এটিকে মোহনবাগান–০ ওড়িশা এফ সি-০
খেলা শেষ হওয়ার দু মিনিট আগে ছয় গজের মধ্য থেকে বল পেয়েছিলেন প্রবীর দাস। সামনে শুধু ওড়িশার গোলকিপার আর্শদীপ সিং। ওই রকম গোল করার সুযোগ চট করে আসে না। কিন্তু প্রবীর বড়লোকের বাউন্ডূলে ছেলের মতো বলটা আকাশে উড়িয়ে দিলেন। তাই সারাক্ষণ ওড়িশাকে চেপে রেখেও জিততে পারল না মোহনবাগান। সেই ৫ জানুয়ারির পর আবার রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় তারা মাঠে নামল। জেতার মতোই খেলেছে তারা। কিন্তু তরকারিতে যেমন নুন, ম্যাচে তেমনই গোল। নুন ছাড়া তরকারির মতোই গোল ছাড়া ম্যাচের কোনও দাম নেই। যে ম্যাচে মোহন গোলকিপার অমরিন্দর সিংকে দূর থেকে ভেসে আসা কয়েকটি বল ছাড়া আর কিছু করতে হয়নি সেই ম্যাচে মাত্র এক পয়েন্ট পাওয়ার জন্য আফসোস করতেই পারেন মোহন জনতা। রয় কৃষ্ণ, লিস্টন কোলাসো কিংবা ডেভিড উইলিয়ামসরা গোল করার প্রচুর সুযোগ পেয়েছিলেন। লিস্টনের একটা দুর্দান্ত ফ্রি কিক গোলে ঢোকার মুখে ফিস্ট করে দেন আর্শদীপ। মাত্র দু গজ দূর থেকে ডেভিড উইলিয়ামসের শট গোলে ঢোকার মুখে বাঁচিয়ে দেন সেই আর্শদীপই। সহজ সুযোগ পেয়ে গোল করতে পারেননি রয় কৃষ্ণ-ও। মোহনবাগান জিতবে কী করে? অকাল প্রয়াত সুভাষ ভৌমিকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কালো আর্ম ব্যান্ড পরে নেমেছিল মোহনবাগান। কিন্তু ম্যাচ জিতে আসল শ্রদ্ধাটাই জানাতে পারল না।
ওড়িশা কিন্তু ডিফেন্সিভ খেলেনি। ডিফেন্সে দুই বিদেশি হেক্টর র্যামিরেজ এবং ভিক্টর মঞ্জিলের সঙ্গে মাঝ মাঠে লিরিডন ক্রাসনিকি এবং সানে জ্যাভি হার্নান্ডেজকে রেখে তারা টিম সাজিয়েছিল। এই চার বিদেশির সঙ্গে ভারতীয়রা, যাদের মধ্যে নজরে পড়লেন জিরি, থৈবা এবং আইজ্যাক। এদের মধ্যে মিডফিল্ডার থৈবাকেই ম্যাচের সেরার পুরস্কার দেওয়া হল। মোহনবাগানের আক্রমণকে মাঝ মাঠে সামাল দেওয়ার ব্যাপারে থৈবা অনবদ্য। তাঁকে সারাক্ষণই ভরসা জুগিয়েছেন দুই স্ট্রাইকার জাভি এবং জিরি। কিন্তু সেই ভেদশক্তি ছিল না ওদের। তাই এক গাদা কর্নার পেয়েও গোলের মুখ খুলতে পারেননি। জাভি একবার একটা বল গোলে ঢুকিয়েছিলেন বটে, কিন্তু অফ সাইডের অজুহাতে সেটা গোল হয়নি। উল্টো দিকে মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরনান্দো তাঁর দল গঠনে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। সদ্য দলে যোগ দেওয়া সন্দেশ ঝিঙ্গনকে তিনি স্কোয়াডেই রাখেননি। এমন কি জনি কাউকোকেও। ৫৮ মিনিটে রয় কৃষ্ণকে তুলে নিয়ে তিনি কোনও বিদেশিকে না নামিয়ে নামালেন প্রবীর দাসকে। খারাপ খেলেননি প্রবীর। নায়ক হওয়ার সুযোগ এসেছিল তাঁর সামনে। কিন্তু অত সহজ সুযোগ নষ্ট করলে গোল হবে কী করে?
ডিফেন্সে তিরি যথারীতি নেতৃত্ব দিলেন। তাঁর পাশে ওড়িশার ভেদশক্তিহীন আক্রমণকে মাথায় রেখেও বলা যায় প্রীতম কোটাল মন্দ নন। ওড়িশার উইং প্লে বলে তেমন কিছু ছিল না। তাই আশুতোষ মেহতা কিংবা শুভাশিস বসুকে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি। মাঝ মাঠে কার্ল ম্যাকহিউ ডিফেন্স করতেই ব্যস্ত ছিলেন। তাঁর সহযোগী দীপক টেংরিও তাই। আক্রমণ গড়ার কাজটা করার কথা ছিল রয় কৃষ্ণ, লিস্টন কোলাসো এবং মনবীর সিং-এর। সঙ্গে ডেভিড উইলিয়ামসকে পেয়ে কৃষ্ণ এদিন শুরু থেকে বেশ ভাল খেলছিলেন। ভাগ্য একটু সহায়তা করলে গোল পেয়ে যাওয়ার কথা তাঁর। লিস্টন কোলাসো যথারীতি ভাল। বাম প্রান্ত দিয়ে তাঁর দৌড়গুলোর মধ্যে গোলের মশলা ছিল। কিন্তু তাঁর ক্রসগুলোকে কাজে লাগাবার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। মনবীর ক্রমশ দলের বোঝা হয়ে উঠছেন। যে ফুটবল তাঁর কাছ থেকে প্রত্যাশিত তা যেন কিছুতেই পাওয়া যাচ্ছে না। এ সবের মধ্যেই দশ ম্যাচের শেষে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে মোহনবাগান রইল সাত নম্বরে। আর বারো ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে ওড়িশা রয়ে গেল ছয় নম্বরেই।
মোহনবাগানের পরের ম্যাচ এস সি ইস্ট বেঙ্গলের সঙ্গে ২৯ জানুয়ারি। এখন থেকেই তার কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেল।