হাওড়া : একজনের বয়স ১২ বছর । আর এক জনের বয়স মাত্রা ১০ বছর । বয়স ছোট হলেও এই দুই একরত্তি চোখে দেখেছে তালিবানি অত্যাচার। কাবুল শহর দখল করার পর বাবা মায়ের হাত ধরে জন্ম ভিটে ছাড়ার সময় দেখে ছিল মানুষকে হত্যা করতে। ছোট্ট দুই আফগান একরত্তিরা এখনও ঘুমোলে আঁতকে আঁতকে ওঠে। চোখের সামনেই মানুষকে গুলি খেতে দেখেছে তারা, দেখেছে তালিবানি নৃসংশতা।
আফগানিস্তানের কাবুলের বাসিন্দা মহম্মদ খান। কাবুল বাজারে কাপড়ের ব্যবসায়ী খান সাহেবের আস্তানা এখন আমাদের রাজ্যের হাওড়া শহরে। দুই সন্তান ও স্ত্রী-কে নিয়ে ঠাঁই হয়েছে আত্মীয়র বাড়িতে। এখনও চোখে মুখে আতঙ্ক গ্রাস করছে তাঁদের। খান সাহেব জানান, তালিবানরা কাবুল দখলের পরেই সেখানকার ব্যবসায়ীদের টাকা চেয়ে হুমকি দিতে শুরু করে, হুমকির মুখে পড়তে হয় তাকেও। তাঁর দাবি, ২০১০ সালেও একবার হামলা করেছিল। সেই সময় তাঁকেও হামলার শিকার হতে হয়েছিল। এখনও সেই হামলার স্মৃতি তাঁর শরীরে দগদগে। তালিবানরা কাবুল দখলের পরে অনেক দিন সেখানে থাকলেও প্রতিনিয়ত হুমকি ও নিজের পরিবারকে তালিবানদের হাত থেকে বাঁচাতে ভারতীয় দূতাবাসে থাকা বন্ধুর সাহায্যে আজ সুরক্ষিত। কিন্তু এখনও বাবা, মা-সহ অনেকেই রয়েছেন কাবুলে। মহম্মদ খান ছিলেন, তালিবান শাসনের বিরুদ্ধে। তাই তাঁকে বার বার হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। আফগান সরকারের লোকেদের ও প্রতিবাদীদের রাতের অন্ধকারে হত্যা তাঁকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে। ভারতীয় দূতাবাসের সাহায্যে ভিসা জোগাড় করে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে ভারতের আশ্রয়ে।
আরও পড়ুন-যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে বেহাল স্বাস্থ্য, পাশে দাঁড়াল ‘হু’
দুই ছোট্ট কন্যা মালালি ও পাচস্তানা। জন্মভিটের দুঃস্বপ্ন নিয়েই বড় হবে এ-দেশে। তাদের বাবা মা-ও চান এখানেই তারা পাবে আসল শিক্ষা। কারণ, আফগানিস্তানে এখনও সেভাবে শিক্ষার আলো জ্বলেনি। শিক্ষার আলো পড়ার আগেই ফের তালিবানি, শাসন মানেই শিক্ষার কবর খোঁড়া শুরু হয়েছে আফগানিস্তানে। মহম্মদ খান চান ভারত সরকার তাদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা করুক। মালালি আর পাঁচস্তনা জানেনা বাংলা না জানে হিন্দি বা ইংরেজি। তাই আমাদের রাজ্যে থাকলেও নেয় বন্ধু। তাই সারাদিন পুতুল নিয়েই কেটে যায় তাদের। আসলে কাবুলিওয়ালার আমাদের সন্তানদের খুকি বলে ডাকলেও তাদের সন্তানদের কি বলে ডাকবো তা আমাদের জানা নাই। আর মেয়েদের চোখে দেশ ছাড়ার সময় দেখা দুঃস্বপ্ন ভোলাতে বাড়িতে টিভি আর ইন্টারনেটও বন্ধ করেছেন মহম্মদ খান ।