তেল আভিভ ও গাজা: ক্রমাগত অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেন। চতুর্দিক থেকে শুধু আর্তনাদ। গোটা হাসপাতাল যেন জলজ্যান্ত লাশকাটা ঘর। বারান্দায়, করিডরে, সিঁড়ির উপর সারে সারে শুয়ে আছে দেহ। কোনওটায় প্রাণ আছে। কারও দেহে তাও নেই। ঢাকা দেওয়ার মতো চাদরটুকুও অবশিষ্ট নেই গাজা (Gaza) শহরের প্রধান হাসপাতাল আল শিফা হাসপাতালে (Al-Shifa Hospital)।
বোমা বিধ্বস্ত আল আহলি হাসপাতাল (Al-Ahli Arab Hospital) থেকে এখানেই নিয়ে আসা প্রায় সাড়ে তিনশো মানুষকে। স্ট্রেচার, ট্রলি ভরে গিয়েছে। বারান্দায় পড়ে যন্ত্রণায় কাতরে চলেছেন জখমরা। কারও কাঁধ থেকে হাত কেটে ঝুলছে। ঊরুসন্ধি থেকে একটা পা উধাও। তাঁদের প্রাণফাটা চিৎকারে কান পাতা দায়। মেঝেতে অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অস্ত্রোপচারের চেষ্টা করছেন ডাক্তার, নার্সরা। অজ্ঞান করার ওষুধ বা অ্যানাসথেসিয়া (Anaesthesia) ছাড়াই চলছে অস্ত্রোপচার।
আরও পড়ুন: ইজরায়েলে বাইডেন, গাজায় গণহত্যার নিন্দা মোদির
সেই ভয়ঙ্কর যন্ত্রণার হাত থেকে অন্তত মুক্তি যাঁদের দেহ পড়ে রয়েছে মুণ্ডহীন অবস্থায়। কিংবা বিস্ফোরণে পেটের নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে এসে ঝুলছে। মৃতদেহের সঙ্গে সার দিয়ে শুয়ে আছেন নরকযাতনা ভোগ করতে থাকা জীবন্মৃতও। আত্মীয়রা খোঁজ নিতে এসে কেউ বমি করছেন। কেউবা চোখ খুলে দেহ শনাক্ত করতে ভয় পাচ্ছেন। অনেকেই হাসপাতালের এই দৃশ্য দেখে চিৎকার করে উঠছেন উন্মাদের মতো। কেউবা হতভম্বের মতো বসে পড়ছেন। বসতে গিয়ে শরীর ঠেকে যাচ্ছে কেটে পড়ে থাকা অন্য কোনও মৃতের দেহাবশেষের সঙ্গে। আঁতকে উঠছেন সেই স্পর্শে।
আল শিফা হাসপাতালের ডিরেক্টর মহম্মদ আবু সেলমিয়া বললেন, মারাত্মক জখম অবস্থায় নিয়ে আসা হচ্ছে আহতদের। একজনকে ছেড়ে অন্যকে দেখতে গেলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন আগের জন। ডাক্তাররা নাগাড়ে কাজ করেও পারছেন না সামাল দিতে। মেঝেতে, হলঘরে বসেই চলছে অস্ত্রোপচার। বেশিরভাগ চিকিৎসাই চলছে অ্যানাসথেসিয়া ছাড়াই। আমাদের কাছে কিছুই নেই। ওষুধ, ব্যান্ডেজ, অজ্ঞান করার ওষুধ সবেরই ভাঁড়ার শূন্য। এই অবস্থায় কজনকে বাঁচানো সম্ভব তা ঈশ্বরই জানেন, বলেন তিনি।
অন্য খবর দেখুন