প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটার রিকি পন্টিং আর ম্যাথু হেডেন কড়া সমালোচনা করলেন অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের। দলের হেড কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার পদত্যাগ করতেই তোলপাড় ‘ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া’র ক্রিকেট মহলে। শনিবারই ল্যাঙ্গার দেশের ক্রিকেট বোর্ডের অল্পদিনের চুক্তিতে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। তা জানাজানি হতেই, নানান প্রতিক্রিয়া মিলতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন:Eden Match: বঞ্চনার শিকার বাংলা, ক্রিকেট ম্যাচ নিয়েও ‘শাহ’-নীতি!
অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যান রিকি পন্টিং মন্তব্য করেছেন: সত্যিই খুব খারাপ দিন। ল্যাঙ্গারের চুক্তির মেয়াদ আরও ৫ মাস বাকি ছিল। আরেক প্রাক্তন তারকা ব্যাটসম্যান ম্যাথু হেডেন মনে করছেন, এখনকার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ৫১ বছরের এই কোচকে ধরে রাখার জন্য কোনও উদ্যোগই নেননি।
Brought in during a time of crisis, Justin Langer leaves his role as Australia's head coach with a T20 World Cup and an Ashes win ?
How would you rate his tenure at the helm? ?
— ESPNcricinfo (@ESPNcricinfo) February 5, 2022
‘স্যান্ডপেপার গেট’ – ইস্যু সকলের মনে আছে। বল বিকৃতির সেই ঘটনা। তোলপাড় হয়েছিল, গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। ২০১৮ সালে ল্যাঙ্গার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। দলের অনেক ক্রিকেটারের কাছে প্রিয় পাত্র ছিলেন না এই কোচ। তারই মাঝে, গত বছর – আরব আমির শাহিতে প্রথমবার আই সি সি টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল তাঁর দল। আর সদ্য সদ্য অ্যাসেজ সিরিজ ৪-০ ম্যাচে জিতেছে। তারপরও তিনি পদত্যাগ করলেন। তাঁকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারা ৭ ঘণ্টা ধরে মিটিং করে। তারপরও, কম সময়ের চুক্তিতে তাঁকে কাজ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তিতে কোচিং দায়িত্ব আবার তাঁকে না দেওয়ায়, ল্যাঙ্গার আজ দায়িত্ব ছেড়ে সরে দাঁড়িয়েছেন।
পন্টিং – হেডেন আর ল্যাঙ্গার , একসঙ্গে জাতীয় দলে খেলতেন। বন্ধুত্বও জমাট। এই ইস্যুটি যেভাবে ক্রিকেট বোর্ড সামাল দিতে চাইলো, তার কড়া সমালোচনা করলেন পন্টিং আর ম্যাথু। পাকিস্তানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এক সিরিজের আর দু মাসও সময় নেই। সেই সিরিজে টেস্ট আছে, ওয়ান ডে ম্যাচের সিরিজ আছে।
Justin Langer has sensationally quit as coach of the Australian cricket team following a messy contract saga. @bradeningram #9News pic.twitter.com/c3OLJtWMgI
— 9News Adelaide (@9NewsAdel) February 5, 2022
পন্টিং এবিসি (ABC Radio) রেডিওতে এক সাক্ষাৎকারে শনিবার বলেছেন, ‘আমি মনে করি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের জন্য খুব খারাপ একটি দিন। পিছন ফিরে তাকালো দেখা যাবে, শেষ ছয় মাস মোটেই ভালো যাচ্ছিল না। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া যেভাবে ল্যাঙ্গার আর টিম পেনকে নিয়ে নাড়াচাড়া করল, তা মোটেই ভালো লাগে নি। দুজনই অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের সম্পদ। বোর্ড অবস্থা সামাল দিতেই পারেনি’।
পন্টিংয়ের এমন মন্তব্য শোনার পরে মনে হতেই পারে, ভারতীয় বোর্ড বোধ হয়, নেতা কোহলি ইস্যু এভাবেই অসফল হয়েছিল অবস্থা সামাল দিতে। বিশ্ব ক্রিকেটের দুই শক্তিশালী ক্রিকেট বোর্ডের মানসিকতায় কি অদ্ভুত মিল!
https://twitter.com/KP24/status/1489865287935664128?t=zZe2hJ6qO-ZEbQsoBZTNRg&s=19
টিম পেন অ্যাসেজ সিরিজ শুরুর সপ্তাহ খানেক আগে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান, তাঁর বিরুদ্ধে এক যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ এসে পড়ায়।
কোচ ল্যাঙ্গার নিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া বিস্তারিত কিছুই জানায়নি। শুধু উল্লেখ করেছে, তাঁকে স্বল্প সময়ের জন্য চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তির লাইন গুলো পড়ে হেডেন জানিয়েছেন, “ল্যাঙ্গারের পাশে কেউ দাঁড়ায় নি। আগে দলের নুতন নেতা কামিন্সকে এই কোচ ইস্যু নিয়ে কিছুই বলতে শোনা যায়নি। তারমানে নেতা কোচের পাশে নেই। আমার মনে হয়না এই ঘটনাটা ভালো ভাবে মেনে নিতে পারবে
ল্যাঙ্গার। খুবই বেদনাদায়ক। গত বছরের শীতের সময় থেকে দলের মধ্যে সমস্যা দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। ল্যাঙ্গারের কোচিং স্টাইল নিয়ে কথা শুরু হয়ে ছিল। তখনই বোঝা যাচ্ছিল, পরের। চিত্রনাট্য কি লেখা হয়েছে”।
অজি দলের এখনকার অধিনায়ক কামিন্স জনসমক্ষে কোচ ল্যাঙ্গারের হয়ে কোনও কথাই বলেননি। ২ ফেব্রুয়ারি , কোচের ভবিষ্যত নিয়ে কিছুই বলতে চাননি। উল্টে বলেছিলেন, ” এটা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সিধ্যান্ত। তারা ঠিক করবে। কোনও অনুমানের মধ্যে থাকাটা ঠিক নয়। এনিয়ে আমি কিছু বলতে চাইনা। এটা আমার কাজ নয়। বোর্ডের কাজ”।
কোচ আর অধিনায়কের নানান সম্পর্কের কথা সকলের জানা। কামিন্স যেভাবে, কোচের ইস্যু এড়িয়ে গেছেন – তাতে বোঝা গেছে তাঁদের সম্পর্ক মধুর নয়। এটা শুরু হয়, বাংলাদেশে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার টি টোয়েন্টি সিরিজ হেরে আসার পর।
পন্টিংয়ের মনে হয়েছে, নেতা কামিন্স জানতেন কি হতে যাচ্ছে। অধিনায়ক যদি জোরালো মত প্রকাশ করে কোচের পদে ল্যাঙ্গারকে চাইতো, বোর্ড দিতে বাধ্য হত। এভাবে সরাতে পারতো না, ল্যাঙ্গারকে। পন্টিংয়ের আরও ধারণা, “কামিন্স যদিও বা নিজে না চেয়ে থাকে, দলের আরও কোনও প্লেয়াররা নিশ্চয়ই ল্যাঙ্গারকে চায় নি। সেটাই হয়তো আরো চাপ বাড়িয়ে দিয়েছিল কামিন্সের উপর। তাই হয়তো, কামিন্স এই ইস্যুতে কোচের পাশে থাকেনি”।
সঙ্গে সঙ্গে পন্টিং আরও যোগ করেন: আমি জাস্টিনের খুবই ঘনিষ্ঠ। আমরা ভাইয়ের মতো। কিন্তু আমি এই ব্যাপারে খুব বেশি মাথা ঘামতে চাই নি। কারণ আমি তো কিছু বদলে দিতে পারতাম না। তবে আজ যা ঘটে গেলো, তা বেশ কয়েকদিন ধরে চলছিল। হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া ঘটনা নয়।
ছবি: সৌ টুইটার।