এটিকে মোহনবাগান–৩ নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড–১
(জনি কাউকো, লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিং) (ভি পি সুহের)
মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দো সম্প্রতি বলেছেন, “প্লে অফ-এ যেতে গেলে ৩০ পয়েন্ট পেতে হবেই।” শনিবারের ম্যাচের শেষে বাগানের স্প্যানিশ কোচ কিঞ্চিৎ আত্মপ্রসাদ লাভ করতে পারেন তাঁর টিমের পয়েন্ট দেখে। ১৪ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট। মোহনবাগান উঠে এল দু নম্বরে। এক নম্বরে হায়দরাবাদ, যাদের ১৬ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট। মোহনবাগানের এখনও ছটা ম্যাচ বাকি। বিরাট কোনও অঘটন না ঘটলে গত বারের মতো এ বারও প্লে অফ-এ চলে যাবে মোহনবাগান।
এবারের আই এস এল-এর দুর্বলতম দল কোনটি? এস সি ইস্ট বেঙ্গল না নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড? দু দলেরই পয়েন্ট দশ। এবং হয়তো কাকতালীয় দু দলকেই মোহনবাগান ৩-১ গোলে হারাল। এবং শুরুতে গোল খেয়ে গিয়ে। ইস্ট বেঙ্গল যদিও শেষ দুটি গোল খেয়েছিল ইনজুরি টাইমে। নর্থ ইস্ট তিন নম্বর গোলটা খায় ৫২ মিনিটে। কিন্তু এদিনের তাদের খেলার মধ্যে একটা জোশ ছিল। শেষ পনেরো মিনিটে তারা অনেক আক্রমণ তুলে আনে। যেগুলোতে গোলের গন্ধ ছিল। কিন্তু মোহনবাগান ডিফেন্স এবং গোলকিপার অমরিন্দর গোল খাননি। এদিনই জুয়ান বিরতির পর প্রবীর দাসের জায়গায় নামান সন্দেশ ঝিঙ্গনকে। ক্রোয়েশিয়ার ক্লাবে অসফল যাত্রার পর সন্দেশ আবার ভারতীয় ফুটবলে ফিরে এসেছেন। ৪৫ মিনিট মাঠে ছিলেন। খুব খারাপ খেলেননি। দু পাশে প্রীতম কোটাল এবং তিরিকে নিয়ে সেন্ট্রাল ডিফেন্সে সন্দেশ মন্দ নন। মোহনবাগান কোচ একটা নির্দিষ্ট গেম প্ল্যান ধরে এগোচ্ছেন। তাঁর প্রথম লক্ষ্য প্লে অফ-এ ওঠা। ধীরে অথচ নিশ্চিতভাবে তিনি সেই কাজটা প্রায় করে ফেলেছেন। এখন প্লে অফ-এর দুটো ম্যাচ এবং ফাইনালের চিন্তা যদি তাঁর মাথায় ঢুকে যায় তাকে অন্যায় বলা যাবে না। এবং সেই লক্ষ্যে তিনি দল গুছোচ্ছেন। সন্দেশকে ফিট করে নামিয়ে দেখে নিলেন। তাঁর এক নম্বর স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণকে তিনি ব্যবহার করছেন না। ঠিক সময় তাঁকে নামাবেন বলে। জুয়ানের দূরদৃষ্টির প্রশংসা করতেই হবে। এদিনও যেমন শেষ আধ ঘণ্টার জন্য কিয়ান নাসিরি এবং বিদ্যাধর সিংকে নামালেন।
যেমন নর্থ ইস্ট ম্যাচে তিনি কোনও স্ট্রাইকর নামালেন না। হুগো বুমো চোট পেয়েছেন আগের ম্যাচে। কৃষ্ণকে আরও একটু বিশ্রাম দিতে চান তিনি। ডেভিড উইলিয়ামসেরও অল্পবিস্তর চোট। তাঁকে স্কোয়াডে রেখেও নামালেন না। দুই উইঙ্গার লিস্টন কোলাসো এবং মনবীর সিংকে দিয়েই বাজিমাৎ করলেন। তবে তাঁর হাতে তো বিকল্প প্লেয়ার আছে। মাত্র দু জন বিদেশি নামালেন তিনি। ডিফেন্সে তিরি আর মাঝ মাঠে জনি কাউকো। দুজনেই দুর্দান্ত। গোল করে এবং গোল করিয়ে কাউকোই ম্যাচের সেরা। ফিনল্যান্ডের জাতীয় দলের এই মিডফিল্ডার প্রথম দিকে খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না। চোট আঘাত তাঁকে একটু পিছিয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু এখন দলের সঙ্কটের সময় তিনিই ত্রাণকর্তা। সতেরো মিনিটে ভি পি সুহেরের গোলে হঠাৎই পিছিয়ে পড়ল মোহনবাগান। কিন্তু গোল শোধ হয়ে গেল পাঁচ মিনিটের মধ্যে। বক্সের একটু বাইরে লিস্টন বল বাড়ালেন কাউকোকে। একটু দেখে, সময় নিয়ে ডান পায়ের দুর্দান্ত শটে শুভাশিস রায়চৌধুরিকে হার মানালেন কাউকো। শুভাশিস এখন নর্থ ইস্টের অধিনায়ক। তিন গোল খেলেও অগুন্তি গোল বাঁচিয়েছেন। তবে কাউকোর শট তাঁকে নড়তে দেয়নি।
লিস্টন কোলাসো এবং মনবীর সিং। দুটো দুর্দান্ত উইঙ্গার আছে জুয়ানের হাতে। এদিন তিনি কী করলেন বাঁ দিক দিয়ে ব্যবহার করলেন দুজনকে। লিস্টন তো বাঁ দিকেরই প্লেয়ার। কিন্তু মনবীর তো ডান দিকের। জুয়ানের গেম প্ল্যান ছিল দুই সেরা উইঙ্গারকে পাশাপাশি রেখে বিপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করা। এবং তাঁর গেম প্ল্যানকে সার্থক করে তুললেন দুই উইঙ্গার। লিস্টন তো এই লিগের মোহনবাগানের সেরা ভারতীয়। এদিনের পর তাঁর গোল সংখ্যা হয়ে গেল সাত। ৪৫ মিনিটে তাঁর গোলের পাসটা বাড়িয়েছিলেন জনি কাউকো। লিস্টন বক্সে ঢুকে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডান পায়ে চমৎকার ফিনিস করলেন। গোলের সুযোগ তিনি আরও পেয়েছিলেন। মিস না করলে আরও গোল হত তাঁর। আর মনবীর সিং? বাঁ দিক দিয়ে যখন তিনি দ্রুত গতিতে উঠছিলেন তখন মন হচ্ছিল একাই ধ্বংস করে দেবেন নর্থ ইস্টকে। সুযোগ তিনিও কম পাননি। বক্সের মধ্যে ঢুকে ভাল জায়গা থেকে শটগুলো বাইরে মেরে নষ্ট করেছেন। না হলে তারও একাধিক গোল হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত লেনি রডরিগসের পাস থেকে ৫৫ মিনিটে গোল করে পাপস্খালন করলেন মনবীর। এর পর মনবীররা গোল করার অনেক সুযোগ পেয়েও হেলায় হারান।
দুর্বল নর্থ ইস্ট কিন্তু এর পরেও বেশ ঝাপটা মেরেছে। কিন্তু তাদের ষসেই ভেদশক্তি ছিল না। ভি পি সুহেরের পাশে মার্সেলো, হার্নান কিংবা মার্কো সাহালেক আরও একটু সচল হতে পারলে নর্থ ইস্ট আরও গোল পেতে পারত। তবে যা হয়নি তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। বরং মোহনবাগান যে প্লে অফ-এর দিকে চলে যাচ্ছে এটাই শনিবাসরীয় সন্ধ্যার সেরা প্রাপ্তি।