২০২৪-এ বর্ধমান অঞ্চলে ভোটের দিন বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভার প্রার্থী দিলীপ ঘোষ বেলা ১২-১টাতেই জানিয়েছিলেন ৮০ শতাংশ বুথে বিজেপির এজেন্ট নেই। না, এমন নয় যে তাদের মেরে বার করে দেওয়া হয়েছিল, কারণ সেটা করলে অন্তত দুটো চারটে জায়গাতে মারমুখী দিলীপ ঘোষকে আমরা দেখতে পেতাম। পরে যখন উনি কাঠিবাজির কথা বলছিলেন তখন জানা গিয়েছিল বুথভিত্তিক কোনও সংগঠনই নেই তো এজেন্ট আসবে কোত্থেকে? আর যাও বা দু’ চারটে জায়গাতে বসানো হয়েছিল তারা কিছু করার আগেই ভাই দেখবেন আমি একটু টয়লেটে যাচ্ছি বলে বেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দিলীপ ঘোষ কাঠিবাজি বলছে বলে এটা ভাববেন না যে ওই বর্ধমান দুর্গাপুর অঞ্চলে প্রচুর কর্মী ছিল, তাদেরকে কোনও নির্দেশ দিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তত ক্ষমতা শুভেন্দু মাইতিরও নেই। তাহলে? আসল কথা হলো দিলীপবাবুর অনেকটা তৈরি মেদিনীপুর থেকে দুর্গাপুরে পাঠিয়ে দেওয়াটাই ছিল কাঠিবাজি। সে কাঠিবাজি নিয়ে পরে একদিন বিস্তারে বলব, কারণ সে এক কমেডি ফিল্ম। আজ কথা সংগঠন নিয়ে। একটা সময়ে এই বাংলাতে যে নিশ্ছিদ্র সংগঠন তৈরি করেছিল সিপিএম, সেই মাপের বা কোথাও কোথাও তার থেকেও শক্তপোক্ত সংগঠন এখন তৃণমূলের। অঞ্চলের প্রতিটা প্রকল্প, প্রতিটা ঘটনা, প্রতিটা লোকজনের বিয়ে শ্রাদ্ধ অন্নপ্রাশন, এলাকার সব লেনদেন তাঁদের নখদর্পণে। প্রতিটা বুথে কমসম করে ২০-২৫ জন অ্যাকটিভ কর্মী আছে। অন্যদিকে বিজেপির বহু এলাকাতে একজন লোকও নেই, সিপিএম-এর কথা না হয় বাদই দিলাম। বিজেপি ভোট পায় টিভি মিডিয়া, খবরের কাগজ আর বড় জনসভা ইত্যাদির প্রচারে। তৃণমূল ভোট পায় বহুতর কারণে, তার মধ্যে অন্যতম হল তাদের সংগঠন। কাজেই ওই ভোটার তালিকার সমীক্ষা দিয়ে তৃণমূলের কেশাগ্রও স্পর্শ করা যাবে না। সেটাই বিষয় আজকে, ভোটার তালিকার সমীক্ষা ইত্যাদিতে তৃণমূলের একটা ভোটও কাটা যাবে না।
তেজস্বী যাদব, বিহারের সথেকে জনপ্রিয় নেতা, বিহারের সবথেকে বেশি মানুষ ওনাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়, হ্যাঁ এটাই বলছে ইদানিংকালের সমীক্ষাগুলো। এদিকে জানা গেল ওনার এপিক নম্বর পালটে গেছে। এখানে তেজস্বী লেভেলের ছেড়েই দিলাম, একজন কাউন্সিলর কি পঞ্চায়েত প্রধানের নামও কাটা সম্ভব? বিহারের পূর্ণিয়া জেলার সংখ্যালঘু মানুষজন বেশি থাকেন এমন একটা বুথে ২১৮ জনের নাম কাটা গেছে, এই বাংলাতে সেটা সম্ভব, ২১৮ ছেড়েই দিলাম, ১৮টা সম্ভব? কেন সম্ভব নয়? কারণ সেই সমীক্ষকরা পাড়াতে ঢোকার পর থেকে চা সিঙাড়া খেয়ে সমীক্ষা করে বেরনো অবধি পিছনে থাকবে তৃণমূলের ক্যাডারেরা।
আরও পড়ুন: Aajke | ২০২৬ বাংলার নির্বাচন হবে কোন ইস্যুতে, সেই লড়াই এ কোন দল কোথায়?
আমি হুমকি, মারধর, ইন্টিমিডেশন ইত্যাদির কথা ধরছিই না, এক কড়া নজরদারি আছে সবক’টা বুথে, পাড়ায় মহল্লায়, তাই এটা সম্ভব নয়। মহারাষ্ট্রে এক একটা সংসদীয় নির্বাচন এলাকাতে ৮–১৭ শতাংশ ভোটার বাদ গেছে। আমাদের এই বাংলাতে ১ শতাংশও কি সম্ভব? না সম্ভব নয়। আর ঠিক তাই এখানে ভোটার কার্ড আর ভুয়ো ভোটারের ইস্যু চিরটাকাল রাজনৈতিক। হ্যাঁ তারপরেও এক একটা বুথে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া ভোটার, সদ্য মারা গেছেন এমন ভোটার, ভোট দিতে আসবেনই না এমন ভোটারের ভোট পড়ে। সেটাও এক নিবিড় সংগঠনের ফসল, এমনি এমনি হবে না। সিপিএম-এর সময়ে সিপিএম করত, তৃণমূল জমানাতে তৃণমূল করে। কিন্তু মাথায় রাখুন এসব করে জমানা টিকিয়ে রাখা যায় না, যায়নি। এগুলো এক আধটা আসনে ডিসিসিভ হয়ে উঠতে পারে আর বেশ কিছু আসনে মার্জিন বাড়াতে পারে। মানুষের দু’কুল ছাপানো ভোট পড়লে পরিবর্তন হবেই। কোনও সংগঠন কোনও ভুয়ো ভোট দিয়ে সেই পরিবর্তনকে আটকানো যায় না। ঠিক তাই সারা রাজ্যজুড়ে রিগিং রিগিং আওয়াজ উঠেছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর আসা তো সেই থেকেই শুরু, ভোটার তালিকা যাচাইও হয়েছে, কিন্তু বাম জমানার পতনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়ে একটা নন্দীগ্রাম, একটা সিঙ্গুর আন্দোলনের জন্য। ঠিক সেই রকমই এই এসআইআর, ভোটার তালিকা সমীক্ষা ইত্যাদি দিয়ে মহারাষ্ট্র বিহারে কাজ হতেই পারে, বাংলাতে, কেরালাতে হবে না, সম্ভব নয়। এই দুই রাজ্যে বুথ লেভেলের রাজনীতি এক রোজ দেখভাল করা মেশিনের মতো, যা ২৪ ইনটু সাত চলতে থাকে। ২০২১-তে তো কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছিল, ২০২৪-এও এসেছিল? কী হয়েছে? ভোটার তালিকাতে ভূত আছে এটা কি প্রথম মানুষের সামনে এল? সেই কবে নো এপিক নো ভোট দিয়ে ২১ জুলাই ১৯৯৩, ১৩ জনের মৃত্যু, তারপরে ভোটার কার্ড তো হয়েছে, পরিবর্তন এল ২০১১-তে। ভোটার তালিকা, ভোটার কার্ড, কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী ইত্যাদি দিয়ে আসেনি। কেবল সংগঠন দিয়েও আসেনি। কিন্তু এই নিবিড় সংগঠনের ফলেই এই রাজ্যে ওই ভোটার তালিকা সমীক্ষা ইত্যাদি শাসকদলের কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন ভোটার তালিকা সমীক্ষাতে একটা বৈধ ভোটারের নামও কাটা যাবে না। সত্যিই কি আপনার এলাকাতে সব্বার চোখ এড়িয়ে বৈধ ভোটারের নাম কেটে ফেলা সম্ভব? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
আপনি এবারে প্রশ্ন করতেই পারেন যে তাহলে ভোটার কার্ড নিয়ে এত চিৎকার চ্যাঁচামেচি কেন? কারণ এটা তো সত্যিই যে মহারাষ্ট্রে এই তালিকা সমীক্ষার নাম করে এক বড় সংখ্যক মানুষজনকে ভোট দিতেই দেওয়া হয়নি যা বিজেপিকে জিততে অনেকটা সাহায্য করেছে। বিহারেও যা করা হচ্ছে তা চরম অন্যায়, বেছে বেছে সংখ্যালঘু গরিব ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে, যা আপাতত বিজেপির বিরুদ্ধে এক ন্যাশনাল ইস্যু। তৃণমূল নেত্রী চান, ১) সেই দেশজোড়া বিজেপি বিরোধী ইস্যুকে এ রাজ্যেও কাজে লাগাতে। ২) এই ইস্যু নিয়ে প্রচার দলের সংগঠনের কাছেও এক মেসেজ দেবে যে এরকম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে, অতএব নজরদারি বাড়াও। স্বাভাবিকভাবেই সংগঠনের কাছে এই টাস্ক গুরুত্ব পাবে, সংগঠন চাঙ্গা হবে।