বেঙ্গালুরু এফ সি–১ এস সি ইস্ট বেঙ্গল–০
(সুনীল ছেত্রী)
নাঃ, কোনও অঘটন ঘটেনি। যা স্বাভাবিক তাই হয়েছে। বেঙ্গালুরুর কাছে হার দিয়েই দুঃস্বপ্নের আই এস এল শেষ করল এস সি ইস্ট বেঙ্গল। কুড়ি ম্যাচের মধ্যে তারা জিতেছে মাত্র একটিতে, ড্র আটটিতে। আর বাকি এগারো ম্যাচে হার। সব মিলিয়ে পয়েন্ট এগারো। এবং এগারো টিমের মধ্যে এগারো নম্বরে লিগ শেষ করল ভারতীয় ফুটবলের বহু স্মরণীয় কীর্তির অধিকারী ইস্ট বেঙ্গল। ১৯২৮ সালে ইস্ট বেঙ্গল প্রথম ডিভিশনে শেষতম স্থান পেয়ে নেমে গিয়েছিল দ্বিতীয় ডিভিশনে। তিন বছর পর তারা আবার ফিরে আসে প্রথম ডিভিসনে। আই এস এল-এ এখন পর্যন্ত অবনমন চালু হয়নি। তাই ইস্ট বেঙ্গল যদি সামনের মরসুমে আই এস এল খেলার ব্যবস্থা করতে পারে, তাহলে তারা খেলতে পারবে। কিন্তু যে লজ্জা এবারের টিম তাদের কোটি কোটি সমর্ধকদের উপহার দিল তার যন্ত্রণা সারা জীবন বহন করতে হবে। এটা আই এস এল-এ ইস্ট বেঙ্গলের দ্বিতীয় মরসুম। গত বছর তারা শেষ করেছিল নয় নম্বরে, এবার একেবারে লাস্ট বয়।
কিছুই হারানোর ছিল না এই ম্যাচে। তাই ইস্ট বেঙ্গল কোচ টিমে পাঁচটি পরিবর্তন করেছিলেন। বহু দিন পর টিমের জার্সি পেলেন গোলকিপার শুভম সেন। সেই ২৭ নভেম্বর মোহনবাগানের কাছে ইস্ট বেঙ্গল যখন তিন গোল খেয়ে গেল এবং চোট পেয়ে বসে গেলেন অরিন্দম ভট্টাচার্য, তখন নেমেছিলেন শুভম। বাকি সময়ে তিনি কোনও গোল খাননি। তার পর শনিবার আবার। একটা গোল খেয়েছেন। দু একটা বল সেভও করেছেন। কিন্তু বলার মতো কিছু খেলেননি। ডিফেন্সে নেপালের সেন্টার ব্যাক অনন্ত তামাংকে নামানো হল। তাঁর উপর দায়িত্ব ছিল সুনীল ছেত্রীকে মার্ক করার। মোটামুটি সামলে দিলেও সুনীলের গোলটা কিন্তু তাঁকেই নড়িয়ে দিয়ে। সুতরাং নেপালি অনন্ত প্রথম ম্যাচে পাস মার্ক পেলেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আর ফরোয়ার্ডে ছিলেন শুভ ঘোষ। লাল হলুদের হয়ে এটাই তাঁর প্রথম ম্যাচ। ষাট মিনিটের সময় তাঁকে তুলে নেওয়া হল। কিন্তু শুভর মধ্যে একটা ছটফটানি ছিল। দু তিন বার তিনি বল তাড়া করে বিপক্ষ ডিফেন্ডারদের হার মানিয়েছেন। একেবারে শুরুতে সামনে শুধু গোলকিপারকে পেয়েই তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বল আকাশে উড়িয়ে দিলেন। আরেক বার আন্তোনিও পেরোসেভিচকে বল সাজিয়ে দিলেও গোল হয়নি। বলটা সেভ করে দিলেন লারা শর্মা।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে এই ম্যাচের সেরা হলেন বেঙ্গালুরু গোলকিপার লারা শর্মা। বেশ কয়েকটা বল সেভ করেছেন তিনি। না হলে ম্যাচের সেরা হলেন কী করে? এবং সেগুলো আন্তোনিও এবং তাঁর পরিবর্ত ব্রাজিলিয়ান মার্সেলোর পা থেকে বেরোনো শট। এই মার্সেলোকে ইস্ট বেঙ্গল নিয়ে এল নাইজিরিয়ার ড্যানিয়েল চিমাকে বিদায় করে। চিমা জামশেদপুরে গিয়ে তাদের হয়ে সাতটা গোল করে ফেললেন। জামশেদপুর এখন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে। আর চিমার বদলে যাঁকে আনা হল তিনি মাঠে নামলেই দুআনি কুড়োলেন। এত নিকৃষ্ট শ্রেণীর ব্রাজিলীয় ভারতীয় ফুটবল কখনও দেখেনি। তবু ইস্ট বেঙ্গল যে মাত্র এক গোলে হারল তার পিছনে তাদের ডিফেন্স এবং মিডফিল্ডারদের কথা বলতে হবে। গোলটা যখন সুনীল ছেত্রী করলেন তখন অনন্ত তাঁকে রুখতে পারেননি। ২৪ মিনিটে সেন্টার সার্কেলের কাছ থেকে বিদেশি ডিফেন্ডার ইয়া ইয়া একটা লং বল পাঠালেন সুনীলকে লক্ষ্য করে। তাঁর গায়েই লেগে ছিলেন অনন্ত। সুনীল বুক দিয়ে বলটা রিসিভ করে নামালেন। তার পর অনন্তকে টপকে গোল করলেন। অপর সেন্টার ব্যাক ফ্রানিও পার্সে অন্য দিনের মতো এদিনও বেশ ভাল খেললেন। বেঙ্গালুরুর দুরন্ত ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ক্লেটন সিলভাকে তিনি বল ধরতেই দেননি। দুই সাইড ব্যাক রাজু গায়কোয়াড় এবং নওচা সিং মন্দ নন।
ইস্ট বেঙ্গলের আক্রমণগুলোর পিছনে বড় ভূমিকা ছিল মহেশ নাওরেম, আঙ্গু এবং নামতের। এই তিন পাহাড়ির খেলায় তেমন স্কিল নেই। কিন্তু প্রবল প্রাণশক্তির সঙ্গে গতির সমন্বয়ে তাঁরা মাঝে মাঝেই বেকায়দায় ফেলে দিয়েছিলেন বেঙ্গালুরু ডিফেন্সকে। প্রথম লেগে ১-১ হয়ে শেষ হয়েছিল দু দলের ম্যাচ। ফিরতি লিগে ইস্ট বেঙ্গল জেতার মতো খেলেও জিততে পারল না সুযোগগুলো কাজে লাগাতে না পেরে। এমন কি নির্ভরযোগ্য সেম্বোই হাওকিপ, যাঁকে পরের দিকে নামানো হল, তিনিও মাঠে নেমেই গোল করতে পারতেন। কিন্তু বাইরে মেরে নষ্ট করলেন। সুনীল ছেত্রীর বেঙ্গালুরু কুড়ি ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে ছয় নম্বরে থেকে এবারের লিগ শেষ করল।
ইস্ট বেঙ্গলের দু বছরের আই এল এল অভিযানে সঙ্গী ছিল শ্রী সিমেন্টস। এখন পর্যন্ত তারা সরকারিভাবে বিচ্ছেদের কথা ঘোষণা করেনি। তবে ময়দানের খবর, এবার করবে। তারা অপেক্ষা করছিল লিগ শেষ হওয়ার। ইস্ট বেঙ্গলকে আবার নতুন ইনভেস্টর আনতে হবে। বাংলদেশের বসুন্ধরা গ্রূপের সঙ্গে কথা শুরু হয়েছে। এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি। এভাবেই প্রথম শতাব্দী মাথা উঁচু করে শেষ করে দ্বিতীয় শতাব্দীর শুরুতেই নিজেদের একদম নিঃস্ব করে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে ইস্ট বেঙ্গল। এই মাধুকরী যে কবে শেষ হবে কে জানে!