এটিকে মোহনবাগান–৩ বেঙ্গালুরু এফ সি-৩
(শুভাশিস বসু, হুগো বুমো, রয় কৃষ্ণ) (ক্লেটন ডিসিলভা, ড্যানিশ ফারুক, প্যাট্রিক ইব্রা)
পর পর চারটি ম্যাচ জিততে পারল না এটিকে মোহনবাগান। তবে গত ম্যাচের মতো এদিনও তারা হারেনি। সন্তুষ্ট থাকতে হল এক পয়েন্টেই। মাত্র তেরো মিনিটে এগিয়ে গিয়েও এবং বিরতির পর আবার ৩ -২ করলেও শেষ পর্যন্ত হাবাসের টিমকে ড্র করেই সন্তুষ্ট থাকতে হল। এর জন্য কি বাগান ডিফেন্সই দায়ী? দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না প্রীতম কিংবা তিরিরা। তিনটে গোলের মধ্যে একটি হয়েছে পেনাল্টি থেকে। আর বাকি দুটি কর্নার থেকে। ডিফেন্স যদি সেট পিস মুভমেন্ট আটকাতে না পারে তাহলে সেই ডিফেন্সের প্রশংসা করা যায় না। হাবাসের কষ্টটা আমরা বুঝি। সন্দেশ ঝিঙ্গন চলে যাওয়ায় তার পরিবর্ত পাওয়া যায়নি। মেক শিফট সেন্টার ব্যাক দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। কখনও প্রীতম কোটাল, কখনও কার্ল ম্যাকহিউ। কিন্তু তাঁরা কেউই সন্দেশের অভাব মেটাতে পারছেন না। তাই রোজই গোল খেতে হচ্ছে। কোনও দিন পাঁচ গোল তো কোনও দিন তিন। নতুন গোলকিপার অমরিন্দর সিং এখন পর্যন্ত নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠতে পারেননি। মনে হচ্ছে অরিন্দমের দীর্ঘ শ্বাস তাঁর খেলার উপর কালো ছায়া ফেলছে।
বেঙ্গালুরু এ বারের আই এস এল-এ খুব বড় শক্তি নয়। তারা তাদের রিজার্ভ টিমের প্লেয়ারদেরই খেলচ্ছে ভবিষ্যতের দল তৈরি করার জন্য। তার উপর তাদের সেরা প্লেয়ার সুনীল ছেত্রী একেবারেই ফর্মে নেই। এদিন তো তাঁকে ডাগ আউটে রেখেই মাঠে নেমেছিল বেঙ্গালুরু। শেষ পর্যন্ত ৮৫ মিনিটে তাঁকে নামানো হয়। তখন তো আর কিছু করা যায় না। তবে বেঙ্গালুরুর ভাগ্য ভাল তারা ক্লেটন ডিসিলভা বলে একজন ব্রাজিলিয়ানকে পেয়ে গেছে। এই ছেলেটা তিন কাঠিটা ভাল চেনে। এদিন পেনাল্টি থেকে একটা গোল করেছেন। তাঁকেই বক্সের মধ্যে টেনে ফেলে দেন লিস্টন কোলাসো। তেরো মিনিটে গোল খাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে গোলটা শোধ করে দেয় বেঙ্গালুরু। এবং কী আশ্চর্য ২৬ মিনিটে তারা এগিয়েও যায়। ক্লেটনের কর্নার থেকে হেডে গোল করেন ড্যানিশ ফারুক। এই গোলটাও শোধ করে দেন হুগো বুমো ৩৮ মিনিটে। বিরতির পর রয় কৃষ্ণের পেনাল্টি গোলে এগিয়ে গিয়েও মোহনবাগান ম্যাচ জিততে পারল না। রোশনের কর্নার থেকে গোল শোধ করে দিলেন প্যাট্রিক ইব্রা। সব মিলিয়ে ছয় ম্যাচে আট পয়েন্ট নিয়ে মোহনবাগান রইল ছয় নম্বরে। আর সাত ম্যাচে পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে বেঙ্গালুরু রয়ে গেল নয় নম্বরেই।
পর পর তিনটে ম্যাচে জয়হীন ছিল মোহনবাগান। তাই বৃহস্পতিবার বাম্বোলিমের স্টেডিয়ামে যে কোনও মূল্যেই একটা জয় দরকার ছিল আন্তোনিও হাবাসের দলের। কিক অফ-এর পর থেকেই গোলের জন্য মরিয়া হয়েছিলেন রয় কৃষ্ণ, হুগো বুমোরা। হাবাসের কোচিং দর্শন হল টিমে অযথা পরিবর্তন না করা। গত ম্যাচে চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে যারা শুরু করেছিল তারাই ছিল প্রথম একাদশে। দুই উইংয়ে মনবীর সিং এবং লিস্টন কোলাসোকে রেখে সামনে কৃষ্ণের সঙ্গে বুমোকে জুড়ে দেন হাবাস। কৃষ্ণের চমৎকার থ্রু পাস থেকে বুমো একটা গোল করলেও এদিন কিন্তু তাঁকে সেভাবে পাওয়া যায়নি। প্রথম থেকে বেঙ্গালুরুকে চাপে রাখা মোহনবাগান নাগাড়ে কর্নার পেয়ে যায়। এবং এরই একটা থেকে ১৩ মিনিটেই মোহনবাগানকে এগিয়ে দেন শুভাশিস। তাঁর হেড গুরপ্রীতকে কোনও সুযোগ না দিয়ে গোলে ঢুকে যায়। নিজে একটা গোল করেছেন, তাঁর কর্নার থেকে শুভাশিসের গোল। দেখে মনে হতে পারে বুমো খূবই ভাল খেলেছেন। কিন্তু না, তাঁর কাছ থেকে যে খেলা আশা করা হচ্ছে তা কিন্তু পাওয়া যায়নি। একই কথা বলা যায় জনি কাউকো সম্পর্কেও। ফিনল্যান্ড জাতীয় দলের এই মিডফিল্ডার এখন পর্যন্ত প্রত্যাশা কিছুই মেটাতে পারেননি। এরই জন্য রয় কৃষ্ণের খেলা ভাল হচ্ছে না। এদিন একক চেষ্টায় তিনি একটি পেনাল্টি আদায় করেছেন বটে। ৫৮ মিনিটে তাঁকে বক্সের মধ্যে ল্যাং মারেন প্যাট্রিক ইব্রা। এবং নিজেই পেনাল্টি থেকে গোল করেন কৃষ্ণ। কিন্তু বড্ড পিছন থেকে খেলছেন মোহনবাগানের প্রাণ ভোমরা। তাঁর সঙ্গী ডেভিড উইলিয়ামসকে মাঠে নামানো হল ৮০ মিনিটের পরে। রয়-ডেভিড কম্বিনেশন এটিকে-কে অনেক গোল এনে দিয়েছে। সেটা হচ্ছে না বলেই কি কৃষ্ণের খেলায় সেই ধারালো ব্যাপারটা নেই? মনে হয় তাই। দুই উইঙ্গারের মধ্যে মনবীর একেবারেই ফ্লপ। তবু খানিকটা চেষ্টা করেছেন লিস্টন কোলাসো। কিন্তু দল হিসেবে মোহনবাগানের খেলা এখনও দানা বাঁধেনি। দেখতে দেখতে ছটা ম্যাচ কিন্তু হয়ে গেল। কিন্তু সেই মোহনবাগানকে কিন্তু পাওয়া গেল না। কবে যায় সেটাই এখন দেখার।