নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড–১ এস সি ইস্ট বেঙ্গল–১
(মার্কো সাহানেক) (আন্তোনিও পেরোসেভিচ–পেনাল্টি)
এবারের আই এস এল-এ এস সি ইস্ট বেঙ্গলের লাস্ট বয় হওয়া প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল। প্রায় কেন? আসলে ইস্ট বেঙ্গলের এখনও একটা ম্যাচ বাকি আছে। ৫ মার্চ সেই ম্যাচটা ইস্ট বেঙ্গল খেলবে বেঙ্গালুরু ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে ইস্ট বেঙ্গল জিতবে এমন ভরসা কম। তবে ফুটবলে সবই সম্ভব। যদি সেই ম্যাচে ইস্ট বেঙ্গল জেতে তাহলে তাদের পয়েন্ট হবে ১৪। সোমবার নর্থ ইস্ট তাদের কুড়িতম ম্যাচটা খেলে ফেলল। তাদের আর খেলা নেই। তারা শেষ করল ১৪ পয়েন্টে। যদি ইস্ট বেঙ্গল হারাতে পারে বেঙ্গালুরুকে তাহলে তাদেরও পয়েন্ট হবে ১৪। সেক্ষেত্রে দেখা হবে গোল পার্থক্য। এবং তাতে ইস্ট বেঙ্গল এগিয়ে। তাই একটা ক্ষীণ আশা আছে ইস্ট বেঙ্গলের। যদি বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে তারা লাস্ট বয়ের জার্সিটা গা থেকে খুলে ফেলতে পারে।
সোমবার ভাস্কোর তিলক ময়দানে ইস্ট বেঙ্গল যা খেলল তাতে তারা যে হারটা এড়াতে পেরেছে এটাই অনেক। এই ম্যাচের আগে খালিদ জামিলের নর্থ ইস্ট গোল খেয়েছিল ৪২টা। ইস্ট বেঙ্গল খেয়েছিল ৩৪টা। মানে হত কুচ্ছিত পারফরম্যান্সে এ বলে আমায় দ্যাখ তো, ও বলে আমায় দ্যাখ। অথচ নর্থ ইস্ট গতবারের সেমিফাইনালিস্ট। কিন্তু এ বছর তারা এত খারাপ খেলল কী করে তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। এদিনের খেলা দেখে মনে হল টিমটা মাঝে মাঝে এমন খেই হারিয়ে ফেলে যে গোল খেতে হয়। ম্যাচ হারতে হয়। আগের ম্যাচে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ০-২ পিছিয়ে পড়েও তারা ২-২ করেছিল। তারপর আবার গোল খেয়ে ম্যাচ হারে। এদিনও তারা শুরু থেকেই অনেক এগিয়েছিল ইস্ট বেঙ্গলের থেকে। বিরতির আগে ৪৭ মিনিটে গোল করে এগিয়েও যায়। কিন্তু ৫৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল খেতে হয় তাদের। ওই গোলটা ছাড়া ইস্ট বেঙ্গলের দিক থেকে এমন কোনও শট বা মুভমেন্ট হয়নি যাতে নর্থ ইস্টের গোলকিপার মির্শাদ মিচু গোল খেতে পারেন। দূর থেকে ভেসে আসা দু একটা শট বা ফ্রি কিক তিনি অবলীলায় বাঁচিয়েছেন। ইস্ট বেঙ্গলের আক্রমণে এমন কোনও আহামরি ব্যাপার ছিল না নর্থ ইস্টকে গোল খেতে হবে।
লাল হলুদ কোচ এদিন ফরোয়ার্ডে নামিয়েছিলেন দুই বিদেশিকে। আন্তোনিও পেরোসেভিচ এবং ফ্রান সোতা। স্পেনের সোতা আক্রমণের প্লেয়ার নন। যদিও পেনাল্টিটা আদায় করেছেন তিনিই। বক্সের মধ্যে তাঁকে পেছন থেকে ধাক্কা মারেন নর্থ ইস্টের ডিফেন্ডার ফ্লটমান। রেফারি গোকুলদাদ নাগভেঙ্কর সামনেই ছিলেন। পেনাল্টির নির্দেশ দিতে তিনি দ্বিধা করেননি। পেনাল্টি থেকে গোলটা শোধ করলেন আন্তোনিও। এর আগে এবং পরে ইস্ট বেঙ্গল এমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি যাতে তারা গোল করতে পারে। বরং নর্থ ইস্ট বেশ কয়েকবার এমন আক্রমণ করেছিল যে তাতে গোলের গন্ধ ছিল। একবার ব্রাউনের পা থেকে নিশ্চিত গোল বাঁচালেন শঙ্কর রায়। এর বাইরে নব্বই মিনিট বলটা দুই পেনাল্টি বক্সের আশেপাশে এসেই আটকে গেল। লাল হলুদের পক্ষে ফ্রানিও পার্সে এবং জয়নার বেশ ভাল খেললেন। নাকে আঘাত পেলেন হীরা মণ্ডল। কিন্তু মাঠ ছাড়েননি। নাকে ব্যান্ডেজ নিয়েও লড়ে গেলেন। বাঁ দিকে নওচা সিং-ও যথাযথ। তবু একটা গোল হজম করতে হল ইস্ট বেঙ্গলকে। বিরতির ঠিক আগে, তখন ম্যাচের বয়স ৪৭ মিনিট। দূর থেকে পাঠানো সুহেরের সেন্টার ব্রাউন হেড করলে বলটা ধাক্কা খেল পোস্টে। সেই বলটাই গোলে ঠেলে দিলেন নর্ধ ইস্টের অস্ট্রিয়ান স্ট্রাইকার মার্কো সাহানেক। এর আগে অবশ্য মহেশের শট ক্রস বারে লেগে ফিরে আসে।
অতএব এবারের উনিশটা ম্যাচে ইস্ট বেঙ্গলের জয় রয়ে গেল মাত্র একটা। আটটা ড্র। আর হার দশটা ম্যাচে। এই লজ্জার ইতিহাস কীভাবে ইস্ট বেঙ্গল ভবিষ্যতে মুছবে তা এখন অনুমানের বিষয় হয়ে রইল।