হায়দরাবাদ এফ সি—১, (৩) কেরালা ব্লাস্টার্স–১ (১)
(এস টাভোরা) ( কে পি রাহুল)
অষ্টাশি মিনিট পর্যন্ত কেরালা ব্লাস্টার্স এক গোলে এগিয়ে। দুটো মিনিট কাটাতে পারলে তারা এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন হত আই এস এল-এ। কিন্তু ট্রফি কপালে না থাকলে কী হবে। বক্সের বাইরে থেকে একটা দুর্দান্ত শটে টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা গোলটা করে ফেললেন স্টিফেন টাভারো। সেই গোলই শুধু ম্যাচটার নয়, টুর্নামেন্টের ইতিহাসও অন্য রকম ভাবে লিখে দিল। অতিরিক্ত সময়েও কোনও গোল হল না। ম্যাচ গেল টাই ব্রেকারে। এবং তখন হায়দরাবাদের গোলকিপার লক্ষ্মীকান্ত কাট্টিমণি দেখালেন তাঁর ক্যারিশ্মা। কেরালা চারটে শট নিতে পারল। তিনটিই বাঁচিয়ে দিলেন কাট্টিমণি। লেসকোভিচ, নিশু কুমার এবং জিকসন সিংয়ের শট বাঁচিয়ে হায়দরাবাদকে এই প্রথম আই এস এল চ্যাম্পিয়ন করলেন কাট্টিমণি। হায়দরাবাদের হয়ে গোলগুলি করলেন জোয়াও ভিক্টর, খাসা কামারা এবং হোলিচরণ নার্জারি। শুধু জেভিয়ার সিভেইরোর শট বারের অনেক উপর দিয়ে চলে যায়। টাই ব্রেকারে ৩-১ গোলে জিতে আই এস এল-এর নতুন নিজাম হল হায়দরাবাদ। টাই ব্রেকারে তিন তিনটে সেভের পর কাট্টিমণি ছাড়া অন্য কাউকে ফাইনালের সেরা বাছা সম্ভব ছিল না। আর এদিন গোল না পেলেও গোটা টুর্নামেন্টে ১৮টা গোল করে গোল্ডেন বুট পেলেন হায়দরাবাদের বার্ট ওগবেচে।
ফাইনাল ম্যাচটাকে এক কথায় বিশ্লেষণ করা যায় এ ভাবে। ম্যাচে প্রাধান্য ছিল কেরালার। তাদের বল পোজেশন, মাঝ মাঠে নিয়ন্ত্রণ সবই বেশি ছিল। কিন্তু সুযোগ বেশি তৈরি করেছে হায়দরাবাদ। তারা যা সুযোগ পেয়েছিল তাতে নব্বই মিনিটেই তারা জিতে জেতে পারত। পারেনি নিজেদের ব্যর্থতায় এবং খানিকটা কেরালার গোলকিপার প্রভসুখন গিলের অনবদ্য গোলকিপিংয়ের জন্য। জীবনের সব ক্ষেত্রের মতো ফুটবলে সাফল্যের পিছনে খানিকটা হলেও ভাগ্যের সাহায্য দরকার হয়। না হলে ম্যাচে একটা বাজে গোল খেয়েও দিনের শেষে কাট্টিমণি নায়ক হতে পারতেন না। কেরালার দুটো শট বারে লেগে ফিরে এসেছে। সব মিলিয়ে দিনটা তাদের ছিল না। তাহলে কি শুধু ভাগ্যের সাহায্যে হায়দরাবাদ চ্যাম্পিয়ন হল? একেবারেই নয়। পরিকল্পনা মাফিক ফুটবল খেলে তারা বাজিমাৎ করল।
প্রথম আধ ঘণ্টা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল কেরালার পায়ে। কিন্তু তারা সেভাবে গোলের মুখ খুলতে পারেনি। হায়দরাবাদ ডিফেন্সে জুয়ানন অনবদ্য খেললেন। তাঁর পাশে চিঙ্গলসানা এবং আশিস মিশ্র মানানাসই ফুটবল খেলায় কেরালা গোলের মুখ খুলতে পারেনি। বিশেষ করে তাদের ভয়ঙ্কর স্ট্রাইকার আলভেরো ভাজকুয়েজকে সেভাবে বলই ধরতে দেয়নি হায়দরাবাদ। কেরালার অধিনায়ক উরুগুয়ের আদ্রিয়েন লুনা টিমটার গেমমেকার। এবং সুযোগ পেলে গোলও করেন নিয়মিত। কিন্তু এদিনটা তাঁর বা তাঁর দলের ছিল না। প্রথম আধ ঘন্টা ঝড়-ঝাপ্টা সামলে হায়দরাবাদ আস্তে আস্তে ম্যাচে ফেরে। এবং একটার পর একটা সুযোগ তৈরি করে প্রায় গোল করেও ফেলেছিল। বিরতির ঠিক আগে ফ্রি কিক থেকে বল পেয়ে সিভেইরো একেবারে সামনে পেয়ে গিয়েছিলেন ফাঁকা গোল। কিন্তু তাঁর হেড গিল বাঁচিয়ে দেন। এর একটু আগে ওগবেচের শট বাঁচিয়েছেন গিল। তখন কিন্তু ম্যাচটা ধরে নিয়েছে হায়দরাবাদ।
বিরতির পরেও হায়দরাবাদ তাদের প্রাধান্য বজায় রেখে গিয়েছিল। কিন্তু গোল মুখে তারা নিজেদের মধ্যে ঠিকভাবে কোঅর্ডিনেট করতে পারেনি। পাশাপাশি কেরালার গোলকিপার গিলের কথাও বলতে হবে। নিজের দায়িত্বে তিনি ছিলেন অবিচল। শুধু শেষ হাসিটা হাসতে পারলেন না। এই সময় (৬৮ মিনিটে) হঠাৎ গোলটা পেয়ে গেল কেরালা। এর জন্য গোলদাতা কে পি রাহুলের কৃতিত্বের চেয়ে হায়দরাবাদ গোলকিপার কাট্টিমণির ব্যর্থতাই বেশি। বক্সের বাইরে থেকে কে পি রাহুলের শটে তেমন পাওয়ার ছিল না। কিন্তু সেই শটটা আটকাতে পারেননি কাট্টিমণি। বল তাঁর হাতে লেগে গোলে ঢুকে যায়। হায়দরাবাদ শেষ পর্যন্ত হারলে ভিলেন হয়ে থাকতেন কাট্টিমণি। কিন্তু ফুটবল দেবতা যে দিনটা তাঁর জন্যই নির্দিষ্ট করে রেখেছিলেন। না হলে ৮৮ মিনিটে টাভোরা ওই রকম একটা দুদ্ধর্ষ গোলই বা করবেন কেন আর টাই ব্রেকারে কাট্টিমণিই বা নায়ক হবেন কেন।
দু বছর পর আই এস এল-এ গ্যালারিতে দর্শকদের প্রবেশাধিকার ছিল। ফাইনাল দেখতে মারগাওয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে লোক ধিক থিক করছিল। কেরালা থেকে হাজার হাজার দর্শক এসেছিলেন। ২০১৪ এবং ২০১৬-র ফাইনালে হেরেছিল কেরালা। এদিনও জয়দেবী তাদের ঘরে ধরা দিলেন না। আর এক সময় ভারতীয় ফুটবল যারা নিয়ন্ত্রণ করত সেই হায়দরাবাদ বহু দিন পর আবার সাফল্যের শীর্ষে। গ্যালারিতে ছিল কিংবদন্তী কোচ রহিম সাহেবের ছবি। পাশের ছবিতে পিটার থঙ্গরাজ। হাবিব-নইম-আকবর-সাব্বির আলিদের শহর আবার জাগবে হায়দরাবাদের এই জয়ের জন্য। ভারতীয় ফুটবলের পক্ষে সেটা অবশ্যই একটা ইতিবাচক দিক।