কলকাতা: বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরকে বাগে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। মঙ্গলবার রাতে মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত চার বিধায়ককে নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেন শান্তনু। বৈঠক শেষে রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী জানান, অবিলম্বে বনগাঁ এবং নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বদল করতে হবে। পরিবর্তন করতে হবে নবদ্বীপের পর্যবেক্ষককেও। বিজেপির বিভিন্ন সংগঠনিক পদে মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতৃত্বকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাঁর আরও দাবি, শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে আলোচনা করে দলীয় নেতৃত্বকে এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মতুয়াদের মধ্যে এই বিদ্রোহ নিয়ে শান্তনু নিজে অব্শ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
মঙ্গলবার রাতে ঠাকুরনগরে শান্তনুর বাড়িতে ডাকা ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর, বনগাঁ উত্তরের অশোক কীর্তনিয়া, হরিণঘাটার অসীম সরকার এবং রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী। বৈঠকে গরহাজির ছিলেন বনগাঁ দক্ষিণের বিধায়ক স্বপন মজুমদার, কল্যাণীর বিধায়ক অম্বিকা রায়, এবং চাকদার বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষ। স্বপন মজুমদারের বক্তব্য, শান্তনু যেসব প্রশ্ন তুলেছেন, দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসে সেগুলি মিটিয়ে নেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: Rail blockade: ক্যানিং-শিয়ালদহ শাখায় ৬ ঘণ্টা রেল অবরোধ, যাত্রী-বিক্ষোভ, হাতাহাতি
বিজেপির নতুন রাজ্য কমিটি এবং বিভিন্ন জেলার কমিটিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে দিনকয়েক আগেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলার একাধিক মতুয়া সম্প্রদায়ের বিধায়ক বিজেপির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যান। দলীয় গ্রুপ ছাড়েন শান্তনু ঠাকুরও। নতুন কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বিজেপির নেতা বিধায়কদের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। তার মধ্যে মঙ্গলবার নতুন সংযোজিত হল খড়গপুরের বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের নাম। তিনিও গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। হিরণের সঙ্গে খড়গপুরের সাংসদ তথা দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অনেকদিন ধরেই বিরোধ চলছে।
বিধানসভা ভোটের পরাজয়ের পর থেকেই বিজেপি অন্তর্দলীয় কোন্দলে জর্জরিত হয়ে চলেছে। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অবশ্য দাবি করছেন, সব সমস্যা মিটে যাবে। মঙ্গলবার একদিকে যখন শান্তনু ঠাকুরের বাড়িতে বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের বৈঠক চলছে, তখন সল্টলেকে বিজেপির আর এক নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারের বাড়িতেও কয়েকজন বিক্ষুব্ধ নেতার ঘরোয়া বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সমীরণ সাহা প্রমুখ। দলের নতুন রাজ্য কমিটি থেকে এবার বাদ পড়েছেন বিজেপির আদি নেতা প্রতাপ। বাদ দেওয়া হয়েছে বছর দুয়েক আগে কংগ্রেস থেকে আসা জয়প্রকাশ মজুমদারকেও। জয়প্রকাশদের বৈঠক সম্পর্কে বুধবার মেদিনীপুর শহরে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘মিটিং যে কেউ করতে পারেন, সবাই তো আমাদের মতো রাস্তার উপর মিটিং করেন না। যে কেউ চা খাওয়ার জন্য কাউকে ডাকতেই পারেন। আমাকে যেহেতু ডাকেনি, তাই বলতে পারবনা মিটিংয়ে কী হয়েছে। যারা মিটিং করেছেন তাঁদের জিজ্ঞাসা করুন, কীসের মিটিং হয়েছে।’