Friday, August 1, 2025
Homeদেশকুঠারে ছিন্নভিন্ন দেহ গুলো আজও প্রশ্ন তোলে বন-শহিদের স্বীকৃতি সত্যিই মিলেছে

কুঠারে ছিন্নভিন্ন দেহ গুলো আজও প্রশ্ন তোলে বন-শহিদের স্বীকৃতি সত্যিই মিলেছে

Follow Us :

স্বীকৃতি জুটছিল । তবে প্রায় পৌনে তিনশো বছর পর ।

১৭৩০ সালে, রাজস্থানের খেজরালি গ্রামে, ভাদ্রের এক দুপুরে রাজ-কাঠুরেদের হাত থেকে বন বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন ৩৬৩ জন বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের মানুষ । দিনটা ছিল ১১ সেপ্টেম্বর ।

স্বাধীনতার পর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক একটি পৃথক মন্ত্রক গঠন করা হয় । দাবি ওঠে তখন থেকেই । বন রক্ষার্থে প্রাণ দিয়েছেন যে সব কর্মী তাঁদের স্মৃতিতে একটি দিবস ঘোষণা করা হোক । দীর্ঘ দিনের সেই দাবি মেনে শেষ পর্যন্ত বন-শহিদ দিবস ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয় বন মন্ত্রক। বেছে নেয় সেই ১১ সেপ্টেম্বরকেই ।

শুষ্ক, মরুময়, বছরভর জলকষ্টে ভোগা রাজস্থানের জোধপুর এলাকার মাড়ওয়াড় প্রদেশের খেজরালি ও তার আশপাশের এলাকায় তাও কিঞ্চিৎ গাছ-গাছালি ছিল। খেজরি (প্রসোপিস সিনেরারিয়া) গাছের জঙ্গলে ছাওয়া ওই এলাকায় বসবাস বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের । রুখু জমিতে দীর্ঘ হলুদ ঘাস-জঙ্গল আর মাঝে মধ্যে খেজরি গাছের সারি । বনের ছায়ায় রাজস্থানের পরিচিত মরূদ্যান হয়ে উঠেছিল খেজরালি । ১৭২৬ সালে জোধপুরের মহারাজা সেই খেজরালি এস্টেটের মুখিয়া করেছিলেন ঠাকুর সুরাট সিংহকে। তাঁর তত্ত্বাবধানে জঙ্গলের বাড়বৃদ্ধিও ঘটেছিল বেশ ।

আরও পড়ুন- চার-চারটে বিমান ছিনতাই, ১৯ জঙ্গির টার্গেট আমেরিকার টুইন টাওয়ার-পেন্টাগন

এই অবস্থায়, ১৭৩০ সালে মহারাজা অভয় সিংহ তাঁর প্রাসাদ সম্প্রসারণের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। যেমন ভাবা তেমনই কাজ। কিন্তু প্রাসাদ নির্মাণের জন্য প্রয়োজন চুনা পাথরের । আর সেই পাথর গলানোর জন্য প্রয়োজন জ্বালানি। পারিষদেরা উপায় বাতলালেন, খেজরির জঙ্গল থেকে কাঠ নিয়ে আসা হোক। লোক-লস্কর, সেনা, নিয়ে রাজ-কাঠুরেরা ছুটল সেই বনে। কিন্তু জঙ্গলের গাছকে বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের মানুষ তো তাদের সন্তান হিসেবে দেখে । রাজ-কাঠুরেরা জঙ্গলে পা দিতেই তাই খেজরি গ্রামের অমৃতাদেবী বেনিওয়াল ছুটে গিয়েছিলেন বৃক্ষ-নিধন রুখতে। রাজসেনারা তাঁকে সরিয়ে দিলেও নাছোড় অমৃতাদেবী ফের ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলেন একটি খেজরি গাছ । রাজস্থানের লোকগীতিতে এখনও ভেসে বেড়ায় তাঁর সেই উক্তি, ‘এক জনের প্রাণ দিয়ে যদি বন বাঁচে, তবে তাই হোক’। এর পর কাঠুরেরা আর দেরি করেনি। ওই মহিলার উপরেই কুড়ুল চালিয়ে শুরু হয় গাছ কাটা । দিনটা ছিল ১১ সেপ্টেম্বর।

আরও পড়ুন-কারনালে বিচারবিভাগীয় তদন্ত, অভিযুক্ত আধিকারিক ‘ছুটিতে’, আন্দোলন প্রত্যাহার কৃষকদের

বন বাঁচাতে মায়ের আত্মদান দেখে অমৃতাদেবীর তিন মেয়ে, আশু, রত্নি, ভাগুও দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছিল গাছ। কুড়ুলের ঘা নেমে আসে তাদের উপরেও। জঙ্গল বাঁচাতে মা-মেয়েদের এই পরিণতি দেখে এর পরে আশপাশের ৮৩টি গ্রামের মানুষ একই ভাবে এগিয়ে আসেন বন-বাঁচাতে। তবে মহারাজার আজ্ঞা পালনে অটল রাজ-কাঠুরেরা নিরীহ গ্রামবাসীদেরও একই ভাবে গাছের গুঁড়ির মতোই ছিন্ন করে দেয়। রক্তে ভিজে যায় খেজরির জঙ্গল। একে একে প্রাণ হারান ৩৬৩ জন গ্রামবাসী।

আরও পড়ুন- কোভিড পরিস্থিতিতে অনলাইনে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন, সিদ্ধান্ত কেরল সরকারের

খবর পেয়ে মহারাজা অভয় সিংহ শোকে ভেঙে পড়েন। বোধোদয় হয় তাঁর। প্রাসাদ নির্মাণ অসম্পূর্ণ রেখেই তিনি ঘোষণা করেন খেজরির জঙ্গলে শুধু গাছ-কাটা নয়, বন্যপ্রাণের কোনও ক্ষতিও দণ্ডনীয় অপরাধ।

আজ ১১ সেপ্টেম্বর । কুড়ি বছর আগে আজকের দিনটা সাক্ষী থেকেছিল এক ভয়াবহ জঙ্গি তাণ্ডবের । কিন্তু, তিনশো বছর আগেরই ঘটনা আজও আমাদের শিক্ষা দিয়ে চলেছে । আজ তাঁদেরও স্মরণ করার দিন। কিন্তু, প্রশ্নটা আজও থেকে গিয়েছে, স্বীকৃতি সত্যিই মিলেছে তো ?

RELATED ARTICLES

Most Popular


Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39