বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলা রঞ্জি দল অনুশীলন সেরে নিল সল্ট লেক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মাঠে। কোচ অরুনলালের তত্বাবধানে। শুক্রবার উড়ে গেছে
ট্রফি জয়ের মিশনে। আর একই দিন সন্ধ্যা বেলায় মিললো সিএবি সভাপতির প্রচার মাধ্যমের জন্য বিজ্ঞপ্তি।
সেখানে তিনি জানালেন, ঋদ্ধি সরকারি ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন – বাংলার হয়ে তিনি খেলবেন না।
অভিষেক ডালমিয়া সংস্থার সভাপতি হয়ে সব রকম চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করেছেন। সেটা সকলে জানেন। যে কর্মকর্তার জন্য এমন ঘটনা ঘটে গেল, তিনি নির্বিকার। টাউন ক্লাবের প্রতিনিধি দেবব্রত দাস এখন সি এ বি-র যুগ্ম সচিব। ঋদ্ধি রঞ্জি গ্রুপ লিগ খেলার আগে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন , ব্যাক্তিগত পারিবারিক সমস্যা থাকায়। পাশাপাশি একই সময় প্রচার মাধ্যমের প্রতিনিধি বোরিয়া মজুমদারের হুমকি ইস্যুতে জড়িয়ে পড়েছিলেন বাংলার এই সিনিয়র ক্রিকেটারটি। সেই সময়ই এই সিএবি – র এই কর্তাটি প্রচার মাধ্যমে সরাসরি আক্রমণ করে বসেন। মারাত্মক অভিযোগ করে বসেন। বলেছিলেন, বাংলার হয়ে খেলা নিয়ে এই সিনিয়র ক্রিকেটারের দায়বদ্ধতা কম। হালে নাকি নানান অজুহাতে বাংলার হয়ে খেলাটা এড়িয়ে গেছেন।
#WriddhimanSaha has refused to play for #Bengal in the upcoming #RanjiTrophy knockouts. It is learnt that #Saha also left the Bengal Ranji team WhatsApp group. This all but brings about an acrimonious end to his stellar career for Bengal
✍️ @shamik100https://t.co/tCIH2IbKOU
— Express Sports (@IExpressSports) May 26, 2022
ঠিক তখনই জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার কথা তাঁকে শুনতে হয়েছিল প্রথমে জাতীয় দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের থেকে ( দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের শেষ ভাগে)। আর পরে ফোনে শুনতে হয়েছিল তা জাতীয় নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান চেতন শর্মার থেকে। বাদ কেন, তার সঠিক ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারেননি। শুধু বলা হয়, টিম ম্যানেজমেন্ট সামনের দিকে তাকাচ্ছে। তাই ঋদ্ধিমানকে ‘অন্য কিছু’ সিধ্যান্ত নিতে পরামর্শ দেন দ্রাবিড়।
মানসিক যন্ত্রণার মাঝে, সি এ বি-র কর্তার এই মন্তব্য বেশি আঘাত করে ঋদ্ধিকে। তিনি চেয়েছিলেন, এই কর্তাকে কড়া বার্তা দিক সিএবি। সংস্থার সভাপতি কিন্তু সেই কড়া কথাটা সেই কর্তাকে বলেছেন ইতিমধ্যে। ফলে প্রচার মাধ্যমে এই ‘ দেবু ‘ কথা বলে বন্ধ। কিন্তু ঋদ্ধি চেয়েছিলেন মনে হয়, প্রচার মাধ্যমে এই নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করুক। কিন্তু সিনিয়র ক্রিকেটারটি একরোখা হয়ে থাকায়, কোচ অরুণলাল কথা বলার পর বরফ গলেনি। অরুণ নিজে ঋদ্ধির জায়গায় থাকলে কি করতেন?
এই দলে আছেন আরেক সিনিয়র ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি। তিনি এখন আবার রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। এই রাজ্যের থেকে প্রায় ৪০ টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ফেলা সিনিয়র ক্রিকেটার ঋদ্ধিমান অপমানে – অবিচারের শিকার হয়ে বাংলার হয়ে খেলবেন না ঠিক করে ফেললেন, আর তিনি মন্ত্রী হয়েও নীরব! এই সরকার খেলার ব্যাপারে দারুন উৎসাহী। সকল সফল ক্রীড়াবিদের পাশে দাঁড়ায়। রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর নজর সব দিকে। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী কী করে এতটা নির্লিপ্ত থাকতে পারলেন! একবারও কী মুখ্যমন্ত্রীর কানে তোলা যেত না? এমন এক দক্ষ ক্রিকেটার দুর্ব্যবহার এই রাজ্য ছেড়ে অন্য কোথাও খেলার কথা ভাবছে। এটা বাংলা ক্রিকেটের জন্য লজ্জা।
আসলে ঋদ্ধিমানের সব হিসেব বদলে দিয়েছেন আইপিএলে দারুণ খেলে চলায়। এই টুর্নামেন্টের পারফরমেন্সে দীনেশ কার্তিক আবার জাতীয় টি টোয়েন্টি দলে সুযোগ পেলেন। ইংল্যান্ড সফরে একটি টেস্ট খেলতে যে দল বাছা হল, সেই দলে ঠাঁই হয়নি ঋদ্ধির। হয়তো রঞ্জি ট্রফি গ্রুপ লিগে খেলে সফল হলে, ঋদ্ধিকে নিয়ে চাপে পরে যেতেন নির্বাচকরা। সেটা হয়নি। এবার আইপিএল শেষে অভিমানী – অপমানিত ঋদ্ধি আবারও নক আউট রঞ্জি ট্রফি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখলেন। ফলে চারদিন বা পাঁচদিনের ম্যাচ খেলার সুযোগ হারালেন। এবার বাংলা থেকে নো অবজেকশন নিয়ে অন্য রাজ্যের হয়ে রঞ্জি খেলবেন। যেমন অশোক দিন্দাকে ভাবতে হয়েছিল। এই ঘটনা গুলো, বাংলার ক্রিকেটে ভালো বিজ্ঞাপন নয়। একটা জিনিষ স্পষ্ট, বাংলার ক্রিকেটারদের মান না পড়লেও – প্রশাসনিক কর্তাদের মান কমছে।
অভিষেক ডালমিয়া , সংস্থার সভাপতি হয়ে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে নানান চেষ্টা চালিয়েছেন। এমন কি ইডেনে দুটি ম্যাচ দেখতে আসা ঋদ্ধির কোচ জয়ন্ত ভৌমিককে বার বার অনুরোধ করেছেন , ছাত্রকে বোঝাতে। কিন্তু ছাত্রের নানান সময়ের মানসিক যন্ত্রণা যিনি জানেন, সেই জয়ন্ত আর কিছু করতে পারেননি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পর ঋদ্ধি হলেন বাংলার সেই ক্রিকেটার যিনি ৪০ এর বেশি টেস্ট খেলে ফেলেছে এই ১০-১২ বছরে। কিন্তু ধোনি উইকেটকিপার – ক্যাপ্টেন থাকায় দলের সঙ্গে অনেকটা সময় দ্বিতীয় উইকেটকিপার হয়ে ঘুরে বেড়াতে হয় ঋদ্ধিকে। আর ছিল চোট ভাগ্য বিড়ম্বনা। যখনই টানা ভালো খেলছেন, তখনই এই চোট – আঘাত তাঁকে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেয়। তবুও ফিরে ফিরে আসেন ঋদ্ধি।
জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া সৌরভের ক্ষেত্রে রাজ্য সংস্থা বিভিন্ন সময় যতটা সমর্থন আর সাহায্য করে গেছে, ঋদ্ধি কি তা কখনও পেয়েছেন? কলকাতা ময়দান এই প্রশ্নও তুলছে।
ছবি: সৌ টুইটার, সিএবি।