এটিকে মোহনবাগান-১ চেন্নাইয়িন এফ সি–১
(লিস্টন কোলাসো) (ভ্লাডিমির কোমান)
পর পর দুটো ম্যাচ হারার পরে তৃতীয় ম্যাচেও জয়ের মুখ দেখতে পেল না এটিকে মোহনবাগান। তবে তাদের পক্ষে বলার মতো ব্যাপার হল দু্ই ম্যাচ পরে তারা প্রথমে গোল করে এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ১৮ মিনিটে করা গোলটা রাখতে পারেনি। বিরতির আগেই গোল শোধ করে দেয় চেন্নাই। তাদের কপাল খারাপই বলতে হবে, ম্যাচের বেশির ভাগ সময় দাপিয়ে খেলেও তারা জিততে পারল না। এই টিমটাকেই কদিন আগে রুখে দিয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল। কিন্তু সেদিন চেন্নাইয়ের এত দাপট ছিল না। শনিবার তারা জিততেই পারত। কিন্তু তাদের টিমে দক্ষ স্ট্রাইকারদের ফনা তুলতে দেয়নি এটিকে ডিফেন্স। এর ফলে চার ম্যাচে আট পয়েন্ট নিয়ে চেন্নাই রইল তিন নম্বরে। তারা এখনও অপরাজিত। আর পাঁচ ম্যাচে সাত পয়েন্ট নিয়ে মোহনবাগান রইল ছয়ে। হারের হ্যাটট্রিক বাঁচল বটে তাদের, কিন্তু টানা তিনটে ম্যাচে জয় অধরা থেকে গেল।
প্রথম দুটো ম্যাচে সাত গোল করার পর পরের দুটো ম্যাচে সাত গোল খেয়েছিল এটিকে মোহনবাগান। এর জন্য হাবাসের টিমের ডিফেন্সকেই দায়ী করা হয়েছিল। গত বার যাঁরা তাঁর দলকে ফাইনালে তোলার পিছনে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন সেই সন্দেশ ঝিঙ্গন দল ছেড়ে গেছেন। আর প্রথম চারটি ম্যাচে তিরিকে পাওয়া যায়নি। তাঁর চোট ছিল। তিরি যে মোহন ডিফেন্সের কত বড় ভরসা তা শনিবার বোঝা গেল মারগাওয়ের ফাতোরদা স্টেডিয়ামে। চেন্নাইএর লাগাতার আক্রমণ রুখতে তিরি একটা বড় ভূমিকা নিয়েছেন।তাঁর পাশে প্রীতম কোটাল বেশ ভাল। তাই প্রথমার্দ্ধে এগারোটা কর্নার পেয়েও গোলের মুখ খুলতে পারেনি চেন্নাই। তাঁদের পাশে ডান দিকে আশুতোষ মেহেতা এবং বাঁ দিকে শুভাশিস বসু কাজ চালিয়ে গেছেন। কিন্তু উইং ব্যাকে খেললে তো একটু আধটু হলেও ওভারল্যাপে যেতে হয়। কিন্তু সেটা ওঁরা দুজনে মানেন বলে মনে হয় না।
মাঝ মাঠে চারজন রেখেছিলেন হাবাস। তবে তাদের মধ্যে দুজন উইঙ্গার। ডান দিকে মনবীর তেমন চোখে না পড়লেও বাঁ দিকে লিস্টন কোলাসো কিন্তু বেশ ভাল। মনবীরকে কেন প্রায় সারাক্ষণ মাঠে রাখলেন তা একমাত্র হাবাসই জানেন। একটি সুযোগ সন্ধানী গোল করা ছাড়াও বাঁ দিকে বাগানি আক্রমণ কিন্তু সচল রেখেছিলেন। মাঝ মাঠের বাকি দুজন অর্থাৎ জনি কাউকো এবং দীপক ট্যাংরির মধ্যে তেমন স্কিল নেই। খানিকটা গায়ে গতরে খেলার চেষ্টা করেন তাঁরা। তবু দীপক খানিকটা ওয়ার্ক লোড নিয়েছেন। কিন্তু কাউকো তো না হোমে না যজ্ঞে। একই কথা বলা যায় হুগো বুমোর সম্পর্কে। খুবই বাজে খেললেন এই ফরাসি। তাঁকে বসাতে হাবাস অনেক সময় নিলেন। ডেভিড উইলিয়ামস নামলেন অষ্টাশি মিনিটে। তখন কিছু করা খুবই মুশকিল। এই সুযোগ কিন্তু খুব ভালভাবে কাজে লাগাল চেন্নাই। প্রথম দিকে থিতু হতে একটু সময় নেয় তারা। তার পর অনিরুদ্ধ থাপার নেতৃত্বে চেন্নাই মাঝ মাঠ কিন্তু মাঠের দখল নিয়ে নেয়। তাদের স্ট্রাইকাররা যদি আরও একটু ভেদশক্তিসম্পন্ন হতেন তাহলে দাপিয়ে খেলেও জয়হীন হতে হত না চেন্নাইকে।
রয় কৃষ্ণের যে থ্রূ পাস থেকে লিস্টন কোলাসো ১৮ মিনিটে গোলটা করলেন, ওই রকম পাস সচরাচর দেখা যায় না। তিন জন ডিফেন্ডারের মধ্য দিয়ে বলটা বেরিয়ে গেল। সোনার পাস। বাঁ দিক থেকে দুরন্ত গতিতে উঠে আসা লিস্টন কোলাসো বল ধরে গোল করে আসেন। হঠাৎ গোলের খোঁচা খেয়ে চিন্নাই কিন্তু দুর্দন্ত ভাবে ম্যাচে ফেরে। এর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রশংসা করতে হবে অনিরুদ্ধ থাপার। চেন্নাই অধিনায়ক সবই করলেন কিন্তু টিমকে জেতাতে পারলেন না। তবে ম্যাচের সেরার পুরস্কারটা পেয়েছেন। এটা তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে দেওয়া সম্ভব ছিল না।
রয় কৃষ্ণ দুর্দান্ত পাসে গোল করিয়েছেন। কিন্তু যে কৃষ্ণকে আমরা দেখতে অভ্যস্ত তাকে আমরা গত তিনটে ম্যাচে পেলাম না। গত তিন ম্যাচে কৃষ্ণের গোল নাই। হয়তো তাই তাঁর দলের জয় নেই। এর একটা কারণ হতে পারে পাশে ডেভিড উইলিয়ামসকে না পাওয়ায় কৃষ্ণ আপ ফ্রন্টে একা হয়ে যাচ্ছেন। এদিন তাঁকে প্রায় সময়েই অনেকটা নীচে নেমে খেলতে দেখা গেল। এই ভূমিকা তাঁকে মানায় না। আসলে বাগান মাঝ মাঠে ক্রিয়েটিভিটি নেই। এডু গার্সিয়ার অভাব খুবই অনুভূত হচ্ছে।
ক্রমাগত আক্রমণ করতে করতে চেন্নাই গোলটা শোধ করে দিল ৪৫ মিনিটে। ডান দিক থেকে থ্রো ইন থেকে বল পেয়ে যান কোমান। ঠিক বক্সের মুখ থেকে তাঁর ডান পায়ের বুলেট মাটি ঘেঁষা শট অমরিন্দরকে নড়তে দেয়নি। চমৎকার গোল। দুটো ভাল গোল দেখা ছাড়া এই ম্যাচ থেকে আর মনে রাখার মতো কিছু রইল না।