেও মমতা তা উপেক্ষা করেই চলে যাচ্ছেন। উলটে আমরা দেখছি মাঝে মধ্যেই আমাদের বিরোধী দলনেতা তাঁর উত্তেজনা সামলাতে পারছেন না, অশ্রাব্য গালাগালি করে ফেলছেন, জুতো হাতে নিয়ে তেড়ে যাচ্ছেন, তুই-তোকারি করছেন। এগুলো আসলে নার্ভাসনেস। এগুলো আসলে বুঝিয়ে দিচ্ছে বিজেপির হিন্দুত্বের অস্ত্রও এ রাজ্যে এক্কেবারেই কাজ করছে না।

Read More

Latest News