ওড়িশা এফ সি–১ এটিকে মোহনবাগান–১
(রিদিম থিয়াং) (জনি কাউকো–পেনাল্টি)
আট মিনিটের মধ্যে গোল দুটো হয়ে যাওয়ার পর মনে হয়েছিল বৃহস্পতিবার তিলক ময়দানে হয়তো প্রচুর গোল হবে। কিন্তু শৈষ পর্যন্ত তা হয়নি। তাতে মোহনবাগান টানা তেরো ম্যাচে অপরাজিত থাকল বটে। কিন্তু ওড়িশার মতো দলের বিরুদ্ধে জিততে না পারাটা কোনও মতেই ভাল লক্ষণ নয়। সবুজ মেরুন কোচ জুয়ান ফেরান্দো ম্যাচের আগে বলেছিলেন, ওড়িশাকে হারানোর চেয়েও তাদের বড় লক্ষ্য লিগে এক নম্বর দল হওয়া। কিন্তু তাঁর টিমের পারফরম্যান্স গ্রাফের যেভাবে ক্রমাবনতি হচ্ছে তাতে সেই লক্ষ্যে পৌছনো সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ইনিজুরি টাইমের শেষ মিনিটে গোল করে হার বাঁচিয়েছিল মোহনবাগান। এদিন সে রকম কিছু হয়নি। তবে খেলা শেষ হওয়ার মিনিট পাঁচেক আগে ওড়িশার লিরিডন ক্রাসনিকির শট বারে লেগে ফিরে না এলে হয়তো পরাজয়ের গ্লানি নিয়েই ফিরতে হত জুয়ানের টিমকে। প্রথমার্দ্ধে পেনাল্টি শট রুখে দিয়ে অমরিন্দর গোল খেতে দেননি তাঁর দলকে। সেটা যেমন হয়নি, তেমন ইনজুরি টাইমে দ্বিতীয় বার হলুদ কার্ড দেখে লাল কার্ড দেখতে হল ৫৬ মিনিটে নামা রয় কৃষ্ণকে। সবে ছেলেটা চোট সারিয়ে মাঠে নামছে। এই সময় লাল কার্ডটা তাঁর আত্মবিশ্বাসে চির ধরতে বাধ্য। সতেরো ম্যাচের শেষে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে মোহনবাগান লিগ টেবলে তিন নম্বরে থাকল। কিন্তু লিগের শীর্ষে থাকতে গেলে বাকি তিনটে ম্যাচে জিততেই হবে।
ওড়িশা দল হিসেবে খুব বড় কিছু নয়। তাদের বিদেশিরা ভাল। কিন্তু দুর্দান্ত কিছু নয়। লিগে তারা আছে সাত নম্বরে। এ রকম একটা দলের বিরুদ্ধে যে নীতিতে খেলা উচিত সেই নীতিতেই মোহনবাগান খেলা শুরু করেছিল। কিক অফ-এর পর থেকেই রে রে করে তারা আক্রমণে উঠতে শুরু করে। মাঝ মাঠে জনি কাউকো এখন খুবই ভাল খেলছেন। তিনিই আক্রমণ তৈরি করার কাজটা করছিলেন। সামনে সিঙ্গল স্ট্রাইকার হুগো বুমো। দু একটা শটও নিলেন ফরাসি স্ট্রাইকার। কিন্তু হঠাৎই ম্যাচের গতির বিরুদ্ধে গোল খেয়ে গেল মোহনবাগান। ম্যাচ তখন সবে মিনিট চারেক গড়িয়েছে। ডান দিক থেকে দ্রুত গতিতে উঠে মাটি ঘেঁষা সেন্টার করলেন জেরি। অন্তত তিনজন ডিফেন্ডারের পায়ের ফাঁক দিয়ে বল গলে গিয়ে এল রিদিম থিয়াংয়ের কাছে। তাঁর গায়ে তখন লেগে ছিলেন প্রীতম কোটাল। কিন্তু বাগান অধিনায়ককে এড়িয়ে চার গজের মধ্য থেকে শট নিয়ে গোলটা করে ফেললেন রিদিম। তবে গোলটা শোধ করতে মোহনবাগানের লাগল মোটে চার মিনিট। হুগো বল নিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়লে তাঁকে ঠেলা মেরে ফেলে দেন সাহিল পানওয়ার। পেনাল্টি থেকে গোল শোধ করলেন জনি কাউকো। এর মিনিট দশেক পরেই ওড়িশাও পেনাল্টি পেয়ে গেল। জাভিকে বক্সের মধ্যে ট্যাকল করে ফেলে দিলেন তিরি। কিন্তু জাভির গড়ানে পেনাল্টি বাঁ দিকে শুয়ে পড়ে বাঁচালেন অমরিন্দর। টুর্নামেন্ট যত এগোচ্ছে অমরিন্দর তত দুর্ভেদ্য হয়ে উঠছেন। এদিন পেনাল্টি ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি কঠিন পরিস্থিতি সামলাতে হল তাঁকে।
আসলে পর পর ম্যাচ খেলতে খেলতে বাগানের ফুটবলারদের মধ্যে ক্লান্তি ধরা পড়ছে। তাদের টিমের কয়েকজন কোভিডে আক্রান্ত হওয়ায় মাঝ খানে বেশ কয়েকটি ম্যাচ স্থগিত হয়ে যায়। এখন যার জন্য কম বিশ্রাম পেয়েই ম্যাচ খেলতে হচ্ছে তাদের। আবার রবিবার তাদের খেলা বেঙ্গালুরুর সঙ্গে। বিদেশিরাই তো পাথর্ক্য গড়ে দেয়। এখন বাগানের তিন বিদেশিকে চোটের জন্য সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। ডেভিড উইলিয়ামসকে এদিন স্কোয়াডেই রাখেননি জুয়ান। রয় কৃষ্ণ নামলেন ৫৬ মিনিটে। কার্ল ম্যাকহিউর বদলে নামলেন তিনি। একটু পরেই লিস্টন কোলাসোকে তুলে নামানো হল কিয়ান নাসিরিকে। স্বদেশীদের মধ্যে এবারের লিগে বাগানের সেরা প্লেয়ার লিস্টন কোলাসো। কিন্তু এদিন নিজের স্বাভাবিক খেলার ধারে কাছে ছিলেন না তিনি। মনবীর সিং কবে যে আবার গোল করবেন তিনিই জানেন। তবু মাঝ মাঠে জনি কাউকো এবং লেনি রডরিগসদের দাপটে অনেক আক্রমণ তৈরি হল। কিন্তু ওড়িশা ডিফেন্স এদিন এত ভাল খেলল যে সেভাবে সুযোগ তৈরি হল না। যা হল সেগুলো ওড়িশা গোলকিপার কমলজিৎকে বেগ দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট ছিল না। তাদের ডিফেন্সে হেক্টর র্যামিরেজ এবং ভিক্টর মনজিল দুর্দান্ত খেলে মোহনবাগানের গোল করার পথে কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছিলেন। আর বক্সের সামনে পায়ের জঙ্গল তৈরি করে ফেলছিল ওড়িশা। সেই জঙ্গল ভেদ করার ক্ষমতা বাগান স্ট্রাইকারদের ছিল না। আসলে রয় কৃষ্ণ সম্পূর্ণ ফিট না হলে মোহনবাগানের বড় কিছু করা মুশকিল আছে। সামনের ম্যাচে রয় নেই। মোহনবাগানের সমস্যা তাই বেড়েই গেল।