কেরালা ব্লাস্টার্স—২ এটিকে মোহনবাগান–২
(আন্দ্রে লুনা–২) ( ডেভিড উইলিয়ামস, জনি কাউকো)
স্কোর লাইন দেখে বোঝা যাবে না শেষ কুড়ি মিনিট কী দাপটে খেলেছে এটিকে মোহনবাগান। ৬৪ মিনিটে কেরালা দ্বিতীয় গোলটা করার পর মোহনবাগান একটু থমকে গিয়েছিল। সেটা বড় জোর মিনিট পাঁচেক। তার পর তারা সমস্ত শক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল কেরালার উপর। গোলটা শোধ হতে সময় লাগল। সেটা এল ইনজুরি টাইমের সাত মিনিটে। কিন্তু তার আগে গোল করার অনেক সুযোগ এসেছিল বাগানের সামনে। কিন্তু মনবীররা তার সদ্ব্যবহার করতে পারেনি। পারলে অনেক আগেই গোল শোধ হয়ে যায়। এমনকি জেতার গোলটাও জোগার করে ফেলতে পারত মোহনবাগান। এটাও যেমন সত্যি, পাশাপাশি এটাও সত্যি যে গোল শোধের জন্য যখন পুরো টিমটাই উঠে যাচ্ছিল, তখন বাগান ডিফেন্সে বড় বড় ফাটল দেখা গেল। কেরালাও সুযোগ পেল গোল করার। কয়েকটি তারা নষ্ট করল। কয়েকটি বাঁচালেন অমরিন্দর। সব মিলিয়ে শেষ কুড়ি মিনিটের খেলার মধ্যে ছিল টি টোয়েন্টির মেজাজ। শেষ পর্যন্ত জনি কাউকোর গোলে সমতা ফিরিয়ে ষোল ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে মোহনবাগান এবারের আই লিগের এক নম্বর দল হল বটে। তবে এই এক নম্বর তারা কতক্ষণ থাকতে পারে সেটাই দেখার। কারণ ২৯ পয়েন্টে থাকা হায়দরাবাদ ইতিমধ্যেই এফ সি গোয়ার বিরুদ্ধে ২-১ এগিয়ে ৩২ পয়েন্টের দিকে অনেকটাই এগিয়ে গেছে।
সে যা হওয়ার হবে। শনিবারের তিলক ময়দানের ম্যাচের আরেকটা দিক ছিল লাল ও হলুদ কার্ডের ফুলঝুড়ি। পরিবর্তে নামা মোহনবাগানের প্রবীর দাস লাল কার্ড দেখলেন। এমনকি সাতানব্বই মিনিটের গোলের পর সাইড লাইনের ধারে দু দলের সাপোর্ট স্টাফদের হাতাহাতির পর লাল কার্ড দেখতে হল বাগানের সহকারি কোচ বাস্তব রায়কেও। আর হলুদ কার্ড তো আকছাড়ই হয়েছে। আসলে বাস্তববুদ্ধিহীন এবং অপদার্থ রেফারিদের হাতে পড়ে ম্যাচগুলোর সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মার খাচ্ছে ফুটবল। দুটো টিমই প্লে অফ-এ যাওয়ার জন্য যখন মরিয়া তখন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবেই। এবং সেখানে শক্তির আধিক্য থাকবেই। সেটাকে দমন করার জন্য দরকার ছিল কড়া হাতে ম্যাচটা পরিচালনা করা। ম্যাচের রেফারি রাহুল কুমার গুপ্তের সেই ব্যক্তিত্বই ছিল না। শেষ পর্যন্ত যে ম্যাচটা ভালয় ভালয় শেষ হয়েছে এটাই রক্ষের।
মোহনবাগান কোচ এদিন শুধু তাঁর ভারতীয় ফুটবলারদের উপর ভরসা করেননি। শুরু থেকেই চার বিদেশি মাঠে ছিলেন। ডিফেন্সে তিরি, মাঝ মাঠে কার্ল ম্যাকহাগ এবং জনি কাউকো। সিঙ্গল স্ট্রাইকার ডেভিড উইলিয়ামস। বিরতির পর থেকেই উইলিয়ামসের বদলে হুগো বুমো এবং দ্বিতীয়ার্দ্ধের মাঝামাঝি রয় কৃষ্ণ। ফিজি অধিনায়ক রয় এবার মোটে চারটে গোল করেছেন। অনেক দিন পরে তিনি মাঠে নামলেন। খুব একটা সুবিধে করতে পারেননি। শেষ দিকে নেমে কিয়ান আনসারি বেশ খানিকটা পরিশ্রম করলেন। তাঁর আন্তরিকতা চোখে পড়ার মতো। আর বুমোর পাস ধরে বক্সের ঠিক বাইরে থেকে শট নিয়ে গোলটা শোধ করে মোহনবাগানের হার বাঁচালেন জনি কাউকো। ক্রমশ দলের অপরিহার্য হয়ে উঠছেন ফিনল্যান্ডের এই মিডফিল্ডার। ৯৭ মিনিটের মাথায় গোলটা শোধ করার পর যেভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন তাতে দলের সঙ্গে তাঁর একাত্মতা চোখে পড়তে বাধ্য। সাত মিনিটের মধ্যে গোল খেয়ে পরের মিনিটেই গোল শোধ করে ফেলে মোহনবাগান। সেন্টার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বল পেয়ে ডান প্রান্ত দিয়ে ছুটে রাইট ব্যাক প্রীতম কোটাল যে নীচু সেন্টারটা রাখলেন তা থেকেই গোল করে ফেলেন ডেভিড উইলিয়ামস। দুই বিদেশির গোল, ডিফেন্সে তিরির অনবদ্য ফুটবলের পাশাপাশি বাগানের স্বদেশিরাও কিন্তু পিছিয়ে ছিলেন না। বিশেষ করে বলতে হবে গোলকিপার অমরিন্দরের কথা। অনেকগুলো নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন তিনি। লিস্টন কোলাসোর বামপ্রান্তিক দৌড় ঠিকই ছিল। কিন্তু সাতটা গোল করে ফেলা এই গোয়ান ফুটবলের দিনটা ভাল ছিল না। আর তাঁর সহযোগী উইঙ্গার মনবীরকে এদিন খুঁজে পাওয়া গেছে নিশ্চিত গোল মিস করার সময়।
এটিকে এমবি হওয়ার পর কেরালা কোনও দিন জিততে পারেনি কলকাতার দলটির বিরুদ্ধে। এদিনও শেষ মুহুর্তের গোলে তাদের জয় আটকে গেল। তবে তারা কিন্তু খুবই ভাল খেলেছে। মোহনবাগানের দাপটের সময় প্রচুর গোল বাঁচিয়েছেন তাদের পঞ্জাবি গোলকিপার গিল। সাত মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিকে গোল করে দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন অধিনায়ক আন্দ্রে লুনা। ৬৪ মিনিটে বক্সের বাঁ দিক থেকে ঢুকে ডান পায়ের উঁচু শটে দ্বিতীয় গোলটাও তাঁর। সঙ্গত কারণে ম্যাচের সেরার পুরস্কার তাঁরই। তবে আরও বড় পুরস্কার হতে পারতে জিততে পারলে। সেটা হল না তাঁর সহযোগী বিদেশি আলভারো ভাজকুয়েজ এবং জর্জ পেরেরা দিয়াজের গোলমুখে ব্যর্থতার জন্য। না হলে হরমোহনজ্যোত খাবড়া কিংবা বিজয় ভার্গিস ডিফেন্সে যা খেলেছেন তাতে তাদের তিন পয়েন্টই পাওয়া উচিত ছিল। তাই মনে হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স লাক এবার যেন জুয়ান ফেরান্দোর টিমের সঙ্গী। শেষ পর্যন্ত কী হয় তাই এখন দেখার।